আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বন্ধুত্ব (আমার বন্ধুরা পর্ব ১)

আমার এখানে প্রবেশের পূর্বে একবার ভাবুন, ভাল কিছু পাবেননা। ভাল কিছু দিয়ে যেতে পারলে ওয়েলকাম। শিবির কিংবা আওয়ামীলীগ মোট কথা কোন দলের প্রতিই আমার কখনো আগ্রহ বোধ ছিলনা। আমার ছিলনা বলেইযে আমার বন্ধুদের থাকবেনা তাতো না। কয়জনকেই পাবেন আপনি দলীয় পরিচয়ের উর্ধে।

তদুপরুপ আামার কিছু বন্ধু ছিল শিবির ও ছাত্রলীগ পন্থী। শাহেদ (শিবির) সোহেল, জয়নাল, আরমান (ছাত্রলীগ) ওদের বলতাম কি বালছাল করিস?? পার্টি মার্টি?? ওরা বলতো ধুর তুই একটা গাধা, সারাক্ষন খেলা খেলা আর খেলা। তবে খুব ভালো বন্ধুই বলা চলে ওদের। যদিও তাদের কারো সাথে এখন আর যোগাযোগ হয়না। তাদের নিয়ে কিছু অভিজ্ঞতার কথাই সেয়ার করবো।

শাহেদ সবসময় চাইতো তাদের সাথে ভিড়াতে। আমাকে ত্যক্ত বিরক্ত করেই ছাড়তো। আমি তার চেয়ে এক ধাপ উপরে গিয়ে বলি, আমাকে রোজ শিঙ্গারা চমুচা খাওয়াতে হবে। রোজ রোজ কি আর খাওয়াইতে পারে?? আর আমি যা খাদক ছিলাম। ১০-১২ টা সিঙ্গারা চমুচা না খাইলে আমার চলেইনা।

শেষে না পেরে বলে আচ্ছা ঠিকাছে বায়তুল মাল না হয় অন্তত দেয় প্রতি মাসে। আমি বল্লাম ওইটা আবার কোন মালরে? ময়ুরী না পলি?? তাকে বলি, পারলে তোদের ওই বায়তুল মাল থেকে কিছু আমাকেই দিস। আজকাল ঘরে টাকা পয়সা পাইনারে। আজকাল বাজারের হিসেব বরাবর দিতে হয়। আমার কথা শুনে একটু দুরে সরে দাড়ায়।

তার সরল সাদাসিদা হাবভাব দেখে সোহেলরা টিটকারি মারে ওই দেখ দেখ আমাদের হাবলু জিহাদী ভাই গাজী হইতে যায়। আরেকজন বলে আরে ওই হাবলা গাজী হইবো কেমনে, ওতো প্রথম ধাক্কায় শহীদ হয়া যাইবোগা। ওদের বল্লাম বাদ দেয় ওকে ওর মতো থাকতে দেয়। তোরাওতো কিসব করে বেড়াস। সে কি তোদের কিছু বলে?? একদিন আমরা একটা ফন্দি করে শাহেদকে কলেজের পাশে একটা রেস্টুরেন্টে নিয়ে গেলাম।

চল দোস্ত আজ কিছু খাই। শাহেদ ভাবলো আমরাই খাওয়াবো। খেয়ে ধেয়ে বিল দেয়ার সময় দেখি কারো পকেটেই টাকা নেই। আসলে ছিলনা তা না। বুদ্ধি করেই আমরা কারো পকেটে টাকা রাখিনি।

আমরা জানতাম সে আজ বায়তুল মাল জমা দেবে। শেষে বেচারা বন্ধুটি বল্ল আরে আমার কাছেতো বায়তুল মালের টাকা ছাড়া আর কোন টাকা নাই। কি আর করা বেচারা চেহারাটা বাংলা ৫বানিয়ে ওইখান থেকেই দিতে হলো। দোকান থেকে বের হয়ে সোহেল বল্লো, তোদের বায়তুল মালের টাকাতো দারুন টেস্টিরে। আরমান বল্লো মাল দিয়ে মাল খাইতে মজাই আলাদা।

আমি বল্লাম তোর বায়তুলমালের টাকা গেল আমার বায়তুল পেটে। বেচারা রাগে ফুলতেই আছে, ফুলতেই আছে। ওইদিনের পর থেকে বেচারা আর কোন দিন আমাদের সাথে দোকানে খাইতে যায়নাই। এর কিছু দিন পর ঘটলো এক দুর্ঘটনা। কলেজে কিছু উছৃঙ্খল ছেলে (কোন দলেরই না) দু’টি মেয়েকে বার বার উত্তক্ত করায় শাহেদ গিয়ে বাধাঁ দেয়।

যে কিনা বাতাসে দোলে সে গেছে বাঁধা দিতে । ফলস্বরুপ রাম ধোলাই। খবর পেয়ে ক্লাসমেটরা এসে আচ্ছামতন ছেলেগুলোকে ডাবল রাম ধোলাই দেয়। ধোলাই খেয়ে কোন রকমে পালিয়ে যেতে যেতে শাহেদকে শাশিয়ে গেল ”তোকে দেখে নেবো” । এসব আমি শুনলাম পরদিন কলেজে গিয়ে।

যদিও সোহেল ওদের সাথে ঝামেলা করতে চেয়েছিল, আমরা করতে দিইনাই। তার কিছুদিন পরে আমরা গেলাম এক মেহেদী অনুষ্ঠানে ব্যান্ড পার্টি দেখতে। যে বাড়িতে অনুষ্ঠান তার পাশেইযে ওই ছেলেগুলোর বাড়ি আমাদের মনেই ছিলনা। আমরা সবাই মিলে খেতে বসলাম। শাহেদ আমাদের সাথে খাবেনা, আমরা নাকি বিরক্ত করবো।

আমারা খাওয়ার সময় ওকে বলতাম বেটা খা খা, কখন শহীদ হয়া যাস ঠিক নাই। আমরা খাওয়ায় ব্যস্থ। হঠাৎ একটা ছেলে এসে বল্ল আরে কিছু ছেলে শাহেদকে মারতেছে। আমরা আর বাকি কিছুই শনলামনা। সবাই দৌড় লাগালাম।

গিয়ে দেখি শাহেদের হাত পা এবং মাথা দিয়ে রক্ত বেরুচ্ছে। আমরা সময়মতো না গেলে হয়তো শাহেদকে ওরা মেরেই ফেলতো। ওরা সংখ্যায় ছিল অনেক আর আমরা ছিলাম মাত্র ৫ জন। পেরে উঠতে পারছিলামনা। হঠাত একটা বিকট আওয়াজ শুনে থমকে দাড়ালাম।

দেখি তাদের একজন মাটিতে পড়ে ধরপর করছে। যে কিনা শাহেদকে লোহার রড দিয়ে মারছিল। আর সোহেলের হাতে দেখি একটা পিস্তল। যা হবার তা হয়ে গেছে। এদিকে শাহেদের অবস্থা খারাপ।

কাকে সামলাবো?? অন্যদের বল্লাম তোরা শাহেদকে নিয়ে মেডিকেল চলে যা। আমি সোহেলকে হেচকা টান দিয়ে তার হাত থেকে পিস্তলটি কেড়ে নিয়ে পুকুরে ছুড়ে ফেল্লাম। তাকে নিয়ে মহুর্তেই সরে পড়লাম সেখান থেকে। কিরে তুই ওইটা পাইলি কই?? এক বড় ভাই রাখতে দিছিলো। তো বিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসলি কেন ওইটা ?? কোনদিন হাতে নিইনাইতো তাই ভাবলাম সাথে নিয়ে একটু ঘুরে বেড়াই।

আর গুলি করতে গেলি কেন?? ওইটাতো মনে হয় বাচঁবেনা। ওর একটাই কথা মরুক শালা, ওকে শুয়োরটা এভাবে মারলো কেন?? তুই জানিসনা ও আমার কতো আপন বন্ধু। আমার জন্ডিস হয়েছিল। আমার মা আমাকে ঠিক মতো অষুধও দিতে পারতোনা টাকার অভাবে। তখন সে প্রতিদিন ৩ মাইল হেটে আমাকে দেখতে যেতো।

অষুধ, জাম্বুরা, ডাব, আখঁ কাধেঁ করে বয়ে নিয়ে যেতো দীর্ঘ পথ আমার জন্য। আমার পাশে বসেই থাকতো। আমি নিজে নামায পড়তামনা। অথচ সে আমার জন্য নফল নামায পড়ে দোয়া করতো, রোযা রাখতো। কই অন্য কেউতো আমাকে একটিবার দেখতেও যায়নি?? তার জন্য করবোনাতো কার জন্য করবো?? তার শরীর থেকে কেউ রক্ত ঝড়াবে আর আমি চেয়ে চেয়ে দেখবো?? সে শিবির হোক, ছাত্রলীগ হোক কিংবা বিএনপি।

বন্ধুত্বের ভিতর কোন পার্টি থাকেনা। কোন জাত থাকেনা। কোন ধর্ম থাকেনা। এদিকে শাহেদের অবস্থা বেগতিক। কেমনে কেমনে জানি বেচেঁ যায়।

অনেক দিন হাসপাতালে থেকে সুস্থ হয়ে বেরুলেও মাথায় বড় ধরনের আঘাত পাওয়ায় অনেক দিন এ্যাবনরম্যাল ছিলো। আমাদের ছিনতোনা। শালা সোহেলকে ঠিকিই চিনতো। পরে সুস্থ হয়ে উঠলে তার বাবা তাকে বিদেশ পাঠিয়ে দেয়া হয়। সোহেলকেও গোপনে শাহেদের বাবা টাকা পয়সা দিয়ে বিদেশ পাঠিয়ে দেয়।

আমি চলে এলাম শহরে। সব এলোমেলো হয়ে গেল। আমাদের হাসিখুশি দিনগুলো হারিয়ে গেল মুহুর্তেই। এক বন্ধুকে বাচাঁতে গিয়ে আরেক বন্ধু হয়ে গেল দাগী আসামী। সেসব বন্ধুদের একাকী এখন খুব মিস করি।

জানিনা কে কোথায় আছে। যেখানেই থাকুক বন্ধুরা তোমরা ভালো থেক। ------------------------------------------------------------------------ ব্লগে আসার পর থেকে একটা জিনিস লক্ষ্য করছিযে, একে অন্যকে উৎসর্গ করে পোষ্ট দিচ্ছে। তাই ভাবলাম আমিও দিয়ে দিই। কিন্তু বিপত্তি হলো কাকে দেবো?? আমারতো এখনো তেমন প্রিয় বলতে কাউকে জানা হয়নি।

তাই ভাবলাম যে মানুষটি আমার ব্লগ বাড়িতে প্রথম এসে কমেন্ট করে আমার উৎসাহ দিয়েছিলেন তাঁকেই উৎসর্গ করে দিই। তাই সেই আমার প্রথম ভাললাগার ব্লগারটিকে উৎসর্গ করলাম আমার বন্ধুদের নিয়ে ছোট্ট এই পোষ্ট খানা। আর সেই ব্লগারটি হলো ফাইরুজ মানুষ জীবনের সব প্রথম বিষয়কে খুব ভালো করেই মনে রাখে। আমারও থাকবে মনে হয়। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।