আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

৭১ এর রাজাকারনামা ১ ঃ রাজাকার ও যুদ্ধঅপরাধীদের অ্যালবাম

গত লিখায় আপনাদের বলেছিলাম আগামী পোস্টে ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে রাজাকার আলবদর দের নিয়ে বিস্তারিত একটি পোস্ট দিবো । আজ আপনাদের সাথে সেই বিষয়টা নিয়ে এলাম । ‘রাজাকার’ ‘আলবদর’ নিয়ে আমাদের বারবার বিভ্রান্ত করার একটি চেষ্টা করা হচ্ছে । একটি রাজনৈতিক দল বিরোধী আরেকটি রাজনৈতিক দলকে নির্মূল করার জন্য ‘রাজাকার/ যুদ্ধঅপরাধী’র বিচারকে বারবার রাজনৈতিককরন করে সেই বিচারটা নিয়ে পুরো জাতিকে দুই ভাগে বিভক্ত করে ফেলে । আর প্রতিবারই সুবিধাপ্রাপ্ত দলের কিছু বুদ্ধিজীবী দালাল সেটাকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে জান ‘ইসলাম ধর্ম’কে দায়ী করে বা ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে দায়ী করে ।

ফলে জনগণের মূল দাবীটা বারবারই বাধাগ্রস্থ হয়ে যায় সাংঘর্ষিক অবস্থানের কারনে । তাই আমি আজ চেষ্টা করবো আপনাদের সবাইকে ‘রাজাকার’ ‘যুদ্ধঅপরাধী’র বিষয়টা প্রমান সহ একটু পরিস্কার করার জন্য । এখানে উল্লেখ্য যে ‘জামায়াত ইসলামী বা জামাত শিবির’ কে যারা ধর্মভিত্তিক রাজনীতি ও সাম্প্রদায়িকতার দোহাই তুলে নিষিদ্ধ করতে চেয়েছিলেন তাঁরা আসলেই জেনে শুনে জামাতকে রক্ষার ঢালটা জনগণের হাতে তুলে দিয়েছিলেন যার ফলে গত ১ মাস যাবত জামায়াত সেই কাজটি ভালোভাবেই সাধারন জনগণকে পক্ষে নিয়ে করে যাচ্ছে। এর জন্য দায়ী প্রথমে জামাত নয় দায়ী শাহবাগ মঞ্চের কিছু মাথা মোটা বুদ্ধিজীবী যারা একই কাজ ১৯৯২ তে করে জাহানারা ইমামের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির করা গনআদালতের রায়কে বাস্তবায়ন করতে দেয়নি । সেই সময়ে গোলাম আজমকে তৎকালীন ক্ষমতাসীন বিএনপি গ্রেফতার করলেও কারাগারে আটক রাখতে বেশিদিন পারেননি আন্দোলনের ফলে এবং সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় যে সেই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তৎকালীন বিরোধীদলের নেত্রী ও আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ।

সেদিনও এই সাম্প্রদায়িক ও ধর্মভিত্তিক রাজনিতির দোহাই দিয়ে বুদ্ধিজীবীরা সুকৌশলে বলটা জামাতের দিকে ঠেলে দিয়েছিলেন যা বিস্তারিত আমার আগামী লিখায় বলবো । এবার মূল আলোচনায় যাওয়া যাক । দেশে আজ যুদ্ধঅপরাধের বিচার চলছে ,আবার এর বিরোধিতাও চলছে । সবমিলিয়ে এই ইস্যুটা নিয়ে আজ দেশ সম্পূর্ণ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে আছে । কিন্তু এমনটি হওয়ার তো কথা ছিল না।

রাজাকারদের বিচারের বেলায় কোন আপোষ করার তো কথা ছিল না এবং এই ইস্যুটাকে নিয়ে দেশের কোন রাজনৈতিক দল বিশেষ করে যারা নিজেদের সবসময় মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের দাবীদার ও দেশের এক মাত্র দেশপ্রেমিক দল হিসেবে বিবেচনা করে তাদের কাছে মানুষ এই ব্যাপারে সবচেয়ে ১০০ ভাগ সততা আশা করতেই পারে। কিন্তু তাঁরা কি সেই সততার বিন্দুমাত্র রাখতে পেরেছেন নাকি যুদ্ধ অপরাধের বিচারের নামে একটি প্রহসন করছেন ? এসব প্রশ্নের জবাব খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করবো আমরা নিচের ছবিগুলো থেকে যা ১৯৭১ সালে সংগঠিত মুক্তিযুদ্ধের সময়কারের একটি দলিলও বলতে পারেন । যেখানে কোন দল বা ব্যক্তিকে মহান / নিকৃষ্ট বানানোর কিছুই নেই, যা আছে সবই সত্যিকারের ইতিহাস যা আমাদের অনেকের কাছে অজানা । জামায়াত ইসলামকে নিষিদ্ধ করার সৎ ইচ্ছা থাকলে কোনদিনও ‘ইসলাম’ বা ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতির দোহাই তোলার প্রয়োজন ছিল না এবং আজও নেই। কারন জামাতের সাথে ইসলাম ধর্মের কোন উত্থান বা পতনের সম্পর্ক নেই ।

এটা জেনেও যারা বারবার ধর্মভিত্তিক রাজনীতি ও সাম্প্রদায়িকতার অজুহাতে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার দাবী তুলেন তাঁরা আসলেই কি জামাতের নিষিদ্ধ চান নাকি এটা নিয়ে কাউকে রক্ষা করতে চান সেটা স্পষ্ট পরিস্কার করবে নিচের ছবিগুলো । ২৫ শে ১৯৭১ এর ‘অপারেশন সার্চলাইট’ এর পরিকল্পনা ও নকশা দেখুন - প্রথমেই দেখুন ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ কালরাত্রির পূর্বপলিকল্পনার পুরো বাংলাদেশের চিত্র - এবার দেখুন ২৫ শে মার্চ রাত্রের ঢাকার গণহত্যার পূর্বপরিকল্পনার চিত্র - এভাবেই ঘটানো হয়েছিল সেই ২৫সে মার্চের ভয়াল তান্ডবলীলা, ধ্বংসের দাবানল এভাই জ্বলেছিল সেদিন। আর এভাবেই বাংলার আকাশ বাতাস আর্তমানবতার চিৎকারে সেদিন প্রকম্পিত হয়ে উঠেছিল বারবার যা ছিল পাকিস্তানের পূর্ব পরিকল্পিত । রাজাকার অর্ডিন্যান্স: ২৬ শে মার্চ রাতে মেজর জিয়াউর রহমানের কণ্ঠে স্বাধীনতার ঘোষণা ও যুদ্ধের আহবানের মধ্য দিয়ে পুরো বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতার যুদ্ধে যোগ দিলে শুরু হয় পাকিস্তানিদের সহযোগিতার জন্য রাজাকার অর্ডিন্যান্স । অর্ডিন্যান্স পাশ করার পর কাজ শুরু হয় ।

পাকিস্তান সামরিক জান্তারা যাতে মুক্তিযোদ্ধা মনে করে মেরে না ফেলে সে জন্যে জানোয়ার গুলোকে দেয়া হয়েছিল ব্যাক্তিগত পরিচয় পত্র। তেমনই একটি পরিচয় পত্র দেখুন - যারা 'রাজাকার' বাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন তাদের নাম ঠিকানা অফিসিয়াল ভাবে ফাইল করে রাখা হতো যাদের সেই সময় বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা সরকার থেকে দেয়া হতো । নিচের ছবিটি রাজাকারদের নাম ঠিকানা সহ একটি সারনি দেখতে পাচ্ছেন - এবার দেখুন রাজাকারদের শপথনামার একটি ফর্ম - শপথের একটি দৃশ্য - রাজাকারদের সাংগঠনিক ভাবে প্রশিক্ষণ - রাজাকারদের মাসিক বেতন ভাতার দলিল - গোলাম আজমের রাজাকার তহবিলে চাঁদা দেয়ার রসিদ - এপ্রিল ১৯৭১: সাংগঠনিক ভাবে জামাত ইসলামের পাকিস্তানীদের সহযোগিতার জন্য কমিটি গঠন । ৯ই এপ্রিল ঢাকায় এক প্রতিনিধিত্বশীল দালালদের সভায় খাজা খায়েরউদ্দীনকে আহবায়ক করে ১৪০ সদস্য বিশিষ্ট্য বর্বর শান্তিকমিটি গঠন করা হয় (দৈনিক পাকিস্তান- এপ্রিল ১১, ১৯৭১)। কমিটি মঙ্গলবার জোহরের নামাজের পর বায়তুলমোকাররম থেকে চকবাজার এলাকা পর্যন্ত এক মিছিল বের করে ।

মিছিলে নেতৃত্ব দেয় দালাল গোলাম আযম ও নিজামী (দৈনিক সংগ্রাম -এপ্রিল ১৩, ১৯৭১)। মিছিলের শেষে পাকিস্তান রক্ষার জন্য গোলাম আযম মোনাজাত পরিচালনা করে (দৈনিক সংগ্রাম -এপ্রিল ১৩, ১৯৭১)। দালাল মৌলবী ফরিদ আহমেদ এক বিবৃতিতে বলে “ভারত মুসলমানদের হিন্দু বানাতে চাচ্ছে, তাই পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নৃশংসতা চালিয়ে যাচ্ছে বলে গুজব ছড়াচ্ছে”। পরবর্তীতে সে দু’বার চট্টগ্রাম ঘুরে এসে ভারতীয় এজেন্টদের (মীত্র বাহীনির) নৃশংসতার কথাও উল্লেখ করে তা 'হিটলারের বর্বরতার চেয়েও নিষ্ঠুর' বলে উল্লেখ করে (দৈনিক সংগ্রাম -এপ্রিল ১৬, ১৯৭১ )। পাকিস্তানীদের পক্ষে মৌলবি নুরুল আমিন এর বক্তব্য - রাজাকার বাহিনীর গঠনের সার্বিক কর্মকাণ্ডের পর এবার গঠন পরবর্তী মাঠ পর্যায়ের বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরছি নিচের ছবিগুলো দিয়ে ।

১ : মাওলানা রিয়াছাত আলি বিশ্বাস - সাতক্ষীরা আশাশুনির কুখ্যাত রাজাকার ঃ মুক্তিযুদ্ধকালে রিয়াছাত আলি বিশ্বাস ছিলেন সাতক্ষীরা আশাশুনি উপজেলার শান্তি কমিটির সেক্রেটারি। রাজাকার রিয়াছাত আলি নির্বিচারে হত্যা করতে থাকেন মুক্তিযোদ্ধাদের। এছাড়া লুটপাট, অগ্নিসংযোগেরও সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। কালীগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধা ইউনুস, প্রতাপনগরের খগেন্দ্রানাথ সরকার, সোহরাব ও আলী হত্যামিশনের হোতা ছিলেন রিয়াছাত। এ ছাড়া '৭১-এর জুন মাসে সুন্দরবন সংলগ্ন গাবুয়ার খোলপেটুয়া নদীতে মেজর জলিলের লঞ্চডুবি হলে বরিশাল অঞ্চলের নয়জন মুক্তিযোদ্ধা সাঁতরে উঠে আশ্রয় নেন প্রতাপনগরে।

খবর পেয়ে রিয়াছাত বাহিনী এদের ধরে নিয়ে যায় খুলনার পাকসেনা ক্যাম্পে। সেই থেকে এই নয় মুক্তিযোদ্ধা চিরতরে হারিয়ে যান। মুক্তিযুদ্ধে পাকবাহিনী ও তার দোসরদের নির্যাতন চরমে উঠলে বরিশাল, পটুয়াখালী, বাগেরহাট ও খুলনার সাধারন মানুষ শরনার্থী হিসাবে ভারতমুখী হয়। বেশীরভাগই নৌকাযোগে সুন্দরবন সংলগ্ন সাতক্ষীরার কাছ দিয়ে যেত। আর রিয়াছাত ও তার বাহিনী এসব শরনার্থী নৌকায় চালাত লুটপাট।

'৭১ এর আগষ্টে এই রাজাকার খুলনার কয়রার খুকরোঘাটি লঞ্চঘাটে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ধরা পড়েন। এরপর তাকে কয়রার মুক্তিযোদ্ধা শিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়। ক্যাম্পের দায়ীত্বপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা মতিয়ার রহমানের প্রতিবেশী হওয়ায় তার মহানুভবতায় প্রানভিক্ষা দেওয়া হয় রিয়াছাতকে এবং তাকে নিরাপদে প্রতাপনগরের নিজ বাড়িতে পৌছে দেন মুক্তিযোদ্ধারা। এই ব্যক্তি রয়ে গেছেন এখন গ্রেফতারের বাহিরে রয়ে গেছেন যার বিচারকার্য ট্রাইবুনাল এখনও শুরু করেন। ...........চলবে (বাকী অংশ আগামী পর্বে পাবেন ) লেখক ঃ ফজলে এলাহী (কবি ও কাব্য) তারিখ ঃ ১৪/০৩/২০১৩ একটি http://www.radiobg24.com এর নিবেদন ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।