আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ক্লাউড কম্পিউটিং; ভবিষ্যতের প্রযুক্তি

Never argue with idiots. They bring you down to their level and then beat you with experience ইন্টারনেট নির্ভর কম্পিউটিং প্রযুক্তির অপর নাম ক্লাউড কম্পিউটিং। এই প্রযুক্তি ইন্টারনেট এবং কেন্দ্রীয় রিমোট সার্ভার ব্যবহারের মাধ্যমে ডাটা এবং এপ্লিকেশন নিয়ন্ত্রণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারে। এছাড়া এর মাধ্যমে অনায়াসে যেকোন কম্পিউটারে ইন্টারনেট ব্যবহার করে কোন প্রকার সফটওয়্যার কিংবা এপ্লিকেশনসমহ ইনস্টল ছাড়া নিজস্ব ফাইলগুলো ব্যাবহার করা যায়। এতে সফটওয়্যার, ফাইল এবং সেবা সমূহ একটি নির্দিষ্ট কম্পিউটারে সীমিত থাকে না। বরং এই তথ্যসমূহ থাকে উন্মুক্ত, ইন্টারনেটের মাধ্যমে যে কোনো স্থান হতে যে কোনো কম্পিউটার হতে এতে প্রবেশ করা যায়।

সহজ কথায় ক্লাউড কম্পিউটিং হলো এমন একটি কম্পিউটিং প্রযুক্তি যার ব্যাবহারকারীর নিজের পিসিতে কোন অ্যাপ্লিকেশন থাকার প্রয়োজন নেই। এমনকি হার্ড ডিস্ক টুকুও না ! শুধু ইন্টারনেট-এ কানেক্ট করে নির্দিষ্ট ঠিকানায় গিয়ে ইউজারনেম/ পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করলেই পাওয়া যাবে পিসির মতন একটি অপারেটিং সিস্টেম। অর্থাৎ এই ব্যাবস্থায় কম্পিউটারভিত্তিক যে কোন তথ্য এবং সেবা হবে মুক্ত। কি ধরনের সেবা পাওয়া যাবে ক্লাউড প্রযুক্তি ব্যবহারকারীদের যে কোন এপ্লিকেশন চালুর সময় কমিয়ে দ্রুতগতির সার্ভার ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে। হার্ড ডিস্ক ক্রাশসহ বিভিন্ন অবকাঠামোগত ঝুঁকি কমিয়ে দেবে এই প্রযুক্তি।

তবে সবচাইতে বড় ব্যাপারটি হল একজন ব্যবহারকারীকে এর জন্য কোনো বিনিয়োগ করতে হয় না। ক্লাউড কম্পিউটিং এর সেবা মুলত তিন ধরনের - অন ডিমান্ড অ্যাপ্লিকেশন্স (সফটওয়্যার সেবা হিসেবে), কম্পিউটিং ইনফ্রাস্ট্রাকচার (যেমন অ্যামাজন ওয়েব সেবা) এবং ইন্টারনাল ফ্লাউড ( নিজস্ব সেবা)। একটি কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট সংযোগ থাকলে ব্যবহারকারী বিদ্যমান এই সেবাসমূহ পেতে থাকবে। এতে কোনো সফটওয়্যার বা প্রোগ্রাম ব্যবহারের প্রয়োজন হবে না। ক্লাউড কম্পিউটিং এর প্রসার ক্লাউড কম্পিউটিং এর ধারনা প্রথম চালু হয় ১৯৯০ সালের দিকে।

সে সময় টেলিকমিউনিকেশন প্রতিষ্ঠানসমূহ এর মাধ্যমে ক্লাউড কম্পিউটিং এর সূত্রপাত ঘটে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ডেটা সার্কিট যা ভিপিএন (ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক) সেবা চালু করার ঘোষণার ফলে। এরপর ২০০৫ সালে অ্যামাজন তাদের ওয়েব সার্ভিসের মাধ্যমে ইউটিলিটি কম্পিউটিং এর ভিত্তিতে সেবা শুরু করে। তবে ইন্টারনেটনিভর কম্পিউটিং এই ধারণায় প্রথম এগিয়ে আসে কম্পিউটার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান আইবিএম। ২০০৭ এর ১৫ নভেম্বর সাংহাইয়ে ব্ল–-ক্লাউড নামে তাদের একটি কম্পিউটার চালু করা হয়। এছাড়া একই বছর গুগল এবং আইবিএম যৌথভাবে কিছু সংখ্যক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহকে সঙ্গে নিয়ে ক্লাউড কম্পিউটিং গবেষণা প্রজেক্ট শুরু করে এবং ২০০৮ সালের মাঝামাঝি এটি একটা পর্যায়ে চলে আসে।

২০০৯ সালের শুরুর দিক হতে বিশ্বের বড় বড় আইটি প্রতিষ্ঠানে ক্লাউড কম্পিউটিং নিয়ে তাদের কার্যক্রমে গতিশীলতা আনতে থাকে। এক সমীক্ষায় লক্ষ্য করা গেছে, যে কোনো প্রতিষ্ঠান তাদের আইটি বাজেটে প্রায় ১৮ শতাংশ ব্যয় কমিয়ে আনতে পারে এই প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে। তাছাড়া ডেটা সেন্টারসমূহ তাদের ব্যয়ের ১৬ শতাংশ কমিয়ে আনতে সক্ষম হয় এই প্রযুক্তির প্রসারে। ক্লাউড কম্পিউটিংয়ে খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানসমূহ আগামী দিনে ক্লাউড কম্পিউটিং এর ব্যাপকভাবে প্রসার ঘটতে যাচ্ছে। বিভিন্ন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানসমূহ এ ব্যাপারে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।

মূলত এটি একটি সাশ্রয়ী প্রযুক্তি হিসেবে অনেক প্রতিষ্ঠানই এ বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করছে। ২০০৭ সাল থেকেই ইয়াহু, মাইক্রোসফট, গুগল এই প্রয–ক্তির উন্নয়নে মনোনিবেশ করেছে। ২০১১ সালে এসে মাইক্রোসফট জানিয়েছে এর শতকরা ৭০ ভাগ কর্মকর্তা ও কর্মচারী কাজ করছে ক্লাউড সম্পর্কিত প্রজেক্ট নিয়ে এবং আগামী এক বছরের মধ্যে তা শতকরা ৯০ ভাগে দাঁড়াবে। মাইক্রোসফট্ এর প্রধান নির্বাহী স্টিভ বলমার এর মতে, ক্লাউড প্রযুক্তির জন্য প্রয়োজন স্মার্ট ডিভাইসমূহ। তিনি বলেন নতুন উইন্ডোজ ৭ সিরিজ এর মোবাইল অপারেটিং সিস্টেমের ডিজাইন করা হয়েছে এই ধারনার উপর ভিত্তি করে।

এছাড়া মাউক্রোসফট ভারতে ক্লাউড কম্পিউটিং নির্ভর অপারেটিং সিস্টেম চালু করেছে। এর নাম দিয়েছে “উইন্ডোজ আজুর”। তবে এই প্রযুক্তিকে সহজে ব্যবহার উপযোগী করতে গবেষণা চলছে এখনও। একনজরে ক্লাউড প্রযুক্তির সুবিধাসমূহ ১. ক্লাউড কম্পিউটিংয়ে যেকোন কম্পিউটার, স্মার্টপ্যাড এবং স্মার্টফোন ব্যাবহার করে পৃথিবীর যেকোন জায়গা থেকে যেকোন তথ্যের সুবিধা পাবেন। ২. এই প্রযুক্তিতে সফটওয়ার ইন্সটল করতে হবেনা।

৩. হার্ডওয়ার কিংবা সফটওয়্যার আপগ্রেড করার ঝামেলা নেই। ৪. কম্পিউটিং এর সর্বোচ্চ সুবিধাটুকু নিশ্চিত করা সম্ভব। ৫. আনলিমিটেড ডাটা স্টোরেজের সুবিধা। ফলে তথ্য রাখা এবং সুরক্ষিত রাখার সুবিধা পাওয়া সম্ভব। তবে ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের জন্য যে জিনিসটি সবচেয়ে বেশি দরকার তা হল দ্রুত গতির ইন্টারনেট সংযোগ।

আর এটিই হবে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর ক্লাউড কম্পিউটিং সুবিধা গ্রহণে একটি বড় বাধা। এছাড়া আরেকটি বড় সমস্যা বিষয়ে নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তা হল হ্যাকিং তথা নিরাপত্তার অভাব। এই সমস্যাগুলো দূর করা সম্ভব হলে ক্লাউড কম্পিউটিং পরিণত হবে ইন্টারনেটে তথ্যসেবার এক অবারিত দিগন্তে। ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের বিভিন্ন পরীক্ষামূলক সেবা ব্যাপারটা এখনো তেমন একটা পরিচিতি না পেলেও এরই মধ্যে কয়েকটি কোম্পানি ক্লাউডনির্ভর হোস্টেড ওএস অনলাইনে অবমুক্ত করেছে। এদের মধ্যে কয়েকটি হল- ঘোষ্ট অফিস স্যুইটের জন্য গুগল ডকুমেন্টস ব্যাবহার করা তৈরি করা হয়েছে এই ক্লাউড ওএসটি।

ইমেইল ক্লায়েন্ট, মিউজিক প্লেয়ার, ফ্লিকার সার্চ, মেসেঞ্জার সহ এটিতে আরও আছে একটি অতিরিক্ত বিল্টইন ব্রাউজার। এটি ফাইল রাখার জন্য ১৫ গিগা স্টোরেজ স্পেস দিচ্ছে। ঠিকানা - http://ghost.cc/?language=en গ্লাইড ও.এস নিজস্ব ওয়ার্ডপ্রসেসর, স্প্রেডশিট, প্রেজেন্টেশন, ইমেইল ক্লায়েন্ট সহ অনলাইন মিটিং করার ব্যাবস্থা রয়েছে ক্লাউডনির্ভর হোস্টেড এই ওএসটিতে । গ্লাইড ও.এস ১০ গিগা ওয়েব স্পেস দেবে দরকারি ডকুমেন্টস রাখার জন্য। ২৫০ টি ফাইল ফর্ম্যাট সাপোর্ট করা এই সেবাটিতে আরো রয়েছে মিউজিন প্লেয়ার এবং বেসিক ফটোএডিটর।

ঠিকানা - http://www.glideos.com স্টার্টফোর্স ১ গিগা স্টোরেজ স্পেস, নিজস্ব ওয়েব ক্লায়েন্ট, ওয়ার্ডপ্রসেসর, স্প্রেডশিট, প্রেজেন্টেশন, মেসেঞ্জার এবং অডিও প্লেয়ার নিয়ে প্রায় পরিপূর্ণ একটি সিস্টেম। ঠিকানা - http://www.zeropc.com  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।