আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সেই মেয়েটি,একটি দীর্ঘশ্বাসের নাম , যাকে ভুলতে পারি না

হারিয়ে গেছি হারিয়ে গেছি হারিয়ে গেছি ওরে, হারিয়ে গেছি অন্ধরাতে শিশির ভেজা ভোরে । হারিয়ে গেছি ভোরের আলোয় আজকে সারা দিন, হারিয়ে গেছি রাতের কালোয় বাজছে সাপের বীণ। হারিয়ে গেছি রক্ত লালে হারিয়ে গেছি ভাই, হারিয়ে গেছি শূন্য মাঝে আর যে আমি নাই । তখন ক্লাশ নাইনে পড়ি। সে সময়ে আপুর বিয়ে হল।

বৈশাখ কিংবা জৈষ্ঠ মাস,চারদিকে আগুনের দাবদাহ । আম-কাঠাল পাকার গরমে সবাই অতিষ্ঠ। এরি মধ্যে আবার দুইদিন পরপর দুলাভাইদের বাড়িতে দাওয়াত খেতে যেতে হয়,ফুল পরিবার সাথে আত্মীয় স্বজনের দাওয়াত। যাবার সময় দেখা যায় আমি ছাড়া আর কেউ যাচ্ছে না। মিষ্টি আর ফল নিয়ে যাওয়া-আসা আমার প্রাত্যহিক কাজের একটা অংশ হয়ে গিয়েছিল।

রসদ কিনে দিয়েই আব্বুর দায়িত্ব শেষ। গরমের মধ্যে রিকশা দিয়ে আপুর গ্রামের শশুর বাড়ী যাওয়া,খাওয়া আবার আসার সময় একগাদা খাবার নিয়ে আসা সব আমাকেই করতে হত। সে সময় আমার মনে একটু শীতলতা এনে দিয়েছিল একটি মেয়ে। স্বল্প সময়ের জন্য হলেও তার রেশ যেন আজও আছে আমার ভিতরে । সেদিনও,আপুর কাকাশশুর এর দাওয়াতে তার শশুর বাড়ী গিয়েছিলাম।

ভ্যাঁপসা গরম,গলা শুকিয়ে কাঠ,কোথাও কাঠাল ভেঙ্গেছে বলে সারা বাড়ি মাছি ম ম করছে। আট নয় প্যাকেট মিষ্টি কোনটা কোন বাড়িতে পাঠাবে সেটা নিয়েই তারা ব্যাস্ত। আমার দিকে কেউ ফিরেও তাকাচ্ছে না। মনে মনে ভাগ্যকে দোষারোপ দিচ্ছিলাম,একভাই হওয়া যে কি জ্বালা সেটা হাড়ে হাড়েই টের পাচ্ছিলাম। কিছুক্ষন পরে দুলাভাই এসে সবাইকে বলতে লাগল,সিফাতকে কে তো কিছুই দেওয়া হয়নি।

তাড়াতাড়ি শরবত দাও। গরমে তো ওর অবস্থা কাহিল। খাওয়া দাওয়া করে আপুর ননদের শশুর বাড়ী গিয়েছিলাম। সেখানে মাছি দেখি ডাবল। যেন মাছি তাদের গ্রাম দখল করে নিয়েছে।

এত অসহ্য লাগছিল,এর মধ্যে আবার তারা চা বসিয়েছে,গরুর দুধ আর চা আপ্যায়ন করবে। তাদের নিষেধ করলে তিনগুন উৎসাহে খাওয়িয়ে ছাড়বে। তাই কিছু না বলে মুখ গোমড়া করে বসেছিলাম। দুলাভাই বুঝে মুচকি মুচকি হাসছিল। (মনে মনে বলতেছিল,দেখ চান্দু,বিয়েরদিন আমারে নিয়া অনেক কিছু করছ,এখন আমাগো বাড়িতে আসছ,বোঝ ঠেলা) কারও মুখে কথা নেই।

নেশা ধরা দুপুরে মনে হচ্ছিল সবাই নেশায় বুদ হয়ে গেছে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মুহূর্ত কে অতি দীর্ঘকাল মনে হচ্ছিল। এমন সময় এক যুবতী খাবার নিয়ে আসল। খালি পায়,হালকা সবুজ রঙ এর জামা গায় দিয়ে। আমার দিকে একফলক তাকিয়ে আমাকে চা দিল।

আমার সময় থমকে গিয়েছে। ফুরফুরে দখিনা হাওয়া আমার মনের ভিতর দিয়ে বয়ে চলছে। এর প্রভাবে আমার যাবতীয় কষ্ট,তৃষ্ণা,সারা দিনের তিক্তটা সব কেটে গেল। আমার ছোট্ট জীবনে আমি যত মেয়ে দেখেছি,তার মধ্য একটা মেয়ের মুখের অভিব্যাক্তি যে একজন মানুষকে যাদু করতে পারে সেটা সম্ভবত এই প্রথমই দেখলাম। আমি ভাবনার আড়ালে হারিয়ে যাচ্ছিলাম।

দুলাভাইয়ের কথায় সম্বিৎ ফিরে আসল। "সিপাত চা খাও"। ও বাড়ি থেকে আপুর শশুর বাড়ীতে ফিরে যাচ্ছি। কিন্তু আমি যা দেখলাম তা কি জীবনে ভুলতে পারব?ওর ছিপছিপে দেহবল্লরীর ভিতর যেন হাজার যাদুকর বীনা বাজিয়ে চলছে। একবার মনে হয় চরম দুঃখের সে বাজনা আবার মনে হয় না, এ তো আনন্দের সুর।

মনকে মোহাবিষ্ট করতে এ রকম বাজনাই যথেষ্ঠ। ভাল মনকে খারাপ আর খারাপ মনকে ভাল করে দিতে এ সংগীতের কোন তুলনা হয়না। তার খুঁত বলতে নাকটা একটু বাকা। কিন্তু এমন খাড়া অথচ বাকা নাকই যেন তার সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ওর শরীর তখনো পুরোপুরি নারীত্বের পরিপূর্নতা পায়নি তারপরও যতটুকু দেখেছি তাতে মনে হয়েছে ভাস্কর বিধাতা তার সবটুকু নিপুনতা তার জন্য উজাড় করে দিয়েছেন।

উছলে পড়া চাঁদের আলো ঢেকে দিতে যেভাবে মেঘ আসে ,আশার প্রদীপ নিভিয়ে দিতে যেভাবে ঝড়ো হাওয়া আসে দুঃসংবাদটা ঠিক সেই ভাবে চারদিক অন্ধকার করে সব আলোকে ম্লান করে আমার কাছে আসল। আপুর কাছে শুনলাম সে মেয়েটি বিবাহিত। আমি মনে মনে তাকে নিয়ে যে স্বপ্ন দেখতেছিলাম মুহূর্তে তা কাঁচের টুকরার মত ভেঙ্গে শত শত খন্ডে পরিনত হল । আর এ খন্ডগুলো যেন প্রত্যেকটি এক একটা ছোরা হয়ে আমার বুকে আঘাত হানছিল । এ যেন আমার ভাগ্যের লিখন,পেয়েও হারাই ।

বিষাদভরা মন নিয়ে বাসায় ফিরে যাচ্ছিলাম। পৃথিবীর অন্যান্য মন মাতাল করা সৌন্দর্যের মত এটাও যে এত এত ক্ষনস্থায়ী হবে সে কি আগে জানতাম? এর পর আর অনেকদিন আপার শশুরবাড়ী যেতে হয়নি । ভাইরাল হেপাটাইটিসে আক্রান্ত হলাম। বুকের ডানপাশে ব্যাথা করত। আর বুকের বামপাশের ব্যাথা,সে তো আমার নিত্যসঙ্গি!!!  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।