আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বংশ গৌরব

আমি নাই। বংশ গৌরব করা জঘন্যতম গর্হিত ও ঘৃন্য কাজ। এ কথাটা জেনেও কত মানুষ ধন-সম্পদ এবং বংশগত মর্যাদায় অপর মানুষকে নীচ এবং হীনচোখে দেখে। সমাজে হাজারো ব্যাধির দেখা পেয়েছি। তন্মধ্যে বংশ গৌরব নামক মারাত্বক সংক্রামক ব্যাধির দেখা প্রকট থেকে প্রকটতর পেয়েছি।

বংশের আভিজাত্যের মোহে পড়ে কত মানুষ অন্যদের আঁড় চোখে দেখে। তাছাড়া বলে বেড়ায় আমি অমুক বংশের লোক। আমার পিতা অমুক। আমার দাদা অমুক। আমার ভাই অমুক ইত্যাদি।

সম্প্রতি সমাজের দিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যায়, আনছারী, তালুকদার বা চৌধুরী ইত্যাদি নামে অনেক ব্যক্তি বংশের নোংরা পানি পান করে গর্ব করে থাকে। অথচ, তার পূর্ববর্তীদের বংশের কোন নাম গন্ধই ছিল না। এখন মানুষ তার বংশের নাম দিয়ে গাড় বাঁকা করে সমাজে চলাফেরা করে। অন্যদের বংশহীন ভেবে তাদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করে কথাবার্তা এবং চলাফেরা বন্ধ করে দেয়। কারণ, তার সাথে চলাফেরা করলে তার বংশের মর্যাদা হ্রাস পাবে ভেবে।

বংশের অহংকারে অন্যদের কোন তোয়াক্কাই করে না। আর এ কারণেই সৃষ্টি হয় পরস্পরের মাঝে ঘৃণা এবং বিদ্বেষ। অথচ সে জানে না মর্যাদা বংশতে নয়। মর্যাদা হল কর্মে। এজন্যই কবি বলেছে “জন্ম হোক যথা তথা, কর্ম হোক ভাল”।

কর্মের দ্বারাই মানুষ মানুষের নিকট সুখ্যাতি এবং কুখ্যাতি লাভ করে থাকে। ভাল কর্ম তাকে সমাজের চোখে সুখ্যাতি সম্পন্ন এবং শ্রদ্ধেয় করে তোলে। পক্ষান্তরে হীনকর্মের দ্বারা তাকে কুখ্যাতি সম্পন্ন এবং ঘৃণিত করে তোলে। অনেক মানুষ বংশ ছাড়া ভাল কাজ করে সমাজে তারা চিরদিন স্বরণীয় হয়ে থাকে মানুষের অন্তরে অন্তরে। সুতরাং মানুষের পরিচয় জন্মের মাধ্যমে নয়, কর্মের মাধ্যমেই প্রৃকত মানুষ হয়ে পরিচিত লাভ করে।

জন্ম যেখানেই হোক না কেন, মহৎ কর্ম দ্বারা তিনি অমরত্ব লাভ করতে পারেন। তাই মানুষ বংশের জন্য নয়, কর্মের জন্যই মানুষ প্রকৃত মর্যাদার অধিকারী হয়। আর এ কথা অনস্বীকার্য প্রকৃত যুবক সেই যে বলে আমি বা আমার পরিচয় এই। সে কখনই সত্যিকারের যুকব নয় যে বলে আমার পিতা অমুক ছিলেন। কোন এক মহা মনীষী বলেন যে, আমার নিকট প্রতিনিয়ত সকালে এক ব্যক্তি আসত এবং বংশ গর্ব নিয়ে আলোচনা করত।

অবশেষে আমি তাকে একদিন বললাম, তুমি শুধু বংশের গৌরব কর, অথচ তুমি তো ভাল করে জান যে, কুকুরের জন্য বংশের পরিচয় ব্যতীত তার আর কোন পুজি নাই। বংশ সম্বন্ধে রাসুল্লাহ সা. বলেন, হে বনী হাশেম, এমন যেন না হয় যে, কিয়ামতের দিন অন্যান্য লোক নিজ নিজ সংকর্ম নিয়ে আসবে আর তোমরা আসবে সংকর্ম থেকে উদাসীন হয়ে শুধু বংশ গৌরব নিয়ে এবং আমি বলব যে, আল্লাহর আযাব থেকে আমি তোমাদের বাঁচাতে পারব না। অন্য এক হাদিছে আছে, আমল যাকে পেছনে ফেলে দেয়, বংশ তাকে এগিয়ে নিতে পারে না। পুর্বে বলা হয়েছে যে, সংকর্মই আসল পরিচয়। বংশ কোন মর্যাদার বা গৌরবের পরিচয় না।

যাকে আল্লাহ তায়ালা কোরআন পাকের সুরায়ে হুজুরাতের ১৩ নং আয়াতে পরহেযগারী বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, হে মানব জাতি, আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও নারী থেকে সৃষ্টি করেছি। যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিত হও। নিশ্চয় আল্লাহর কাছে সেই সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত যে সর্বাধিক পরহেযগার। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ এবং সবকিছুর খবর রাখেন।

এখানে বংশকে পরস্পরের পরিচয় বা সনাক্তকরণের উপকরণ হিসবে উল্লেখ করেছেন। বংশকে কোন গর্ব বা গৌরবের বিষয়বস্তু উল্লেখ করে নাই। আর আল্লাহর নিকট সবচেয়ে সর্বাধিক সম্মান ও আভিজাত্যের মাপকাঠি হচ্ছে পরহেযগারী বা সংকর্ম। পান্তরে বংশ কোন সম্মান বা আভিজাত্যের মাপকাঠি নয় নিঃসন্দেহে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।