আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সংজ্ঞা-শেষ পর্ব

Dream Today,Create Tomorrow........ আগের পর্ব এই যে ভাই রাখেন। ভাইয়া ঐটা আমার কোচিং সেন্টার। আমি নেমে যাবো। আপনার অফিস কোন দিকে? - এখনও তো আমার অফিস হয়নি। মাত্র তো ইন্টারভিউ দিতে আসছি।

চাকুরী হয় কি না হয় তার কোন ঠিক নেই। দোয়া করো যেনো চাকরীটা হয়ে যায়। আচ্ছা তোমার কোচিং শেষ কয়টায়? - তা জেনে আপনার লাভ কি? আপনার জন্য সব সময় দোয়া আছে। চাকরী হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ। - তুমি কি আমার উপর রাগ করেছো? ভেবেছিলাম একসাথে বাসায় ফিরবো।

তাই জানতে চেয়েছিলাম। কারন অফিসের ইন্টারভিউ শেষে আর কোন কাজ নেই তো তাই। ঠিক আছে তোমায় বলতে হবে না। - ১টায় শেষ হবে। আমি আসি।

মেয়েটা যে কেন রেগে গেলো বুঝতে পারলাম না। বয়সটাই এমন... কি যে চিন্তা করে বুঝা মুশকিল। রিকশাওয়ালা কে বললাম সামনে এগিয়ে যেতে। আমার মাথায় শুধু একটাই ভাবনা চাকরীটা আমার চাই........... আজ মনে হয় ঘড়িটা আস্তে চলছে। সেই কখন দেখলাম ১২টা বাজে আর এখন মাত্র ১২:৩০।

সে কি আসবে? সত্যিই আসবে তো। নাহ!! আজ কোন ক্লাশ ভালো লাগছে না। আকিফ ভাইয়া কাকে ভালোবাসে? কে উনি? হাজারটা প্রশ্ন ভিড় করতে লাগলো তাসনিয়ার মনে। আজ কেন তার এমন লাগছে বুঝতে পারছে না। আচ্ছা.....এর নাম কি ভালোবাসা? এতো তাড়াতাড়ি ভালোবাসা হয়ে যায় নাকি!!! স্যার যে কি পড়াচ্ছে কিছুই মাথায় ঢুকছে না।

ধূর....১টা বাজে না কেন? ক্লাশ কবে যে শেষ হবে। আজ এইটুকুই থাক..........সামনের ক্লাশে বাকীটুকু শেষ করবো। স্যারের এই কথাটা বেশ মনে ধরলো তার। ক্লাশ শেষ হতেই বেশ তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে পড়লো। বের হবার পর মাথায় আসলো- আচ্ছা..ভাইয়াকে তো বলা হয়নি কোথায় অপেক্ষা করবে? আর ভাইয়াও নিশ্চিত করে কিছু বলেনি।

ভাইয়া আসবে তো? যদি না আসে? ভাবতে ভাবতে যে জায়গায় রিকশা থেকে নেমেছিলো সেখানে এসে দাঁড়ালো। তার মনে শুধু একটাই চিন্তা- আসবে তো? রাস্তার লোকগুলো যেনো সব ড্যাব ড্যাব করে তার দিকে তাকিয়ে আছে। মনে হয় যেনো কোনদিন মেয়ে দেখেনি। অপেক্ষার মতো ফালতু জিনিস আর দুনিয়াতে নাই। তাও আবার অনিশ্চিত অপেক্ষা।

আসছে না কেন?? ১:৩৫ বাজে। নাহ!! আর নয়। অনেক হয়েছে। মনটাই খারাপ হয়ে গেলো তাসনিয়ার। এই রিকশা যাবে...?? সব ঠিক করে রিকশায় উঠতেই মনে হলো কে যেনো নাম ধরে ডাকলো।

ঘাড়টা ঘুরাতেই দেখি ভাইয়া অস্থিরভাবে হেঁটে আসছে। অজানা কোন এক ভালো লাগায় সমস্ত রাগ,ক্ষোভ,অভিমান নিমেষেই দূরীভূত হয়ে গেলো। - কই যাচ্ছো? - কেন!! বাসায়। আমি তো ভেবেছিলাম আপনি আসবেন না। - আর বলো না।

একে একে তিনবার ইন্টাভিউ নিলো। তাই এতো দেরী হলো। আর আমি ভাবিনি তুমি আমার জন্য অপেক্ষা করবে। ভাগ্য ভালো যে এসে তোমায় পেয়েছি। আচ্ছা..........মামা-মামী কি পছন্দ করে বলো তো? - কেন? চাকরী হয়ে গেছে? মামা- মামীর জন্য কিছু লাগবে না? বলেন না চাকরী হয়ে গেছে? - হুম......এজন্যই তো এতো দেরী হলো।

কথাটা বলা মাত্রই যা হলো তার জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না। ইয়াহু..!!! বলে আমার হাতটা শক্ত করে ধরে বললো- কংগ্রাচুলেশন। এইবার সব স্বপ্ন পূরন হয়ে যাবে। অনেকদিন পর এমন অকৃত্রিম হাসি দেখা ভুলেই গিয়েছিলাম। ওর হাসিমাখা মুখ দেখে নিজকে অনেক সুখী মনে হলো।

মা'কে ফোন করে চাকরীর সংবাদটা জানাতেই খুশীতে কেঁদে দিলেন। কথা শেষ করে ওকে নিয়ে কিছু মিষ্টি আর ফল কিনে নিলাম বাসার জন্য। রিকশায় যেতে যেতে তাসনিয়া বললো- -দেখলেন আমর দোয়া কেমন কাজে লাগে। আপনার সব স্বপ্নও পূরণ হয়ে যাবে। এখন আমায় বলেন আপনি কাকে ভালোবাসেন? - আমি কি বলেছি বলবো না? আচ্ছা... ভালোবাসার সংজ্ঞা কি বলতে পারো? - ভালোবাসার আবার সংজ্ঞা হয় নাকি.......চোখ বড় বড় করে অবাক হয়ে তাকিয়ে উল্টো প্রশ্ন করলো আমায়।

এটা তো অনুভূতির ব্যাপার। - ঠিক আছে মানলাম। কিন্তু তুমি কি মনে করো? - হুমমমমমমমমম। বুঝতে পারছি না। তবে প্রিয় মানুষের আনন্দে আনন্দিত হওয়া,দুঃখে দুঃখী হওয়া হচ্ছে ভালোবাসা।

যেমন আপনার সুখে আমি আজ সুখী এটাও ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। হয়তো আমি আপনাকে ভালো.... আচ্ছা আমিই তো সব বলে যাচ্ছি,আপনি তো কিছু বলছেন না। আচ্ছা বলো - কি জানতে চাও? - আপনি কাকে ভালোবাসেন? - আমার মা'কে। আমি আমার মা'কে সবচেয়ে বেশী ভালোবাসি। - ধূর....আমিও তো মা'কে ভালোবাসি।

সবাই তো মা'কে ভালোবাসে। আমি তা বলছি না মানে ভালোবাসার প্রকার ভেদ আছে না........ - দেখো তাসনিয়া। আমি সত্যিই বলছি। আমি আমার মা'কে আমার জীবনের চেয়েও বেশী ভালোবাসি। - আর কাউকে না!!! - নাহ.......শুধু মা'কে।

তাসনিয়া মনে মনে খুশীই হলো উত্তরটা শুনে কারন ও যা ভেবেছিলো সব ভুল। নিজের আনন্দ বুঝতে না দিয়ে আবার জিজ্ঞাসা করলো -আপনার কাছে ভালোবাসার সংজ্ঞা কি? তাসনিয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম- আমি যখন প্রতিবার বাড়ী যেতাম, মা অনেক খুশী হতো। আবার যখন চলে আসতাম মা ঠিক ততোটাই কষ্ট পেতো। বাড়ী থেকে বের হলে মা অশ্রুভেজা চোখে পথে দাঁড়িয়ে থাকতো, যতক্ষন পর্যন্ত আমায় দেখা যায়। আমারও কষ্ট হতো।

তাই পিছনে ফিরে তাকাতাম না। যদি মা ভুল করে আমার ঝাপসা চোখ দেখে ফেলে। তাহলে মা'র আরও কষ্ট হবে। মায়ের প্রতিটি অশ্রু ফোঁটা আর আমার ঝাপসা চোখ হচ্ছে আমার ভালোবাসার সংজ্ঞা............ কথাগুলো বলেই আকাশের দিকে তাকালাম। নীল মেঘমুক্ত আকাশে পাখিরা উড়ছে।

নিজকেও পাখি মনে হলো। হয়তো আর বেশী দূরে নয় আমার স্বপ্ন দ্বার। হাতে শক্ত একটা চাপ অনুভব করতেই তাকিয়ে দেখি তাসনিয়ে চোখে জল। আলতো করে চোখ মুছে দিয়ে বললাম- আমি তোমাকেও ভালোবাসি। (সমাপ্ত) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।