আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

PM ক্যামেরুনের বৃটিশ ভ্যালু তত্ত্ব এবং পুলিশের বক্তব্যঃ মদ্যপান, জুয়া, গার্ল ফ্রেন্ড এগুলোতে নেই বলেই তোমাদেরকে সন্ত্রাসী হিসেবে অনেক ইংরেজের সন্দেহ হয়!

আমি চাই শক্তিশালী স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ এ বছর ২০১১এর ফেব্রুয়ারীতে বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরুন বলেছিলেন যে বৃটিশ মূল্যবোধই এদেশের মুসলমানদেরকে মেনে চলতে হবে Click This Link কথাটা শুনে আমি বেশ অবাকই হয়েছি। সারা পৃথিবীতে যারা গণতন্ত্র বলে চেচায় তারা আজকে নিজ দেশের সংস্কৃতিকে জোর পূর্বক কেন আজকে অন্য ধর্মাবলম্বীদের উপর চাপিয়ে দিতে চায়? পৃথিবীতে যদি সত্যিকারের গণতন্ত্র থাকে বৃটেনে পুরোপুরি না থাকলেও তবে তা ইইউর অন্যান্য দেশে আছে। যেমন ফিনল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস। কিন্তু বৃটেনে বর্তমানে উগ্রবাদ বৃটিশ ন্যাশনালিষ্ট পার্টি এবং ইংলেশ ডিফেন্স লীগ যথেষ্ঠ সক্রিয়। ঠিক জার্মানীর নাৎসীবাদের মত।

এদের কথা হল সারা পৃথিবীর তো বটেই এমনকি ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিশেষ করে পোলিশ, হাঙ্গেরিয়ান, চেকদের বিরুদ্ধে প্রচুর ক্ষোভ। এদের পূর্ব পুরুষরা যে সারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে লুটপাট চালিয়েছে তা মেনে নিতে নারাজ। উপরন্ত এই পোলিশরা সহ, এশিয়ান, আফ্রিকানরাই বৃটিশ অর্থনীতিকে টিকিয়ে রেখেছে। নতুবা বৃটিশদের যে চাহিদা অত বেতনে খোদ স্বদেশী অনেক প্রতিষ্ঠানই তাদেরকে চাকুরী দিতে চায় না। তবুও এরা যেহেতু মুসলমান নয় তাই এ নিয়ে খুব একটা চাপে নেই।

নতুবা এ দেশে বর্তমানে ১০ লক্ষ পোলিশের পক্ষে থাকা সম্ভব হত না। কিন্তু মুসলমানদের বিশেষ করে যারা নতুন আগত বেশীর ভাগই ছাত্র তাদের প্রায়শই কটুক্তি, বর্ণবাদ, হামলা, হেনস্থা-অপমান হতে হয়। যদিও লেবার পার্টির শাসনামলে উগ্র বৃটিশ দলের তৎপড়তা ছিল তারপরেও তারা খুব একটা সুবিধা করতে পারে নি। প্রকাশ্য রক্ষণশীল দলের সাথে সখ্যতা না থাকলেও এদের অনেকের মনোভাবের বেশীর ভাগই মিলে যায়। গত বছর ২০১০ সালে লিবারেল ডেমোক্রাটদের সমর্থন নিয়ে কনজারভেটিভরা দীর্ঘ এক যূগেরও বেশী সময় পর ক্ষমতায় আসলে ইদানীং অনেক ইংরেজ বিশেষ করে তরুণ ও যুবকদের মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিরুপ মনোভাব তথা হিংসাত্নক ধারণা আছে।

এই অংশের বিষয়টি এমন যে নিজেদের রক্ষণশীলতা প্রচন্ড গুরুত্বপূর্ণ হলেও মুসলমানদেরও যে নিজস্ব রক্ষণশীলতা আছে তা মানতে নারাজ। প্রায়শই বাজে মন্তব্য, টিটকারী প্রকাশ্যে দেয় যদিও কিছু ভাল ইংরেজ এদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে কিন্তু বেশীর ভাগ ইংরেজই থাকে নিশ্চুপ। আমার যারা বৃটেনে ছাত্রতো বটেই অনেক বৃটিশ মুসলিম যাদের এ দেশে জন্ম তারাও মুখ বুঝে সয়ে যায়। প্রথমে যখন এ দেশে এসেছি তখন ধারণা ছিল যে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে পুলিশ ০% টলারেন্স তখন অনেক বাংলাদেশী-বৃটিশের অভিযোগ বিশ্বাসই করতাম না। একটি উদাহরণ দেই আমার এক দূর সম্পর্কের আত্নীয় যার ফাষ্টফুডের দোকান আছে একদিন তার দোকানে একাধিকবার বর্ণবাদী ইংরেজ ঝামেলা করলেও পুলিশ বলে থাক এ ব্যাটা মেন্টালি আপসেট এবং বর্ণবাদীর সাথে পুলিশও নরম সুরেই কথা বলে।

আর যদি কোন বাংলাদেশী, ভারতীয়, পাকিস্তানী অন্যায় করে পুলিশ তখন বাঘের মত গর্জন করে। এদেশে ক্রাইমের হার যদিও কম কিন্তু ধর্ম ও বর্ণর কারণে পুলিশের আচরণ প্রায়শই বৈষম্য মূলক। কিছু যে উগ্র মুসলমান নেই তা বলব না তবে তাদের সংখ্যা নগণ্য। তাদেরকে বেশীর ভাগ মুসলমানই এড়িয়ে চলে। যতটা পারে সে দেশের আইন কানুন মেনে চলে শান্তিপূর্ণ ভাবে নিজেদের কর্ম অথবা ব্যাবসা চালিয়ে যেতে।

তাই বলা চলে এটাই হল গণতন্ত্র। বেশীর ভাগ মুসলমানগণ শান্তিপূর্ণ ভাবে নিজের ধর্মের বিধি বিধানগুলো মেনে চলে ইংরেজ সহ বিভিন্ন ধর্ম মতের স্বাধীন জীবন যাপনে বাধা না হয়ে দাড়ায়। কিন্তু তারপরেও অনেক ইংরেজের বিশেষ করে বর্তমান প্রজন্ম সহ পুরোনোদের কিছু অংশদের মুসলমান ধর্মীয় বিষয়াদি ও আচরণ পছন্দ হয় না। যেমন হালাল ফুড। তারা বলে যে শুকর খাও না কিন্তু চিকেন, বীফ ও ল্যাম্ব কেন হালাল খেতে হবে? তাদেরকে বেশ কয়েকবার বলা হলেও এমনকি ইহুদীদেরও উদাহরণ দেই যে তারাও আল্লাহর নাম নিয়েই এগুলো খায় এবং তারাও শুকর খায় না।

কিন্তু যেই লাউ সেই কদুই। খুব সামান্যই এ সমস্ত বিষয় গুলোকে শ্রদ্ধা করে। কলিন্স নামে এক ইংরেজ তরুণ বয়স ১৯ তার সাথে বেশ কয়েক মাস ধরেই পরিচয় অনেকটা বন্ধুর মত। একদিন ফেসবুকে চ্যাটিং এ বলে বসল বোমা কিভাবে বানায় বল তো? আমি বললাম আমি এ সব কিছুই জানি না। কিন্তু তুমি হঠাৎ এই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলে কেন? সে বলল যে প্রায়ই দেখি মুসলমানরা সন্ত্রাসীদের সাথে জড়িত থাকে।

আমি বললাম সবাই না। শুধু এ নয় প্রায়শই বেশ কয়েকজন এ ভাবেই আমাকে বলেছে যে তুমি সন্ত্রাসী। যদিও পরে বলে যে না জোক করেছি। কিন্তু আমার বয়সতো আর কম হয় নি অন্তত এটুক বুঝি যে মুখ ফসকে মনের কথাই বলেছে তারা। সে যাই হৌক একটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই লেখাটা শেষ করি।

আমাদের এক রুম মেট যে বাংলাদেশে বাচ্চাদের খুবই পছন্দ করত। নিজের ছোট কাজিন, ছোট্ট ভাগ্নে-ভাগিনা, ভাতিজা-ভাতিজীদের সহ তার প্রতিবেশী পরিচিত জনদেরও বোঝাই ছবি তার মোবাই মেমোরী কার্ডে নিয়ে এসেছে এবং ফেসবুকেও আছে সে কয়েকদিন আগে বাসার নিকটবর্তী রাস্তায় এক ইংরেজ দম্পত্তির ফুটফুটে সুন্দর শিশুর ছবি তার মোবাইলের মাধ্যমে তোলার অনুমতি চাইলে তারা বলে যে তুমি জান না এ দেশে ৫ বছরের নীচে কোন শিশুর ছবি কোন অজ্ঞাত ব্যাক্তিও তুলতে পারে না? সে বলল সরি আমার জানা ছিল না। তো এই ঘটনা এক প্রতিবেশী প্রত্যক্ষ করেছিল। তো যাই হৌক সে এসে আমাকে সহ বাকী দুইজন রুম মেটকে এই ঘটনা জানালো। ঠিক এর দুই ঘন্টার মধ্যে হঠাৎ দুইজন পুলিশ এসে হাজির হল আমাদের ঘরে।

তো তারা একে একে তার সহ বাকী আমাদের সবার মোবাইলতো বটেই ল্যাপটপও চেক করল। আমাদের সবারই বিভিন্ন মূভি সহ অনেক বিষয়ই আছে যা মোটেও বৃটেনের আইনে অবৈধ নয়। আমি ও সেই ছেলেটি বুঝলেও পুলিশ পরে কোন কিছু অবৈধ তথা আপত্তিকর ছবি না পেয়ে বল যে তারা অত্যন্ত দু্ঃখিত যে আমাদের এভাবে বিরক্ত করা ও মূল্যবান সময় নষ্ট করার জন্য। পুলিশ দ্বয় বলল যে এ দেশে বহু ইংরেজের চাইল্ড পর্ণগ্রাফির সাথে জড়িত থাকার জন্য গ্রেফতার ও শাস্তি পেতে হয়েছে তাই এ দেশে অনেকধিন ধরেই ৫ বছরের নীচের শিশুদের যার তার ছবি তোলা নিষেধ রয়েছে। শুধুমাত্র তাদের পিতা-মাতাই ছবি তুলতে পারবে এমনকি আত্নীয়রাই নয়।

পুলিশের বক্তব্য তোমাদের কাছে কোন স্বাভাবিক এডাল্ট আইটেম কোন ব্যাপার নয়। কিন্তু এদেশের শিশুদের ছবি তোলা হতে সাবধান। এ শুনে আমরা হাসলাম। পুলিশ দ্বয়কে জিজ্ঞাসা করলাম বিভিন্ন ইংরেজের বর্ণবাদী ও বিরুপ মন্তব্য সম্পর্কে তখন তারা জাবাবে বলল যেহেতু তোমরা বারে-পাবে যেয়ে মদ্যপান করনা, জুয়া খেলতে যাও না এবং তোমাদের কোন মেয়ে বন্ধু নাই তাই তোমাদেরকে নিয়ে সন্দেহজনক ভাবে সন্ত্রাসীই মনে হয়। তখনই বুঝলাম এদেশের পুলিশের নিজেদের বর্ণের প্রতি এ বিষয়ে সহানুভূতীশীল।

আমি তাদেরকে বললাম যে দেখুন এটা কিন্তু গুরুতর অভিযোগ, একজন স্রেফ বলল হুম আরকি আমলেই নিল না। তো বুঝলাম যে এরই নাম বৃটিশ ভ্যালু বা মূল্যবোধ। আমাকে নিয়মিত মদ্যপানের জন্য বারে-পাবে যেয়ে ইংরেজদের সাথে মিশতে হবে,জুয়া না খেললেও শেতাঙ্গিনী বান্ধবী রাখতে হবে যে না আমি মোটেই টেরোরিষ্ট বা সন্ত্রাসী নই। শুধুই গণতন্ত্রকে শ্রদ্ধা করলে হবে না বৃটিশ মূল্যবোধকে মেনে চলতে হবে। এতদিনে বর্তমান বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরুনের মর্মকথা বুঝতে পারলাম যা লোবর পার্টির সাবেকগণ টনি ব্লেয়ার, ব্রাউনও বলেনি।

কারণ এটা শুধু ক্যামেরুনের মনের কথা নয় বরং বর্তমান বৃটিশ সমাজের রক্ষণশীলদেরই মনের কথা!  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।