আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আজ তমসা ঘন আধারে ...

ভালবাসা মানে অন্যের ভালত্বে বাস করা তমসা নদীর তীরে আমি আজ বসে আছি তার বালুকণাগুলি আমাকে জানাতে চাইছে আমি জল থেকে কতটা পৃথক–তার ঢেউগুলি আমাকে বোঝাতে চাইছে আমি গাছ নই, আর গাছের আড়ালে ঐ ধাঙরবস্তির এক মদ্যপানরত যুবক আমাকে বলতে চাইছে আমি পক্ষীরাজ, মেঘ থেকে নামলাম, আজ একটি মেয়ের গল্প বলি আপনারা কি ভাবছেন জানি না । আমি একজন মানুষ এটাই আমার পরিচয় তবে আসুন পরিচয় করে দেই মেয়েটির সাথে । আমার পরিচয় মেডিকেল পড়ার সময় খুব পড়ুয়া মেয়ে , দোহারা গরন এতই শুকনো ভাবতাম একটু হাওয়া হলেও পরে যাবে। খুব কম কথা বলে সকলে ভাবত অহংকারী আসলে বাবার অদূরে সন্তানরা যেমন ও ছিল ঠিক তেমন খুব ভালো কেবল পড়ত সবাই যখন গল্পে মেতে ও তখন বই নিয়ে বসে পড়ত । কিন্তূ এখন অনেক পাল্টে গেছে অনেক কথা বলে কেবল হাসে ।

কিন্তূ ওর চোখ দুটো .মায়াবী চোখ আর মেয়েটি ছিল খুব মিষ্টি ! ছোট বেলা থেকেই খুব কম কথা বলে একজন তবে এখনো চোখের সামনে ভাসে জানালার গ্রিল ধরে। সেই ৩ বছর বয়স থেকেই ছড়া পড়ত সুর করে আর সব মেয়েরা যখন পুতুল খেলত সে তার ভাইটির সাথে মেতে থাকত দুষ্টমি তে ডুপ্লেক্স বাড়িতে দু ভাই বোন সারাদিন খেলত নিচের অতিথিদের ঘরটায় । এমনি ধারা দুষ্টমিতে ভরপুর ছিল ছোট্ট বেলার দিন গুলো কবে যে পুতুল খেলার দিন পাড় হয়ে গেল আজও মনে পরে না ফ্রক পরা ছেড়ে সালোয়ার কামিজ ধরল কিন্তূ তাতে কি তার দুষ্টমি কমলো নাহ সে আগের মতনই রয়ে গেল । আমার শৈশব খুব বৃষ্টিময়, সেই অঝোর বৃষ্টিতে কাঙ্গালের মতো দেখেছি বর্ষার মেঘ, এই বৃষ্টি ছিলো প্রকৃতির আদিবর্ষা, তারই কাছে নিয়েছি প্রেমের পাঠ মন হুহু করা অনন্ত বিষাদরাশি পেয়েছি বর্ষার কাছে, শিখেছি মেঘের কাছে পাহাড়ি মেয়ের খিলখিল হাসির মতো জলের কথক নৃত্য; এই ছিলো আমার শৈশব, কাজলাদিদির জন্য বালিশ ভেজানো কান্না বাতাসের শোঁ শোঁ শব্দ আমি তার অর্থ বুঝি না সেই শৈশবের বৃষ্টি ও বর্ষায় আজো আমি উত্থাল উম্মাদ - সেই মেয়েটি বড় হতে লাগলো পড়তে পড়তে প্রেমেও পরে গেল । তার পর বিয়ে করে ফেলল কিন্তূ হবে আবেগী মেয়েদের বিয়ে করতে হয়না তবুও খুব ভালবাসত তা কে মেয়েটি কিন্তূ বাস্তববাদী ছেলে এমন আবেগী কে সইবে কেন জীবন তো অনেক কঠিন একটা জায়গা ! তবুও দিন চলতে লাগলো পাস করার পর ট্রেনিং এর সময় ওরা থাকত হোস্টেলে এক ঘরে তখন রীতি মত বউ কিন্তূ মেয়েটি এতই ছেলে মানুষ ছিল যে ওর মনেই থাকত না কিছু ।

এ .বিয়ের প্রথম কয়েকবছর দিনগুলো কাটছিল বেশ মেয়েটি প্রায় বাবার কাছে থাকত তার বর একটা স্কলারশিপ পেয়ে চলে গেল বাইরে ওকে নেবে ২ বছর পর আর নেয়া হয়নি ওদের ডিভোর্স হয়ে গেল কিন্তূ মেয়েটি ওকে খুব ভালবাসত সে মেনে নিতে পারছিলনা তবু ও মেনে নিতে হয় জীবনের নিয়ম এটা । যা কে সুখী করতে পারবে না কেন তাকে বেঁধে রাখা ! জীবন তো থেমে থাকে না । খুব ইমোসনাল ছিল বলে জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপেই মাশুল দিতে হলো তার কখনো চাঁদনী রাত এ গান গাইতো ছাদে কখনো মায়ের একটু বকুনি শুনে একা একা ঘুরে বেড়াত। ডিভোর্স এর মাত্র ৬ মাসের মাথায় মেয়েটি একটা চাকুরী পেল মিশনারী হাসপাতালে ঢাকার বাইরে দুলহাজরা নামে একটি জায়গায় কক্সবাজারে । . বাবা মায়ের নিষেধ সত্তেও চলে গেল সে একাকী ওখানে একটা টিলার উপর ছোট্ট বাসা পেল সে দোতলার উপর ।

পাশের ফ্লেটএ থাকত একজন নার্স । মেয়েটির রান্নার আর টুকটাক কাজের জন্য সেখানকার একটা মেয়েকে ঠিক করলো আর তার নিজের সাথে থাকার জন্য বাবা একটা ছোট্ট ছেলে কে দিলেন । ৮ টা থেকে সনধ্যা পর্যন্ত অফিস করে ফিরত মেয়েটি কোনো রকমে খেয়ে বেলকনিতে বসে রাত দেখত কোনো দিন অনেক রাত জেগে থাকত উপলব্ধি করত প্রকিতি কে একাকী হেলানো চেয়ারে অনেকটা সময় কাটিয়ে দিত দুরে টিলা গুলো থেকে শেয়াল এর ডাক কখনো কুকুর বা কোনো নিশাচর পাখির কর্কশ ডাক রাতের নিস্তব্দতা কে খান খান করে দিত এই একাকী জীবন ভালই উপভোগ করত সে । কোনো সপ্তাহের শেষ দিন অফিসের গাড়ি নিয়ে চলে যেত কক্সবাজার সৈকতে ওখানে বাবার অফিসের গেস্ট হাউসে উঠত গিয়েই ফ্রেস হয়ে সৈকতে চলে যেত । অনেকটা সময় পার করত সমুদ্র দেখে কখনো কখনো নিজেকে ভাবত সমুদ্র কন্যা এর মাঝে তার ভেতর বেড়ে উঠছিল আর একটি জীবন শরীর খারাপ করছিল কিন্তূ জীবন এর প্রতি হলো তার ভীষণ অনীহা ।

সন্ধায়েই বীচে খেয়েই গেস্ট হাউসে ফিরত সে সারা রাত বই পড়ত বিচ থেকেই দিলারা হাশেম .রিজিয়া রহমান আরো অনেকের বই কিনতো । তার ফেলে আসা জীবনের জন্য এত টুকুও দুঃখ ছিল না যে চলে গেছে গেছেই তার জন্য মন খারাপ করে কি লাভ ? নিজেকে বোঝাত যে গেছে তাকে আর ফেরানো যাবে না মনের আঙ্গিনায় তার শেষ পদচারণা টুকু উজ্জল হয়ে থাক আর যে আসছে তাকে নিজের মতন করে বড় গড়ে তুলবে সে । মেয়েটির একমাত্র সঙ্গী ওই পিচ্চি ছেলে কখনো তার পাশেই মেঝেতে বসে গল্প শোনাতো হাসি পেলেও কিছুই বলত না ছেলেটির কথাই বুঝতনা সে। খুব আদর করত ছেলেটিকে একটা সময় পর কারেন্ট চলে যেত ও আর ওর সঙ্গী টি বেশ উপভোগ করত ছেলেটি তার বাড়ির গল্প বলত মেয়েটি খিল খিল করে হাসতো আস্তে আস্তে বন্ধু হয়ে গেল ছেলেটি এমনি একদিন চাঁদনী রাত এ মেয়েটি যখন নিজ ভাবনায় ব্যাস্ত দূর এ একটা জন্তুর ডাকে মেয়েটি ভয় পেলে ছেলেটি তাকে অভয় দিয়ে বলতো ভয় পাবেননা ও কিছু না ওটা বেড়ালের মতন দেখতে একটা প্রাণী হাস মুরগি চুরি করে খায় মেয়েটির কিন্তূ ভালই সময় কাটত তো এ অশিক্ষিত সহজ সরল গ্রাম্য ছেলেটি আর দিনে অফিসে কিছু গরিব রুগী যাদের ভাষায় বোঝা দুষ্কর তবুও ভাললো লাগত এদের মাঝে ছিল সরলতা নেই কোনো অহমিকা ছিল প্রান । এমনি করেই করেই দিন কেটে গেল মেয়েটি বাবার কাছে চলে এলো ফুট ফুটে একটি ছেলে হলো জীবন এর অনেক কিছুর কথা সে ভুলে গেল আবেগী মেয়েটি জীবন এ বাস্তব এর মুখো মুখি হয়নি কখনো তাই অনেক কিছুই বুঝত না সে বন্ধুদের কাছে তাই নাজেহাল হত প্রায়।

তার ছেলেও বুঝতো মাকে আমার আদরের পাগলি মা বলে জড়িয়ে রাখত একবার একটা টিম এর সাথে ওরা সেনমার্টিন গেল পর্যটনের মোটেলে উঠলো নেমেই বীচে এলো বিশাল সমুদ্র ছেলে মা কে পাহারায় রাখত । মা কে সমুদ্রে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে এই ভয়ে ছোট্ট ছেলেটি মা কে চোখের আড়াল করত না । দুজনে বিকেলের সোনা রোদে খুব করে জলে নেমে দুষ্টমি করল একেকটা ঢেউ আসে ওদের ডুবিয়ে দেবে মনে হয়.। ছেলেটি মায়ের হাত ধরে থাকে শক্ত করে আর এদিকে মায়ের খিল খিল হাসিতে সেও হেসে ফেলে । সন্ধ্যায় কাপড় পাল্টে খেয়ে আবার সব কিছু নিয়ে বিচ এল।

এখানকার বিচ খুব সুন্দর মা ছেলে দুজন হাঁটতে লাগলো। মেয়েটি একটা নৌকা দেখল কয়েকজন ঠেলে নিয়ে রাখছে তার পাশেই ঝাউ গাছের ঝোপের আড়ালে ছোট্ট দুটি ঘর মেয়েটি দেখতে লাগলো লোক দুটি চলে গেল উঠে বসলো নৌকায় । চাঁদ ঢেকে ফেলেছে চরাচর অদূরে তার ছেলে বল খেলছে এসে এসে মাকে দেখছে । মেয়েটি বসে ভাবছে জীবন যদি এমন সুন্দর হত ! এই যে জোসনার বসে সে আজ কোথায় সেইজন যে ছিল জীবনের সাথে জড়িয়ে তার ! আমিও তো অনেক সুখী হতে পারতাম কি ছিল না ! নৌকার মাঝিটি বার হয়ে ভাবছে কে বসে তার নৌকায় ? মেয়েটি লোকটিকে ডাকলো, নৌকায় বসতে বলল, আলাপ জুড়ে দিল,কি করে? এখানে কে আছে? লোকটির তিনটি বউ আছে শুনে একটু অবাক হলেও ভাবলো লোকটি তো মহাসুখে আছে দুটি বউ কক্সবাজার আর শেসেরটিকে নিয়ে সে এখানে । ওই ছোট্ট মেয়েটি তার আরো আছে সব মিলয়ে ৫ জন ।

বলল তাদের মতন সুন্দরী মেয়েরা প্রায় আসে এখানে কিন্তূ কেউ তাকে ডেকে বসায়নি আরো অবাক হলো মেয়েটি যখন জানতে চাইল গেল ঈদ এ কি কুরবানী দিয়েছে লোকটি বলল, ওরা মাংশ খায় মহাজন একটা গরু জবাই করে এই এলাকার সব্বাইকে খাইয়েছে। এমনি অনেক গল্প করলো মেয়েটি এমন জোসনায় মানুষের ভেতর কিছুই লুকিয়ে থাকে না অনেক দুরের মানুষটিও আপন হয়ে যায় মাঝিটি বলল ,আপামনি আর বৈসেন না আবার যান হোটেল চাননি পহর রাত বলা যায় না তেনারা নামেন' ওর হাসি পেলো । কারণ বীচে তখন অনেক লোক রাত তিনটে ছোট্ট বাবুটি মায়ের কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পরেছে এমনি সুন্দর রাত এ মেয়েটির বড্ড ইচ্ছে হলো আজ যদি ও থাকত কি মজা না হত কত গল্প খুনসুটিতে পার করত সময় তার মনটা খারাপ হয়ে গেল হটাতই চাঁদনী রাত তার কাছে কষ্টকর মনে হচ্ছিল কখন ভোর হবে অপেক্ষায় থাকে মেয়েটি সমুদ্রে সুর্য ওঠা দেখবে বলে আজ যদি সে এসে ওকে ডাকে সে কি পারবে দৌড়ে গিয়ে তার বুকে ঝাপিয়ে পড়তে ? বড় সাধ হয় এমন চাঁদনী রাত গুলো বড় বিস্বাদময় হয় কেন ? হে বিধাতা আর কাউকেই তুমি এমন অভিশপ্ত রাত দিও না । .দিও না এমন জীবন এই যে ছোট্টবাবুটি তার ও তো ইচ্ছে হয় কাউকে বাবা বলে দৌড়ে গিয়ে তার কোলে উঠতে । অনেকরাত একবার বিছানা একবার বেলকনিতে সময় কাটাল এক অস্থিরতা তাকে গ্রাস করছে কেমন একটা শুন্যতা কিসের যেন অভাব! আকাশে এক ফালি চাঁদ আর সে, খুব কাছের আপন মনে হলো চাঁদটিকে একসময় রাতকে তার অভিশপ্ত মনে হতে লাগলো ।

লো ভলুমে গান বাজিয়ে দিল ডুবে গেল নিজের ভাবনায়। মানুষ তাকে চিনতে ভুল করে আজ অবগ্গা অবহেলায় নিজের জীবনের উপর ঘেন্না ধরে গেল তার ! আবার উঠে ঘুমন্ত ছেলের কপালে আদর দিয়ে এলো.। হৃদয়-পানে হৃদয় টানে, নয়ন-পানে নয়ন ছোটে- দুটি প্রাণীর কাহিনীটা এইটুকু বৈ নয়কো মোটে। শুক্লসন্ধ্যা চৈত্রমাসে হেনার গন্ধ হাওয়ায় ভাসে, আমার বাঁশি লুটায় ভূমে, তোমার কোলে ফুলের পুঁজি- তোমার আমার এই-যে প্রণয় নিতান্তই এ সোজাসুজি। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।