আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

৭ মাসে গণপিটুনিতে মৃত্যু ৮৮

সারা দেশে গণপিটুনির ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। গত সাত মাসে দেশে গণপিটুনিতে ৮৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এ ঘটনায় থানায় মামলা হলেও অধিকাংশ ঘটনাতেই যথাযথ তদন্ত করেনি পুলিশ। মূলত তদন্ত হয় দায়সারা গোছের। ফলে নিহতদের পরিবার হত্যাকাণ্ডের সঠিক বিচার পাচ্ছে না।

কোনও-কোনও ঘটনা ঘটেছে খোদ পুলিশের প্রত্য ও পরো মদদে। আর আসামিরা থেকে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। কোনও-কোনও ঘটনায় গণগ্রেপ্তারের নামে পুলিশি বাণিজ্যের অভিযোগও আছে। দেশে একের পর এক গণপিটুনির ঘটনাকে বিশিষ্টজনরা সংক্রামক হিসেবেও চিহ্নিত করেছেন। দ্রুত এ ধরনের হত্যাকাণ্ড বন্ধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে কার্যকর ভূমিকা নিতেও পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

বলেছেন, গণপিটুনিজনিত মামলাগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত না হওয়ায় অপরাধীরা তাদের ব্যক্তিগত আক্রোশ মেটাতে অথবা স্বার্থ হাসিল করতেই অহরহ এ জাতীয় ঘটনা ঘটাচ্ছে। নোয়াখালীর টেকারবাজার এলাকায় শামছুদ্দিন মিলনকে পুলিশের গাড়ি থেকে রাস্তায় নামিয়ে ‘ডাকাত’ বলে ধাওয়া দেয় পুলিশ। এ সময় উত্তেজিত জনতা মিলনকে ডাকাত মনে করে পিটিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনায় ওসিসহ চার পুলিশ সদস্যকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। মিলনের ঘটনা ছাড়া অন্য কোনও গণপিটুনিতে পুলিশের নিস্ক্রিয়তা বা পুলিশের মদদ দান করার অভিযোগ উঠলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

বরং পুলিশ বিভিন্ন গণপিটুনির ঘটনায় দায়ের করা মামলা তদন্তকালে কারা ঘটনা ঘটিয়েছে, কেন ঘটিয়েছে তার প্রকৃত কারণ উৎঘাটন না করে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের তদবিরে বা আর্থিক কারণে অপরাধীদের রায় একটি দায়সারা প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করে। বাংলাদেশ মানবাধিকার সংস্থার এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত জানুয়ারি মাসে ৭ জন, ফেব্র“য়ারি মাসে ১৪ জন, মার্চ মাসে ১০ জন, এপ্রিল মাসে ২২ জন, মে মাসে ১৫ জন ও জুলাই মাসে ২০ জনসহ মোট ৮৮ জন গণপিটুনিতে মারা গেছেন। শবে-বরাতের রাতে আমিনবাজারের ৬ ছাত্রকে ডাকাত আখ্যা দিয়ে গণপিটুিনতে হত্যা করা হয়। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া আল-আমিন বলেছেন, পুলিশের সামনে তাকে পিটুনি দেওয়া হয়েছে। বাঁচার জন্য আল-আমিন পুলিশের পায়েও ধরেছিল।

পুলিশের এক কর্মকর্তা আল-আমিনকে ডাকাতি করতে সেখানে গিয়েছিল এমন স্বীকারোক্তি দিলে তাকে বাঁচানোর শর্ত দেয়। আল-আমিন রাজি হলে থানায় নিয়ে হাতে অস্ত্র ধরিয়ে দিয়ে তাকে ডাকাতি মামলার আসামি করে পুলিশ। সাভার থানার ওসি বলেন, ওই মামলায় পুলিশ দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা কী বলেছে তা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বলতে পারবেন বলে জানান ওসি।

গত বছরের ৬ নভেম্বর রাতে রাজধানীর শ্যামপুর-কদমতলী এলাকায় ডাকাত সন্দেহে ৫ জনকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করে এলাকাবাসী। নিহতের পরিবারের প থেকে অভিযোগ করা হয়েছিল তারা ডাকাত ছিল না। ডাকাত আখ্যা দিয়ে তাদের পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ওই ঘটনায় মামলা হলেও পুলিশ তদন্ত করে কারা ঘটনাটি ঘটিয়েছে, তা উদঘাটন করেনি। একই বছর গত ১৮ নভেম্বর রাতে হারিয়ে যাওয়া ট্রাক খুঁজতে গিয়ে কেরানীগঞ্জে গণপিটুনিতে নিহত হন রাজধানীর দণিখানের ১ যুবক।

এ ঘটনায় আহত হন আরও ৬ যুবক। নিহতের স্বজনদের অভিযোগ ছিল, যারা ট্রাক চুরি করেছে তারাই গণপিটুিন দিয়ে ট্রাক মালিকের লোকজনকে হত্যা করেছে। পুলিশের সাবেক আইজিপি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এএসএম শাহজাহান বলেছেন, দণ্ডবিধির ৩০৪ ধারায় বলা আছে, কাউকে গণপিটুনি দিয়ে মেরে ফেলা হলে তা খুন হিসেবে গণ্য হবে। এর শাস্তি হবে যাবজ্জীবন। তিনি আরও বলেন, গণপিটুিন এক ধরনের সংক্রামক ব্যাধি।

অপরাধীদের শাস্তি দেওয়া না হলে এটা মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়বে। পুলিশের কাজ এখনই এর সংক্রমণ বন্ধ করা। তা না হলে ক্রিমিনাল ও জনগণ অহরহ ক্রাইম করতেই থাকবে। একজন লোক খারাপ হলেও তাকে গণপিটুনি দিয়ে মারা যাবে না। এটা অসাংবিধানিক।

যারা এ ধরনের কাজে সহায়তা করেন তারা হত্যাকাণ্ডের সহযোগী। পুলিশের দায়িত্ব হবে এসব কাজ প্রতিরোধ করা। কিন্তু প্রতিরোধমূলক কাজ না করে যারা প্রশ্রয় দেয়, ব্যর্থতার দায়ে তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড.মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের বলেছেন, জনগণ নিজেদের উদ্দেশ্য হাসিল করতে গণপিটুনির ঘটনা ঘটাচ্ছে। আর পুলিশও রেফার করছে গণপিটুনিতে।

গণপিটুনি হলে পুলিশের কোনও দায়দায়িত্ব নেই। পুলিশ গণপিটুনিকে এক ধরনের আইনি বৈধতা দিচ্ছে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।