আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বড় দুই দলের ডাকাডাকি, কদর বাড়ছে ছোট দলের

বড় দুই দলের নজর পড়ায় কদর বাড়ছে ছোট দলগুলোর। ক্ষমতার রাজনীতিতে এত দিন অবহেলায় থাকলেও এখন হঠাৎ তারা গুরুত্ব পেতে শুরু করেছে। দুই দলের সঙ্গে সকাল-বিকেল বৈঠক করছেন ছোট দলের বড় নেতারা। দেশের দুই প্রধান দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি হঠাৎ রাজনৈতিক মিত্রের সন্ধানে নেমেছে। উভয় দল মহাজোট ও চারদলীয় জোট নামে ভিন্ন দুটি রাজনৈতিক শক্তির নেতৃত্বে থাকলেও তারা আরও কিছু ছোট দলকে নিজ নিজ জোটে ভেড়ানোর চেষ্টা করছে।

শরিক দলগুলোর সঙ্গে দূরত্ব কমিয়ে ঐক্য সংহত করার উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা, ছোট দলগুলোর রাজনৈতিক অবস্থান যা-ই থাকুক, রাজনৈতিক গুরুত্বের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই এসব দলকে বড় দুই দল জোটে টানছে। পুরোনো শত্রুর প্রতি বন্ধুত্বের হাত: আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে বাংলাদেশ ‘কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ’ নামে নতুন দল গঠন করেছিলেন কাদের সিদ্দিকী। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে দলটির প্রতিষ্ঠার দিনে আওয়ামী লীগের কর্মীরা হামলা করেছিলেন। কাদের সিদ্দিকী নিজেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সন্তান দাবি করলেও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর ভালো সম্পর্ক নেই।

একইভাবে বিএনপি থেকে বেরিয়ে এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বিকল্পধারা এবং অলি আহমদ এলডিপি গঠন করেন। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে বিকল্পধারার কর্মসূচিতে অংশ নিতে গিয়ে মহাখালীতে লাঞ্ছিত হন বদরুদ্দোজা চৌধুরী। দলটির মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নানের শিল্পপ্রতিষ্ঠানে বিএনপির কর্মীরা ভাঙচুর চালান। একইভাবে বিএনপি ক্ষমতা ছাড়ার কিছু আগে দল থেকে বেরিয়ে অলি আহমদ এলডিপি গঠন করেন। সেই দলে যোগ দেওয়া এক নেতার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানেও হামলা করেছিলেন বিএনপির কর্মীরা।

তখন অলি আহমদ সংবাদ সম্মেলন ডেকে বলেন, আবার হামলা হলে দাঁতের বদলে দাঁত নেওয়া হবে। এগুলো এখন অতীত। এই তিন দলের সঙ্গেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ঐক্য গড়ার উদ্যোগ নিয়েছে। উভয় দল একাধিক বৈঠক করেছে তাদের সঙ্গে। শুরু বিএনপির: সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হওয়ার পর থেকেই বিরোধী দল বিএনপি নতুন রাজনৈতিক মিত্রের সন্ধানে নামে।

চারদলীয় জোট ছাড়াও দলটি সমমনা এনডিপি, জাগপা, ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশ, ভাসানী ন্যাপসহ কয়েকটি দলের সঙ্গে অঘোষিত ঐক্য গড়ে তোলে। বিএনপির সঙ্গে এই দলগুলো সরকারবিরোধী যুগপৎ কর্মসূচিতেও অংশ নেয়। কয়েকটি ধর্মভিত্তিক দলের হরতালেও বিএনপি সমর্থন দেয়। এ ছাড়া নতুন মিত্র বাড়াতে বিএনপির নেতারা সিপিবি, বিকল্পধারা, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ও এলডিপির সঙ্গে বৈঠক করেন। মহাজোটের শরিক কিছু দলের সঙ্গেও তাঁরা যোগাযোগ করছেন বলে জানা গেছে।

বিএনপির নেতারা তাঁদের কাছে দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় খালেদা জিয়া কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে বৈঠক করেন। অলি আহমদের নেতৃত্বাধীন এলডিপির চারদলীয় জোটে যোগ দেওয়ার বিষয়টি বিএনপির নেতাদের নিশ্চিত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, গণতন্ত্রের পথ এখন রুদ্ধ হতে চলেছে। সে জন্য গণতন্ত্রের পক্ষের ও বিপক্ষের শক্তির মেরুকরণ হবে।

তবে খুব কমসংখ্যক দল থাকবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে। এমনকি মহাজোটের অনেক ছোট দলও গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তির সঙ্গে চলে আসবে। তিনি বলেন, জোটের পরিধি বাড়ানোর চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। তবে এটা কখন কোন পর্যায়ে হবে, তা এখনই বলা মুশকিল। সবকিছুই নির্ভর করছে আন্দোলনের গতির ওপর।

আওয়ামী লীগের দৌড়ঝাঁপ: বিএনপি ছোট দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক শুরু করায় টনক নড়ে আওয়ামী লীগের। জানা গেছে, দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদের, সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক হাছান মাহমুদ ছোট দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন। একই সঙ্গে তাঁরা মহাজোটের শরিক দলগুলোর সঙ্গেও কথা বলতে থাকেন। এই মুহূর্তে মহাজোট সম্প্রসারণের দলীয় চিন্তা না থাকলেও অনেকটা কৌশল থেকেই ছোট দলের সঙ্গে বৈঠক করছেন তাঁরা। আওয়ামী লীগের নেতারা এখন পর্যন্ত কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ও এলডিপির সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

সিপিবি, বিকল্পধারা, জাসদ (রব), কল্যাণ পার্টি, বাসদের সঙ্গে তাঁরা যোগাযোগ করেছেন। আজ তেল-গ্যাস রক্ষা কমিটির সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা। এ ছাড়া মহাজোটের শরিক দলের নেতাদের সঙ্গে তাঁরা কথা বলছেন। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য মহাজোটের ঐক্য সুসংহত করা। এ ছাড়া রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা এবং রাজনৈতিক অভিন্ন বিপদ মোকাবিলায় অন্য দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় করছি।

’ হিসাব-নিকাশে ব্যস্ত ছোট দলগুলো: সূত্রগুলো জানায়, দুই দলের টানাটানিতে ছোট দলগুলো নানা হিসাব-নিকাশ কষছে। কার সঙ্গে গেলে কতটুকু রাজনৈতিক সুবিধা-অসুবিধা হবে, তা নিয়ে ব্যস্ত তারা। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে তৃতীয় কোনো রাজনৈতিক ধারা গড়ে ওঠার সম্ভাবনা না থাকায় দলগুলো মহাজোট অথবা চারদলীয় জোটেই যেতে চায়। তা ছাড়া দলগুলোর নেতাদের বড় দুই দলের বাইরে গিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে অনেকে মনে করেন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের অভিমত, বড় দলের ছোট নেতা হওয়ার চেয়ে ছোট দলের বড় নেতা হওয়ার সুবিধা বেশি।

তবে সিপিবি ও বাসদের কোনো জোটে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানা গেছে। যোগাযোগ করা হলে কাদের সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, ‘জোটবদ্ধ বা ঐক্যবদ্ধ রাজনীতি কোনো নতুন বিষয় নয়। যখন কয়েকটি দল একই ইস্যুতে মতৈক্যে পৌঁছায়, তখন জোট হতে পারে। বিএনপির মতো আমার দলও মনে করে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না, এটা থাকা উচিত। এ জন্য বিএনপির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।

আর আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে আমার সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। এই আদর্শে আমি বিশ্বাসী। তাই সেই দলের সঙ্গেও নানা ইস্যুতে একসঙ্গে কাজ করার ব্যাপারে প্রস্তাব এসেছে। আমি এগুলো বিবেচনা করছি। ’ এলডিপির যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির সঙ্গে তাঁর দল বিভিন্ন বিষয়ে একমত হয়েছে।

পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিলের মতো বিষয়টি দেশে রাজনৈতিক সংকট তৈরি করেছে। তাই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য স্থাপন জরুরি। এলডিপি বিএনপির সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। সূত্রঃ প্রথম আলো ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।