আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এমন মিথ্যাচার আশা করিনি

‌কোথাও কেউ নেই’ নাটকে বাকের ভাই চরিত্রে খলনায়কের আদলে সত্যিকারের নায়ক হয়ে উঠেছিলেন আসাদুজ্জামান নূর। কিন্তু আজ বাস্তবতার ময়দানে নায়কের মুখোশে (সংসদ সদস্য) খলনায়কের ভূমিকায় দেখছি তাকে। জাতীয় সংসদের বাজেটের ওপর আলোচনা-বক্তব্যে তিনি যে মিথ্যাচার করলেন তা একজন রাজনীতিবিদের জন্য শোভা পায় কিন্তু একজন শক্তিমান অভিনেতা, একজন সংস্কৃতিমান ব্যক্তির পক্ষে তা সুশোভন নয়। তিনি কোনও এক কমলাকান্ত না হরিপদের উদাহরণ টেনে জানালেন অতীতের মংগা পিরস্থিতি এখন আর নেই। তার সরকারের আমলে আর কোনও হরিপদকে না-খেয়ে আত্মহত্যা করতে হয়নি।

মংগা শব্দটি মুছে ফেলতে পেরেছেন তার সরকার। একজন সংসদ সদস্য বা জনপ্রতিনিধির উচিৎ তার এলাকার প্রকৃত চিত্রটি তুলে ধরা। কিন্তু তা না করে কেন তিনি মা হাসিনাকে তৈলমর্দন করার চেষ্টা করলেন তা হয়ত এলাকাবাসী জানতে চাইবেন। যে লোকটির আত্মহত্যার গল্পটি তিনি বললেন সেটি গল্পের মতোই শুনলাম আমরা...কিন্তু তার এলাকার, তার আশপাশের এলাকার এমন শত শত গল্প এখন জীবন্ত সংবাদ যার এতটুকু অতিরঞ্জন বা রং-ছিটানো নয়; সেসব তিনি কী করে অস্বীকার করলেন? এখনও মংগাপ্রবণ এলাকার মানুষ চরম মানবেতর জীবন যাপন করছে এই সত্য গোপন করে তিনি কি তার ভোটারদের সাথে বেঈমানী করলেন না? তিনি যে লোডশেডিং এর সাফাই গাইলেন তার একটি জ্বলন্ত উদাহরণ দেই এই লেখাটি লিখতে গিয়ে তিনবার লোডশেডিংএর কবলে পড়েছি আমি, হতভাগা। মংগা নেই এমন দাবি জোট সরকারও করেছিলেন, তারা বলতেন—এই সংসদে; মংগা নাকি শুধু পত্রিকার পাতায়, নেই বাস্তবতায় ।

আল্লাহর দোহাই আর মিথ্যা বলবেন না। আমরা আপনাকে ভালোবাসি একজন অভিনেতা হিসেবে, তাতে আপনি যতোটা ভালো তার এতটুকু অন্তত বাস্তবে দেখান। সংস্কৃতিমান লোকদের কাছে আমরা সত্য আশা করি, ভন্ডামি নয়। যখন লালমনিরহাটে খেতে না পেয়ে একযোগে আত্মহত্যা করে স্বামী ও স্ত্রী, কুড়িগ্রামে বিক্রি হয় কোলের সন্তান, বিদ্যুতের কারণে পঁচে যায় কোটি কোটি টাকার আলু, শ্রমবিক্রির যায়গা(কর্ম) না পেয়ে মনের দু:খে আত্মহত্যা করে ষাট বছরের বৃদ্ধ, তেমনই এক জনপদের জনপ্রতিনিধি হিসেবে আপনি যদি বলেন ওসব ইতহাস হয়ে গেছে...এর চেয়ে বড় মিথ্যা আর কী হতে পারে? আজ জাতীয় সংসদের মহান স্টেজে আপনি যে মিথ্যাচার করলেন, সত্যগোপন করলেন তার হিসেব কি জনগণ চাইবে না? আপনিতো মিডিয়া-মালিক, খোঁজ নিতে বলেন আপনার টেলিভিশনের সাংবাদিকদের; আমি যা বলেছি তার এক বর্ণও মিথ্যা কি না! বৃদ্ধভাতা চালুর সুনাম গাইছে আপনারই মতো সংসদ সদস্যরা। কিন্তু একজন অশীতিপর বৃদ্ধা দ্বারে দ্বারে ঘুরেও যখন তিনহাজার টাকা ঘুষ দিতে না পারায় একখানা কার্ড পায় না সে কথাতো আপনারা বলেন না।

এরকম একজনের খবর টেলিভিশনের পর্দায় আমি তুলে ধরেছিলাম, প্রতিবেশী-এলাকাবাসী সাক্ষ্য দেয় কে টাকা চেয়েছে কত চেয়েছে। ...নিয়েছিল কোনও ব্যবস্থা আপনার সরকার? বরং বুড়ির দায়িত্ব নেয় একজন নিউইয়র্ক প্রবাসী। লজ্জায় মাথা নিচু করে আপনাদের ঢোকা উচিৎ মহান সংসদে। যখন ইভটিজিং শব্দটা জন্মলাভ করে আপনাদের সরকারের আমলে, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে যখন প্রতিদিনই একাধিক ব্যক্তি খুন হয় সহিংসতায়, ডাকাতি হয় আপনারই মতো এক সংসদ সদস্যের বাসায়, খুন হয় আপনার দলের নেতারাও তখন কী করে বলেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতি হয়েছে? নাকি উন্নতির সংজ্ঞা ভুলে গেছেন আপনারা? টকশোতে প্রতিপক্ষ হিসেবে পান আরেক রাজনীতিবিদকে। তাকে ঠকান তার আমলের উদাহরণ টেনে যদিও আপনারা বলেছেন সেসব দিন বদল করবেন...কিন্তু জনগণ? যারা বিগত এবং বর্তমান উভয় আমলে শুধুই জনগণ? তাদেরকে কী উদাহরণ দেবেন? নিষ্পেষণের যতো উদাহরণ তার ভুক্তভোগী এই জনগণ।

যখন কথা বলেন তখন বিরোধীদলকে উদ্দেশ্য করে বলেন কেন? জাতিকে উদ্দেশ্য করে বলতে পারেন না? আপনার আরেক সংসদ সদস্য বিএনপির মিছিলে লোকসংখ্যা গুণতে যান, তার কথা সত্য। ২৫ হাজার মানুষ হয় না মিছিলে তার মানে ২৫ হাজার মানুষও নেই বিএনপির পক্ষে...কিন্তু আপনাদের মিছিলে কতজন আসে? ধরে নিলাম আরও ২৫ হাজার। মোট ৫০ হাজার মানুষ বাদ দিলে বাকি সব জনগণ। এদের কথা ভাবতে হবে। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার রাজনীতিতে আপনারা একধাপ এগিয়ে এ কথা আপনারা শতকণ্ঠে দাবি না করলেও জাতি জানে।

কিন্তু জনগণকে কেন কষ্ট দেবেন? তারাতো আপনার এবং প্রতিপক্ষ কারও মিছিলেই যায় না। কেন তারা মাসে ১৫ কেজি চালের পরিবর্তে ১০ কেজি চাল কিনবে? কেন ৫ কেজি তেলের পরিবর্তে ২ কেজি তেল কিনবে? কেন মেহমান এলে মুখ শুকনো করে ফেলবে? কেন শিশু বাচ্চাকে দুধের পরিবর্তে ভাতের মাড় খাওয়াবে? কেন ৩২ টাকার চিনি হবে ৬৬ টাকা? কেন দেড়শ টাকার গরুর গোশত ২৬০টাকায় কিনবে? কেন ৫হাজার টাকার ঘরভাড়া গেল আড়াই বছরে ১০হাজারে উন্নীত হলো? বলতে পারেন? এর একটিরও জবাব আপনারা দিতে পারবেন না। চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিবেন বিএনপি’র দিকে...এই কাদাছোড়াছুড়িতেই দেশের বারোটা বেজে শেষ। একদিন রাস্তায় নেমে ছদ্মবেশে সাধারণ মানুষের কথা শুনুন, পারলে জবাব দিন। তখন বুঝবো আপনারা সফল, সত্য ধরে নেব আপনার গল্প ‌‍‌মংগা অতীত হয়ে গেছে...’ আল্লাহর দোহাই সত্যগোপন করবেন না।

এলাকার সত্যিকারের পরিস্থিতি তুলে ধরে ন্যাগিং করে আরেকটু ভালো রাখবার ব্যবস্থা করবেন বলেই জনগণ ভোট দেয় আপনাদের। সত্যকে লুকিয়ে প্রধানমন্ত্রীর- অর্থমন্ত্রীর বাহবা নেয়ার চেষ্টা করবেন না, প্লিজ! *** বাজেটের ওপর বক্তব্যদানকালে আসাদুজ্জামান নূর যা বলেছেন তারই প্রেক্ষিতে এ লেখা.... ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।