আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পদে পদে বাধার মুখে পড়ছে কেইপিজেড

পদে পদে বাধা আর অসযোগিতার কবলে পড়েছে চট্টগ্রামের কোরীয় রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা (কেইপিজেড)। পরিবেশবান্ধব বা সবুজ শিল্প এলাকা প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়ে শুরু হওয়া দক্ষিণ কোরিয়ার বিনিয়োগকারীদের বিশেষায়িত এই ইপিজেডটি পরিচালনার অনুমতি (অপারেশনাল লাইসেন্স) পাওয়ার ছয় বছর পরও এখানে গ্যাস-সংযোগ দেওয়া হয়নি। সম্প্রতি বিদ্যুৎ-সংযোগ দিয়েও ছয় দিনের মাথায় তা বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে।
আবার উৎপাত শুরু করেছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা কেইপিজেডের ভেতরে নানা ধরনের স্থাপনা নির্মাণ শুরু করেছেন।

৪০ শতাংশ এলাকা বৃক্ষরাজি ও জলাশয় হিসেবে রেখে বাকিটা শিল্প স্থাপনের জন্য স্থাপন করা এই শিল্প এলাকা থেকে প্রায় প্রতি রাতেই গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে।
১৯৯৯ সালে দক্ষিণ কোরিয়া সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এই ইপিজেডটি স্থাপিত হয়। জমি বরাদ্দ দেওয়ার পর ইপিজেডের তত্ত্বাবধায়ক প্রতিষ্ঠান ইয়াং ওয়ান লিমিটেড মোট ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে সেখানে বিনিয়োগ ও কারখানা স্থাপনের উপযোগী অবকাঠামো গড়ে তোলে।
কেইপিজেড সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বের বেশ কিছু বহুজাতিক কোম্পানি কেইপিজেডে মোট সাত হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে শিল্পকারখানা স্থাপনের জন্য আগ্রহ দেখিয়েছে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে সেখানে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে তিন লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলে কেইপিজেড কর্তৃপক্ষ মনে করছে।

এখান থেকে বছরে পাঁচ হাজার কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি হবে বলেও আশা করা হচ্ছে।
কিন্তু সরকারের তরফ থেকে কেইপিজেড এলাকায় গ্যাস ও বিদ্যুৎ-সংযোগ না দেওয়ায় ওই বিনিয়োগ আসতে পারছে না। আবার কেইপিজেড এলাকায় বিনিয়োগের অনুমতির বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের আওতায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ফলে সব মিলিয়ে বিনিয়োগ প্রক্রিয়াকে দীর্ঘসূত্রতার মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন।
এ ব্যাপারে ইয়াং ওয়ান লিমিটেড ও কেইপিজেডের চেয়ারম্যান কিহাক সাং প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইয়াং ওয়ান বাংলাদেশের উন্নয়নের অংশীদার হতে চায়।

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যকে রক্ষা করেও যে শিল্পায়ন হতে পারে, সে রকম একটি উদাহরণও আমরা সৃষ্টি করতে চাই। এ জন্য সরকারের সহযোগিতা লাগবে। ’
পদে পদে বাধা: ছয় কিলোমিটার আয়তনের এই শিল্প এলাকায় ইতিমধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার কোম্পানি ইয়াং ওয়ান এশিয়ার সর্ববৃহৎ জুতার কারখানা স্থাপন করেছে। এরই মধ্যে সেখানে প্রায় চার হাজার শ্রমিক কাজ করছে। সবকিছু ঠিকঠাক মতো চললে আগামী বছরের মধ্যে এখানে ৩০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলে ইয়াং ওয়ান কর্তৃপক্ষ আশা করছে।

১১ কোটি ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে এই কারখানা।
বিদ্যুৎ-সংযোগ দেওয়া হবে, এই আশায় ইয়াং ওয়ান কর্তৃপক্ষ প্রায় পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৫ কিলোমিটার বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন, সাব-স্টেশনসহ অন্যান্য অবকাঠামো গড়ে তোলে। জুতার কারখানাটিতেও আনা হয় উচ্চ প্রযুক্তির যন্ত্র। কিন্তু গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড থেকে বিদ্যুৎ-সংযোগ দেওয়ার ১২ দিনের মাথায় তা আবার বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। ১৪ মেগাওয়াট বিদ্যুতের জন্য কেইপিজেডকে মাসে তিন লাখ টাকা বিদ্যুৎ বিল দিতে হতো।

জেনারেটরে উৎপাদিত বিদ্যুৎ দিয়ে জুতার কারখানাটি পরিচালিত হওয়ায় প্রতি মাসে কারখানাটিতে অতিরিক্ত ৩০ লাখ টাকা খরচ হচ্ছে।
বিশাল সম্ভাবনা সামনে রেখে ইতিমধ্যে ইয়ং ওয়ান গ্রুপ ২৫০০ একর জমি অধিগ্রহণ, ভবন, রাস্তাঘাট, দেয়াল নির্মাণসহ বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়নে ১৭৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। এ ছাড়া আরও প্রায় ১৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগের আগ্রহ রয়েছে কোরিয়ান এ শিল্প গ্রুপটির। কিন্তু বিদ্যুৎ ও গ্যাস-সংকটের কারণে কোনোভাবেই প্রকল্পটির কাজ শেষ করা যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে কেইপিজেডের মহাব্যবস্থাপক আফতাব উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, দৈনিক ২৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা দিয়ে সংযোগের জন্য আবেদন করেও গত ছয় বছরে কোনো ধরনের গ্যাস-সংযোগ পাওয়া যায়নি।

বিদ্যুৎ-সংযোগও দেওয়া হচ্ছে না। আবার জমির ইজারাস্বত্ব বুঝিয়ে না দেওয়ায় বিদেশি বিনিয়োগকারীদেরজমি দেওয়া যাচ্ছে না। ।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।