আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দুই পাখি - রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর

আমার মায়ের পায়ের জবা হয়ে উঠনা ফোটে মন ... খাঁচার পাখি ছিল সোনার খাঁচাটিতে বনের পাখি ছিল বনে। একদা কী করিয়া মিলন হল দোঁহে, কী ছিল বিধাতার মনে। বনের পাখি বলে- ‘খাঁচার পাখি ভাই, বনেতে যাই দোঁহে মিলে। ’ খাঁচার পাখি বলে ‘বনের পাখি আয়, খাঁচায় থাকি নিরিবিলে। ’ বনের পাখি বলে-‘না, আমি শিকারে ধরা নাহি দিব।

’ খাঁচার পাখি বলে- ‘হায়, আমি কেমনে বনে বাহিরিব। ’ বনের পাখি গাহে বাহিরে বসি বসি বনের গান ছিল যত, খাঁচার পাখি পড়ে শিখানো বুলি তার- দোঁহার ভাষা দুই মতো। বনের পাখি বলে-‘খাঁচার পাখি ভাই বনের গান গাও দিখি। ’ খাঁচার পাখি বলে-‘বনের পাখি ভাই, খাঁচার গান লহো শিখি। ’ বনের পাখি বলে-‘না, আমি শিখানো গান নাহি চাই।

’ খাঁচার পাখি বলে-‘হায়, আমি কেমনে বনগান গাই। ’ বনের পাখি বলে- ‘আকাশ ঘননীল, কোথাও বাঁধা নাহি তার। ’ খাঁচার পাখি বলে- ‘খাঁচাটি পরিপাটি কেমন ঢাকা চারিধার। ’ বনের পাখি বলে- ‘আপনা ছাড়ি দাও মেঘের মাঝে একবারে। ’ খাঁচার পাখি বলে- ‘নিরালাসুখ কোণে বাধিঁয়া রাখো আপনারে।

’ বনের পাখি বলে –‘না, সেথা কোথা উড়িবারে পাই। ’ খাঁচার পাখি বলে – ‘হায়, মেঘে কোথায় বসিবার ঠাই। ’ এমনি দুই পাখি দোঁহারে ভালোবাসে তবুও কাছে নাহি পায়। খাঁচার ফাঁকে ফাঁকে পরশে মুখে মুখে, নীরবে চোখে চোখে চায় দু’জনে কেহ কারে বুঝিতে নাহি পারে, বুঝাতে নারে আপনায় দু’জনে একা একা ঝাপটি মারে পাখা, কাতরে কহে- কাছে আয়। বনের পাখি বলে, -‘না, কবে খাঁচার রুধি দিবে দ্বার।

’ খাঁচার পাখি বলে-‘হায়, মোর শক্তি নাহি উড়িবার। ’ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।