আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অসংবৃত অবমোচন

বিকট (১) পাশাপাশি বাড়িতে থাকার সুবাদে বেকার, আধখানা ভালো আধখানা বখাটে যুবক ববির সাথে আবহমান শ্যামলা সৌন্দর্য আর লালচে লজ্জা ধারণ করে চলা বিশুদ্ধতাবাদী তরুণী ববির চক্ষু যোগাযোগের সুবাদে একটা বিশুদ্ধ মধ্যবিত্ত প্রেম হয়ে যাবে এটা অবশ্যম্ভাবীই ছিলো। এ ঘটনা মোটেও বিরল কিছু না, দুজনের ডাকনাম মিলে যাওয়ার অংশটা বাদে। ওরা মজা করে বলে ওদের সন্তান হলে তার নামও রাখবে ববি। ববি পরিবার! বাবা, মা, সন্তানের নাম একই, এরকম কে কবে দেখেছে! এই প্রস্তাবটা সেদিন অনুমোদিত হল তাদের সান্ধ্যকালীন আড্ডায়, যেখানে আধখানা ভালো ছেলের বাবা জ্ঞানবৃক্ষের মত খুঁটি গেড়ে বসে থেকে ছায়া দেন বাড়ন্ত দুটো চারাগাছকে। শ্যামলা মেয়েটি সন্ধ্যা হলেই মাঝেমধ্যে আসে তাদের বাসায় মুড়ি-চানাচুর ঝাল করে মাখিয়ে নিয়ে।

আধখানা বখাটে ছেলেটির সংস্পর্শ পাওয়ার স্পর্ধিত লাজুক আকাঙ্খার জন্যে না, সেজন্যে এই শহরের উদ্যান, অযান্ত্রিক যান তো আছেই, আছে একসাথে অবেলার বৃষ্টিস্নান। লাজুক তরুণীটি তার আধখানা বখাটে আধখানা ভালো ছেলে প্রেমিকের বাবা, স্নিগ্ধ সফেদ চুলের জ্ঞানবৃক্ষটির স্নেহের ছায়া পেতেও খুব ভালোবাসে। -কী খবর ববিদ্বয়! অবশেষে হলে উদয়? এভাবে ছন্দ মিলিয়ে কথা বলাটা ববির খুব পছন্দ। তার নিজের বাবা মোটেও এরকম না। গম্ভীর মুখে টেলিভিশনে টক শো আর খবর দেখা এবং যথাসময়ে রাতের খাবার প্রস্তুত না হলে গজগজ করা এবং মাঝেমধ্যে চায়ের তেষ্টা পেলে ববিকে তলব করার মধ্যেই তার সাংসারিক হৃদ্যতা শেষ।

তাই ববি এখানে আসে। ঝালমুড়ির বাটি নিয়ে। কখনও কখনও পায়েস, কখনও ফিরনি নিয়ে। তবে আজকে একটি বিশেষ দিন, তাই সে রন্ধনে পটু না হওয়া স্বত্ত্বেও জীবনে প্রথমবারের মত তেহারী রান্না করে নিয়ে এসেছে। বখাটে ববির মা অনেকদিন ধরেই শয্যাগত, রান্না করতে অসমর্থ।

বুয়া কোনমতে রান্না করে দিয়ে যায় যা কিছু একটা। আজকের এই দিনটায়, যেদিন নিয়তি তার মিনতি শুনে একজন উড়নচন্ডী রোমান্টিক প্রেমিক এবং একজন পিতৃতুল্য গার্ডিয়ান এ্যাঞ্জেলের প্রার্থনা মঞ্জুর করেছিলো, ববি নিয়তির প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে তেহারির বাটিটা নিয়ে পাশের বাসায় যায় আনন্দচিত্তে। -কী এনেছো ববি? -রান্না মনে হয় ভালো হয়নি! নাহলে গন্ধেই বোঝার কথা যে তেহারি রেঁধেছি। কাঁচুমাচু ভঙ্গিতে ববি বলে। রান্না বিষয়ক চাপা উত্তেজনা তার কিছুতেই কাটছেনা! -না, তা বুঝতে পেরেছিলাম যে বিরানি বা তেহারি কিছু একটা হবে।

কিন্তু আমার তো এসব খাওয়া নিষেধ। ববি তোমাকে বলেনি আমার ইসিজি আর এন্ডোসকপির রিপোর্টে কী এসেছে? -না তো! কী হয়েছে? ওকে কয়েকদিন ধরেই খুব মনমরা আর উদাসীন দেখছি। এখন বুঝতে পারছি কারণ। কী হয়েছে আঙ্কল? খুব খারাপ কিছু? শঙ্কিত কন্ঠ ববি'র। -দুটো ব্লক হয়েছে হার্টে।

অপারেশনের দরকার পড়বেনা হয়তো যদি নিয়ম মেনে চলি। আরে, এতো দুশ্চিন্তা করছ কেন? একটু দেখেশুনে চললে হার্টের রোগীরা স্বাভাবিক ভাবেই বাঁচতে পারে। আমার তো কেবল ইনিশিয়াল পর্যায়। আচ্ছা কথা না বাড়িয়ে আমাকে একটা বাটিতে করে অল্প তেহারি দাও। এত কষ্ট করে রেঁধেছো।

-নিয়ম মেনে চলার কথা বলে সাথে সাথেই আবার নিয়ম ভাঙছেন! আপনার সাহস তো কম না! ফেলে দেবো আমি এই তেহারির বাটি। -আহ! শোনো তবে, তুমি তো সেই স্কটিশ ভদ্রলোক এ্যান্ডি ম্যাকির কথা জানোনা, তার অবস্থা আমার চেয়ে অনেক খারাপ ছিলো। তার সারভাইভ করার কাহিনী শোনো তবে। তাকে বলা হত দ্যা হারমোনিকা ম্যান... রাগ এবং শঙ্কা ভুলে গিয়ে ববি গল্পে মজে গেলো। এরকম কত সন্ধ্যা কেটেছে গত তিনশ পয়ষট্টি দিনে, এই গল্পের নিমগ্ন স্রোতা কখনও ছিলো দুই ববি, কখনও সে একাই, এই গল্পের আকর্ষণে এখানে এসেই তো দু-জোড়া চোখ হেসে পরস্পরকে চিনে নিয়েছিলো।

-তো দেখলে, এ্যান্ডি ম্যাকাই কীভাবে প্রাণঘাতী রোগকে পরাভূত করল সঙ্গীত, সৃষ্টি এবং শিশুদের স্বর্গীয় সংস্পর্শে থেকে। সৃজনশীলতা আর নির্মোহ নির্মলতার চেয়ে ভালো কোন রোগ প্রতিরোধক নেই, এ কথা তোমাকে আগেও বলেছি। ঠিক! ববি ভাবে, এক বছর আগে সে কিরকম ছিলো আর এখন এই মহান হৃদয়ের সৃজনপিয়াসী, শিল্পমনা, জ্ঞানী মানুষটার সংস্পর্শে এসে কতটা বদলে গেছে! মুক্তভাবে ভাবতে শিখেছে, চিন্তার চৌহদ্দি বিস্তৃত হয়েছে বহুদূর। এখন কেউ যদি চলচ্চিত্র বিষয়ক আলোচনায় সত্যজিতকে বাঙলা সিনেমার নবী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চেষ্টা করে, ববি আপত্তি করবেনা, কিন্তু সেই সাথে ঋত্মিক ঘটক এবং মৃণাল সেনের অবদানকেও স্মরণ করার কথা বলবে। ববির মনোজগতে এই শৈল্পিক অভ্যুত্থানের মহানায়ক, তার সামনে বসে ধীর, মন্দ্রকন্ঠে শোনাচ্ছে আশাবাদের কাহিনী, জীবনের জয়, সৃজনের জয়।

নিজের অজান্তেই শ্রদ্ধায় তার মাথা নুয়ে আসে সেইসাথে মনোযোগে ঘাড় ডানদিকে বাঁকা হয়ে কাঁধের দিকে কিছুটা নুয়ে পড়ে। এটা ববির মুদ্রাদোষ! (২) -তুমি আমাকে আগে বলনি কেন কিছু? -ভালো লাগছিলোনা। মন খারাপ, তার ওপর নানারকম টেনশন, অপারেশনের জন্যে ম্যালা টাকা লাগবে। -আঙ্কল তো বলল তেমন কিছু হয়নি, দুটো মাত্র ব্লক, দেখেশুনে চললেই হবে... -হ্যাঁ, দুটো ব্লক তা ঠিকই বলেছে, কিন্তু কত পার্সেন্ট ব্লক সেটা বলেনি। সেভেন্টি পার্সেন্ট প্রতিটাতেই।

রিং পড়াতে লাখ চারেক টাকা মিনিমাম লাগবে। ডাক্তার বলছে এখান থেকে না করিয়ে ব্যাঙ্গালোরে করানোই ভালো হবে, সেটা আরো বেশি টাকার ধাক্কা... -তুমি টাকা নিয়ে এত না ভেবে আঙ্কেলের সুস্থতার কথাটা বেশি ভাবো দয়া করে। টাকার অংকটা খুব কম না, কিন্তু ম্যানেজ হয়ে যাবে আমি জানি... -তো সেক্ষেত্রে আমার বিদেশে পড়তে যাবার কী হবে? সারাজীবন বেকার হয়ে থাকবো নাকি এখানে? -তুমি এত স্বার্থপর আর নিষ্ঠুরের মত কথা বলছ! ছিঃ! বাবার প্রাণের চেয়ে তোমার পড়তে যাওয়াটাই জরুরী হল? -প্লিজ দুটো বিষয়কে বাটখারা বানিয়ে দাঁড়িপাল্লায় মাপতে যেওনা। বাবার জীবন অবশ্যই ফার্স্ট প্রেফারেন্স হবে, যেকোন মূল্যে বাবাকে বাঁচাবো, কিন্তু তারপর কী বাস্তব সমস্যার উদ্ভব হবে সেটা বলেছি মাত্র। লন্ডনের ভিসাটা যদি পেয়েই যাই, তারপর টিউশন ফি, প্লেন ফেয়ার এইসব কোথা থেকে আসবে? -ওসব নিয়ে পরে ভাবা যাবে।

বড় অংকের টাকার চিন্তা বাদ দিয়ে এসো, আমরা গরীব প্রেমিকযুগল পার্কের শাশ্বত ডেটিং উপকরণ চিনাবাদাম চিবুই। দশটা টাকা আছে তো, কিপটুশ! কথার ভঙ্গী দেখে ববি দুশ্চিন্তার মুখোশটা না খুলে পারেনা, ফিক করে হেসে দিয়ে মানিব্যাগে হাত ঢুকায়। (৩) -মা'কে আবার কিছু বলতে যেওনা এসব কথা। এমনিতেই হাইপারটেনশনের রোগী, তোমার অসুস্থতার কথা জানলে ধাক্কা খাবে বিরাট একটা। -না বলবোনা।

তাদের দাম্পত্য মিথস্ক্রিয়া সম্পর্কে ছেলের অজ্ঞতা থেকেই এরকম অযাচিত উপদেশ দেয়া, ভাবেন তিনি। শারিরীক সম্পর্ক তো উবে গেছে সেই কবেই বুদবুদের মত। বিছানায় শুয়ে থেকে পিঠে ঘা করে ফেলা সেই মহিলার সাথে কথাও হয় কালেভদ্রে। সেই কথাবার্তাগুলোও এরকম, -(তীব্র কোঁকানি) -কী বেশি ব্যথা করছে শরীর? -(জবাবে আরো তীব্র কোঁকানি) তার জীবনটাকে কোঁকানির ঝাঁকুনি দিয়ে অতীষ্ঠ করে ফেলেছে এই মহিলা, মহিলা না বলে হাড্ডিসর্বস্ব একটা অস্তিত্ব বলাই ভালো! অসুখী সংসার জীবনে ছেলেটা আছে বলেই টিকে আছেন এখনও। এমন কোন সোনার টুকরো ছেলে নয় অবশ্য, ভার্সিটিতে নানাবিধ ঝামেলায় জড়িয়ে পড়া শেষ করতে পারেনি।

বেকার ছেলে এখন বিদেশে পড়তে যাবার জন্যে মরিয়া। -তোর এ্যাম্বাসিতে যাবার ডেট কবে? -পরশুদিন। -চিন্তা করিসনা ভিসা হয়ে যাবে। স্মার্টলি সব প্রশ্নের উত্তর দিবি। -ভিসা হলেই বা কি! বাকি সব খরচ...তোমার চিকিৎসার বন্দোবস্তটা আগে করতে হবে তারপর অন্যসব।

-আরে ধুরো! আমার কথা বাদ দে। তোর বিষয়টা ঝুলে আছে অনেকদিন, এটার একটা বিহিত করা দরকার আগে। -আরে না... সেলফোনের রিংটোন ববি'র কথায় ব্যাঘাত ঘটায়। সে ব্যস্ত এবং ত্রস্ত ভঙ্গীতে বাবার সামনে থেকে চলে গিয়ে আড়াল খুঁজে নেয় কথা বলার জন্যে। -জ্বী শাহীন ভাই বলেন।

কেমন আছেন? -ভালো আছি। আজকে কয় তারিখ বলতো ববি? -জুলাই এর এক। চিন্তা কইরেন না শাহীন ভাই, আমি দুইমাসের ভেতর টাকাটা দিয়ে দিবো বলেছি, দিবো। -চিন্তা তো আমার না, চিন্তা হইলো আনাসুর মিয়ার। ওর কাছ থেকে আমি সাপ্লাই পাইতাম, তোমারে দিছি বিক্রী করার জন্যে তুমি তা না কইরা নিজে খায়া সব শেষ করছো।

আমি কিছু কইনাই, তয় আনাসুর এখন কইতাছে তোমার হাইট ছয় ইঞ্চি কমায়া দিবো। আমারও আগ্রহ জাগতাছে বিষয়টা কেমুন দেখার। -না শাহীন ভাই, ঐ দৃশ্য আপনার দেখা লাগবেনা। আর দুইটা মাস ওয়েট করেন, পায়া যাইবেন। -ঠিক আছে।

আইসো মাঝে মইধ্যে এলাকায়। টাকা পয়সাই তো সব না, তুমি আমার প্রাক্তন ছোড ভাই, তোমার চাঁদমুখটা দেখতে মঞ্চায়। ফোন রাখার পরে ববির শরীর ঘামতে শুরু করেছে রীতিমত। একটু বসে বিশ্রাম নেয়া দরকার। -ববি! ববি! বাবার কন্ঠস্বর।

তার কী শরীর খারাপ লাগছে? নাকি হিস্টরি চ্যানেলে চমকপ্রদ কিছু দেখে সেটা জানানোর জন্যে উদগ্রীব? যাই হোক, ববি কোন আগ্রহ বোধ করেনা জানার। তার বোধের দেয়ালে মাকড়শা জাল বুনছে, কুৎকুতে চোখে তাকিয়ে আছে একটা ঢাউস টিকটিকি। (৪) হৃদরোগ ধরা পড়ার পরে এখন সময়টা কাটছে তার বিশ্রামে। অফিসে অনেক ছুটি পাওনা ছিলো, ঘরে বসে টিভি দেখে সেসব উশুল করা হচ্ছে এখন। জ্ঞানস্পৃহা এবং শিল্পবোধ তার বরাবরই প্রখর ছিলো।

এখন সেটা শানিয়ে নেয়া যাচ্ছে চমৎকার সব চ্যানেলে বিশ্ব ইতিহাস, প্রাণীবৈচিত্র বিষয়ক অনুষ্ঠান এবং বিখ্যাত চলচ্চিত্র দেখে। অলস এবং আরামদায়ক সময় কাটছিলো তার। কিন্তু কাল রাতে চ্যানেল পাল্টাতে গিয়ে হঠাৎ একটা পর্নো চ্যানেল এসে পড়ায় তার প্রাত্যহিক জীবনে একটা ঝড় ধেয়ে এলো যেন! এই নির্জন দুপুরে অজগর সাপের সাথে কুমীরের দুর্দান্ত লড়াই এর ভিডিও তাকে মোটেই আগ্রহী করে তুলতে পারছেনা। মনে পড়ছে কাল রাতের দশ সেকেন্ডের ঝড়। একটা কমবয়সী ভারতীয় মেয়ে প্রকান্ড এক নিগ্রোর সাথে মিলছে দুর্দম উচ্ছাসে।

এখনও কানে বাজছে মেয়েটির মাদকতাময় শীৎকার ধ্বণি। কেবল অপারেটররা কেন যে চ্যানেলটা পাল্টে একটা বাঙলা খবরের চ্যানেল দিলো! অনেক খুঁজেও আর সেরকম কিছু পাওয়া গেলোনা। "A ten second porno clip can make a old mans day, but i need something more!" কোথায় পাওয়া যায়? বিছানায় ঐ হাড্ডি-চামড়ার মমির কাছে গিয়ে কোন লাভ নেই, বিরক্ত ভঙ্গীতে সে ভাবতে ভাবতে রিমোটের বোতাম টিপতে থাকে অস্থিরভাবে। নাহ, কোত্থাও কিছু নেই। ডিং ডং! কে এলো? -আমি ববি।

কাঁপা কাঁপা হাতে সে দরজা খুলে দেয়। ববি মেয়েটা এত সুন্দর আগে খেয়াল করা হয়নি। তার ব্রায়ের স্ট্র্যাপ বের হয়ে আছে কাঁধ দিয়ে। -এসো ববি। তুমি এসে ভালো করেছো।

-কেন আঙ্কল? শরীর খারাপ? আপনার কন্ঠ এরকম শোনাচ্ছে কেন? উৎকন্ঠিত ববি। -শরীর খারাপ হবে কেন? আমার শরীর খুব ভালো আছে। দেখাবো তোমাকে। প্রেসার মাপার যন্ত্রটা নিয়ে এসো তোমাদের বাসা থেকে, দেখবে একদম নরমাল। ববি এই কাজটা করতে খুব পছন্দ করে।

প্রেসার কীভাবে মাপতে হয় সেটাও তাকে আঙ্কলই শিখিয়েছে। সে নিমিষের মধ্যে গেলো আর আসলো। এই সময়টায় প্রৌঢ় লোকটি তার ঘরে টাঙানো আইনস্টাইনের পোস্টারের দিকে তাকিয়ে থিওরি অফ রিলেটিভিটির সময় সংকোচন নীতি কাকে বলে হাড়ে হাড়ে টের পেলো। -নিয়ে এসেছো? -হু। বসুন।

-সবসময় তো আমারটাই মাপো, আজকে তোমারটা মাপবো। -হিহিহি। আপনার এ সুমতি হল আজ হঠাৎ? ঠিক আছে মাপুন। ববি বুঝতে পারেনি প্রৌঢ় কী মাপতে চেয়েছিলো। যখন বুঝতে পারলো তখন আবিস্কার করলো শক্ত দুটো হাত তার নারীত্বের সম্পদ নিয়ে খেলছে।

তাকে অনাবৃত করার চেষ্টা করছে। ববি আকস্মিক আঘাতে বিমূঢ় হয়ে বাধা দিতে গেলে কয়েকটা প্রবল ঘুষি খেয়ে নিস্তেজ হয়ে পড়ল। লোকটার প্রচুর শক্তি খরচ হয়েছে যৌনতার উন্মাদ তাড়নায় অনাঘ্রাতা, অপাপবিদ্ধ তরুনীর সৌন্দর্য উন্মোচন করতে গিয়ে। নেতিয়ে পড়ার আগ মুহূর্তে ববি ভাবছিলো একবার যদি সুযোগ পায়, তবে ভদ্রবেশী কামুক শয়তানটাকে শেষ করে ফেলবে। যেখানে হাত রাখার কথা ছিলো, আদরে ভরিয়ে দেয়ার কথা ছিলো তার প্রেমিকের, যা সে সংরক্ষণ করে রেখেছিলো এক স্বপ্নময় রাতের জন্যে, সব লুন্ঠিত হয়ে যাচ্ছে, নষ্ট হয়ে যাচ্ছে হিংস্র থাবায় দিনের কর্কশ আলোয়।

সে বিড়বিড় করে নিস্তেজ কন্ঠে ভালোবাসার মানুষটার কথাই স্মরণ করতে পারলো কেবল, "ববি, ওহ ববি!" ববি তো সিনেমার কোন সুপারহিরো না যে উড়াল দিয়ে তার প্রেমিকাকে বাঁচাতে আসবে। ববি একজন আধখানা ভালো ছেলে, যে একটা আস্ত বখাটে অতীতের বোঝা কাঁধে নিয়ে ভয়াল চরিত্রদের তাড়া খেয়ে বেড়াচ্ছে। -হুনলাম তুমার বাপের নাকি হার্টেটাক হৈচে? অপ্রেশন কর্তে নাকি বিদেশ লৈয়া যাইবা? -হ্যাঁ, কিন্তু আপনাদের টাকাটা ঠিকই দিবো, কয়েকটা মাস সময় দ্যান বস... -আমগো মগা পাইচো? তার্পর যে তুমি লন্ডন উড়াল দিবা, এই খবর রাখিনা ভাবচো? -দুইটা একলগে সম্ভব না ভাই, হয় বাবার চিকিৎসা অথবা আমার পড়াশোনা যেকোন একটা... -একটা দুইটা তো বুঝিনা, দুই মাস টাইম চাইচিলা এইটার মধ্যে ট্য্যাকা দিয়া যেইখানে খুছি যাইবা। বাবা যদি হঠাৎ মরে যায়! তাহলে চিকিৎসার টাকা দিতে হয়না। ভিসা হয়ে গেছে।

উড়াল দিলেই হয় এখন। এই অতি সংকটময় মুহূর্তেও নিজেকে বাঁচানোর তাগিদে বাবার মৃত্যুচিন্তা করার কারণে ববি ধিক্কার দেয় নিজেকে। তার নীরবতায় বিরক্ত হয়ে আনাসুর মিয়া গলায় একটা ছুরি ধরে তাকে হুমকি দেয়, "আমার টাকা না পাইলে হাইট ছয় ইঞ্চি কমায়া দিমু" ববির আবারও মনে হয় বাবা মরে গেলেই ভালো হয়... এ এক অদ্ভুত এবং অনাকাঙ্খিত দোদুল্যমানতা! ...লোকটার অনেক পরিশ্রম হয়েছে। অধিক উত্তেজনায় নিজের শক্তিকে অতিক্রম করা পরিশ্রম করে ফেলায় হৃদযন্ত্র খাবি খাচ্ছে এখন। ববি নিয়তিকে মেনে নিয়ে নিঃসারে পরে যখন পরবর্তী আঘাতের অপেক্ষায় ছিলো, আর ভবিষ্যত প্রতিশোধ পরিকল্পনা আঁটছিলো, তখন ঘৃণাভরে তার ওপর উপগত জন্তুটার দিকে তাকিয়ে সে দেখতে পায় মৃত্যুর মুখচ্ছবি।

প্রাণপনে বুক খামচে ধরে, মুখ দিয়ে গোঁ গোঁ শব্দ করছে। লোকটার শরীর থেকে ঘাম বের হচ্ছে রজঃস্বলা নারীর স্রাবের মত। -ববি, আমাকে বাঁচাও, আমি মারা যাচ্ছি। আমার হার্ট এ্যাটাক হয়েছে। আমাকে হাসপাতালে নাও।

আমি মারা যাচ্ছি। ববি এখন সেই কুৎসিত বজ্র আঁটুনি থেকে মুক্ত। তার শরীরের ওপর শ্বাপদ হয়ে চেপেছিলো যে, সে এখন তার পায়ের কাছে পড়ে আছে কোমড় ভাঙা ঢোড়া সাপের মত। ববি কাউকে মরতে দেখেনি কখনও। সামনাসামনি মৃত্যুর অচিন্ত্যনীয় ভয়াল রূপ দেখে সে সিঁটিয়ে যায়।

নিপীড়ন আর চরমতম অসম্মানের কথা ভুলে যায় এক মুহূর্তের জন্যে। স্বাভাবিক রিফ্লেক্সে বলে ওঠে, "কি হয়েছে আঙ্কল?" পরক্ষণেই কামের কাছে বশীভূত জানোয়ারটাকে প্রিয় সম্বোধনে ডেকেছে বলে মুখ ভর্তি হয়ে আসে ঘৃণার থুথুতে। লোকটা শক্ত করে হাত ধরে থাকে ববি'র। যেন হাত ছেড়ে দিলেই তাকে মৃত্যুদূত এসে নিয়ে যাবে। গোঙ্গানির শব্দ, উল্টিয়ে আসা চোখ, বাইরে থেকে শোনা যাচ্ছে তার বুকের ভেতরের প্রবল হাতুড়িপেটা।

সারা ঘরে মৃত্যুগন্ধী পারফিউম ছিটিয়ে দিয়েছে কেউ। ববির প্রতিশোধ নেবার স্পৃহা মরে যায়, সে এড়িয়ে যেতে চায় এই ভয়ংকর পরিস্থিতি। কাউকে চোখের সামনে মরতে দেখতে চায় না সে, যেখানে মৃত্যপথযাত্রী আকূল হয়ে তার সাহায্য চাইছে। কিন্তু আবার তার মনে পড়ে অপমান এবং নিপীড়নের কথা। দুই চোখ জ্বলে ওঠে তার।

এ এক অদ্ভুত এবং অনাকাঙ্খিত দোদুল্যমানতা! মাস্তানদের দ্বারা পরিবৃত হয়ে ববি ভাবে, তাকে যেকোন একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে। গৃহীত সিদ্ধান্তটা হবে নিষ্ঠুর অথবা আত্মঘাতী। ধর্ষক এবং প্রাক্তন আদর্শ আর মৃত্যু দ্বারা পরিবৃত হয়ে ববি ভাবে, তাকে যেকোন একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে। গৃহীত সিদ্ধান্তটা হবে নিষ্ঠুর অথবা আত্মঘাতী। (৫) যদি কোনদিন তাদের দুজনের দেখা হয় আবার, যদি আবার তারা একসাথে নীড় বাঁধার স্বপ্ন দেখে, ওদের মধ্যে কেউ অথবা দুজনেই সম্ভবত এ কথাটা বলবে, "আমাদের দুজনের ডাকনাম এক হওয়াটা কোন কাকতালীয় ঘটনা ছিলোনা" ভালোবাসার ছদ্মাবরণে জটিলতম মানসিক আবর্তনে ঘুরপাক খাবার ফলে হয়তোবা ববি বলে আধখানা ভালো আর আধখানা বখা ছেলে অথবা শ্যামলা স্নিগ্ধ মেয়ে বলে কেউ থাকবেনা।

জীবনের ক্রামগত ধর্ষণে কৌমার্য, নারীত্ব আর পুরুষত্ব হারিয়ে ববি হয়তোবা একটা ক্লীব নাম বা অস্তিত্বের সমার্থক হয়ে যাবে! -  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.