আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দুই নেত্রী আগুন নিয়ে খেলছেন- নূরে আলম সিদ্দিকী

দুই নেত্রী শুধুমাত্র ক্ষমতার লিপ্সায় দেশকে সহিংসতার গহ্বরে নিক্ষেপ করেছেন। তাদের ভূমিকার কারণে জাতীয় অর্জন, চেতনা, গণতন্ত্র, মননশীলতা সবকিছু শেষ। গোটা দেশকে একটা অন্তর্ঘাতী সংঘাতের মুখে এনে দাঁড় করিয়েছেন তারা। গোটা জাতিকে বিভক্ত করেছেন। যথাসময়ে সবার জন্য একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বিন্দুমাত্র সম্ভাবনা দেখছে না জনগণ।

গণতান্ত্রিক চর্চা শব্দটি বিলুপ্তপ্রায়। দু’জনই নিজের অজান্তে আগুন নিয়ে খেলা করছেন। সার্বভৌমত্বে নিয়ে খেলা করছেন। অর্থনৈতিক অবস্থা স্থবির, যে কোন মুহূর্তে এমনভাবে বিপন্ন হবে যা ভয়ঙ্কর এক বিস্ফোরণ ঘটবে। দুই নেত্রীর সামনে দাঁড়িয়ে এ কথাগুলো বলতে পারে এমন একটা লোকও নেই দু’দলের মধ্যে।

১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন থেকে আমার রাজনৈতিক পদচারণা শুরু। তারপর সামরিক শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করেছি, একাত্তরে নির্মম পাশবিকতার মধ্যদিয়ে সময় অতিবাহিত করেছি। কিন্তু বর্তমান সময়ের মতো বিভাজিত অবস্থা কোন দিনই আমার কাছে পরিলক্ষিত হয়নি। ১৯৯০ এর পর থেকে গণতন্ত্র চালু হয়েছে। কিন্তু এখন দেশে গণতন্ত্র নেই, স্বৈরতন্ত্রও নেই, পরিবার তন্ত্রও নেই- ‘ব্যক্তিতন্ত্র’ চলছে।

দুই নেত্রীর আলোচনা বা সমঝোতার উপদেশ দিচ্ছেন কেউ কেউ। কিন্তু তার বিন্দুমাত্র কোন সম্ভাবনা নেই। যারা সমঝোতার কথা বলছেন তাদের বুঝতে হবে, এই দুই নেত্রী ক্ষমতা কুক্ষিগত করার ক্ষীণ মানসিকতায় এমন অবস্থা সৃষ্টি করেছেন। উভয়ের মাথায় সাপের ঝুঁড়ি। বিষাক্ত সাপ যেমন বিশ্বাস করা যায় না তেমন অবিশ্বাস বহন করছেন তারা দু’জন।

এ ক্ষেত্রে সরকার ও বিরোধী দলের কোন পার্থক্য নেই। এখন দেশ হয় বিপর্যয়ের মধ্যে পড়বে। অন্যথায় বিকল্প কোন শক্তির উত্থান হবে। বিকল্প শক্তি বলতে আমি কোন সামরিক সরকারকে বুঝি না। সারাজীবন আমি গণতন্ত্রের জন্য কাজ করেছি।

আমি একটি গণতান্ত্রিক শক্তির উদ্ভাবনের মধ্যেই বিকল্প খুঁজে পেতে চাই। এ জন্যই ৫ই ফেব্রুয়ারি তরুণদের আন্দোলনকে আমি স্বাগত জানিয়েছি। তারা দুই নেত্রীর চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে রাজনৈতিক ইস্যু হিসেবে আর ব্যবহার করা যাবে না। এ আন্দোলনটি যদি ব্যর্থ হয় তাহলে আগামী ১৫-২০ বছরে আর তারা জেগে উঠতে পারবে বলে মনে হয় না। তাই নির্মোহ চিত্তে শুধুমাত্র বিচারের দাবিটিকে উন্মোচন করা উচিত বলে আমি তাদের বলেছিলাম।

কিন্তু তা হয়নি। এখন তাদের কাছ থেকে রাজনৈতিক ফায়দা নেয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। পৃথিবীর কোনও দেশে গণতন্ত্র এতটা নিষপ্রভ নয় যেমনটা বাংলাদেশে বিরাজ করছে। অশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, শুধু দুই নেত্রীরই নন, সকল স্তরের নেতারই সন্তানরা বড় হচ্ছে বিদেশে। এ আতঙ্কজনক পরিস্থিতি তাদের হৃদয়কে স্পর্শ করে না।

তরুণরা, ছাত্ররা এ দেশের বিবেকের জাগ্রত রূপ ছিল। কিন্তু এখন তাদের মাঝে এতটুকু আশার আলো দেখছি না। সাংবাদিকরাও আজ দু’টি শক্তির লেজুড়বৃত্তি করছে। যারা জাগরণ মঞ্চে ফাঁসির দাবিতে সোচ্চার তাদের আমি একদিকে অভিনন্দন জানাই। কারণ, এরা যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি চায়।

একাত্তরে মা, বোনদের ইজ্জতের এবং শহীদদের জীবনের ঋণ পরিশোধ করতে চায়। অন্যদিকে তাদের আমি ধিক্কার জানাই। কারণ, জামায়াতকে প্রতিরোধের নামে নাস্তিক্যবাদের প্রচার করছে তারা। এটা মানুষ মেনে নেবে না। এ দেশের ৮৫% মানুষ মুসলমান।

যারা ধর্মপ্রাণ মানুষের হৃদয়ের কথা বোঝে তাদেরই আন্দোলন করা উচিত ছিল। বাদী পক্ষের আপিলের সুযোগ রেখে আইন সংশোধন করেছে সরকার। তারপর ‘মাওলানা সাঈদীর’ রায় ঘোষণার পর মঞ্চের উচিত ছিল বিজয় ঘোষণা দিয়ে উঠে যাওয়া। বিচারকরাও তো এ দেশের মানুষ। আমার মনে হয় একাত্তরে ঘৃণ্য অপকর্মের বিচারের কাজে তাদেরও আবেগ রয়েছে।

কিন্তু বিচার হবে আইনের লড়াইয়ের মাধ্যমে। এখন যদি আইনের কোন ফাঁক দিয়ে তারা বেরিয়ে যায় (যদিও উচিৎ নয়) তখনতো যারা সর্বোচ্চ বিচার চাচ্ছে তাদের মুখেই সরকার পতনের দাবি উঠবে। তখন কি হবে? যুদ্ধাপরাধীদের বিচার একটি সর্বজনীন বিষয়। এ বিষয়টিকে নিয়ে গত চার বছরে যা করা হয়েছে তা রাজনৈতিক দূরদর্শিতা তো দূরের কথা দেশপ্রেমেরও কাছাকাছি অবস্থা না। তাদের প্রতিশ্রুতি ছিল বিরোধী দলকে মর্যাদা দেয়া।

ডেপুটি স্পিকারের পদ দেয়া- কিন্তু সামান্য আসন বণ্টন নিয়ে যে লঙ্কাকাণ্ড ঘটিয়েছে তা ন্যক্কারজনক। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল শেখ হাসিনার বিজয়। এখন সেই বিষয়টি নিয়ে এত কিছু। শুধু ক্ষমতার জন্য। শেখ হাসিনা আজ ‘ভ্রান্ত বাম’ আর প্রশাসনের কিছু লোকের কাছে বন্দি।

প্রধানমন্ত্রী মানুষের অনুভূতিকে উপলব্ধি করতে পারছেন না। এতখানি অদূরদর্শী তো কোন প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন না। মনে হচ্ছে তার সামনে একটা বড় প্রাচীর তৈরি করা হয়েছে। তাই কিছুই তিনি দেখতে পাচ্ছেন না। প্রধানমন্ত্রীকে গৃহবন্দি করা হয়েছে কি না সন্দেহ হচ্ছে আমার।

শুনেছি আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলীয় নেতাদের মনোনয়ন না দিলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সুযোগ বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে ইসির কাছে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) যদি এই সুপারিশ গ্রহণ করে তাহলে তা আরেকটি কুটিল ষড়যন্ত্র। ভ্রান্ত, বামদের দিয়ে বেষ্টিত আওয়ামী লীগের বর্তমান অবস্থায় ত্যাগী আওয়ামী লীগের নেতারা মনোনয়ন পাওয়ার কোন সম্ভাবনা দেখি না। এ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে স্বতন্ত্র নির্বাচনেরও পথ রুদ্ধ করে আওয়ামী লীগের ধ্বংস ডেকে আনার চেষ্টা হচ্ছে বলে আমার মনে হয়। দেশে এত মানুষের মৃত্যু হচ্ছে।

পুলিশকে হামলা করে মারা হচ্ছে। পুলিশের নির্বিচার গুলিতে মানুষ মরছে। ভয়াবহ তাণ্ডব চালাচ্ছে সন্ত্রাসী কায়দায় জামায়াত-শিবির। এটা ‘গণহত্যা’ কি না সেই বিতর্ক নিয়ে মাতামাতি করছেন সবাই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সম্পূর্ণ ব্যর্থ।

অথচ সরকারের যেন কোন দায়দায়িত্ব নেই। নির্বিকার! স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিকৃত মনের অমার্জিত অশালীন উক্তি করতে পটু, বিরোধী দলের অফিসে পুলিশি অভিযান নিয়ে দম্ভোক্তি করতে পটু। জনগণের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে, সেসবের ব্যাপারে নির্বিকার। খালেদা জিয়া বলেছেন, মহীউদ্দীন খান আলমগীর রাজাকার। তার বিচার হওয়া উচিত।

এটা অনেকাংশে সত্য কথা। ন্যূনতম মানসম্মান থাকলে পদত্যাগ করে তারপর কথা বলা উচিত ওনার। দেশে সমস্ত আমদানি বন্ধ রয়েছে। রপ্তানির যে কি অবস্থা হয় তা আল্লাহই জানেন। বিদেশী ব্যবসায়ীরা দেশে এসে বিনিয়োগের পরিবেশ পাচ্ছেন না।

পুঁজির নিরাপত্তা পাচ্ছেন না। বিদ্যুতের সঙ্কট, গ্যাসের সঙ্কট। এসব সমস্যা নিরসনে সরকারের সর্বস্ব নিয়োগ করার কথা ছিল। সেখানে সরকারের একমাত্র স্লোগান হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। আর বিরোধী দলের স্লোগান হচ্ছে তত্ত্বাবধায়ক।

এর পরিণতি হবে এক ভয়াবহ বিস্ফোরণ। দেশ এখন আগ্নেয়গিরির উপর দাঁড়িয়ে আছে। সংসদ অকার্যকর। পুরো দেশ বিভাজিত। দুই নেত্রীর জন্য শেষ সতর্ক বাণী উচ্চারণ করে বলতে চাই- এ অবস্থায় শুধু তারা দু’জনই জ্বলবেন না, গোটা বাংলাদেশ জ্বলবে।

এর দায়দায়িত্ব দু’জনকেই নিতে হবে। এ অবস্থায় নতুন করে যিনি ক্ষমতায় আসতে চান কিন্তু তার আমলেও তো ২১শে আগস্টের মতো পৈশাচিকতার নজির রয়েছে। বিশেষ একটি ভবনের দৌরাত্ম্যের উদাহরণ রয়েছে। বিরোধী দলে আসার পরও তো অনেকগুলো কমিটমেন্ট ছিল তাদের। সংসদে অংশ নেননি তারা।

জনগণের অধিকারের প্রশ্নে সরকারকে সহযোগিতা করারও কোন খবর ছিল না। জনগণের স্বার্থসংশ্লিষ্ট হাজারও ইস্যু নিয়ে তারা নীরব। নন-ইস্যুকে দলীয় ইস্যু বানিয়ে তারা জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করেছে। জামায়াত পরপর দুই দিন হরতাল দিল। বিরোধীদলীয় নেত্রী দেশে এসে আরেক দিন হরতাল দিলেন।

এ রকম দায়িত্বজ্ঞানহীন রাজনীতি করেই তিনি ক্ষমতায় যেতে চান। ’৭১ সালে ধর্মের নামে যা করা হয়েছে একজন মুসলমান হিসেবে অবশ্যই এর বিচার চাওয়া উচিত। কিন্তু খালেদা জিয়া কেন তাদের রাজনৈতিক স্বার্থে ছায়া দিচ্ছেন? ক্ষমতার জন্যই কি? সব মিলিয়ে এই দুই নেত্রীই মননশীলতার দারিদ্র্য আর হীনম্মন্যতার করণে দেশকে বিভাজনের দিকে নিয়ে গেছেন। তথ্যসূত্র ঃ Click This Link ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।