আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আধুনিক নাট্য-কলার জনক; হেনরিখ ইবসেন

শিশুতোষ যে কোন রচনা।   আধুনিক নাটকের জনক বলে পরিচিত হেনরিক যোহান ইবসেন আধুনিক বাস্তবতাবাদী নাটকের সূত্রপাত করেছেন। তাকে ইউরোপের আধুনিক বুদ্ধিবৃত্তি জগতের বিপ্লবী বিবেচনা করা যায়৷ ১৯২৮ সালের ২০ মার্চ নরওয়ের টেলিমার্কে জন্ম নেয়া ইবসেনের নাটক এখন পর্যন্ত খুবই সম-সাময়িক এবং পৃথিবীর সর্বপ্রান্তেই এগুলো মঞ্চস্থ হচ্ছে৷ ইবসেনের সামগ্রিক সৃষ্টিকর্মের মধ্যে ২৬টি নাটক, তিনশত কবিতার উল্লেখ পাওয়া যায়৷ এর সাথে উল্লেখ করার মতো রয়েছে প্রায় তিন হাজার চিঠিপত্র এবং বেশ কিছু চিত্রকর্ম৷ তার ‘কবিতা’ কাব্যগ্রন্থে ৭৭টি কবিতা রয়েছে৷ কালজয়ী নাট্যকার হেনরিক ইবসেনের রচিত সবগুলো নাটকই শতবছর পরও সমকালীন ও প্রাসঙ্গিক বিশ্ব নাট্যাঙ্গনে। তার নাট্যদর্শন, সামাজিক দায়বদ্ধতা, ধর্মীয় মুল্যবোধ প্রসঙ্গে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা, মানবিক সততা ও ন্যায়ের অধিকার প্রসঙ্গে তার রচনা এখনও মানব জাতিকে চিন্তা-মননে-বিবেকবোধকে যেমন জাগ্রত করে তোলে তেমনি সত্য ও মানবিক সততার জন্য নিজের সঙ্গে, নিজের বিবেকের সঙ্গে মোকাবেলা করার সাহস যোগায়। তার নাটকে তৎকালীন শাষকগোষ্ঠীর অন্যায়ের প্রতিবাদ, অর্থনৈতিক বৈষম্য, মানবতাবিরোধী, ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে তিনি যেমন সোচ্চার হয়েছেন জোরালোভাবে, তেমনি অতি সাহসের সঙ্গে মোকাবেলা করেছেন সেই সময়ের অর্থনৈতিক বৈষম্য, অরাজকতা, মুখাশধারী নিষ্ঠুর শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে।

তিনি ধর্ম, চার্চ পুরোহিতদের বিরুদ্ধে কলম ধরতে দ্বিধা করেননি। যেমন ‘ব্র্যান্ড’, ‘দ্য প্রিটেন্ডারস’, ‘রোসমার শোর্লম’ প্রভৃতি নাটকে ধর্ম ও ঈশ্বরের যে ব্যাখ্যা পাওয়া যায়; তা হলো মানবতা, ন্যায়, ও শুভ্রতার। যে শুভ্রতা মানুষের বিবেককে সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত করবে। ইবসেনের ধর্ম মানে মানবতার ধর্ম; যে ধর্ম মানুষের বিবেককে, আত্মাকে উন্নত করে। মানুষের জীবনকে আলোকিত করে।

ইবসেন বরাবরই সমাজ ব্যবস্থাকে চরম বা পরম বলে ভাবতেন না। ভাবতেন না বলেই তিনি তার প্রতিটি নাটকে মানুষের অধিকার প্রসঙ্গ, পরিবেশের মধ্যে বিরোধ, নারী স্বাধীনতা, সাংবাদিকতায় অসততা, শিক্ষা ব্যবস্থার অনিয়ম, পতিতাবৃত্তি, অবৈধ সম্পর্ক, পাপবোধ, অনুশোচনা, প্রতিবাদ বিদ্রোহ সবকিছুকে তিনি তার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি ও যুক্তির নিরিখে তুলে এনেছেন তার রচনায়। যা মানবজাতীর জন্য কল্যাণকর ও মঙ্গলময়। ‘ডলস হাউস’, ‘দ্য লেসন’ নাটকগুলোই তার প্রমাণ। ১৮৭৫ সালের পর ইবসেন সম্ভবত কবিতাকে বিদায় জানান এবং গদ্যনাটকে মনোনিবেশ করেন৷ তবে ১৮৭৫ সালের পরও তিনি বেশকটি কবিতা লিখেছেন ।

বিষয়টি পাঠকের কাছে আজও পরিষ্কার নয় যে, কেন তিনি কবিতা লেখা ছেড়ে দিলেন । কিন্তু আরেকটি বিষয় তাৎপর্যপূর্ণ যে, তার বেশকটি নাটক কয়েকটি কবিতার বিষয়বস্তু তার উপজীব্য করে রচিত হয়েছে৷ এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে, ‘খনি শ্রমিক’ কবিতার বিষয়বস্তু জন গ্যাব্রিয়েল বর্কমেন নাটকে’, ঐখানে বসেছিল তারা দুইজন’ এর বিষয়বস্তু দ্য মাস্টার বিল্ডার নাটকে ‘জলপদ্মের সাথে’ কবিতার বিষয়বস্তু লিটল ইয়েল্ক নাটকে এবং পাখি এবং পাখিশিকারী কবিতার বিষয়বস্তু এ ডলস হাউস নাটকে উপজীব্য হয়েছে । ইবসেনের কবিতা পড়তে গিয়ে ওয়ার্ডসওয়ার্থের নীতিবাক্যটি মনে পড়ে যায়- ‘কবিতা হচ্ছে প্রবল অনুভূতির বিরামহীন উচ্ছল প্রকাশ৷’ এই কথার প্রেক্ষাপটে একজন পাঠক ইবসেনের কবিতায় অনুভূতির উচ্ছ্বলতা ও মধুময়তার রোমাঞ্চকর ও প্রেমময় ছোঁয়া উপলব্ধি করবেন এই কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়৷ ১৯০৬ সালের এই দিনে কীর্তিমান এই সাহিত্যিক মৃত্যুবরণ করেন। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।