আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

*~*~ I am a Disco Banker~*~*

সৃস্টির সেরা মানুষ তার অতি ক্ষুদ্র জ্ঞানের সীমাবদ্ধতায় এ সুবিশাল মহাবিশ্বের অসীম অজানার কণাতম রহস্যও ভেদ করতে না পারার চরম ব্যর্থতায় স্রস্টাকেই অস্বীকার করার স্পর্ধা দেখায়!!! সারাজীবন সবাই বাপের টাকায় পড়ে আসছি-কিন্তু গত দুমাস আমাদের পড়াশোনার প্যাটার্নটি ছিল অদ্ভুত-BIBM (Bangladesh Institute of Bank Management) এ পড়ার কারণে আমাদেরকেই উল্টো মাসশেষে মাইনে দেওয়া হতো। বাংলা সিনেমার একটি খুব সুন্দর গান ছিল, আগুনের দিন শেষ হবে একদিন আর আমার এখন গাইতে ইচ্ছে হচ্ছে, আরামের দিন শেষ হবে একদিন বিআইবিএম এর বন্ধু সাজ্জাদ একবার কথা প্রসঙ্গে বলেছিল, ব্যাংক থেকে এক-দুমাসের জন্য employee-রা BIBM এ আসে; তখন তাদের কাজ থাকে শুধু পড়াশোনা করা আর মাস শেষে বেতন বুঝে নেওয়া শোনার সঙ্গে সঙ্গেই মুখ থেকে বের হয়ে গিয়েছিল, বাহ্ চরম মজার লাইফতো!ঘটনাটি প্রায় এক বছর আগের কথা- যখন আমি দেশের অন্যতম সেরা FMCG'র একটি অতি পরিচিত Brand এর ব্র্যান্ড এক্সিকিউটিভ এবং অতিঅবশ্যই bdjobs এ ব্যাংকের যেকোন circular থেকে একশ হাত দূরে তারো অনেক আগে ২০০৮ এর নভেম্বরে ঢাকা ব্যাংক ও সেই FMCGতে একই সাথে ইর্ন্টানশীপ ম্যানেজ হবার পর বাবার সাথে রীতিমতো তর্কযুদ্ধে জয়ী হয়ে ব্যাংকের অফার গ্রহণ করিনি। বরাবরের মতো এবারও আল্লাহ্‌র রহমতে, Own decision is da best decision প্রমাণিত হয়, ইর্ন্টানশীপের পরপরই সেখানে জব হয়ে গেলে তো যাই হোক আর তাই হোক, দুবছর সফলতার সাথে সেই চাকরী করার পর গত মার্চ মাসে "ডাক্তার আসিবার পূর্বে রোগী মারা গেল"র মতো "প্রমোশন লেটার হাতে পাইবার পূর্বে এক্সিকিউটিভ রেজিগনেশন লেটার দিয়া দিল" নামক দৃশ্যের সফল মঞ্চস্থ করে আমি ব্যাংকার হয়ে গেলুম সংক্ষেপে সারমর্ম এই, যে প্রমোশনের effective date ১লা জানুয়ারী সেই লেটার যদি ২৮ শে ফেব্রুয়ারীও হাতে নাপাই তাহলে আমার মতো অতি কম ধৈর্যশীলদের আর অপেক্ষা করাকি মানায়! আপনারাই বলুন লেখার মূল উদ্দেশ্য যেহেতু পাঠকদের সাথে আমার BIBM এর দুমাসের মজার লাইফটা শেয়ার করা তাই ব্লগের গাড়িটা ইউর্টান করিয়ে মিরপুর-১০ এর দিকে ঘুরালাম। মিরপুর-১০ থেকে মিরপুর-২ এ BIBM ঢুকার আগেই পাঠকদের সাথে শেয়ার করি, সেই বন্ধু সাজ্জাদ ও আমদের ব্যাংকের HR এর কল্যাণে ব্যাংকে জয়েন করার একদিন পরই রীতিমতো ক্যাডেট কলেজের মতো কোন ভয়ংকর জায়গায় যাচ্ছি এ ধারণা নিয়ে আমি BIBM প্রবেশ করি। ব্র্যাক ব্যাংকের মতো আরো অনেক ব্যাংকের ব্যাংকারদের সকালে অফিস করে বিকালে BIBM আসতে হতো, কিন্তু আমাদের ব্যাংকের মহানুভবতায় আমাদের সকালে অফিসে যেতে হতোনা আমাদের টাইমিং ছিল তিনটা থেকে সাড়ে আটটা পর্যন্ত।

অবশ্য তিনটা থেকে সাড়ে চারটা পর্যন্ত বাধ্যতামুলক লাইব্রেরীর পড়াশোনার সময়টুকু আমরা কি মজা করে কাটাতাম সেটা আপনদের জানাবো বিজ্ঞাপন বিরতির পর বিজ্ঞাপন: "যেখানেই দিন বদলের চেস্টা সেখানেই প্রথম-আলো! আসুন বাংলালিংক দেশকে আমরা মায়ের মতোই ভালোবাসি"-একটি রস-আলো থুক্কু বাংলা-আলো পরিবেশেনা বিজ্ঞাপন বিরতির পর পাঠকবৃন্দ এখন আমরা BIBM এর রুম নং ০০০ এ-চলুন আমাদের ১৫ জন ট্রেইনীর সাথে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেই, ১৫ জনের ১০ জনই আইবিএ,ঢাবি;আমিসহ তিনজন আইবিএ,জাবি; একজন ফিন্যান্স, ঢাবি ও অপরজন খুবি'র। কোর্স ইন্সট্রাক্টর দুজন ছিলেন পুরোই বিপরীতমুখী-একজন সর্বদাই গোমরামুখো কিন্তু অল্পবয়সী আর অপরজন অন্যতম জ্যেষ্ঠ শিক্ষক ও সর্বদাই হাসিখুশী। দ্বিতীয়জনকে দেখলেই মনটা অদ্ভুত রকমের ভালো হয়ে যেত আর প্রথমজনকে দেখলে কেন যেন মনটা খারপ হয়ে যেতে চাইতো..... ডঃ তৌফিক আহমেদ স্যার নিয়ে কিছু কথা না বললে আমার এ ব্লগ লেখা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে- ফিন্যান্সের মতো একটা নিরস সাবজেক্ট কেউ এতোটা সুন্দর করে পড়াতে পারে ওনার ক্লাস না করলে জানা হতোনা। ফেসবুকে "became a fan of Dr. Toufic Ahmed" এ স্ট্যাটাস দেব দেব করেও দেয়া হয়নি তাই আজ এ লেখার মাধ্যমে জানাচ্ছি, স্যার আপনিও জাহাঙ্গীরনগরের ছাত্র জেনে যতটা আনন্দিত হয়েছি আর কারো ক্ষেত্রে এ তথ্য জানার পর আমি এরকম খুশী হয়েছি বলে মনে পড়েনা। গোমরামুখো কোর্স ইনস্ট্রাক্টর প্রথম দিনেই বিড়াল মারতে চেয়েছিল এই বলে, তিনটায় প্রতিদিন লাইব্রেরীতে এসে সাইন করতে হবে এবং সোয়া তিনটায় খাতা সরিয়ে ফেলা হবে-যারা সাইন করেনি তাদের নামের পাশে লাল কালি দেওয়া হবে----লাব লাব লাব হাবিজাবি.. কিন্তু দুদিন পরই বাধ্যতামূলক লাইব্রেরীতে পড়ার সময়টুকুতে আমাদের মধ্যে দুজনকে বাধ্যতামূলক টিটি (টেবিল টেনিস) রুমে দেখা যেত-যা পরবর্তীতে বেড়ে ছয়-সাতজনে পরিণত হয়।

আসলে বাঙ্গালী ফাঁকিবাজিতে বড়ই অনুকরণপ্রিয়! ব্যাপারটা অনেকটা এরকম- লাইব্রেরীতে সাইন ইন করে ভার্চুয়াল উপস্থিতি নিশ্চিত করেই জমি দখলের মতো কারা আগে টিটি টেবিল দখল করবে তার প্রতিযোগিতা। অবশ্য আমরা ছিলাম মূলত দুই গ্রুপ-ক্ল্যাসিক গ্রুপে শুধু আমার আর আহাদের একের পর এক ক্ল্যাসিক ম্যাচ আর কিচিরমিচির গ্রুপে ছিল বাচ্চারা যারা বিআইবিএম এ এসেই প্রথমবারের মত টিটি ব্যাট ধরেছে আমার ২৬ বছরের জীবনে যত টিটি ম্যাচ খেলেছি বিআইবিমের দুমাসে তার চেয়ে অনেক গুন বেশী ম্যাচ খেলা হয়ে গিয়েছে আর মাইরী বলছি, এখানে এসে আমার ব্যাংকিং knowledge যতটা বেড়েছে তার চেয়ে অনেক বেশী বেড়েছে টিটি খেলার পারদর্শীতা আমার একটা বড় আফসোস ছিল, স্কুল লাইফের পর আমি ভালো কোন female টিচার পাইনি। তাই "female টিচার মানেই ৯৯%-ই ভালো, শুধু কখনো কখনো ১% অপূর্ণতা ১০০% ক্ষতির কারণ"-এ কথা যখন আমার কাছে ধ্রুব সত্য হয়ে উঠছিল তখন BIBM এর দুজন female ফ্যাকাল্টি আমার ধারণাকে ভুল বলে প্রমাণ করে। BIBM এ কিছু দুর্দান্ত ফ্যাকাল্টির বাইরেও যে জিনিসটা সবচে বেশী প্রশংসা করার মতো, তা হলো তাদের ক্যান্টিনের উন্নতমানের refreshment এর ব্যবস্থা! আমাদের সবারই মনে হয় প্রতিদিন তা খেয়ে এ দুমাসে দু-তিন কেজি ওজন বেড়ে গিয়েছিল। একবার ক্লাসে গোমরামুখো স্যার সম্পূর্ণ সাদা একটি স্লাইডের মধ্যে ছোট্ট একটি কালো বৃত্ত দেখিয়ে সবাইকে জিজ্ঞেস করলেন,কার কি মনে হয়? আমি বাদে সবাই বললো বিন্দু,গর্ত এসব আর আমার মনে হচ্ছিল চোখের মণি,মার্বেল আর ...(বলা যাবে না) তাই আমার পালা এলে মজা করেই বললাম, চোখের মণি কিংবা দৃস্টি মনে হচ্ছে।

কি আশ্চর্য, পরের স্লাইডেই দেখি সেটা ছিল অ্যান্জেলিনা জোলির চোখ বেচারা গোমরামুখো ভেবেছিল out of the box thinking or creativity নিয়ে জম্পেশ একটা লেকচার দিবে, আমার কারণে তা আর পুরোপুরি জমলোনা নিজের সম্পর্কে শুধু ভালো কথাই বলবো তা হয়না, তাই সবাইকে ব্লগের মাধ্যমে জানিয়েই দিলুম প্রথম দুটো পরীক্ষাতেই আমি 2nd lowest থেকে যথাক্রমে দু ও তিন মার্কস কম পেয়ে সবচে কম নম্বর পাই-যদিও মোবাইল ইন্টারনেটের মাধ্যমে google আমাকে পরীক্ষায় যথেস্ট সাহায্য করেছিল অবশ্য আমি এ নিয়ে মোটেই চিন্তিত ছিলামনা, কারণ প্রথমত-আমি পরীক্ষার খাতা নয় কাজে বিশ্বাসী আর দ্বিতীয়ত, আমি আর খুবির ভাইজানই শুধু মার্কেটিং এ মেজর (ওনার মার্কেটিং এ আমার চেয়েও এক বছর বেশী অভিজ্ঞতা-বাকিরা প্রায় সবাই কদিন আগেও বিবিএ/এমবিএ'র ফুলটাইম স্টুডেন্ট ছিল)! BIBM এর দুমাসে সবচে মজার সময়টুকু ছিল আসলে সকাল থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত ফ্রি থাকার সময়টুকু। পাসপোর্ট করানো থেকে শুরু করে পিসি আপগ্রেড করা পর্যন্ত আরো অনেক pending কাজেরই সফল সমাপ্তি হয় এ সুযোগে। আর চাকরিজীবি হয়েও সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত খালি বাসায় ফুল ভলিউমে গান শোনা,ফেসবুকিং করা,ব্লগ লেখা কিংবা অনলাইন দাবা খেলার যে কি স্বর্গীয় অনূভুতি তা বোঝানোর ক্ষমতা এ লেখকের নেই। আর হ্যাঁ, মাঝে মাঝে বাসায় লেকচার শীটগুলোও পড়তে হতো। "মাঝে মাঝে " বলতে লেখক এখানে "কালে-ভদ্রে" বুঝিয়েছেন বিশেষ করে হঠাৎ করেই 360 degree brand/marketing activities এর হাজারটা ঝামেলা থেকে মুক্তি পেয়ে এরকম আরামের লাইফে আমার সত্যিই মনে হচ্ছিল, আহা! কি আনন্দ আকাশে-বাতাসে তবে কিছুটা বিব্রতকর পরিস্থিতে পরতাম, যখন সকালে বউকে অফিসে যাবার সময় রাস্তা পর্যন্ত এগিয়ে দেবার আগে লিফটের ভিতরে ও বাহিরে আমজনতা কেমন যেন জিজ্ঞাসু দৃস্টিতে তাকাতো! ভাবখানা এমন, বউ চাকরী করে আর জামাই বাবাজী বেকার সে যাই হোক-- সময় ও নদীর স্রোতের মতো BIBM ট্রেনিং ক্যালেন্ডারো যথারীতি আমাদের কারো জন্যই অপেক্ষা না করে সময়মতো শেষ হয়ে এল ।

সার্টিফিকেট প্রদান,গ্রুপ ফটো সেশন আর বিরাট ভুড়িভোজন শেষে আমিও একদা টাই এর নট্‌ ঢিলা করতে করতে “I am a Disco Banker” গানটি মনে মনে গুনগুন করতে করতে বাড়ির পথে হাঁটা দিলাম ..... ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।