আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভারতীয় উপমহাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে মুসলিমদের অবদানঃ শায়খুল ইসলাম সায়্যিদ হুসাইন আহমদ মাদানী (রহঃ) - পর্ব ০২

শায়খুল ইসলাম সায়্যিদ হুসাইন আহমদ মাদানী (রহঃ) ড. মুশতাক আহমদ ১ম অধ্যায় সমকালীন পরিস্থিতি ও সংগ্রাম-সূত্র ইংরেজ শাসনপূর্ব ভারতবর্ষ দুই আধুনিক ইসলামী গবেষকদের মতে ভারতবর্ষের আদি বাসিন্দা ছিলেন হযরত আদম (আঃ) ও হযরত নূহ (আঃ) - এর অধঃস্তন বংশধর। পবিত্র কুরআনসহ সকল আসমানী গ্রন্থে সায়্যিদুনা হযরত আদম (আঃ) - কে মানবকুলের পিতা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। وَإِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلَائِكَةِ إِنِّي جَاعِلٌ فِي الْأَرْضِ خَلِيفَةً قَالُوا أَتَجْعَلُ فِيهَا مَنْ يُفْسِدُ فِيهَا وَيَسْفِكُ الدِّمَاءَ وَنَحْنُ نُسَبِّحُ بِحَمْدِكَ وَنُقَدِّسُ لَكَ قَالَ إِنِّي أَعْلَمُ مَا لَا تَعْلَمُونَ وَعَلَّمَ آدَمَ الْأَسْمَاءَ كُلَّهَا ثُمَّ عَرَضَهُمْ عَلَى الْمَلَائِكَةِ فَقَالَ أَنْبِئُونِي بِأَسْمَاءِ هَٰؤُلَاءِ إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِينَ ( আল কুরআন ২: ৩০-৩১ ) ( see Targum of Jerusalem to Gen. Tal. Sanhedrin, P. 38a; Prike R. Eliezer, ch.i xi ) তিনি ছিলেন প্রথম মানুষ ও প্রথম নবী। ( সাদুদ্দীন তাফ্‌তাযানী, শারহুল আকায়িদ আন্‌ নাসাফিয়্যা (চট্টগ্রামঃ কুতুবখানা যমীরিয়্যা, তা.বি.), পৃঃ ১২৫; সংক্ষিপ্ত ইসলামী বিশ্বকোষ (ঢাকাঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ১৯৮৬), পৃঃ ১৫ ) ঐতিহাসিক মুহাম্মদ কাসিম ফেরেশতার মতে হযরত আদম (আঃ) সর্বপ্রথম ভারত উপমহাদেশে অবতরণ করেন। এখান থেকে পরে আরব উপদ্বীপে গিয়ে বসতি স্থাপন করেন।

( মুহাম্মদ কাসিম ফেরেশতা, তারীখে ফেরেশতা, আবদুল হাই অনূদিত (দেওবন্দঃ মাকতাবায়ে মিল্লাত ১৯৮৩), পৃঃ ৫৯ ) হযরত আদমের পর বহু কাল পর্যন্ত মানুষের মধ্যে খাঁটি তাওহীদবাদ অব্যাহত ছিল। তারপর মানুষ ক্রমে আল্লাহকে ভুলে গিয়ে বিভ্রান্ত হয়ে পড়লে হযরত নূহ (আঃ) পৃথিবীতে আসেন। তিনি ৯৫০ বছর তাওহীদবাদের প্রচার করেন। কিন্তু মুষ্টিমেয় কয়েকজন ছাড়া কেউ মুসলমান হয়নি। ( হাফিয ইব্‌ন কাসীর আদ্‌ দামেশকী, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া (বায়রূতঃ দারু ইহয়ায়িত তুরাস আল আরাবী, ১৪১৩/১৯৯৩), ১ম খণ্ড, পৃঃ ১১৩ ) ফলে পৃথিবীতে প্রথম আসমানী গযব 'মহাপ্লাবন' সংঘটিত হয়।

( মহাপ্লাবন কোন সালে ঘটেছিল তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেন খ্রিস্টপূর্ব ৩২০০ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ২৩০০, কেউ বলেন আজ থেকে পাঁচ হাজার বছর আগে। আবার কারো মতে খ্রিস্টের জন্মের সাড়ে পাঁচ হাজার বছর আগে এ প্লাবন ঘটেছিল। তবে এতটুকু সত্য যে, খ্রিস্টপূর্ব ৩১০২ কিংবা খ্রিস্টপূর্ব ৩১০০ অব্দে পৃথিবীর অনেক স্থানেই এক মহাপ্লাবন সংঘটিত হয়। (এম.আই.চৌধুরী প্রণীত প্রবন্ধ, মনসূর মূসা সম্পাদিত, বাংলাদেশ, ঢাকা, ১৯৭৪, পৃঃ ৪৬) ) তাতে বিশ্বাসীগণ ছাড়া সকলে সমূলে ধবংস হয়ে যায়।

فَكَذَّبُوهُ فَأَنْجَيْنَاهُ وَالَّذِينَ مَعَهُ فِي الْفُلْكِ وَأَغْرَقْنَا الَّذِينَ كَذَّبُوا بِآيَاتِنَا ۚ إِنَّهُمْ كَانُوا قَوْمًا عَمِينَ (আল কুরআন ৭:৬৪) فَكَذَّبُوهُ فَنَجَّيْنَاهُ وَمَنْ مَعَهُ فِي الْفُلْكِ وَجَعَلْنَاهُمْ خَلَائِفَ وَأَغْرَقْنَا الَّذِينَ كَذَّبُوا بِآيَاتِنَا ۖ فَانْظُرْ كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُنْذَرِينَ (আল কুরআন ১০:৭৩) قَالَ سَآوِي إِلَىٰ جَبَلٍ يَعْصِمُنِي مِنَ الْمَاءِ ۚ قَالَ لَا عَاصِمَ الْيَوْمَ مِنْ أَمْرِ اللَّهِ إِلَّا مَنْ رَحِمَ ۚ وَحَالَ بَيْنَهُمَا الْمَوْجُ فَكَانَ مِنَ الْمُغْرَقِينَ (আল কুরআন ১১:৪৩) وَنَصَرْنَاهُ مِنَ الْقَوْمِ الَّذِينَ كَذَّبُوا بِآيَاتِنَا ۚ إِنَّهُمْ كَانُوا قَوْمَ سَوْءٍ فَأَغْرَقْنَاهُمْ أَجْمَعِينَ (আল কুরআন ২১:৭৭) وَقَوْمَ نُوحٍ لَمَّا كَذَّبُوا الرُّسُلَ أَغْرَقْنَاهُمْ وَجَعَلْنَاهُمْ لِلنَّاسِ آيَةً ۖ وَأَعْتَدْنَا لِلظَّالِمِينَ عَذَابًا أَلِيمًا (আল কুরআন ২৫:৩৭) মহাপ্লাবনের পর হযরত নূহ (আঃ) একত্ববাদে বিশ্বাসী তাঁর বংশধরকে পৃথিবীর বিভিন্ন এলাকায় বসতি স্থাপনের নির্দেশ দেন। وَجَعَلْنَا ذُرِّيَّتَهُ هُمُ الْبَاقِينَ (আল কুরআন ৩৭:৭৭; (Goldziher, Adhandlungen zur arabischen Philologie, ii, Leyden 1899) ) তারা বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন পরিবেশ ও আবহাওয়ায় বসবাসের ফলে বিভিন্ন ভাষা, বর্ণ, জাতি ও গোত্রে বিভক্ত হয়ে যায়। নূহ - এর বংশধরের নাম অনুসারে বিভিন্ন এলাকার নাম হয়ে যায়। হযরত নূহের তিন পুত্র ছিল। হাম, সাম ও ইয়াফিস।

( হাফিয ইব্‌ন কাসীর আদ্‌ দামেশকী, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, প্রাগুক্ত, পৃঃ ১৩০-১৩১ ) আবার হামের ছয় পুত্র। হিন্দ, সিন্দ, হাবাস, জানাস, বার্বার ও নিউবাহ। তন্মধ্যে হিন্দের মাধ্যমে ভারতবর্ষে আবাদ হয়েছিল বলে এ ভূখণ্ড 'হিন্দ' বা হিন্দুস্তান নামে পরিচিত। ( মুহাম্মদ কাসিম ফেরেশতা, প্রাগুক্ত, পৃঃ ৫৯ ) হযরত নূহের পুত্র ও পৌত্রগণের সকলে ছিলেন তাওহীদে বিশ্বাসী ধর্মপ্রচারক। হিন্দের চার পুত্র।

পূরব, বঙ, দাকন ও নাহরাওয়াল। জ্যেষ্ঠপুত্র পূরবের মোট ৪২ পুত্র। অল্পকালের মধ্যে তাদের আরো বংশবৃদ্ধি ঘটে এবং তাঁরা ভারতের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েন। দ্বিতীয় পুত্র বঙ উপমহাদেশের পূর্বাঞ্চলে বসতি স্থাপন করেন। এই বঙ বংশধরের আবাসস্থলই বঙ বা 'বাংলা' নামে পরিচিত হয়।

( ড.এম.এ.আজিজ ও ড.আহমদ আনিসুর রহমান রচিত প্রবন্ধ, বাংলাদেশের উৎপত্তি ও বিকাশ, প্রাগুক্ত, পৃঃ ২-৩ ) দাকানের তিন পুত্র। সারহাট, কানাড় ও তালাঙ্গ। তন্মধ্যে সারহাটের নামে সুরাট, কানাড়ের নামে কানাড়ী ও তালাঙ্গের নামে তেলেঙ্গূ বা তেলেগু নাম হয়। ( ড.কাজী দীন মুহম্মদ রচিত প্রবন্ধ, বাংলাদেশের উৎপত্তি ও বিকাশ, প্রাগুক্ত, পৃঃ ১৬৯; আবদুল মান্নান তালিব, বাংলাদেশে ইসলাম (ঢাকাঃ ইসলামিক ফাউণ্ডেশন বাংলাদেশ, ১৯৮০), পৃঃ ১৯ ) নূহের সন্তান-সন্ততি ভারত ভূখণ্ডে কতকাল বসবাস করেন তা সঠিক জানা যায়নি। তবে প্রাচীনকালে নানা পরিবর্তনের ফলে এই জনগোষ্ঠীর পর অন্যান্য দিক থেকে ক্রমে নেগ্রিটো (Negrito), অষ্টলয়েড বা অষ্ট্রো-এশিয়াটিক, মঙ্গোলয়েড বা ভোট চীনীয় (Mongoloid/Bhooto-Chinese) ও দ্রাবিড় জাতি এ দেশে আসে।

তাদের অনেক পরে আগমন ঘটে আর্য সম্প্রদায়ের। ( ড.কাজী দীন মুহম্মদ, "বাংলাদেশে ইসলামের আবির্ভাব ও ক্রমবিকাশঃ কিছু ভাবনা" মাসিক অগ্রপথিক (ঢাকাঃ ইসলামিক ফাউণ্ডেশন বাংলাদেশ্ম ২ ফেব্রু, ১৯৮৯), পৃঃ ৩৮; বিজ্ঞানীরা মানব বংশধারা ও জাতি বিভক্তিকে প্রধানতঃ ৩টি ধারায় বিভক্ত করেন। ককেশিয়ান, মঙ্গোলয়েড ও নিগ্রোয়েড। ককেশিয়ানদের গায়ের রং সাদা ও চুল ঢেউ খেলানো। তাদের উদাহরণ হিসেবে ইউরোপীয়ানদের কথা বলা যায়।

মঙ্গোলয়েডদের গায়ের রং হলদে এবং চুল সোজা। তারা অনেকটা বর্তমান চীন ও জাপানীদের ন্যায়। নিগ্রোয়েডদের গায়ের রং কালো এবং চুল পশমের মত কোকড়ানো। আফ্রিকার নিগ্রোদেরকে তাদের উদাহরণ বলা যেতে পারে। তবে এ জাত বিভক্তি ১০০% সঠিক নয়।

ককেশিয়ানদের মধ্যে বিভিন্ন শাখা আছে। তন্মধ্যে নরডিক্স, ইস্ট বাল্টিক্স, আলপিন্স এবং মেডাটারিয়ান্স অন্যতম। নরডিক্সরা দীর্ঘদেহী, মাথার খুলি লম্বাটে এবং চোখের মনি নীল। বালটিক্সরা বেঁটে দেহ, চওড়া মস্তক ও গোলাকার মুখমণ্ডল। আলপিন্সরা বেঁটে এবং মাথার খুলি গোল।

মেডিটারিয়ানদের মাথা লম্বা, চামড়ার রং গাঢ় বর্ণ, চোখের মনি কালো এবং চুল ঢেউ খেলানো। এই তিন ধরণের ককেশিয়ান ইউরোপে বাস করে। আরবরা মেডিটারিয়ান। তাদের গায়ের রং হালকা বাদামী, চুল কালো, খুলি লম্বাটে এবং নাক খাড়া। ভারতেও মেডিটারিয়ানদের দেখা যায়।

উত্তর আফ্রিকার হেমিট্‌স জাতিরা মেডিটারিয়ান। তবে তাদের মধ্যে নিগ্রোয়েডদের প্রভাব বেশী। মিসর, ইথিওপিয়া ও সাহারাবাসীদেরকে তাদের দৃষ্টান্ত বলা যায়। এ দৃষ্টিকোণ থেকে জাপানের আইনু জাতি ও ভারতের আর্যদেরকে মিশ্র ককেশিয়ান বলা যায়। মঙ্গোলয়েডদের বিভিন্ন শাখা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে আছে।

তাদের চুল পাতলা ও অনেকটা সোজা সোজা। তাদের গায়ে লোম খুব কম হয়। নাক খ্যাদা, ঠোট মোটা, চোখ ছোট ছোট এবং বোজা বোজা। প্রধানতঃ চীন, জাপান, মঙ্গোলিয়া, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, মায়ানমার ও তিব্বতে তাদের বসবাস বেশী। আসামের অনেকের মধ্যে মঙ্গোলয়েডদের প্রভাব দেখা যায়।

এস্কিমোরা এই জাতির অন্তর্ভুক্ত। নিগ্রোয়েডদের গায়ের রং কালো, নাক থ্যাবড়া। আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে তারা বাস করে। তাছাড়া আন্দামান, মালয়েশিয়া, নিকোবর প্রভৃতি দ্বীপে তারা ছড়িয়ে আছে। আরো কিছু যাদেরকে উপরোক্ত তিনটির কোনটিরই অন্তর্ভুক্ত করা যায় না যেমন পিগমী, বুশম্যান, হটেনটেট ও অস্টোলয়েড।

পিগমীরা আকারে ভীষণ ছোট, তাদের উচ্চতা বড় জোর সাড়ে ৪ ফুট। মধ্য এশিয়ার জঙ্গলে তারা থাকে। বুশম্যান ও হটেনটটদের আদি বাস আফ্রিকায়। তারা পিগমীদের মত বেটে নয় তবে রং নিগ্রোদের চেয়ে হালকা এবং একটু হলদে। চুল পশমের মত কোকড়ানো।

অস্টলয়েডদের চুল ঢেউ খেলানো, গায়ের রং কালো, নাক চওড়া, কপাল চওড়া হয়ে সামান্য ঢালু। দ্রঃ জ্ঞান ও বিশ্বকোষ, পৃঃ ৭০ ) এভাবে অতি প্রাচীন ভারতীয়দের সাথে নতুন আগমনকারীদের বহু গোত্র ও গোষ্ঠীর সমন্বয়ে গড়ে উঠে প্রাচীন ভারতের সভ্যতা। পবিত্র কুরআনের বর্ণনামতে প্রত্যেক জাতি ও গোষ্ঠীর কাছে আল্লাহ তাআলা পয়গাম্বর প্রেরণ করেছেন। মহান আল্লাহর বাণীঃ هَادٍ قَوْمٍ لِكُلِّ প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য আছে পথপ্রদর্শক। (১৩:৭) نَذِيرٌ فِيهَا خَلَا إِلَّا أُمَّةٍ مِنْ وَإِنْ এমন কোন সম্প্রদায় নেই যার কাছে সতর্ককারী প্রেরিত হয়নি।

(৩৫:২৪) ( Horovitz, Koranische, Berin Leipzing, p:44) এ সূত্র মতে ভারত উপমহাদেশে বসবাসকারী প্রাচীন জাতিসমূহের কাছেও যে তাওহীদের প্রচারক বহু পয়গাম্বর পাঠানো হয়েছিল তা নির্দ্বিধায় বলা যায়। তবে যেহেতু তাঁদের নাম ও ধর্মপ্রচারের ইতিহাস পবিত্র কুরআন কিংবা মহানবীর হাদীসে উল্লেখিত নেই, সেহেতু কাউকে চিহ্নিত করে 'নবী' আখ্যায়িত করা যায় না। ( আল্লামা শিবলী নুমানী ও সায়্যিদ সুলায়মান নদভী, সীরাতুন্নবী (করাচীঃ দারুল ইশাআত,১৯৮৫),৪র্থ খণ্ড, পৃঃ ৩১১; পবিত্র কুরআনের আয়াতঃ وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلًا مِنْ قَبْلِكَ مِنْهُمْ مَنْ قَصَصْنَا عَلَيْكَ وَمِنْهُمْ مَنْ لَمْ نَقْصُصْ عَلَيْكَ আমি তোমার পূর্বে অনেক রসূল প্রেরণ করে ছিলাম, তাদের কারো কারো কথা তোমার নিকট বিবৃত করেছি আর কারো কারো কথা তোমার নিকট বিবৃত করিনি (৪০:৭৮) এ তথ্যকে সমর্থন করে। ) আর্যদের পৌত্তলিকতা, জাতবিভক্তি ও ধর্মীয় কঠোর অনুশাসন প্রাচীন ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর জীবনে দুঃখ ও নৈরাশ্য বাড়িয়ে তুললে নির্বাণ ও মুক্তির পয়গাম নিয়ে আসেন 'গৌতম বুদ্ধ' ও 'মহাবীর' সহ বহু ধর্মপ্রচারক। বৌদ্ধধর্ম ও জৈনধর্ম তাঁদের দ্বারা প্রচারিত হয়।

( রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, বাঙ্গালার ইতিহাস, ১ম খণ্ড, পৃঃ ২৭-২৮; মোহাম্মদ আবদুল মান্নান, প্রাগুক্ত, পৃঃ ৩৬ ) কিন্তু কালের নির্মম আবর্তে তাঁদের সকলেরই প্রচারিত ধর্ম নানাভাবে বিকৃতির শিকার হয়। এটা শুধু প্রাচীন ভারতীয় ধর্মগুলোর ব্যাপারেই নয়; প্রথম নবী হযরত আদম (আঃ) থেকে শেষনবী পর্যন্ত যত ধর্মপ্রচারক পৃথিবীতে এসেছেন তাঁদের মধ্যে একমাত্র শেষনবী হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) ছাড়া কারো ধর্মই সুরক্ষিত থাকেনি। বরং কালক্রমে বিকৃত হয়ে পৌত্তলিকতায় পর্যবসিত হয়ে গিয়েছে। পক্ষান্তরে হযরত আদম (Adam) (আঃ) - যেই ধর্ম ও জীবন বিধান নিয়ে পৃথিবীতে আগমন করেন সেটি বিভিন্ন সময়ে বিকৃতির কবলে পতিত হলেও সেটিকে পরবর্তী সময়ে মার্জিত ও সুপরিচ্ছন্নরূপে যুগোপযোগী ধর্ম হিসেবে পুনরায় পেশ করার লক্ষ্যে প্রেরিত হন হযরত নূহ (Noah), হযরত ইদ্‌রীস (Enoch), হযরত ইব্‌রাহীম (Abraham), হযরত মূসা (Moses), হযরত দাঊদ (David) ও হযরত ঈসা (Jeses) (আঃ) সহ পৃথিবীর সকল পয়গাম্বর ও ধর্মপ্রচারক। ( শাহ্‌ ওয়ালীউল্লাহ দেহলবী, আল বালাগুল মুবীন (ঢাকাঃ শিরীন পাবলিকেশন্স, বাংলা ১৩৮৩), পৃঃ ৭-১০ ) তাঁদের সকলে ছিলেন একই ধারাবাহিকতা ও একই আদর্শের বিভিন্ন কড়ি।

এই ধারারই সর্বশেষ পয়গাম্বর হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (সঃ), যিনি পূর্ববর্তী সকল ধর্মপ্রচারকের রেখে যাওয়া আমানতকে সুপরিচ্ছন্ন অবয়বে বিশ্বমানবতার সামনে পেশ করেছেন। কাজেই ভারত উপমহাদেশে প্রতিষ্ঠিত হযরত আদম (আঃ) ও হযরত নূহ (আঃ) তথা নাম অজ্ঞাত পয়গাম্বরগণের উম্মতের মাঝে শেষ পয়গাম্বরেরে পেশকৃত ধর্মের যেই প্রচার ও প্রসার ঘটেছে সেটিকে কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলা যায় না। এক নজরে এই পর্বে যে সব কিতাবের সাহায্য নেওয়া হয়েছেঃ ১। আল কুরআন ২। Targum of Jerusalem to Gen. Tal. Sanhedrin ৩।

সাদুদ্দীন তাফ্‌তাযানী, শারহুল আকায়িদ আন্‌ নাসাফিয়্যা (চট্টগ্রামঃ কুতুবখানা যমীরিয়্যা, তা.বি.) ৪। সংক্ষিপ্ত ইসলামী বিশ্বকোষ (ঢাকাঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ১৯৮৬) ৫। মুহাম্মদ কাসিম ফেরেশতা, তারীখে ফেরেশতা, আবদুল হাই অনূদিত (দেওবন্দঃ মাকতাবায়ে মিল্লাত ১৯৮৩) ৬। হাফিয ইব্‌ন কাসীর আদ্‌ দামেশকী, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া (বায়রূতঃ দারু ইহয়ায়িত তুরাস আল আরাবী, ১৪১৩/১৯৯৩) ৭। এম.আই.চৌধুরী প্রণীত প্রবন্ধ, মনসূর মূসা সম্পাদিত, বাংলাদেশ, ঢাকা, ১৯৭৪ ৮।

Goldziher, Adhandlungen zur arabischen Philologie, ii, Leyden 1899 ৯। ড.এম.এ.আজিজ ও ড.আহমদ আনিসুর রহমান রচিত প্রবন্ধ, বাংলাদেশের উৎপত্তি ও বিকাশ ১০। ড.কাজী দীন মুহম্মদ রচিত প্রবন্ধ, বাংলাদেশের উৎপত্তি ও বিকাশ ১১। আবদুল মান্নান তালিব, বাংলাদেশে ইসলাম (ঢাকাঃ ইসলামিক ফাউণ্ডেশন বাংলাদেশ, ১৯৮০) ১২। ড.কাজী দীন মুহম্মদ, "বাংলাদেশে ইসলামের আবির্ভাব ও ক্রমবিকাশঃ কিছু ভাবনা" মাসিক অগ্রপথিক (ঢাকাঃ ইসলামিক ফাউণ্ডেশন বাংলাদেশ্ম ২ ফেব্রু, ১৯৮৯) ১৩।

জ্ঞান ও বিশ্বকোষ ১৪। Horovitz, Koranische, Berin Leipzing ১৫। আল্লামা শিবলী নুমানী ও সায়্যিদ সুলায়মান নদভী, সীরাতুন্নবী (করাচীঃ দারুল ইশাআত,১৯৮৫) ১৬। রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, বাঙ্গালার ইতিহাস ১৭। শাহ্‌ ওয়ালীউল্লাহ দেহলবী, আল বালাগুল মুবীন (ঢাকাঃ শিরীন পাবলিকেশন্স, বাংলা ১৩৮৩) ১ম পর্বঃ http://www.somewhereinblog.net/blog/Tarek000/29791358 ( চলবে ইনশাআল্লাহ ) ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ২৫ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.