আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একা পাখি বসে আছে শহুরে দেয়ালে...

I often see flowers from a passing car That are gone before I can tell what they are Haven gives its glimpses only to those Not in position to look too close… একা পাখি বসে আছে শহুরে দেয়ালে রাত পৌনে দশটা। আমরা তিনজন ফিরছি রিকশা নিয়ে-আমি হুডের উপর,আমার ডান পাশে এহসানি আপু,আর বামপাশে সাবান্নুমা আপু। মন অসম্ভব খারাপ। হলে ফিরতে ইচ্ছে করছে না একটুও। আঝোরে কেঁদে চলেছি আমরা তিনজন...... -------------------------------------------------------------------- আমার ছাত্রজীবনের শুরু বাড়ির পাশের এক কিন্ডারগার্ডেনে।

ক্লাস ওয়ান পর্যন্ত ওখানে পড়ার পর টু তে এসে ভর্তি যশোরের তখনকার সেরা কলেজিয়েট স্কুল “বি এ এফ শাহীন কলেজ”-এ। আগের স্কুল ছেড়ে আসার সময় তেমন কিছু মনে হয় নি,বরং ভালো লাগছিলো যে আমি কত নামকরা একটা স্কুলে পড়তে যাচ্ছি। তার চাইতে বেশী মজা লাগত এইটা যে স্কুলটার নামই ছিল শাহীন কলেজ, তাই খুব ভাব নিয়ে রোজ সকালে আম্মুকে বলা-“আমি আজ কলেজে যাব না। ” শাহীনের সবুজ সুন্দর প্রাঙ্গনেই কেটেছে আমার শৈশব,কৈশোর। শাহীনের ক্যাম্পাস তাই আমার কাছে আমার নিজের রুমের মতোই প্রিয়।

মনে পড়ে আমাদের এস এস সি পরীক্ষার আগের বিদায় সংবর্ধনাটার কথা। সবাই আমরা জানতাম যে কলেজে আমরা ওখানেই ভর্তি হব। তাই আমাদের চোখে ছিল স্বপ্নের ঝিলিক, আর মুখে আকর্ণ বিস্তৃত হাসি। আমরা কেউ কাঁদিনি সেদিন, শিক্ষকরাও না। আমাদের তাই কোন র্যা গ ডে হয় নি, হয় নি কোন ক্লাস পার্টি।

তারপর যখন কলেজ ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় হল, তখন একটাই চিন্তা ছিল মাথায় – কীভাবে কোন সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া যায়। ভর্তি যুদ্ধ শেষে যেদিন কলেজে গিয়েছিলাম, সেদিন ছিল আমাদের “কৃতি শিক্ষার্থী সংবর্ধনা”। বন্ধুদের আর প্রিয় জুনিয়রদের জি পি এ ফাইভ পাওয়া হাসিমুখ আর নিজের গোল্ডেন পাওয়া আর ইসিই পড়ার আনন্দে আর আমার প্রিয় শিক্ষকদের স্নেহ মাখা হাসি মুখগুলো দেখে অনুভব করতে পারিনি বিদায় কী জিনিস। আমি আর আমার ভাই একই স্কুলে পড়তাম। ও আছে এখনো।

তাই কখনো মনেও হয় না আমি স্কুল ছেড়ে চলে এসেছি। সম্পর্কটা এখনো আগের মতো নিবিড়ই আছে। বাসা ছেড়ে যেদিন হলে এসে উঠলাম, বুঝেছিলাম বাসা থেকে বেরিয়ে গেলাম একেবারে। পড়ার চাপ আর ক্যারিয়ার গড়তে গিয়ে বাসায় আর থাকা হবে না, আসব অতিথির মতো। তারপরেও অতটা খারাপ লাগেনি মজার একটা জীবন আর তারচাইতেও মজার মজার বন্ধুদের পেয়ে।

মনে পড়ে আমাদের হলরুম লাইফের কথা। ৫৬ টা মেয়ে থাকতাম একসাথে, ফ্লোরিং করে। একপাশ থেকে গড়ানি দিলে সোজা গিয়ে পৌঁছুতাম অন্য পাশে। একসাথে সবাই বসে আম খেতাম, কেউ ঘুমিয়ে থাকলে দল বেধে তার মুখকে ক্যানভাস বানিয়ে শিল্পচর্চা করতাম আমরা। কী যে মজার দিন ছিল!! মেধাস্থান আগে থাকায় যে ১২ জন আগে সিট পেয়ে যায় দুর্ভাগ্যক্রমে আমি ছিলাম তাদের একজন।

খুব বেশী দুঃসাহস নিয়ে উঠেছিলাম তিনজন বড় আপুর রুমে- দুইজন চতুর্থ বর্ষ আর একজন দ্বিতীয় বর্ষ। পুরো দোতালায় প্রথম বর্ষের একমাত্র প্রতিনিধি ছিলাম আমি। তাই বড় আপুদের আদর সবচাইতে বেশী আমিই পেয়েছি। আমার রুম মেট দের কথা বলতে গেলে আগে বলতে হয় লিয়া আপুর কথা। আপু এককথায় ছিলেন অসাধারণ।

আপু যে আমার এত বড়, তা কখনোই আমি বুঝতে পারিনি- আপু আমাকে বুঝতে দেন নি। আমার যত আবদার ছিল আপুর কাছে। মন খারাপ হলে আপুর গলা জড়িয়ে ধরে কাঁদতাম, ভয় পেলে আপুর কোলের মধ্যে গিয়ে শুয়ে থাকতাম। আপু সেদিন চলে গেল-আমি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলাম আপু গোছগাছ করল। তারপর সকাল বেলা উঠে আপুর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ক্লাসে গেলাম।

চোখ জ্বালা করছিলো আমার, তাই অ্যাটেনডেন্স দিয়ে শরীর খারাপ লাগছে বলে ক্লাস থেকে বেরিয়ে চলে গিয়েছিলাম বাসস্ট্যান্ডে। আপু আমাকে দেখে অবাক হয়েছিলো খুব। আপুর বাস চলে এলো, আপু চলেও গেলো। আমার আপুটা চলে গেলো!! বাস চলতে শুরু করলে রাফিদা আপুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেছিলাম খুব। ক্লাস শেষে রুমে ফিরে খুব একা লাগত আমার।

বারান্দায় কাপড় শুকানোর তারে আপুর কাপড় নেই, খাবার আনার সময় কেউ আর বলে না তার জন্য খাবার নিয়ে আসতে, জানালায় আপুর হ্যান্ডওয়াশ নাই, বিছানা আর বইখাতা এলোমেলো নেই- আমার আপুটা নেই,চলে গেছে। খুব কান্না পায় যখন মনে পড়ে আপুর সাথে আর খুনসুটি করা হবে না,একসাথে বসে মুভির পোস্টমর্টেম করা হবে না,অনিয়ম করলে বকার কেউ নেই, ঘুমিয়ে থাকলে কেউ আর ডাইনিং টাইমে আমার খাবার এনে রাখবে না মনে করে,জ্বরের ঘোরে অচেতন হয়ে পড়ে থাকলে জোর করে কেউ ডিম সেদ্ধ পুরে দেবে না মুখের ভিতর। সিটির আগের রাতে কেউ আর পড়ার জন্য বকা দেবে না, আদুরে গলায় কেউ বলবে না- “তোমার ল্যাপটপ দাও তো, নাটক দেখব”। নতুন রুমে উঠেছি। রুমমেট আপুরাম কল্পনাতীত ভালো।

আজ এই রুমের বিদায়ী আপুটাকে বাসে তুলে দিয়ে এলাম একটু আগে। আমার আপুটার কথা মনে পড়ল আবার নতুন করে। ওই কোঁকড়া চুল মিস করি, ওই শুকনা হাত মিস করি...আমার আপুটাকে আমি সব সময় মিস করি...প্রতিটা মুহূর্তে। আই লাভ ইউ সোওওও মাচ আপু...... ইউ কান্ট মেজার হাও মাচ আই লাভ ইউ... ভালো থকাবেন আপু...অনেক অনেক বেশী ভালো...... ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।