আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বন্ধুদিবস-বন্ধুত্ব-প্রেম,একজন বব-কাট সুন্দরী,আর আমার বাল্যকালীন কাব্য প্রতিভা (রম্য+??)।

http://rmpalash.blogspot.com/ আমি যাই লেখি তাই পড়ে মানুষ কাদে আর ফেসবুকে চোখের জল নাকের জল এক করে মেসেজ পাঠায়। তাই এইবার রম্য লিখব বলে কিবোর্ড হাতে নিলাম। শেষতক যা প্রডিউস হল তা যে কি হল তাতে আমি নিজেই আরেকবার কনফিউজড হয়ে গেলাম। লেখা রিভিশন দিতে গিয়ে কান্না পাচ্ছে। যাই জরিনার মার কাছ থেকে রুমালটা নিয়েই আসি।

------------------------------------------------------------------- একটাই কথা আছে বাংলাতে চোখ আর মুখ বলে একসাথে সে হল বন্ধু আমার বন্ধু আমার। । বাংলা সিনেমার মোটা ভুড়িওয়ালা নায়কের কথা একটা থাকলেও আমার অনেক কথা আছে। জ্ঞানীজনে বলে চোখ আর মুখ যা দেখে আর বলে তাতে সায় না দেয়াই উত্তম। কারন এই বয়সে মুখ আর চোখ বড়ই বেয়ারা হয়ে ওঠে।

তারা কি বলে আর কি করে কোন কিছুরই কোন ঠিক-ঠিকানা নেই। চোখ দিয়ে সুন্দরী দেখে মুখ দিয়ে হিন্দী গান গাইতে আপনার ভাল লাগতেই পারে,কিন্তু সুন্দরীর যদি ভাল না লাগে তাহলে চোখ আর মুখ কিন্তু আপনাকে বাচাতে পারবে না। তাছাড়া সুন্দরীর সাথে সাথে যদি সুন্দরীর স্বঘোষিত ভাইয়েরা কিঞ্চিত মাইন্ড করে তাহলে আপনার এলাকাছাড়া হওয়া কে ঠেকায়। এর অবশ্য ভাল দিকও আছে। পুরস্কার হিসেবে কিছুদিনের জন্যে শ্বশুরবাড়ি ঘুরে আসার চান্স যদি পেয়ে যান তাহলেই কেল্লা ফতে।

এই আকালের যুগে ফ্রি ফ্রি যদি কিছুদিন খাওয়া পড়ার ব্যাবস্থা হয় তবে আর পায় কে?সাথে জেলখানায় ইট ভাংগার কাজ করে বডিকে সিক্স-প্যাক বানানোর সুবর্ন সুযোগ। তবে যে কোন ভাল কাজেই রিক্স থাকে। এইখানেও আছে। ডাক্তার আসার আগেই রোগী মারা যাবার মত পুলিশ আসার আগেই জনগন ধরে ফেললে লালকার্ড পেয়ে যাবার সম্ভাবনা প্রচুর। তারা অনেক উদার মনের পরিচয় দিয়ে আপনাকে যে পাচফুট-ভিসা ছাড়াই পরপারে মাইগ্রেট করে দেবেনা তার কি নিশচয়তা?ইদানিং অবশ্য পুলিশও লালকার্ডের মজায় মেতেছে।

পুলিশের সহায়তায় বেশ কয়েকজন লাল কার্ডের দেখা পেয়ে পগার পার হয়েছেন বলে আমরা জেনেছি। দেশে এখন লালকার্ডের যুগ। কে কখন কারে লাল কার্ড দেখায় কোন নিশ্চয়তা নাই। বন্ধুত্ব নিয়ে বলছিলাম। এই বন্ধুত্ব কি জিনিস হাড়ে হাড়ে বুঝেছি আমি।

আর বুঝেছিল আমার চাচা। আগে আমারটাই বলি। ক্লাস ফাইভে পড়ি। আমার সাথে আমার দুই দোস্ত। সে কি দোস্তী।

দোস্তদের জ্বালায় একটা ডিম পুরাটা খাইতে পারিনা। মা কত সখ করে ডিম ভাইজা দেয় টিফিনে। আর দুই জনে দুই পাশ থেকে ছিড়ে নিয়ে যায়। আমার ভাগে থাকে এতটুকু। এমনি করে আমার ডিম খাইয়া তাহারা অতিশয় বলশালী হয়ে উঠল।

আর আমি না খাইতে পাইয়া কংকাল হতে লাগলাম। এইতেও তারা শান্ত হইলে মানা যাইত। তারা প্রায়ই নিজ নিজ শক্তি নিয়ে তর্কে লিপ্ত হত। আর শেষমেষ আমাকেই গিনিপিগ হিসেবে তাহাদের শক্তির তুলনা করে দিতে হত। কিভাবে?আমাকে মাঝখানে রেখে দুহাতে দুজন দুই দিকে টানত।

যার দিকে আমি যেতাম সেই অধিক শক্তির অধিকারি বলে প্রতীয়মান হত। সরকার আর বিরোধিদলের দেশপ্রেমিকদের টানাটানিতে আজ আমাদের দেশের যে দুর্দশা আমার দুই শক্তিমান বন্ধুর টানাটানিতে আমার অনেকটা এই দশায় হয়েছিল। পার্থক্য হল দুই নেত্রীর টানাটানিতে দেশে আয়তন ক্রমেই কমে যাচ্ছে। আর দুই কুস্তিগীরের টানাটানিতে আমার দুই হাত লম্বা হতে হতে হাটু পর্যন্ত গিয়ে পৌছেসে। সর্বনাশের ষোলকলা পুর্ন হল যে দিন পাশে গার্লস স্কুলের ফার্ষ্ট গার্ল এবং আমাদের হেডুর বন্ধুর কন্যা আমাদের সাথে একই ব্যাচে পড়াশোনার নিমিত্তে আমাদের স্কুলে পদার্পন করলেন।

তাহার বব কাট চুলে সেই বয়সেই আমার শক্তিমান দুই দোস্তর মাথা খারাপ হয়ে গেল। নতুন সম্পদের ওপর নিজেদের দখল কায়েমের জন্যে তারা চড় দখলের মত এক চোট মারামারিতে লিপ্ত হল। তারপরে তারা নিজেরা আলোচনা করে তাদের দরখাস্ত পেশ করল সেই কন্যার দরবারে। উভয়েই প্রত্যাখাত হল। আমার দুই শক্তিমান বন্ধু আমার কানের দুই পাশে সারাক্ষন হাতিঘোড়া মেরে চলল।

এই করব,সেই করব। তারপরে তাদের একসময় জ্ঞান হল নারী আমার মত টেনে শক্তি পরীক্ষা করার জিনিস না। ইহাকে শক্তি দিয়ে জয় করা যায় না। আর তাহাদের প্রবল শক্তি সহ্য করে কান্নাকাটি শুর করে দিলে তাদের আম ছালা দুই ই যাবে। বন্ধুরা আমার ছোট হলেও চিন্তা চেতনায় অনেক বড়।

এবারে তারা অন্য উপায় ধরলো। দুই জনেই আমার সাথে পার্সোনালি দেখা করে পার্সোনাল কথা শেয়ার করলো। কি সেই পার্সোনাল কথা?সুন্দর করে কবিতা লিখে দিতে হবে। শুধু লিখে দিলেই হবে না। সেই মেয়েকে আবার সেই কবিতা আমাকেই তার পক্ষ থেকে পড়িয়া শুনাইতে হবে।

বিনিময়ে এনাম জুটবে। আদম আলীর বাক্স থেকে পেট ভরে আইসক্রিম খাওয়ানো হবে,শাবনুরের ভিউকার্ড জোগাড় করে দেয়া হবে। বলতে দ্বিধা নাই সেই বয়সেই আমি শাবনুর আমাদের জ্বালাতন শুরু করেছিল যা এখন শিলায় আইসা ঠেকছে। বস্তুত অতি ছোটবেলা থেকেই আমার লেখক প্রতিভা কতটা বিকশিত ছিল তার একটা জলন্ত উদাহরন হতে পারে এই ঘটনা। সোনার চান্দুরা,এতদিন আমার ভাগের ডিম খাইয়া আমার উপরে শক্তি পরীক্ষা করছ।

কিছু কই নাই। এইবার বুঝবা মজা। ওস্তাদের মাইর শেষ রাতে। আমিও শেষ বেলায় মাইর দেবার জন্যে রেডি হইলাম। রাতের বেলা অনেক ভেবে ভেবে সুন্দর দুইটা কবিতা লেখলাম।

সোনিয়া , যদি আমার সাথে প্রেম কর। তোমারে দেব আইসক্রিম খাওয়াইয়া। যদি আমার সাথে প্রেম কর দিব ফার্ষ্ট বানাইয়া। আমরা দুই জন হব লাভার কিন্না দেব তোমারে চালতার আচার। উল্লেখ্য আমি ক্লাসে ফার্ষ্ট বয় ছিলাম।

আর লাভার শব্দটা শিখেছি চাচাতো বোনের চিঠি পড়ে পড়ে। আমিই ছিলাম তার ডাকপিয়ন। ডাকমাশুল হিসেবে আইসক্রিম,পটেটো স্টিকস আর কোকোলা জেমসের বিনিময়ে সানন্দে আমি চিঠি পৌছানোর কাজ করতাম। খালি ডেলিভারির আগে মালের কন্ডিশন চেকের জন্যে খুলে পড়ে নিতাম। আমার জ্ঞান বিকাশে চাচাতো বোন আর দুলাভাইর অবদান স্বর্নের অক্ষরে না হোক সিসার অক্ষরে লেখা থাকবে যাতে কুড়াল দিয়ে কোপাইলেও না ওঠে।

কবিতা আরো দুইটা লেখলাম। নমুনাঃ হে ববকাটের বান্দরী তুমি জাননা আমি কত শক্তিমান তুমি করছ আমারে অপমান আমি তোমারে দেইখা লমু তুইলা ধরে আছাড় দিমু। সোনিয়ার ববকাট ছিল। এই রকম আরেকখানা কবিতা গোপন পকেটে আর প্রথম খানা বুকপকেটে নিয়া পরেরদিন স্কুলে গেলাম। তারপরে শেয়ালের কুমিরের বাচ্চা দেখানোর মত উভয়কেই একই কবিতা দেখালাম।

কবিতার মাহাত্মে আর কাব্যগুনে মুগ্ধ হইয়া তারা আমার যে সমাদর করল তা আর কি বলব। কোচিং শুরু হবার আগেই আম সোনিয়ার আসার পথে বসে রইলাম। তারপরে সে আসামাত্রই তাকে আমার প্রথম কবিতা পড়ে শোনালাম। মেয়ে মুগ্ধ,আমিও মুগ্ধ। এরপরে বের করলাম সেই দুই খান কবিতা।

একে একে পড়ে শুনালাম। এই কবিতা আমার লেখা তা কিন্তু আমি বলিনি। নিজের লেখা দুই খানা কাব্যর স্বত্ব আমি দুই বন্ধুকে দান করে দিলাম। মেয়ে সেইদিনই স্যারের কাছে নালিশ করল। স্যার দুই বন্ধুকে য়্যাইসা করে পিটুনি দিলেন।

পিটুনি খেয়ে তারা আমার নাম বলে দিল। আমি ভাল ছেলে। স্যারকে বললাম আমি নিজে থেকে কিছু করিনাই। ওরা আমাকে কবিতা লেখতে বলছ। তাই আমি লিখেছি।

-ওরা যা বলে তুই তাই করিস? -জ্বী স্যার। -এই তো্রা দুইজন ওকে গোবর খেতে বল এখন। শয়তান দুইটা সাথে সাথে কোরাস শুরু করে দিল। -"আসিফ যাও মাঠ থেকে গোবর খেয়ে এসো "। আমার গোবর খেতে যাবার আগেই কান্নার জলে ক্লাস ভেসে গেল।

একটা টাটকা নতুন প্রেমিক গোবর খাবে সেটা সোণিয়া কিভাবে মানে?স্যার বিভ্রান্ত হয়ে গেলেন,এই মেয়ে কেন কাদে? সোনিয়াকে নিয়ে সবাই ব্যস্ত হয়ে আমার গোবর ট্রিটমেন্ট ভুলে গেল। যাহোক সেই ঘটনা সেখানেই শেষ হয় নাই। দুই বন্ধু আমারে ধরে কি করেছিল পরে তা আর না বলি। দেখলেন আমি কিন্তু লেখক হিসেবে সফল। সেই বয়সে কাব্য প্রতিভা দিয়ে দুই শক্তিমানের হাত থেকে রাজকন্যে ছিনিয়ে এনেছি।

এর পরেও চোখ-মুখের কথা শুনে বন্ধু বন্ধু করবেন? আমার কাহিণী এত বড় হয়ে গেল যে চাচার কাহিনী শুরুই করতে পারলাম না। চাচার কাহিনী আরেকদিনের জন্যেই তোলা থাক। বানিজ্যমন্ত্রী কম খেতে বলেছেন। সেই কম শুধু খাওয়ার জন্য হবে কেন?সব কিছু কম হবে। কম লেখা,কম পড়াও হতে পারে,কালি কাগজ সেভ হবে আর যারা এখন কিবোর্ডে লেখেন আর পিসিতে পড়েন তাদের কারেন্ট সেভ হবে।

বানিজ্যমন্ত্রীর কথা অমান্য করে লেখা আর বড় করার সাহস পেলাম না।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।