আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শুভ জন্মদিন, প্রিয় কবি নির্মলেন্দু গুন (প্রিয় কবিতা সংকলন)

জীবনের জন্যই এই সব কথামালা ''যুদ্ধ মানেই শত্রু শত্রু খেলা, যুদ্ধ মানেই আমার প্রতি তোমার অবহেলা৷'' এই কবিতাটি পড়া হয়নি, সমকালীন এমন কবিতা পাঠক খুজে পাওয়া দুষ্কর। প্রিয় এই কবিতার কবি নির্মলেন্দু গুন। জীবিত বাংলা কবিদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম , বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সেরা কবি নির্মলেন্দু গুন। আজ আমাদের প্রিয় কবি নির্মলেন্দু গুন ওরফে গুনদা'র জন্মদিন। ১৯৪৫ সালের ২১শে জুন (আষাঢ় ৭, ১৩৫২ বঙ্গাব্দ) নেত্রকোণার বারহাট্টার কাশবনে জন্ম নেয়া এই কৃতি পুরুষটি তার অসাধারণ লেখনি দিয়ে বাংলা সাহিত্যে উল্লেখযোগ্য অবস্থান গড়ে নিয়েছেন।

কবির জন্মদিনে শুভকামনা ও শ্রদ্ধাঞ্জলি প্রেমাংশুর রক্ত চাই দিয়ে কাব্য জগতে আবির্ভাব করা কবির কাব্যগ্রন্থ ৩৮টির মতো। সাংবাদিক, সমাজতান্ত্রিক রাজনীতিবিদ, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন কারী কবির এতোসব কাব্য গ্রন্থের মাঝে আমি পড়েছি মাত্র কয়েকটা। তার মধ্য থেকেই আমার প্রিয় কিছু কবিতা শেয়ার করলামঃ #যাত্রা-ভঙ্গ হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই, দুইকে আমি এক করি না এক কে করি দুই৷ হেমের মাঝে শুই না যবে, প্রেমের মাঝে শুই তুই কেমন করে যাবি? পা বাড়ালেই পায়ের ছায়া আমাকেই তুই পাবি৷ তবুও তুই বলিস যদি যাই, দেখবি তোর সমুখে পথ নাই৷ তখন আমি একটু ছোঁব, হাত বাড়িয়ে জাড়াব তোর বিদায় দুটি পায়ে, তুই উঠবি আমার নায়ে, আমার বৈতরনী নায়ে৷ নায়ের মাঝে বসব বটে, না-এর মাঝে শোব৷ হাত দিয়েতো ছোঁব না মুখ, দু:খ দিয়ে ছোঁব৷ তুই কেমন করে যাবি? #এবারই প্রথম তুমি ভুলে যাও তুমি পূর্বেও ছিলে মনে করো এই বিশ্ব নিখিলে এবারই প্রথম তুমি৷ এর আগে তুমি কোথাও ছিলে না ছিলে না আকাশে, নদী জলে ঘাসে ছিলে না পাথরে ঝর্ণার পাশে৷ এবারই প্রথম তুমি৷ এর আগে তুমি কিছুতে ছিলে না৷ ফুলেও ছিলে না, ফলেও ছিলে না নাকে মুখে চোখে চুলেও ছিলে না৷ এবারই প্রথম তুমি৷ এর আগে তুমি এখানে ছিলে না এর আগে তুমি সেখানে ছিলে না এর আগে তুমি কোথাও ছিলে না৷ এবারই প্রথম তুমি৷ রাতের পুণ্য লগনে ছিলে না নীল নবঘন গগনে ছিলে না৷ এবারই প্রথম তুমি৷ এর আগে তুমি তুমিও ছিলে না৷ এবারই প্রথম তুমি৷ #মানুষ আমি হয়তো মানুষ নই, মানুষগুলো অন্যরকম, হাঁটতে পারে, বসতে পারে, এ-ঘর থেকে ও-ঘরে যায়, মানুষগুলো অন্যরকম, সাপে কাটলে দৌড়ে পালায় । আমি হয়তো মানুষ নই, সারাটা দিন দাঁড়িয়ে থাকি, গাছের মতো দাঁড়িয়ে থাকি। সাপে কাটলে টের পাই না, সিনেমা দেখে গান গাই না, অনেকদিন বরফমাখা জল খাই না ।

কী করে তাও বেঁচে থাকছি, ছবি আঁকছি, সকালবেলা, দুপুরবেলা অবাক করে সারাটা দিন বেঁচেই আছি আমার মতে । অবাক লাগে । আমি হয়তো মানুষ নই, মানুষ হলে জুতো থাকতো, বাড়ি থাকতো, ঘর থাকতো, রাত্রিবেলায় ঘরের মধ্যে নারী থাকতো, পেটের পটে আমার কালো শিশু আঁকতো । আমি হয়তো মানুষ নই, মানুষ হলে আকাশ দেখে হাসবো কেন ? মানুষগুলো অন্যরকম, হাত থাকবে, নাক থাকবে, তোমার মতো চোখ থাকবে, নিকেলমাখা কী সুন্দর চোখ থাকবে ভালোবাসার কথা দিলেই কথা রাখবে । মানুষ হলে উরুর মধ্যে দাগ থাকতো , বাবা থাকতো, বোন থাকতো, ভালোবাসার লোক থাকতো, হঠাৎ করে মরে যাবার ভয় থাকতো ।

আমি হয়তো মানুষ নই, মানুষ হলে তোমাকে নিয়ে কবিতা লেখা আর হতো না, তোমাকে ছাড়া সারাটা রাত বেঁচে থাকাটা আর হতো না । মানুষগুলো সাপে কাটলে দৌড়ে পালায় ; অথচ আমি সাপ দেখলে এগিয়ে যাই, অবহেলায় মানুষ ভেবে জাপটে ধরি । #উপেক্ষা অনন্ত বিরহ চাই, ভালোবেসে কার্পণ্য শিখিনি৷ তোমার উপেক্ষা পেলে অনায়াসে ভুলে যেতে পারি সমস্ত বোধের উত্স গ্রাস করা প্রেম; যদি চাও ভুলে যাবো, তুমি শুধু কাছে এসে উপেক্ষা দেখাও৷ আমি কি ডরাই সখি, ভালোবাসা ভিখারি বিরহে? #স্বাধীনতা, এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো একটি কবিতা লেখা হবে তার জন্য অপেক্ষার উত্তেজনা নিয়ে লক্ষ লক্ষ উন্মত্ত অধীর ব্যাকুল বিদ্রোহী শ্রোতা বসে আছে ভোর থেকে জনসমুদ্রের উদ্যান সৈকতে: ‘কখন আসবে কবি?’ এই শিশু পার্ক সেদিন ছিল না, এই বৃক্ষে ফুলে শোভিত উদ্যান সেদিন ছিল না, এই তন্দ্রাচ্ছন্ন বিবর্ণ বিকেল সেদিন ছিল না৷ তা হলে কেমন ছিল সেদিনের সেই বিকেল বেলাটি? তা হলে কেমন ছিল শিশু পার্কে, বেঞ্চে, বৃক্ষে, ফুলের বাগানে ঢেকে দেয়া এই ঢাকার হদৃয় মাঠখানি? জানি, সেদিনের সব স্মৃতি ,মুছে দিতে হয়েছে উদ্যত কালো হাত৷ তাই দেখি কবিহীন এই বিমুখ প্রান্তরে আজ কবির বিরুদ্ধে কবি, মাঠের বিরুদ্ধে মাঠ, বিকেলের বিরুদ্ধে বিকেল, উদ্যানের বিরুদ্ধে উদ্যান, মার্চের বিরুদ্ধে মার্চ … ৷ হে অনাগত শিশু, হে আগামী দিনের কবি, শিশু পার্কের রঙিন দোলনায় দোল খেতে খেতে তুমি একদিন সব জানতে পারবে; আমি তোমাদের কথা ভেবে লিখে রেখে যাচ্ছি সেই শ্রেষ্ঠ বিকেলের গল্প৷ সেই উদ্যানের রূপ ছিল ভিন্নতর৷ না পার্ক না ফুলের বাগান, — এসবের কিছুই ছিল না, শুধু একখন্ড অখন্ড আকাশ যেরকম, সেরকম দিগন্ত প্লাবিত ধু ধু মাঠ ছিল দূর্বাদলে ঢাকা, সবুজে সবুজময়৷ আমাদের স্বাধীনতা প্রিয় প্রাণের সবুজ এসে মিশেছিল এই ধু ধু মাঠের সবুজে৷ কপালে কব্জিতে লালসালু বেঁধে এই মাঠে ছুটে এসেছিল কারখানা থেকে লোহার শ্রমিক, লাঙল জোয়াল কাঁধে এসেছিল ঝাঁক বেঁধে উলঙ্গ কৃষক, পুলিশের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে এসেছিল প্রদীপ্ত যুবক৷ হাতের মুঠোয় মৃত্যু, চোখে স্বপ্ন নিয়ে এসেছিল মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত, করুণ কেরানী, নারী, বৃদ্ধ, বেশ্যা, ভবঘুরে আর তোমাদের মত শিশু পাতা-কুড়ানীরা দল বেঁধে৷ একটি কবিতা পড়া হবে, তার জন্যে কী ব্যাকুল প্রতীক্ষা মানুষের: “কখন আসবে কবি?’ “কখন আসবে কবি?’ শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে, রবীন্দ্রনাথের মতো দৃপ্ত পায়ে হেঁটে অত:পর কবি এসে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন৷ তখন পলকে দারুণ ঝলকে তরীতে উঠিল জল, হদৃয়ে লাগিল দোলা, জনসমুদ্রে জাগিল জোয়ার সকল দুয়ার খোলা৷ কে রোধে তাঁহার বজ্রকন্ঠ বাণী? গণসূর্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে কবি শোনালেন তাঁর অমর-কবিতাখানি: ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম৷’ সেই থেকে স্বাধীনতা শব্দটি আমাদের৷  ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।