আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আজ পবিত্র ও সুমহান শবে মিরাজ শরীফ

আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মি’রাজ শরীফ-এর ঘটনাটি কালামুল্লাহ শরীফ-এর “সূরা বণী ইসরাইল”-এর ১ নম্বর আয়াত শরীফ-এ বর্ণনা করেছেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, “মহান আল্লাহ পাক যিনি উনার বান্দা (হাবীব) ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কোন এক রাতের সামান্য সময়ে (প্রথমে) বাইতুল্লাহ শরীফ থেকে বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ পর্যন্ত, যার আশপাশ বরকতময়; অতঃপর উনার নিদর্শনসমূহ দেখানোর জন্য (অর্থাৎ দীদার মুবারক আরশে আযীমে দেয়ার জন্য) ভ্রমণ করিয়েছেন। নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা। ” সুবহানাল্লাহ! আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মি’রাজ শরীফ হয়েছে ৩৩ থেকে ৩৪ বার। এক বার স্বশরীরে বাকি ৩৩ বার রূহানীভাবে হয়েছে।

আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দুনিয়াবী হিসেবে ৫১তম বয়স মুবারক-এ ২৭ মাহে রজব রোববার দিবাগত রাত্রে অর্থাৎ সোমবার রাত্রে কা’বা শরীফ থেকে বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ, সিদরাতুল মুনতাহা হয়ে আরশে মুয়াল্লায় আল্লাহ পাক উনার সাক্ষাৎ করে আবার যমীনে তাশরীফ আনেন। যা উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম, হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুসহ বিশিষ্ট ৪৫ জন ছাহাবী বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ পাক উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অগণিত ফযীলত ও মর্যাদা হাদিয়া করেছেন। সে মর্যাদাসমূহের মধ্যে অন্যতম একটি মর্যাদা হচ্ছে মি’রাজ শরীফ। মি’রাজ শরীফ-এর অর্থ হচ্ছে ঊর্ধ্বারোহণ।

শরীয়তের পরিভাষায় আল্লাহ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে আল্লাহ পাক উনার যে সাক্ষাৎ বা দীদার হয়েছে আনুষ্ঠানিকভাবে সেটাই মি’রাজ শরীফ। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মিরাজ শরীফ থেকে মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ হতে উম্মতের জন্য যে সকল নিয়ামত নিয়ে আসেন তন্মধ্যে নামায হচ্ছে অন্যতম। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, মুমিনের মিরাজ হচ্ছে নামায। ”তিনি আরো ইরশাদ করেন, একজন মুসলমান আর একজন কাফিরের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে নামায। ”অর্থাৎ মুসলমান নামায আদায় করে কাফির নামায আদায় করে না।

মি’রাজ শরীফ-এর লক্ষ কোটি কারণ রয়েছে, তন্মধ্যে অন্যতম কারণ হচ্ছে আল্লাহ পাক উনার সরাসরি সাক্ষাৎ, যা তিনি উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দিয়েছেন। এ মি’রাজ শরীফ দ্বারা আল্লাহ পাক উনার সাথে আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিগূঢ় সম্পর্ক আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ পেয়েছে। মিরাজ শরীফ সত্য এবং তা কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ-এর অসংখ্য দলীল দ্বারা প্রমাণিত। কিন্তু মিরাজ শরীফ কখন হয়েছিল এ নিয়ে কিছু মতপার্থক্য থাকলেও মশহুর বা প্রসিদ্ধ মতে মিরাজ শরীফ সংঘটিত হয়েছিলো রজব মাসের ২৭ তারিখ রাতে সোমাবার শরীফ-এ অর্থাৎ ২৬শে রজব দিবাগত রাতে। যেমন, এ সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বিশ্ববিখ্যাত সর্বজনমান্য মুহাদ্দিছ আরিফ বিল্লাহ আল্লামা হযরত শায়েখ আব্দুল হক মুহাদ্দিছ দেহলভী হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিজ হাতে লিখা ‘মা ছাবাতা বিস সুন্নাহ কিতাবের ৭৩ পৃষ্ঠায় বলেন, اعلم انه قد اشتهر فيما بين الناس بديار العرب ان معراجه صلى الله عليه وسلم كان لسبع وعشرين من رجب জেনে রাখুন! নিশ্চয়ই আরব জাহানের দেশগুলোর লোকদের মধ্যে মাশহূর বা প্রসিদ্ধ ছিলো যে, নিশ্চয়ই সাইয়্যিদুনা হযরত নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মিরাজ শরীফ সংঘটিত হয়েছিলো রজব মাসের ২৭ তারিখ রাতেই।

সুবহানাল্লাহ! মিরাজ শরীফের আমল গাউছুল আযম, আওলাদে রসূল, মুহিউদ্দীন হযরত সাইয়্যিদ আব্দুল ক্বাদির জিলানী হাম্বলী আশয়ারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমাদের কাছে খবর দিয়েছেন হযরত শায়েখ আবুল বারাকাত হাক্কাতুল্লাহ সাকতী রহমতুল্লাহি আলাইহি। সনদ পরস্পরায় ছাহাবী হযরত আবূ সালামাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ছাহাবী হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ও ছাহাবী হযরত সালমান ফারসী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে। উনারা বলেন, সাইয়্যিদুনা হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, রজব মাসে এমন একটি দিন ও রাত আছে, যে ব্যক্তি ওই দিনে রোযা রাখবে এবং রাতে ইবাদত-বন্দেগী করবে, তাকে শত শত বছর দিনে রোযা রাখার এবং শত শত বছর ইবাদত-বন্দেগী করার ছওয়াব দান করা হবে। ” আর সেই দিন রাতটি হচ্ছে রজব মাসের তিনদিন অবশিষ্ট থাকতেই (অর্থাৎ ২৭ রজব তথা মিরাজ শরীফ-এর দিন ও রাত)। ওই দিন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি বিশেষ নিয়ামত হাদিয়া করার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা প্রদাণ করা হয়েছিলো।

(গুনয়িতুত ত্বালিবীন, ৩য় পর্ব, ৩৩২ পৃষ্ঠা) সবুজ বাংলা ব্লগেও প্রকাশিত ইসলামের বিশেষদিন গুলো নিয়ে আর্কাইভ ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।