আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চলে গেলেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট বিজ্ঞানী জামাল নজরুল ইসলাম ।। রেজা ঘটক

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা... আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বাংলাদেশের বিশিষ্ট বিজ্ঞানী অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম গতকাল শুক্রবার রাত একটায় (১৬ মার্চ ২০১৩) চট্টগ্রাম নগরের মেট্রোপলিটন হাসপাতালে চিকিত্সাধীন অবস্থায় মারা যান। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। তিনি ফুসফুসের সংক্রমণ ও হূদরোগের নানা জটিলাজনিত কারণে কয়েক দিন আগে ওই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ভৌতবিজ্ঞানী, পদার্থবিজ্ঞানী, গণিতবিদ, জ্যোতির্বিজ্ঞানী, বিশ্বতত্ত্ববিদ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ছিলেন। অধ্রাপক জামাল ছিলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সিন্ডিকেট সদস্য।

জামাল নজরুল ইসলাম ১৯৩৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ঝিনাইদহ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে লেখাপড়া করার পর তিনি মেরিট লিস্টে পাকিস্তানের লরেঞ্জ কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে তিনি সিনিয়র ক্যামব্রিজ ও উচ্চতর সিনিয়র ক্যামব্রিজ পাশ করেন। এরপর তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সেন্ট জ্যাভিয়ার কলেজ থেকে বিএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর ১৯৬৪ সালে তিনি লন্ডনের ক্যামব্রিজের ট্রিনিটি কলেজ থেকে বিএ ও এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন।

এরপর ১৯৮২ সালে তিনি লন্ডনের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফলিত গণিত ও তত্ত্বীয় পদার্থবিদ্যায় পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত তিনি কেমব্রিজের ইনস্টিটিউট অফ থিওরেটিক্যাল অ্যাস্ট্রোনমিতে কাজ করেন। এরপর তিনি ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি এবং ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার পর ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত লন্ডনের কিংস কলেজে ফলিত গণিত বিভাগে অধ্যাপনা করেন। ১৯৭৮ সালে তিনি লন্ডনের সিটি ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন এবং ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত সেখানে ছিলেন। ১৯৮৪ সালে দেশে ফিরে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন পরে এখান থেকেই অবসর গ্রহন করেন।

কুলজীবন থেকেই তিনি গণিতের প্রতি ভীষনভাবে অনুরাগী ছিলেন। ক্যালকুলেটর ব্যবহারে অনীহার পরিবর্তে তিনি গণিতের জটিল হিসাব মুখেমুখে করতেই স্বচ্ছন্দ বোধ করতেন। অধ্যাপনার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সংগঠকদেরও প্রেরণা যোগাতেন অধ্যাপক জামাল। দেশের উন্নয়ন নিয়েও তাঁর ভাবনা ছিল প্রবল। ১৯৭১ সালে তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি লিখে বাংলাদেশে পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণ বন্ধের উদ্যোগ নিতে বলেছিলেন।

তাঁর 'দি আল্টিমেট ফেইট অফ দি ইউনিভার্স' বইটি ১৯৮৩ সালে প্রকাশের পর সারা বিশ্বের বিজ্ঞানী মহলে বিশেষভাবে সাড়া জাগায়। বইটি জাপানি, ফরাসি, পর্তুগিজ ও যুগোশ্লাভ ভাষায় অনুদিত হয়। ক্লাসিক্যাল জেনারেল রিলেটিভিটি, রোটেটিং ফিল্ড্‌স ইন জেনারেল রিলেটিভিটি, অ্যান ইন্ট্রোডাকশন টু ম্যাথমেটিক্যাল কসমোলজি, স্কাই অ্যান্ড টেলিস্কোপ তাঁর লেখা ও সম্পাদিত গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। এছাড়া তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘কৃষ্ণ বিবর’, ‘মাতৃভাষা ও বিজ্ঞান চর্চা এবং অন্যান্য প্রবন্ধ’, ‘শিল্প সাহিত্য ও সমাজ’ ইত্যাদি। মাতৃভাষায় বিজ্ঞান চর্চায় অবদানের জন্য ২০০১ সালে তাঁকে একুশে পদকে সম্মানীত করা হয়।

১৯৮৫ সালে তিনি বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমি স্বর্ণপদক পান। ১৯৯৮ সালে ইতালির আব্দুস সালাম সেন্টার ফর থিওরটিক্যাল ফিজিক্সে থার্ড ওয়ার্ল্ড একাডেমি অফ সায়েন্স অনুষ্ঠানে তাঁকে মেডাল লেকচার পদক দেয়া হয়। ২০১১ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজ্জাক-শামসুন আজীবন সম্মাননা পান। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী ও দুই মেয়ে রেখে গেছেন। রোববার জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদে জানাজার পর গরিবুল্লাহ শাহ মাজার কবরস্থানে প্রয়াত এই বিজ্ঞানীকে সমাহিত করা হবে।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।