আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সিলেটে খোলা খাবারের দোকানে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান নেই

এ জীবনে কিছুই করিনি তাই লেখারও নেই সিলেট নগরীর বিভিন্ন স্কুল কলেজের গেইটে, সড়কের পাশে ও জনবহুল যেকোনো জায়গায় গড়ে উঠেছে খোলা খাবারের দোকান। খোলা খাবার খাওয়ার কারণে প্রতিদিন অসংখ্য লোক ডায়রিয়া, জন্ডিসসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। বিশেষ করে স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের খোলা খাবারের প্রতি ভীষণ আগ্রহ। আর তাই এর বেশি প্রভাব পড়ছে শিশুদের উপর। সিলেটের বন্দর, কোর্ট পয়েন্ট, জিন্দাবাজার, আম্বরখানা, দরগামহল্লা, ওসমানী হাসপাতাল রোড, শিবগঞ্জ, কাজির বাজার, রিকাবি বাজার, লালা বাজারসহ নগরীর প্রত্যেকটি সড়কের পাশে ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতারা ভ্যানে ফেরি করে বিক্রি করছে এসব খোলা খাবার।

এছাড়াও প্রতিনিয়তই গড়ে উঠেছে অসংখ্য খোলা খাবারের রেস্টুরেন্ট। এসব রেস্টুরেন্টে ও খোলা ভ্যানে খোলা পরিবেশে তৈরি করা হচ্ছে বিভিন্ন ধরণের বড়া, পিঠা, রুটি, সিঙ্গারা, সমুচা, মুগলাই, ঝালমুড়ি, পান, চা, আচার ও শরবতসহ অনেক ধরনের মুখরোচক খাবার। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে বাহিরে খোলাভাবে সাজিয়ে রাখা হয় এ খাবারগুলো। যাতে সহজেই ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ হয়। ক্রেতারাও খোলা খাবার দেখে আকৃষ্ট হয়ে অথবা ক্ষুধা নিবারণে আবার কেউবা শখের বসবর্তি হয়ে এ খাবার খাচ্ছেন।

কিন্তু এই খোলা খাবারের উপর মাত্রাতিরিক্তভাবে দুষিত শহরের বাতাসে ভাসমান ধুলিকণা এবং জীবানু জমতে থাকে। অসংখ্য মাছি খাবারের ওপর ভনভন করে, বসে, বমি করে, মল ত্যাগ করে ও জীবানু ছড়ায়। এসব জীবানু খালি চোখে দেখা যায় না। ফলে ডায়রিয়া, আমাশয়, টাইফয়েড, জন্ডিস, কৃমি ইত্যাদি রোগের জীবানুর আখড়া হয়ে উঠে রাস্তার পাশের খোলা খাবারের এসব পশরা। দেখা যায়, বিভিন্ন ধরণের খোলা খাবার নিয়ে বিক্রেতারা প্রতিদিন ভিড় জমান নগরীর স্কুলের গেটসহ বিভিন্ন পয়েন্টে।

মৌসুমি ফল কেটে বিক্রি চলে রাস্তার প্রায় সব জায়গাতেই। আজকাল রাজপথে হকারদের দেখা যায় পলিথিনে করে এ ফল পৌঁছে দিচ্ছে গাড়ির যাত্রীদের। শসা, পেঁপে, আনারস, জাম্বুরা, ডাব, কাচা আম, পেয়ারা, আমড়া, গাজর, আখের রস সবই পাওয়া যায় খোলা ভ্যানের বিক্রেতাদের কাছে। নোংরা পানিতে ধুয়ে এসব ফল কাটা হয়। এক বালতি পানিতে চলে সারাদিনের যাবতীয় ফল, ফল খাওয়ার পাত্র এমনকি হাত ধোয়ার কাজ।

দু:সহ গরমে বিভিন্ন ধরনের শরবতও বিক্রি হচ্ছে। শিশু থেকে শুরু করে বড়রাও এ রোগ জীবানু ভর্তি পানীয় খাবার খাচ্ছেন। বিশেষ করে বেল, গুড় বা তেতুলের শরবতে রয়েছে জীবানুভর্তি। এ পানীয় মোটেই স্বাস্থ্যসম্মত নয়। এগুলো খেলে পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশংকা থাকে।

সিলেটের রাস্তার পাশে পাওয়া যায় না এমন কোনো খাবার বোধ হয় নেই। সেসব খাবার খোলা অবস্থায় রাখার কারণে ধুলা, বালি পড়ছে হরহামেশা। রাস্তার পাশে যেসব খাবার বিক্রি হয় সাধারণত গরমে তা দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু খোলা খাবার বিক্রেতারা, যেমন ঝালমুড়ি বিক্রেতার মুড়িতে দেয়া মসলা সকালে তৈরি করা হয় আর সারা দিন তা বিক্রি চলে। সরেজমিনে খোলা খাবারের দোকানে ঢুকে একটি সিঙ্গারা চাইলে পরিবেশক তার কোমরে থাকা গামছা দিয়ে টেবিলটি মুছে দেয় এবং ওই গামছা দিয়ে তার হাত মুছে।

আবার হাত না ধুয়েই ওই হাত দিয়ে সে সিঙ্গারাটা প্লেটে তুলে দেয়। অন্য টেবিলগুলোর দিকে লক্ষ করলে দেখা যায় একজনের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছে যে হাতে সাথে সাথে ওই হাত দিয়েই আরেক ব্যক্তিকে রুটি তুলে দিচ্ছে। সিলেট ওসমানী হাসপাতালকে কেন্দ্র করে হাসপাতাল এলাকার রোডের পাশে গড়ে উঠেছে অনেক রেস্টুরেন্ট। হাসপাতালে আসা রোগীরা প্রায় সবাই গ্রাম থেকে আসা হতদরিদ্র। পরিবারের লোকরা টাকার অভাবে স্বল্প খরচে চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে নিয়ে আসেন অসুস্থ প্রিয়জনকে।

হাসপাতাল থেকে সরকারিভাবে যে খাবার দেওয়া হয় তা দিয়ে একজনের ক্ষুধা নিবারণ সম্ভব হয়না। তাই অসুস্থ রোগীর সাথে আসা লোককে খেতে হয় বাইরে কোথাও। আর এ সুযোগটা কাজে লাগাতে হাসপাতাল এলাকায় গড়ে ওঠেছে অনেকগুলো রেস্টুরেন্ট। কিন্তু রেস্টুরেন্টগুলো প্রতিযোগিতামূলক বাজার ধরতে খাবার বাইরে সাজিয়ে রাখেন। যাতে ক্রেতারা দেখে রেস্টুরেন্টে খেতে আসেন।

কিন্তু বাইরে ঢাকনাবিহীন খাবারে ধুলোবালি, মাছি, পোকা পড়ে। আবার অনেক সময় দেখা যায় রেস্টুরেন্টে ঢুকতে সময় অনেকেই অপরিস্কার হাত দিয়ে দেখেন খাবার গরম আছে কিনা। ফলে খাবারে ভর্তি থাকে অসংখ্য রোগজীবানু। আর তা খেয়ে রোগীর সাথে আসা লোককেও অসুস্থ হতে দেখা যায়। সিলেটের ব্যস্থতম এলাকা হযরত শাহজালালের মাজার।

প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে হযরত শাহজালাল (র.)-এর মাজার জিয়ারত করতে আসেন অসংখ্য দর্শনার্থী। দর্শনার্থীদের কথা চিন্তা করে এ এলাকায় গড়ে উঠেছে অনেকগুলো রেস্টুরেন্ট। তারাও খাবার খোলাভাবে হোটেলের আঙ্গিনায় বড় প্লেটের উপর সাজিয়ে রাখেন। মাজার জিয়ারতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা লোকদের পেটের ক্ষিধায় বাধ্য হয়েই যেকোনো একটি রেস্টুরেন্টে ঢুকতে হয়। আর খেতে হয় হোটেলের পচা, বাসি ও খোলা খাবার।

সিলেট নগরীর সর্বত্র খোলা খাবার বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু এ বিষয়ে দায়িত্বশীলদের কোনো ভূমিকা লক্ষ করা যাচ্ছে না। তারা ভেজাল বিরোধী অভিযান পরিচালনা করছেন শুধু নামী দামি রেস্টুরেন্টগুলোতে। যেখান থেকে জরিমানার টাকা পাওয়া যাবে সেইসব রেস্টুরেন্টেই পরিচালনা করা হয় এই ভেজাল বিরোধী অভিযান। এ ব্যাপারে বিএসটিআই প্রকৌশলী রেজাউল করিমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ঢাকনা ছাড়া খাবার রাখা এবং বিক্রি করা অপরাধ।

এর জরিমানা হচ্ছে ৫ হাজার টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকা। ছোট রেস্টুরেন্টগুলোতে ও ভ্যানে করে খোলা খাবার বিক্রেতাদেরকে কেন এ শাস্তি দেওয়া হয়না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সর্বনিম্ন জরিমানা ৫ হাজার টাকা যা তাদের পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। তাই অযথা তাদেরকে মামলা দিয়ে কি লাভ। আর ম্যাজিস্ট্রেট থেকে নিষেধ থাকায় এদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হয় না। স্কুল ছাত্রী নাজমুস সামার মা দেলোয়ারা বেগম বলেন, বাসি, খোলা ও পচাঁ খাবারের প্রতি শিশুদের ভীষণ আগ্রহ থাকে।

বাসায় যত মজার খাবারই থাক না কেন, স্কুল ছুটির পর এ খাবারগুলো তাদের চাই-ই চাই। আর আমরা বিব্রত না হতে তাদেরকে এ খাবার কিনে দিতে হয়। নগরীর সিটি করপোরেশনের সামনে ৮-১০ ভ্রাম্যমান ভ্যান খাবার বিক্রি করে যা মানুষের শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এ ব্যাপারে সিটি করপোরেশনের মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, খোলা খাবার বিক্রি স্বাস্থ্যের জন্য অবশ্যই ক্ষতিকর। মানুষ সচেতন হলে খোলা খাবারের বিক্রেতা কমে আসবে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।