আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দেশ জুড়ে বেড়েই চলেছে গাছের মড়ক জনবল ও অর্থাভাবে গবেষনাকার্যক্রম ব্যাহত গবেষকদের মতামত: প্রয়োজন সমন্বিত গবেষনা ও সরকারী সহযোগীতা

মীর তাওহীদ-উল-ইসলাম রাজধানী সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল জুড়ে রেইনট্রি,শিশু ও মেহগনি গাছের মড়ক মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। চলতি বছরে রাজশাহী,দিনাজপুর সহ দেশের উত্তরাঞ্চলে আম গাছেও ভয়াবহ মড়ক লক্ষ্য করা গেছে। গাছের মড়ক বেড়ে চললেও বিশেষজ্ঞরা এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কারন খুঁজে বের করতে পারেননি। ২০০২-২০০৩ সালে অধিক বয়ষ্ক(৬০ থেকে ১০০ বছর )গাছে মড়ক দেখা গেলেও সম্প্রতি সময়ে ৮/৯ বছরের গাছেও ব্যাপক হারে মড়ক দেখা দিয়েছে। দেশজুড়ে অসংখ্য গাছ মারা গেলেও সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না।

সূত্র জানায়, ২০০৭ সালে চিটাগাং শহরের টাইগার পাস থেকে নিউমার্কেট পর্যন্ত ৫০-৬০টি শতবর্ষী গাছ মারা গেছে। দেশের উত্তরাঞ্চলের রংপুর,দিনাজপুর,রাজশাহীসহ বিভিন্ন জেলাতে অসংখ্য শিশু গাছ মারা গেছে। এ ছাড়া দেশের দক্ষিণাঞ্চলের যশোর, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গাসহ বিভিন্ন জেলাতে অসংখ্য মেহগনি,রেইনট্রি ও শিশু গাছ মারা যাচ্ছে। তবে কত গাছ মারা গেছে তার সঠিক হিসাবও বন বিভাগ কিংবা বন গবেষনা ইনস্টিটিউটের কাছে নেই। এ বিষয়ে প্রধান বন সংরক্ষক ইশতিয়াক উদ্দিন আহমদ “সংবাদ”কে জানান, মড়ক সম্পর্কে আমাদের কাছে সটিক কোন পরিসংখ্যান বা তথ্য নেই।

এ পর্যন্ত বন বিভাগের পক্ষ থেকে কোন জরিপও করা হয়নি। গাছ সর্ম্পকে গবেষনা করে বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনষ্টিটিউট। আমরা বিষয়টি অনেক আগেই বন গবেষণা ইনষ্টিটিউটকে একবার অবহিত করেছি। বন গষেণা ইনষ্টিটিউটের বিভাগীয় কর্মকর্তা মো.রফিকুল ইসলাম বলেন, গত দশকের প্রথমদিক থেক ধেশের উত্তর,দক্ষিণ ও মধ্য অঞ্চলে শিশু গাছে ব্যাপক মড়ক লক্ষ্য যায়। আমরা ২২০৭ সালে চট্রগ্রাম মহানগর ও ্ওর আশেপাশের ১৬৯০ টি রেইনট্রির উপর জরিপ করি।

জরিপে ৩২ ভাগ গাছ মড়ে যাওয়ার তথ্য জানতে পারি। কর্মকর্তা আরও বলেন, প্রাথমিক জরিপে দেখা যায় বেশির ভাগ গাছেরই শিকড়ে পচন ধরেছে। শিকড়ে পচনের জন্য ফিউজেরিয়াম সোলানি(ঋঁংধৎরঁস ংড়ষধহর) এবং আক্রান্ত ডাল পালা হতে বট্রিয়াম ডিপলোটিয়া (ইড়ৎঃৎুড়ফরঢ়ষড়ফবধ ঃযবড়নৎড়সধব) নামক ছত্রাক সনাক্ত করা হয় । এ ছত্রাক আমাদের দেশে মাটি,পানি,বাতাস সহ সর্বত্র বিরাজমান। গাছের কোন দূর্বল মুহ’র্তে(বৃষ্টিপাত কম হলে,ঝড় বৃষ্টিতে গাছের ডাল পালা ভেঙ্গে গেলে) এগুলো গাছকে আক্রমন করে।

এ ছত্রাক শিশু গাছের কচি কান্ডের রস শোষন করে ফেলে। গাছের পাতা ঝড়তে থাকে ,ফলে গাছে খাদ্য উৎপাদন প্রক্রিয়া ব্যাহত হয় এবং গাছ গুলো ধীরে ধীরে মরতে শুরু করে। তিনি বলেন, আমরা প্রাথমিক ভাবে এ গবেষনা করেছি। তবে সঠিক কারণ অনুসন্ধান, প্রতিকার ও প্রতিরোধে কি করনীয় সে সম্পর্কে জানতে আরও ব্যাপক গবেষনার প্রয়োজন। দক্ষ জনবল ও অর্থসংকটের কারনে আমরা গবেষনা কার্যক্রম ঠিক মত চালাতে পারছি না।

এ গবেষনা করতে হবে উদ্ভিদ বিজ্ঞানী,মৃত্তিকা বিজ্ঞানী,কৃষি বিজ্ঞানী ও দেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়ে সমন্বিত ভাবে। মড়ক সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক আব্দুল আজিজ “সংবাদ” কে বলেন, পরিবেশের পরিবর্তনের কারনে বিভিন্ন রোগের প্রার্দুভাব বৃদ্ধি পাওয়ায় গাছের মড়ক ঘটতে পারে। তিনি আরও বলেন, স¤প্রতি জার্মান বিজ্ঞানী এইচ.পি.মোয়েল বেগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীদের নিয়ে শিশু গাছের মড়ক উপড় গবেষণা করেন। তিনি প্রাথমিকভাবে ভাবে এ মড়কের কারণ হিসেবে সিয়োডোমোনাস(ঢ়ংবঁফড়সড়হঁং) ব্যাককেটিয়ার কথা উল্লেখ করেছেন। তবে এ বিষয়টি নিয়ে আরও ব্যাপক গবেষনা করা প্রয়োজন রয়েছে বলে তিনি মনে করেন।

সরেজমিনে ঘুরে জানায় যায়, রাজধানীর ফার্মগেইট উদ্যানের বড় বড় ৫০-৬০ টি রেইন্ট্রিতে মড়ক লেগেছে। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামন থেকে নির্বাচন কমিশন পযর্ন্ত রাস্তার দুই পাশে বেড়ে উঠা বিভিন্ন বয়সের প্রায় ৩৫-৪০ টি রেইন্ট্রি ইতোমধ্যে মারা গেছে। এ মড়ক এখন শেরে বাংলা নগর, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও চন্দ্রিমা উদ্যান, সহ আশেপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। এছাড়া মিরপুর বেড়িবাধ, আশুলিয়া, সাভারসহ রাজধানীর চারপার্শ্বে এ মড়ক ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। বনানী থেকে শুরু করে ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কের দুই পাশে উত্তরা,টঙ্গী,গাজীপুর, ভালুকা পযর্ন্ত অসংখ্য রেইনন্ট্রিতে মড়ক লেগেছে।

গত ২৫ এপ্রিল জাতীয় প্রেসক্লাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল আজিজ এর সভাপতিত্বে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন(পবা) এর উদ্যোগে মহামারী আকারে গাছের মড়ক:কারণ ও করনীয় শীর্ষক এক গোল টেবিল বৈঠকে উদ্ভিদ, প্রাণী ও মৃত্তিকা বিজ্ঞানী উপস্থিত ছিলেন। বক্তরা গাছের এ মড়কের কারণ উ˜্ঘাটনের জন্য সরকারের কাছে সমন্বিত গবেষনার ব্যাবস্থা গ্রহনের দাবী জানান। মড়ক সম্পর্কে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন(পবা) এর সভাপতি আবু নাসের খান “সংবাদ”কে বলেন, গাছের মড়ক দেশ জুড়ে ভয়াবহ আকার ধারন করেছে। এর সঠিক কারন অনুসন্ধানের জন্য বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের পাশাপাশি দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান, মৃত্তিকা বিজ্ঞান, মাইক্রোবায়োলজি,রোগতত্ত্ব বিভাগসহ বিভিন্ন বিভাগ গুলোকে আরও এগিয়ে আসতে হবে। সেই সাথে সরকারকে গবেষনায় আরও সাহায্য করতে হবে।

রেইনন্ট্রির মড়ক সম্পর্কে বনগবেষনা ইনস্টিটিউট ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, প্রথমে মগ ডাল শুকিয়ে মরে যায় সেই সাথে পাতা ঝড়তে থাকে। ক্রমেই তা পুরো গাছে ছড়িয়ে পড়ে। কিছু দিনের ভিতর সমস্ত গাছের পাতা ঝড়ে পড়ে। তখন গাছের কান্ড শুকাতে শুরও করে এবং গাছের বাকল গুলো খসে পড়তে থাকে। গাছের ডালপালা ও কান্ডে কালো দাগ পড়ে ।

দূর্বল ও মৃত গাছে পোকার আক্রমন হলে তা মহামারীর মতএক গাছ থেকে অন্য গাছে ছড়িয়ে পড়ে। এ সম্পর্কে জানতে চাইলে শেকৃবির কীটতত্ত্ব বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মো:আব্দুল লতিফ বলেন, প্রথমে আমরা মিলিবাগ নামক পোকার আক্রমন মনে করেছিলাম। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে শুধু মিলিবাগ না এর পেছনে অন্য আরও কোন কারণ থাকতে পারে। এ ব্যাপারে সমন্বিত গবেষনা দরকার। ### ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।