আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাড়ি ফেরার গল্প

চাঁদপুর জেলার শাহরাস্তি থানার ফেরুয়া গ্রামের হাশেম আলীর বাড়িতে আজকে খুশির আবহ, তার বড় মেয়ে টুনি ক্লাস জে এস সি পরীক্ষায় এ+ পেয়েছে। হাশেম আলী এ+ বুঝে না,তবে অনেক বড় পাশ এটা বুঝে। বাজারের মুদি দোকানদার হাশেম আলীর সংসারে অর্থে অভাব থাকতে পারে কিন্তু সুখের কোন কমতি ছিলোনা। হাশেম আলী মেয়েকে জিজ্ঞাসা করলেন, টুনি মা তোমার পাশের খবরে আমি খুশি হইছি। বল তুমি কি চাও আমার কাছে।

টুনি কিছু না চিন্তা করেই বললো বাবা আমি চিড়িয়াখানা আর শিশু পার্ক দেখতে চাই। হাশেম আলী বললেন ঠিক আছে কালই আমরা ঢাকা যাবো চিড়িয়াখানা দেখতে। টুনি কোনদিন ঢাকায় আসেনাই, কেমন দেখতে ঢাকা। বইয়ে পড়েছে টিভিতে কতবার দেখেছে কিন্তু কাল টুনি সত্যিই ঢাকা যাবে ভাবতেই টুনির মন খুশিতে নেচে উঠে। পরদিন খুব ভোরে টুনি আর তার বাবা শাহরাস্তি এক্সপ্রেস বাসে করে ঢাকায় আসে।

বাস যখন ঢাকায় ঢুকলো তখন টুনি বাবার কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে ছিলো। টুনির যখন ঘুম ভাংলো তখন বাইরে অঝর ধারায় বৃষ্টি। বাসের জানালার ঘোলা গ্লাস ঘসে বাইরে তাকিয়ে টুনি নিজেকে আবিস্কার করলো নানান রঙের লাইটে ঘেরা এক অন্য দুনিয়ায়। হাজারো বড় বড় দালান। টুনি মন্ত্রমুগ্ধের মত সব দেখছে।

টুনিরা উঠলো ঝিগাতলা রোডের এক আত্মীয়ের বাড়িতে। রাতের বেলা টুনির বাবা বললো মা টুনি আগামী কাল হরতাল কাল তো মনে হয় বাইরে যাওন যাইবোনা। শুনছি হরতালে নাকি ঢাকায় অনেক মারামারি হয়। কিন্তু টুনির যে আর তয় সইছেনা যে করেই হোক কালকে তাকে যেতেই হবে চিড়িয়াখানায়। সকাল বেলা বাবা মেয়ে বের হলো।

হরতালের কারনে গতকালের মত রাস্তায় কোন যানযট নেই। বাবা মেয়ে বাসে ঊঠলো চিড়িয়াখানায় যাবে বলে। বাস তখন মিরপুর রোডের দিকে যাচ্ছে। হটাত গাড়ি থামিয়ে বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়া হলো। যাত্রিরা যে যার মত করে পালানোর চেষ্টা করছে।

টুনি আর হাশেম আলী বের চাইলো। হাশেম আলী বেরিয়ে গেলো কিন্তু টুনি আটকে গেলো বাসের ভিতর। বাবা মেয়েকে বাচানোর জন্যে জ্বলন্ত বাসে ঝাপ দিতে চাইলো কিন্তু কারা যেন এসে বাধা দিলো । টুনির আত্মচিৎকার বাবা ও বাবা। হাশেম আলী অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলো।

জ্ঞান ফিরে দেখেন তিনি ঢাকা মেডিক্যালে শুয়ে আছেন। তার শরীরের কিছু অংশ পুড়ে গেছে। টুনিদের ঐ আত্মীয় এসে জানালেন পকেটে তার ঠিকানা পেয়ে থানা থেকে তাকে খবর দেয়া হয়েছে। হাশেম আলী বললেন টুনি টুনির কি খবর। টুনিদের আত্মীয় জানালো টুনি আর নেই।

আগুনে পুড়ে গেছে টুনির দেহের প্রায় সবটাই। টুনি আজ বাড়ি ফিরছে বাবার সাথে। তবে তার দুঃখ একটাই চিড়িয়াখানাটা দেখা হলোনা। টুনি অবশ্য এখন সবার পরিচিত কারন গতকালের সব পত্রিকায় টুনির ছবি এসেছে। টুনিদের বাড়িতে শোকের মাতম।

টুনির মা কিছুক্ষন পর পর অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছেন। টুনির খুব বলতে ইচ্ছে করছে মা তুমি কেদোনা আমি ভালো আছি। কিন্তু টুনি যে জগতের বাসিন্দা সে জগতের কথা কারো কানে পৌছায় না। প্রিয় রাজণীতি বিদগন আপনাদের ধন্যবাদ টুনির লাশ উপহার দেয়ার জন্য, পাচ বছর পর পর আপনারা আসেন আমাদের মাংসের বারবিকিউ খাওয়ার জন্য। আজকে বিএনপি হরতাল ডেকেছে কালকে আওয়ামীলিগ ডাকবে।

তাদের কারো কিছু হবেনা এরা সবাই ভালো থাকবে। শুধু কয়লা হবে আমার সন্তানের লাশ। সবাই ভালো থাকুন। সবার আগে বরষা নামুক বিবেকের উঠোনে এই কামনা। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.