আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দুবাইয়ে বসে অস্ত্র ব্যবসা করছে শিবির ক্যাডার সাজ্জাদ

ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত র্যাব ও পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার সাজ্জাদ হোসেন ওরফে সাজ্জাদ মধ্যপ্রাচ্যের দুবাইয়ে বসে চট্টগ্রামে চাঁদাবাজি ও অস্ত্র ব্যবসা করছে। তার সহযোগী সরোয়ার-নিক্সনের নেতৃত্বে এসব চলছে। মাত্র ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে তারা মানুষ খুন করছে। একে-৪৭ রাইফেলের পাশাপাশি সহজে বহনযোগ্য হওয়ায় ইতালির তৈরি দুই ইঞ্চি অত্যাধুনিক পিস্তল চাঁদাবাজি ও খুনে ব্যবহার করছে তারা। সাজ্জাদের সেকেন্ড ইন কমান্ড সরোয়ার ওরফে বাবলাসহ তিনজন গ্রেফতার হওয়ার পর এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার (পাঁচলাইশ জোন) আবদুল মান্নান সমকালকে বলেন, দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ দুবাইয়ে বসে চাঁদাবাজি ও অস্ত্র ব্যবসা করছে। নগরীর চালিতাতলী এলাকাকে নিরাপদ আস্তানা হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করছে তারা। সাজ্জাদের সেকেন্ড ইন কমান্ডসহ তিন সহযোগীকে অত্যাধুনিক অস্ত্রসহ গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে। বায়েজিদ বোস্তামী থানার অফিসার ইনচার্জ একেএম মহিউদ্দিন সেলিম জানান, সরোয়ার ও নিক্সনের বিরুদ্ধে বায়েজিদ বোস্তামী, পাঁচলাইশ এবং ডবলমুরিং থানায় অস্ত্র ও হত্যাসহ ১৩টি মামলা রয়েছে।

তারা অস্ত্র চালনায় পারদর্শী। সহজে বহনযোগ্য হওয়ায় বিদেশি ছোট অস্ত্রও ব্যবহার ও বিক্রি করছে বলে স্বীকার করেছে তারা। গিট্টু মানিক ১০ হাজার টাকায় মানুষও খুন করেছে। পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাজ্জাদ পালানোর পর তার জুনিয়র গ্রুপের নেতৃত্ব দেয় সরোয়ার ও নিক্সন। তাদের দলে ১৪ থেকে ১৬ জন রয়েছে।

পলাতক রয়েছে তাদের অন্য সহযোগী মহিম। সাজ্জাদ দুবাই থেকে ফোন সরোয়ার ও নিক্সনকে নির্দেশনা দেয়। নির্দেশনা অনুযায়ী চাঁদাবাজি, অস্ত্র কেনা ও বিক্রি এবং মানুষ খুন করে তারা। এছাড়া তাদের দলের অন্য সদস্য র্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার গিট্টু নাছিরের সেকেন্ড ইন কমান্ড মানিক ওরফে গিট্টু মানিক ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে অনেক মানুষ খুন করার কথা স্বীকার করেছে। গিয়াস হাজারিকা নিহত হওয়ার পর তার অস্ত্রভাণ্ডারের রক্ষকের দায়িত্ব পালন করে গিট্টু মানিক।

নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানার চালিতাতলী এলাকায় তার বাড়ির পাশে একটি পুকুর পাড়ে মাটির নিচ থেকে বুধবার দুটি ম্যাগাজিন, ২৭ রাউন্ড গুলিসহ একটি একে-৪৭ রাইফেল উদ্ধার করে পুলিশ। তাদের কাছে আরও একটি একে-৪৭ রাইফেল রয়েছে বলে পুলিশ জানায়। এছাড়াও বিদেশে তৈরি অত্যাধুনিক ছোট অস্ত্র রয়েছে। চাঁদাবাজি, খুন ও সন্ত্রাসীদের কাছে এসব অস্ত্র বিক্রির পাশাপাশি ভাড়াও দেয় তারা। সাজ্জাদের মামলার খরচ চালানোর কথা বলে স্থানীয় গার্মেন্ট ব্যবসায়ী, প্রবাসী ও বিত্তবানদের কাছ থেকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করছে।

চাঁদা না দিলে মেরে ফেলারও হুমকি দেয়। কিছুদিন আগে চালিতাতলী এলাকার মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী হেলালউদ্দিনের কাছে ৬০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে তারা। কথামতো টাকা না দেওয়ায় ওই প্রবাসীর গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি চালায় সন্ত্রাসীরা। বাড়ির সামনে থাকা গাড়িতে চার রাউন্ড গুলি করলেও গাড়িতে না থাকায় বেঁচে যান হেলাল। একে-৪৭ রাইফেল দিয়ে গিট্টু মানিকই গুলি চালায়।

সরোয়ার ও নিক্সনের নেতৃত্বে মুরাদপুর, দুই নম্বর গেট, বহদ্দারহাট, আতুরার ডিপো, অক্সিজেন ও বায়েজিদ এলাকায় চাঁদাবাজি চলছে। প্রবাসী ও ব্যবসায়ীরাই তাদের প্রধান টার্গেট। নতুন জায়গা কিনতে ও বাড়ি নির্মাণ করতে গেলে তাদের চাঁদা দিতে হয়। ফিরোজ অস্ত্রসহ ধরা পড়লেও তাদের জুনিয়র গ্রুপের অনেক সদস্য এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা পুলিশের কাছে আরও স্বীকার করে, শুধু চাঁদাবাজিই নয়, রফতানিযোগ্য গার্মেন্ট পণ্যও ছিনতাই করছে শিবির ক্যাডার সাজ্জাদের সহযোগীরা।

পলাতক সাজ্জাদের নির্দেশে তার জুনিয়র বাহিনীর প্রধান সরোয়ারের নেতৃত্বে ১ জানুয়ারি রাতে নগরীর চান্দগাঁও থানার খতিজা এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড এক্সেসরিজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান থেকে দক্ষিণ আফ্রিকায় রফতানিযোগ্য ৪০ হাজার পিস তৈরি পোশাক পাশের মোনেনো ফ্যাশন অ্যান্ড ডিজাইন নামে প্রতিষ্ঠানে পাঠানোর সময় সিঅ্যান্ডবি এলাকায় অস্ত্র ঠেকিয়ে ছিনিয়ে নেওয়া হয়। ওইদিন রাতে ৭ হাজার শার্টসহ নিক্সনের সহযোগী রুবেলকে গ্রেফতার করা হয়। পরদিন ঢাকার উত্তরা থেকে ৩২ হাজার শার্টসহ কাভার্ডভ্যানের চালক জহিরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। নিরাপদ আস্তানা চালিতাতলী : নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানার চালিতাতলী এলাকায় দু'দশক ধরে দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার ও সন্ত্রাসীদের আস্তানা গড়ে উঠেছে। কাপ্তাই রাস্তার মাথা ও অক্সিজেন এলাকা ছাড়া আর কোনো পথ দিয়ে পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা যেতে পারে না চালিতাতলী এলাকায়।

এ কারণে শিবির ক্যাডার ও সন্ত্রাসীরা অপরাধ করে ওই এলাকায় আত্মগোপন করে। পুলিশ গেলেও ঘটনাস্থলে পেঁৗছার আগেই খবর পেঁৗছে যায় সন্ত্রাসীদের কাছে। ২০০৪ সালে গিয়াস হাজারিকা র্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হওয়ার পর তার বিশাল অস্ত্রভাণ্ডারের দেখভাল করে সাজ্জাদ। চালিতাতলীর আরেক দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার ও অস্ত্র ব্যবসায়ী গিয়াস হাজারিকার সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে আন্ডারওয়ার্ল্ডে সাজ্জাদের কদর বাড়তে থাকে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রভাব বিস্তারের জের ধরে ২০০০ সালের ১২ জুলাই নগরীর সরকারি কমার্শিয়াল ইনস্টিটিউটে যাওয়ার পথে আট ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে প্রকাশ্যে ব্রাশফায়ারে হত্যা করে শিবির ক্যাডাররা।

এ ঘটনায় মামলা হলে ২০০৮ সালের ২৭ মার্চ চট্টগ্রামের একটি আদালত সাজ্জাদসহ চার শিবির ক্যাডারকে মৃত্যুদণ্ড ও তিনজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। রায়ের আগেই সাজ্জাদ দুবাইতে পালিয়ে যায়। ১৯৯৯ সালের ২ জুন পাঁচলাইশের চালিতাতলী এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতা ও ওয়ার্ড কমিশনার লিয়াকত আলী খানকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে সাজ্জাদ। (ফিরোজ শিবলী,সমকাল, চট্টগ্রাম ব্যুরো)  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.