আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এস এস সি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েও লেখাপড়া বন্ধ হবার আশংকা

লাইজু খাতুন, আবদুল্লাহ আল মামুন, জুয়েল আহমেদ ও নূরজামাল হোসাইন অসচ্ছল পরিবারের সন্তান ওরা। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া, বেড়াতে যাওয়া এবং বিনোদন কী, তা ওরা জানে না। অভাব ও দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে লেখাপড়া করেছে। এভাবে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে। ভালো ফল করেও অর্থের অভাবে লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছে ওরা।

মা-বাবার মুখ উজ্জ্বল করেছে লাইজু: অর্থের অভাবে ভাইবোনেরা পড়ালেখা করতে পারেনি। বোনদের বিয়ে দেওয়া হয়েছে। লাইজু খাতুনকেও বিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা ছিল তার মা-বাবার। কিন্তু লেখাপড়ার প্রতি প্রচণ্ড আগ্রহ থাকায় তাকে তাঁরা বিয়ে দিতে পারেননি। পড়ালেখা করে সে যে বাবা-মায়ের মুখ উজ্জ্বল করবে, তা বুঝতে পেরেছিলেন শিক্ষকেরা।

এ কারণে তাঁদের সহায়তায় লাইজু এবারের এসএসসি পরীক্ষায় সুন্দরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে থেকে মানবিক বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে। সে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার সুন্দরপুর গ্রামের মতলেব আলীর মেয়ে। মতলেব এখন পঙ্গু। তাই লাইজুর লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাবে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। দেশসেবার স্বপ্ন মামুনের: ছোট্ট একটি টিনের ছাপরা ঘরে একটি ভাঙা চৌকির ওপর খেজুরের পাটি বিছানো।

তার ওপর কিছু বই-খাতা। পাটকাঠির বেড়ায় ঝোলানো চিমনিতে (কাচে) কালি পড়া একটি হারিকেন। নিজেদের কোনো জমি নেই। বাবা লিয়াকত হোসেন মোল্লা কোনো কাজ করেন না। সংসারের অভাব দূর করার জন্য বড় ভাই পাইলট মোল্লার সঙ্গে বর্গা জমি চাষ করেছে আবদুল্লাহ আল মামুন।

জমিতে কাজ করার পরও প্রতিদিন ছয় ঘণ্টা লেখাপড়া করেছে সে। এভাবে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে সে। সে সদর উপজেলার জেএমবি (জুড়ুলিয়া, মালিডাঙ্গা, বাকসাডাঙ্গা, মহাজন, বিষ্ণুপুর) মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র। মামুন বলে, বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা তাকে সাহায্য করেছেন। সে প্রকৌশলী হয়ে দেশের সেবা করতে চায়।

কুপির আলোয় লেখাপড়া: অভাবের সংসার। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি, বাবা আবদুল হাই হাটবাজারে মরিচ-পেঁয়াজ বিক্রি করে যা আয় করেন, তা দিয়ে কোনো রকমে খেয়ে না-খেয়ে থাকতে হয়। আবদুল হাইয়ের ছেলে জুয়েল আহমেদের গৃহশিক্ষকের কাছে পড়ারও সুযোগ হয়নি। ছাপরা ঘরে কুপি বাতির আলোয় সে লেখাপড়া করেছে। এর পরও নিজের মেধা ও ইচ্ছাশক্তির জোরে সে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে।

জুয়েল দৌলতপুর পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্র ছিল। জুয়েল বলে, ‘সংসারে অভাব থাকায় আগামী দিনে কীভাবে লেখাপড়া করব, তা নিয়ে দুশ্চিন্তা হচ্ছে। ’ শিক্ষক হতে চায় নূরজামাল: দরিদ্র পরিবারের সন্তান মো. নূরজামাল হোসাইন এবারের এসএসসি পরীক্ষায় পটুয়াখালীর গলাচিপা মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে। তার বাবা নিজাম হাওলাদার বৈদ্যুতিক মিস্ত্রি। গলাচিপা পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের গোডাউন রোডে একটি ভাড়া বাসায় থাকেন তাঁরা।

নূরজামালের মা নূরজাহান বেগম বলেন, ‘পোলাডারে কোনো দিন ভালো একটা শার্ট কিন্যা দিতে পারি নাই। তিন বেলা খাবার জোগার করতেই তো অনেক কষ্ট করতে হয়। ওরে কলেজে ভর্তি করতে তো অনেক টাকা লাগবে। অ্যাহনই (এখনই) চিন্তা হইতেছে, টাকা কই পামু?’ নূরজামাল জানায়, সে একজন ভালো শিক্ষক হয়ে দেশের সেবা করতে চায়। কিন্তু তাদের সমস্যা অর্থ।

শুধুমাত্র অর্থের কারণেই তারা হেরে যেতে বসেছে লেখাপড়ার জীবন থেকে। এই দেশের অনেক ধনবান ব্যক্তি আছে যারা ইচ্ছে করলেই কিন্তু পারেন এমন মেধাবী ছেলেমেয়েদের সাহায্য করতে... ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।