আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

৩০০ কোটি টাকার কাজ বাগালো কারা : চীনা কোম্পানির নামে বিশাল জালিয়াতি

চীনের আন্তর্জাতিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এইচআরবিসি’র কাগজপত্র ও সিল জালিয়াতি করে জয়দেবপুর থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করতে ৯০৪ কোটি ৯৭ লাখ ৬১ হাজার টাকার কাজ বাগিয়ে নিয়েছে একটি চক্র। এর মধ্যে চীনা প্রতিষ্ঠানের নামে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার কাজ বাগিয়ে নেয়ার বিষয়টি ইতোমধ্যে তদন্তে ধরা পড়েছে। এ ধরনের ভয়াবহ জালিয়াতি নিয়ে চীনে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। এরই মধ্যে চীনা প্রতিষ্ঠানটি যোগাযোগমন্ত্রীর কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছে। মন্ত্রণালয়ের ফ্যাক্সে অভিযোগপত্রের একটি কপি পাঠানোর পাশাপাশি বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমেও চীন যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেছে।

দু’একদিনের মধ্যে লিখিত এ অভিযোগপত্রটি যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে এসে পৌঁছতে পারে বলে মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে। এদিকে ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য সড়ক ও জনপথের এডিশনাল চিফ ইঞ্জিনিয়ার আমিনুর রহমান লস্কর ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ নূরুল আমিনকে চীনে পাঠানো হয়। গত ১২ জুন তারা দেশে ফিরে এসে মন্ত্রীকে জানান, চীনের আন্তর্জাতিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এইচআরবিসি’র কাগজপত্র ও সিল জালিয়াতি করা হয়েছে। এইচআরবিসি সাফ জানিয়ে দিয়েছে, এ টেন্ডারে তারা অংশ নেয়নি, এমনকি এ বিষয়ে তারা কিছুই জানে না। যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, জয়দেবপুর থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার কাজটি ৪টি প্যাকেজে ভাগ করা হয়।

চারটি প্যাকেজে জয়েন্ট ভেঞ্চারে কাজ পেয়েছে চীন ও বাংলাদেশের তিনটি প্রতিষ্ঠান । দুটি প্যাকেজের কাজ পেয়েছে চীনের এইচআরবিসি ও বাংলাদেশের ইন্ট্রাকো (বিডি), আরেকটি প্যাকেজের কাজ পেয়েছে যৌথভাবে এমবিইসি ও পিবিএল। অপর প্যাকেজের কাজ পায় যৌথভাবে এমসিসিসি সেল ও টিওএমএ। এছাড়া তত্ত্বাবধানকারী পরামর্শক নিযুক্ত হয় দি লুই বারগার গ্রুপ ইনকরপোরেট ইউএসএ এবং বিসিএল বাংলাদেশ। প্যাকেজ ১-এ জয়দেবপুর থেকে রাজেন্দ্রপুর পর্যন্ত ১২ দশমিক ৬৫ কিলোমিটার এবং প্যাকেজ ২-এ রাজেন্দ্রপুর থেকে মাওনা পর্যন্ত ১৭ দশমিক ৬০ কিলোমিটার সড়ক চার লেনে উন্নীত করার কাজ পায় এইচআরবিসি-ইন্ট্রাকো (বিডি)।

এ কাজের ব্যয় নির্ধারিত ছিল ৩২৯ কোটি ৬৯ লাখ ৫৪ হাজার ৭৮০ টাকা। প্যাকেজ ৩-এ মাওনা থেকে রায়মনি পর্যন্ত ২৯ দশমিক ৬০ কিলোমিটারের কাজ পায় এমবিইসি-পিবিএল। প্রকল্প ব্যয় ২৮৩ কোটি ৮৯ লাখ ৩২ হাজার ২২৫ টাকা। প্যাকেজ ৪-এ রায়মনি থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত ২৭ দশমিক ৩২৯ কিলোমিটার সড়কের জন্য এমসিসিসি-এসইএল-টিওএমএ যৌথ বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ঠিকাদার নিযুক্ত হয়েছে। এ অংশের জন্য ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ২৬৬ কোটি ২৪ লাখ ২৭ হাজার ৮০৮ টাকা।

২৭ জানুয়ারি ঠিকাদারি ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর হয়। সড়ক ভবনে অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী আজিজুর রহমান এবং সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন এবং সড়ক ও রেলপথ বিভাগের সচিব মোজাম্মেল হক খান উপস্থিত ছিলেন। চুক্তিমতো কাজ শুরু হয়েছে পাঁচ মাস আগে। এরই মধ্যে ৫ মে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধিদল প্রকল্পের অগ্রগতি পরিদর্শনে গিয়ে ব্যাপক অনিয়ম দেখতে পান।

বিশেষ করে স্পটে গিয়ে তারা মুখ্য অংশীদার চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কোনো প্রতিনিধিকে দেখতে পাননি। এ ব্যাপারে পরিদর্শন টিমের কাছে কোনো সদুত্তরও দিতে পারেনি বাংলাদেশের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো। সন্দেহজনক মনে হওয়ায় ই-মেইলে প্যাকেজ-১ ও ২-এর চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এইচআরবিসি’র সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তারা জবাবে জানায় যে, এধরনের কোনো টেন্ডারে তারা অংশ নেয়নি। এরপর থেকে এ নিয়ে দু’দেশের মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়।

যোগাযোগ মন্ত্রণালয় গত ১০ মে ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে সড়ক ও জনপথের এডিশনাল চিফ ইঞ্জিনিয়ার আমিনুর রহমান লস্কর ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ নূরুল আমিনকে চীনে পাঠায়। যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের এ তদন্ত দল ১১ জুন চীনের বাংলাদেশ দূতাবাসের কমার্শিয়াল কাউন্সিলর রুহি দাসকে সঙ্গে নিয়ে সিজিয়ান ডংস্থ এইচআরবিসি’র প্রধান কার্যালয়ে যান। সেখানে তারা প্রতিষ্ঠানটির এমডি ইয়াং জিং ইউয়ানের সঙ্গে বৈঠক করেন। এইচআরবিসি’র এমডি সাফ জানিয়ে দেন, তার প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের কোনো টেন্ডারে অংশ নেয়নি। প্রকল্পের সকল কাগজপত্র বের করে দিলে ইয়াং জিং ইউয়ান তাজ্জব বনে যান।

কারণ, প্যাড ও অফিসের ঠিকানা সবই মিল আছে। শুধু স্বাক্ষরে মিল নেই। এ ধরনের ভয়াবহ জালিয়াতি দেখে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হন ইয়াং জিং ইউয়ান। তিনি তাত্ক্ষণিকভাবে এর প্রতিকার চেয়ে যোগাযোগমন্ত্রীকে ফ্যাক্সবার্তা পাঠান। সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের একটি সূত্র জানায়, তারা এইচআরবিসি’র বক্তব্য পেয়ে গেছেন।

তারপরও এ নিয়ে যাতে ইন্ট্রাকো বাড়াবাড়ি করতে না পারে সেজন্য এইচআরবিসিকে দূতাবাসের মাধ্যমে তাদের বক্তব্য পাঠানোর অনুরোধ করা হয়েছে। সে অনুযায়ী তারা ইতোমধ্যে দূতাবাসের মাধ্যমে তাদের বক্তব্য পাঠিয়েছেন। এটি রোববার মন্ত্রণালয়ের হস্তগত হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। সূত্র জানায়, প্যাকেজ-১ ও ২-এর মতো বাকি দুটি প্যাকেজেও কোনো জালিয়াতি হয়েছে কিনা তার তদন্ত চলছে। তদন্ত টিমের প্রধান ইঞ্জিনিয়ার আমিনুর রহমান লস্কর আমার দেশকে বলেন, আপনি যতটুকু জেনেছেন ঠিক আছে।

অধিক তদন্তের স্বার্থে আমি এ মুহূর্তে এর বেশি কিছু বলব না। আমাদের আরও কিছু কাগজপত্র হাতে পেতে বাকি আছে, সেগুলো পেলে পুরোপুরি মন্তব্য করা যাবে। তদন্ত কমিটির অপর সদস্য মোহাম্মদ নূরুল আমিন এ প্রতিনিধিকে জানান, এইচআরবিসি’র এমডি আমাদেরকে জানিয়েছেন, তাদের প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে এ ধরনের কোনো প্রকল্পে কাজ করছে না। এ ধরনের কোনো প্রকল্পের চুক্তিতে সই করেনি, পাওয়ার অব অ্যাটর্নিও দেয়নি কাউকে। প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার ফিরোজ ইকবাল ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আমরা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছি।

এ ব্যাপারে ইন্ট্রাকো (বিডি)’র বক্তব্য জানার জন্য প্রতিষ্ঠানটির এমডি শেখ বাবর আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানটি তাদের বিরুদ্ধে যাতে কোনো ব্যবস্থা না নয়া হয় সেজন্য সরকারের বিভিন্ন মহলে লবিং চালাচ্ছে। এদিকে প্রকল্পের কাজেও চলছে বেহালদশা। চুক্তি অনুযায়ী জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ সড়কের কাজ চার মাস আগে শুরু হওয়ার কথা। কাজের অগ্রগতি দেখতে গত মাসে স্পটে গিয়েছিলেন সরকারের একটি প্রতিনিধিদল।

স্পটে গিয়ে হতভম্ব হয়ে যান তারা। কাজ শুরুতো দূরে থাক, এ ধরনের কোনো লক্ষণই তারা দেখতে পেলেন না। মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরীর নেতৃত্বে এই প্রতিনিধিদল প্রকল্প এলাকা ঘুরে এসে যোগাযোগমন্ত্রীর কাছে কাজের অগ্রগতি সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দেন ২৬ মে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘প্যাকেজ-১ ও ২-এ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শুরুর জন্য কোনো কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করেনি, এমনকি প্যাকেজ-২-এ কোনো প্রকল্প ব্যবস্থাপক বা কোনো জনবল নিয়োগ দেয়নি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পরিদর্শনকালে প্রকল্পের প্রত্যেক প্যাকেজে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো বৈদেশিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও জনবল প্রদর্শন করে কাজ পেলেও সাইটে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কোনো প্রকৌশলী বা জনবল দেখা যায়নি।

’ এ ব্যাপারে পরিদর্শন টিম তাদের সুপারিশে বলেছে, চুক্তির মেয়াদ ইতোমধ্যে তিন মাস অতিক্রান্ত হলেও কাজের কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় যথাসময়ে প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত করতে নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও তদারকি জোরদার করতে হবে। সূত্র জানায়, প্যাকেজ-১-এর কাজের মধ্যে রয়েছে জয়দেবপুর থেকে রাজেন্দ্রপুর পর্যন্ত ১২ দশমিক ৬৫ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ এবং সালনায় একটি রেল ওভারব্রিজ ও ২টি বক্স কালভার্ট সমপ্রসারণ এবং ২৬টি নতুন বক্স কালভার্ট নির্মাণ। এ অংশের কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন শেষে সরকারি টিম লিখিত প্রতিবেদনে জানায়, ‘২৯ মার্চ কাজ শুরুর কথা থাকলেও এখনো সড়ক সার্ভে কাজই শেষ হয়নি, এমনকি অন্য কোনো কাজও শুরু হয়নি। তাছাড়া বর্তমানে বিদ্যমান একটি সড়ক চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ অংশের কাজ সম্পন্ন করা কারিগরি ও পদ্ধতিগত দিক থেকে সহজ হলেও ঠিকাদার কাজ শুরুর কোনো উদ্যোগই নেয়নি।

বেইজ ক্যাম্প ও সাইট অফিস পর্যন্ত স্থাপন করা হয়নি। সাইটে ১০ ভাগ যন্ত্রপাতি আনা হয়েছে বলে মন্ত্রণালয়কে জানানো হলেও পরিদর্শন টিম কোনো যন্ত্রপাতি বা নির্মাণ সামগ্রী দেখতে পাননি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের জয়েন্টভেঞ্চার চীনা প্রতিষ্ঠানটি মুখ্য অংশীদার হলেও তার কোনো প্রকৌশলী বা প্রতিনিধি পরিদর্শনকালে দেখা যাযনি। ’ অথচ প্রকল্প পরিচালক জানিয়েছিলেন, ঠিকাদারকে সাইট বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। সাইট অফিস স্থাপন ও সড়ক সার্ভে কাজ সমাপ্ত হয়েছে।

যন্ত্রপাতি ও মালামাল আনা শুরু হয়েছে। প্যাকেজ-২-এর কাজের মধ্যে রয়েছে রাজেন্দ্রপুর থেকে মাওনা পর্যন্ত ১৭ দশমিক ৬ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ, মাওনায় একটি ফ্লাইওভার (৪৫০ মিটার দীর্ঘ) ও ১৩টি বক্স কালভার্ট নির্মাণ এবং ১১টি বক্স কালভার্ট প্রশস্তকরণ। এ অংশের কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘এ প্যাকেজে ঠিকাদারের পক্ষ থেকে প্রকল্প ব্যবস্থাপক বা অন্য কোনো জনবল নিয়োগ দেয়া হয়নি। ২৯ মার্চ কাজ শুরুর কথা থাকলেও চলমান সড়ক সার্ভে ছাড়া অন্য কোনো কাজ শুরু করা হয়নি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের জয়েন্টভেঞ্চার চীনা প্রতিষ্ঠানটি মুখ্য অংশীদার হলেও তাদের কোনো প্রকৌশলী বা প্রতিনিধি পরিদর্শনকালে দেখা যাযনি।

’ প্যাকেজ-১-এর মতো এখানেও প্রকল্প পরিচালক জানিয়েছিলেন, ঠিকাদারকে সাইট বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। সাইট অফিস স্থাপন, সড়ক সার্ভে কাজ সমাপ্ত হয়েছে। যন্ত্রপাতি ও মালামাল মবিলাইজ করা শুরু হয়েছে। কন্ট্রাক্ট প্যাকেজ-৩-এর কাজের মধ্যে রয়েছে মাওনা থেকে রাজমনি পর্যন্ত ২৯ দশমিক ৬ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ, ভালুকায় ১৬০ মিটারের এবং বানারে ৪৫ মিটারের ব্রিজ, ভালুকা বাজারে ১টি ফুট ওভারব্রিজ, ২৪টি বক্স কালভার্ট নির্মাণ ও ২০টি বক্স কালভার্ট প্রশস্তকরণ। এ অংশের কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘সাইট অফিস নির্মাণের কাজ চলছে।

যন্ত্রপাতি ও নির্মাণ সামগ্রীর ৩০ ভাগ সাইটে আনা হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের জয়েন্টভেঞ্চার চীনা প্রতিষ্ঠানটি মুখ্য অংশীদার হলেও তাদের কোনো প্রকৌশলী বা প্রতিনিধি পরিদর্শনকালে দেখা যাযনি। ’ প্রকল্প পরিচালক আগের দুটি প্যাকেজের মতো এ ক্ষেত্রেও কাজের একই অগ্রগতির মিথ্যা তথ্য সরবরাহ করেন। কন্ট্রাক্ট প্যাকেজ-৪ এর কাজের মধ্যে রয়েছে রাজমনি থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত ২৭ দশমিক ৩২৯ কিলোমিটার সড়ক, ৩টি ব্রিজ, ২টি ওভারব্রিজ, ৩৫টি বক্স কালভার্ট নির্মাণ ও ৬টি বক্স কালভার্ট প্রশস্তকরণ। এ অংশের কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘সাইট অফিস নির্মাণের কাজ চলছে।

ব্রিজের পাইলিং কাজ চলছে। যন্ত্রপাতি ও নির্মাণ সামগ্রী সাইটে আনা হয়নি। বাকি কন্ট্রাক্ট প্যাকেজের মতো এক্ষেত্রেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের জয়েন্টভেঞ্চার চীনা প্রতিষ্ঠানটি মুখ্য অংশীদার হলেও তাদের কোনো প্রকৌশলী বা প্রতিনিধি পরিদর্শনকালে দেখা যায়নি। ’ যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, ভূমি অধিগ্রহণ ও ইউলিটি শিফটিং খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ আরও বাড়ানোর জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। তারা এ ক্ষেত্রে ৭৫ কোটি টাকা বাড়ানোর জন্য প্রস্তাব পাঠিয়ে এখন বিভিন্ন মহলকে দিয়ে তদবির করাচ্ছেন।

সূত্র জানায়, প্রকল্পের ডিপিপিতে ২১ দশমিক ২৫ একর ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ১৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা এবং ইউলিটি শিফটিং খাতে ১৫ কোটি টাকার সংস্থান রয়েছে। কিন্তু প্রকল্প পরিচালক ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ২৫ কোটি টাকা এবং ইউলিটি শিফটিং খাতে ৭৫ কোটি টাকা দাবি করছেন। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রকল্পের ভৌত কাজ তদারকির জন্য ২৭ জানুয়ারি তারিখে ২৫ কোটি ১৪ লাখ ৪৬ হাজার ৫০৭ টাকা চুক্তিমূল্যে পরামর্শক নিয়োগ দেয়া হয়। পরামর্শক কার্যক্রমে একজন টিম লিডার, একজন ডেপুটি টিম লিডার, তিনজন রেসিডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার, একজন মেটেরিয়াল ইঞ্জিনিয়ার, একজন ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ার, দু’জন কোয়ালিটি সার্ভিস ইঞ্জিনিয়ার ও ১৭ জন জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার কর্মরত আছেন। কার্যপরিধি অনুসারে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ঠিকাদার কর্তৃক প্রদত্ত কর্মসূচি পরীক্ষা করবেন, প্রয়োজনে সংশোধন করবেন এবং ঠিকাদার কর্তৃক সম্পাদিত কাজের গুণগতমান নিশ্চিত করবেন।

কিন্তু পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এখনও পর্যন্ত কোনো কর্মসূচি চূড়ান্ত করেননি, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কর্মসূচি না দেয়ার জন্য পত্রও দেননি। পরামর্শক নিয়োগের পর হতে কোনো কাজ ব্যতিরেকে ২৬ জন ইঞ্জিনিয়ারকে সরকারি তহবিল থেকে অর্থ পরিশোধ করতে হচ্ছে। তাছাড়া প্রতি মাসে প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি প্রতিবেদন দেয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও নিয়োগের পর হতে ওই প্রতিষ্ঠান কোনো প্রতিবেদনও প্রদান করেনি। প্রতিবেদনে ৮৭ কিলোমিটার রাস্তা করার জন্য একজন বৈদেশিক পরামর্শক নিয়োগসহ ২৬ জন পরামর্শক নিয়োগের যৌক্তিকতার প্রশ্ন তোলা হয়। Click This Link ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।