আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

টিউশন গদ্য

কিছু মানুষ ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখে। কিছু মানুষ স্বপ্নটা সত্যি করার জন্য ঘুম থেকে জেগে উঠে। জীবন আপনার কাছে সেভাবেই ধরা দিবে আপনি যেরকম থাকবেন। ছাত্রী যা ভুল করেছে তাতে কি করব ঠিক বুঝতে পারছিনা। নানারকমের টিউশন করতে গিয়ে নানারকম ছাত্র-ছাত্রীর সাথে পরিচয়।

এদের সবার মেধা সমান হবেনা সেটাই স্বাভাবিক। আমার কাছে সবসময় মনে হয় মেধার থেকে যেই জিনিসটা বেশি প্রয়োজন সেটা হল ইচ্ছাশক্তি। মানে আপনার যদি ইচ্ছাশক্তি থাকে যে এই জিনিসটাকে আমি জয় করব তাহলে আপনি পারবেন। মুসা ভাই আর মুহিত ভাই যে তরতর করে এভারেস্ট (ব্যাপারটা এত সহজ নয়, এই অসাধারন অর্জনের পেছনের কাহিনী অবশ্যই দুর্দান্ত) এর চূড়ায় উঠলেন সেটার পেছনে ইচ্ছাশক্তি অনেক বড় ব্যাপার। যাই হোক ছাত্রীকে বললাম তুমি এটা কি করলা? ছাত্রী যা করেছে তা অবিশ্বাস্য।

তার দাবী তাকে পূর্ন নম্বর দেওয়া উচিত। সমকোনী ত্রিভুজের অতিভুজ যদি ৫ হয় আর বাকি দুই বাহুর এক বাহু যদি ৪ হয় আরেকবাহু ৩ হবে। সে উত্তরমালা চেক করে আমাকে দেখালো। ব্যাপারটাতে আমার আপত্তি থাকা উচিত না। কিন্তু সে যা করেছে সেটা হল সে সমকোনী ত্রিভুজ এঁকেছে।

অতিভুজটা স্কেল দিয়ে এমন ভাবে একেছে যাতে ৫ হয়। আরেকটা বাহুও এমন ভাবে একেছে যাতে ৪ হয়। কোন ভাবে ব্যাপারটা হয়ে গেছে আর কি। তারপর সে স্কেল দিয়েই আমাকে দেখাচ্ছে আরেকবাহু ৩। আমি কি মুর্তি ধারন করব জানিনা তাকে বললাম তোমাকে যে পীথাগোরাসের উপপাদ্য বললাম সেটাকে কাজে লাগাবা কবে? ছাত্রী চুপ।

তার যুক্তি একটাই। সে আর্টসের ছাত্রী তার অঙ্ক শিখার কি দরকার। কোনভাবে মুখস্থ করে পাশ করতে চায়। ছাত্রীর মাকে অনেক বুঝিয়েছি যে অংক মুখস্থ করে কিভাবে পাশ করে ব্যাপারটা আমার জানা নেই। তাই আপনি অন্য শিক্ষক খুঁজেন প্লিজ।

ছাত্রীর মা আমাকে রাখতে চান। আজকালকার ছেলেদের নাকি চরিত্র ভালনা কাকে না কাকে রাখবেন!! টিউশনী করতে এসে প্রেম টেম করে বসবে। তিনি আমার মধ্যে সৎ চরিত্রের দেখা পেলেন কিভাবে তাই এখন চিন্তা করছি। বাসায় এসে আয়নাতে নিজের চেহারা দেখলাম। চেহারায় বেকুব ভাব থাকতে পারে কিন্তু চরিত্রবান ভাব কই পেলেন কে জানে!! তার উপর আমার কিঞ্চিত বিশ্বাস এই ছাত্রীর মোবাইলে কথা বলার লোক আছে।

কিন্তু আন্টি ছাড়ছেননা। প্রথম দিকে নাস্তাতে টোস্ট বিস্কুট আর চা দিতেন। ইদানিং পুডিং, নুডলস এইসব আশা শুরু করেছে। ছাত্রীকে যাতে অঙ্কটা শিখাতে পারি। আবার চেষ্টা করলাম।

মোটিভেট করার চেষ্টা। খেয়াল করলাম মেয়েটা ইংরেজীতে খারাপ না। কিন্তু অঙ্ক করতে গেলেই অথৈ সাগরে পড়ার কোন কারন খুঁজে পেলাম না। কেন্দ্রস্থ কোন বৃত্তস্থ কোনের দ্বিগুন - এই ব্যাপারটা মানতে সে কোন ভাবেই রাজীনা। তার সোজা কথা বৃত্তস্থ কোনটা দেখতে বড়।

কোনের রেখাগুলা দিয়ে কোনের পরিমান হয়না এই ব্যাপারটা তাকে কিভাবে বুঝাব চিন্তা করলাম। আরও একটা সমস্যা আসল। ত্রিভুজ এ,বি,সি এর এবি আর এসি বাহু সমান। এ বিন্দু থেকে এডি আবার মধ্যমা। কোন এবিসি আর কোন এসিবি যদি সমান হয় তাহলে এবিডি আর এসিডিও সমান হবে এই ব্যাপারটাতে তার আপত্তি।

তার সোজা কথা এবিসিকে এবিডি লিখতে পারব কিন্তু এসিবিকে এসিডি লিখা যাবেনা। এইবার আমি অথৈ সাগরে পড়লাম। কোন একটা সমস্যা হয়েছে। সিক্স, সেভেন, এইট এই ক্লাস গুলাতে সে কোন ভাবে জ্যামিতি একবর্নও না শিখে পার করে আসছে। এখন সে অঙ্কে পাশ করতে পারছেনা।

ফাইনালে যাতে পাস করতে পারে তাই আমার আগমন। যাই হোক এ যাত্রা পার করিয়েছিলাম। কিভাবে সেই গল্পটা ততো মজার নয়। ছাত্রীর সাথে কিছুক্ষন আগে দেখা। এইবার এইচএসসি দিয়েছে।

আমাকে দেখে জিকো ভাইয়া বলে চিৎকার দেওয়ার আগে পালানোর চেষ্টা করেছিলাম। লাভ হয়নি। কি ব্যাপার? ব্যাপার ভাল। এসএসসিতে গোল্ডেন এ প্লাস ছিল। তার মানে অঙ্কেও ছিল।

যাক খুশ হইলাম। বান্ধবীদের নিয়ে চটপটি খাচ্ছে। তিনপ্লেট খাওয়ার পর ১০০ টাকা দিয়ে ৩০ টাকা ফেরত নিল। তিনপ্লেটের দাম সত্তর টাকার মত একটা ফিগার হয় কিভাবে কে জানে!! আমার বোঝার ভুলও থাকতে পারে। তবে সে তার কথা তো রেখেছে।

অঙ্কে এ প্লাস ছিল। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.