আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বয়স কমানো অতি সহজ।

লহড়ী যখন এইচ. এস. সির জন্য কলেজে ভর্তি হবে তখন দেখা গেল বিপত্তি। লহড়ীর বয়স কাগজে কলমে ১৪ তবে অতি ভাল কলেজগুলো সুকড়া নিয়ম অনুযায়ী বেশি বয়স্ক ছাত্র ছাত্রীদের অগ্রাধীকার দিচ্ছে। অনেক রেজাল্ট ভাল থাকা সত্তেও হল না লহড়ীর। অপরদিকে তার এক বান্ধবী ১৬ বছর যার বয়স ঝামেলা ছাড়াই পার পেল। এতে কি লহড়ীর ও তার বাবা মা বসে থাকবে?? না।

খবরের কাগজ লেগে গেল এই বলে যে এই লহড়ী এবং তার মতই আরও বাঘা বাঘা ছাত্র ছাত্রী ,যারা স্কুলে ৯০% নম্বর পেত তারা ভাল কলেজে ভর্তি হতে পারল না। অথচ তাদের বয়স কম ,অর্থাৎ তারা বেশি মেধাবী!এই অবিচারের সুবিচার চাই...। ইত্যাদি ,ইত্যাদি। আমি ৬০ বছর আগের এক কাহিনীতে বেড়াতে গিয়েছিলাম, এই ধরেন আপনার না্না বাবার বয়সী এক মানুষের জীবনের কথা। তিনি যখন মেট্রিকুলেশন পরীক্ষার জন্য ফর্ম ভরছিলেন তখন মাকে জিজ্ঞেশ করেছিলেন,’ মা আমার ক্লাসের সবাই নিজের আসল বয়স না লিখে বয়স কমায় লিখতেছে, নিজেরাও না, স্যার ই বানায় বানায় জন্ম তারিখ আর সাল লিখে দিতেছে।

‘ মা বললেন তুই কমাবি ক্যান? বাড়ায় লিখ! তিনি বাড়িয়ে লিখেছিলেন,তবে স্যার যে জন্ম তারিখ লিখে দিয়েছিল সেইটাই স্থায়ী হয়ে গেল, কালের চাকায় মূল দিনটি হারিয়ে গেল। কর্মজীবনে তিনি সমসাময়ীকদের চেয়ে ৪ বছর আগে আবসরে গেলেন কারন সবাইতো দুই বছর করে বয়স কমিয়েছিল। আমাদের অতি প্রিয় হুমায়ূন আহমেদের জন্ম সালও দুইটি,তিনি এটি অকপটে স্বিকার করেছেন। এতে খুব গর্বের কিছু নেই। আমাদের দেশের শিক্ষীত সমাজের কিছু মহিলা একটা বড় বিরক্তিকর কাজ করে থাকেন।

ধরুন এক ছেলের মা পাত্রি দেখতে গেল, মেয়ের বয়স জিজ্ঞেস করলেন। মেয়ের মা বলল একটা বয়স বলল এবং ছেলের মা ধরে নিল যে দুই বছর কমিয়ে বলা হয়েছে। এতে যদি মেয়ের বয়স ছেলের চেয়ে বেশি হয় তাহলে সে অপছন্দের পাত্রি! আমার নিজের জীবনে এই বয়স কমানর ব্যাপার দেখে আমি ব্যাথিত। ফর্ম ফিল-আপ করার সময় শিক্ষকই বলেছিলেন রোটারি পাবলিক থেকে এফিডেভিট করা সনদ আনতে যেখানে আমার মন মত জন্ম সাল এবং জন্ম তারিখ থাকতে পারবে,ও হ্যা এস এস সি পাস করার ন্যূনতম বয়স ১৪ বছর, মনে রাখতে হবে। ক্লাসে এই সনদ আনার ধুম পরেছিল।

আমার মা আমাকে বলেছিলেন, ‘এটা একটা fraud এর কাজ! কারন তোমার জীবনের শুরুই বলা যায় এখন ,আর তুমি শুরুটাই একটা বড় মিথ্যা দিয়ে করবা ক্যান? অন্যদের ছেয়ে দুই বছর বেশী সরকারি চাকরি করে তুমি কি এমন পূন্য করতে পারবে বলত?’ ক্লাসে আমরা ৭ বন্ধু ছিলাম যাদের কেওই বয়স কমানর হুজুকে পরিনি আর আলগা সনদ ও জোগার করতে হয়নি। আবশ্য আমার নানি আমাকে বকেছিলেন এই বলে যে , ‘তোমরা কিছু বুঝনা। আমি সরকারি চাকরি করি নাই? আমার চেয়ে ভাল বুঝ? এই কদিন পর ভার্সিটিতে যাবা, সেশন জ্যাম, কবে পাশ করবা ঠিক নাই, তারপর বিসিএস দিলে কয়বারে চান্স পাবা জানি না। দুই এক বছর বয়স কমালে কি হত? দুই একবার বেশি বিসিএস দেওয়া যেত। ‘ আসলে......।

দুই বছর বা তিন বছর বেশি চাকরি করা যেত দুই বছর বেশি সুবিধাভোগ করা যেত, মিথ্যাকে মাথায় নিয়ে আর কিছুদিন চলা যেত,আহা! কত ভাল হত! বাস্তবতা আমাদের অনেক কিছুই করতে বাধ্য করে। তবে এই দেড়িতে পরাশোনা শেষ হওয়া , চাকরি পেতে গিয়ে বুড়িয়ে যাওয়া, ইত্যাদি ঘটনার মূল হোতা যারা তাদের ঠিক করা দরকার। আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন আনাতো আরও প্রয়োজন । আমাদের দেশের জনগনের সুবিধাভোগ করার ইচ্ছা প্রবল। যুক্তিসম্মতক্রমেই দেখি , প্রথম শ্রেনীর একজন শিক্ষারথীর বয়স কোনমতেই ছয় বছরের কম হয় না।

আজকাল তো আট বছরও হয়ে যায় ভর্তি কোচিং করতে করতে। তাহলে সর্বনিন্ম ১৬ বছর বয়সে এস এস সি এবং ১৮ বছরে এইচ এস সি খতম হয়। বাংলাদেশের নিয়ম অনুযায়ী কোন বাচ্চাকে ১৪ বছরে এস এস সি শেষ করতে হলে ৪ বছর বয়সে ১ম শ্রেনীতে পড়া লাগবে। হাস্যকর এই কারনে যে , তাহলে সেই বাচ্চার আই কিউ ১৩০ এর উপরে হতে হবে। Certificate অনুযাইয়ী এই দেশের বেশীরভাগ মানুষের আই কিউ ১৩০ এর উপরে! বাহ! আমাদের দেশের অতি দূর্লভ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশন জট, দেশে মানুষ বেশি-চাকরির ক্ষেত্র কম, তাই বলে কি নিজেকে দূষিত করার দরকার আছে? জ্ঞান অর্জনের চেয়ে কি অসৎ কাজ করা বেশি জরুরি? দুইটা জন্মতারিখ বানিয়ে দুইটাই পালন করা খুব আনন্দের? জীবনতো আর থেমে থাকছে না, না কমালেই কি।

এই কাজ করতে যে সময় ব্যয় হয় সেটা আরও ভাল কাজে ব্যয় করা যায়। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।