আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সেই একই লাশ, একই রক্ত, একই শরীর! একই ভাবে একই কারনে খুন করা হয়েছে! অথচ ধর্মীয় মতপার্থক্য থাকার কারনে আমরা দুই ধরনের কথা বলতেছি! কিন্তু কেন?

প্রতিটি রাত শুরু হয় ‘লাশ’ শব্দ টি শুনে। প্রতিটি সকালও শুরু হয় সেই একই বাক্য শুনে! আমরা হয়তোবা লাশ শব্দ টা শুনার পর একটু দীর্ঘশ্বাস ফেলি! ক্ষণিকের একটু খারাপ লাগা! তারপর সেই লাশ যদি হয় কোন আস্তিকের তাহলে সেই লাশের কদর দিগুন বেড়ে যায়! তখন আন্দোলনকারীদের মনোভাব এমন যেন এমন একটা লাশই তারা খুজতেছিল, তাদের আন্দোলনকে আরও গতিময় করার জন্য! যেন লাশ বিহীন আন্দোলনে কোন ছন্দ নেই! আন্দোলনে ছন্দ ফিরিয়ে আনতে, আন্দোলনকে আরও চাঙ্গা করতে আরও নতুন কিছু শ্লোগান তৈরি করতে যেন লাশের কোন বিকল্প নেই! তাই এইরকম আরও কিছু লাশ হলে মন্দ হয় না! আর যদি সেই লাশ টি হয় কোন নাস্তিকের, তাহলেতো আর রক্ষা নেই! পারলে যেন আমাদের সমাজের চুষিলরা সেই লাশ টিকে আর একবার লাশ বানিয়ে ছেড়ে দেয়! যদিও এই নাস্তিকের লাশ হওয়াটার কারন এই আন্দোলন, তারপরেও অনেকেই বলবেন, এই লোক নাস্তিক ছিল কিনা জানিনা, তবে সে কখনোই আমাদের আন্দোলনের সাথে জরিত ছিলোনা! তাঁকে আমরা চিনিনা! সে মরেছে তার কুকর্মের জন্য! যদিও আমরা হত্যা কে সমর্থন করিনা! সেই একই লাশ, একই রক্ত, একই শরীর! একই ভাবে একই কারনে খুন করা হয়েছে! অথচ ধর্মীয় মতপার্থক্য থাকার কারনে আমরা দুই ধরনের কথা বলতেছি! কিন্তু কেন? প্রশ্নের উত্তর খুব সোজা! আন্দোলনকে টিকিয়ে রাখার জন্য! লাশ টা একজন নাস্তিকের ছিল, এবং সেই নাস্তিক জীবিত অবস্থায় আন্দোলনের সাথে জরিত ছিল, এই কথা যদি একবার জামাত শিবির প্রমাণ করতে পারে তাহলে আবার তারা এই আন্দোলনের বিরুদ্ধে সাধারন মানুষদের কে দার করিয়ে দিতে সক্ষম হবে! তারমানে আমরা যাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতেছি আবার তাদেরকেই পূজা দিয়ে চলতেছি! ভয়ে নম নম রাম রাম করতেছি! তাহলে আন্দোলনের কি দরকার? আন্দোলনের বিরোধী শক্তি সারাজিবন ছিল, থাকবে! তাইবলে প্রতিপক্ষ কে ভয় করে চলবো কেন? এই আন্দোলনের মানে টা কি? ভয় পেয়ে ঘরের কোনায় লুকিয়ে লুকিয়ে ফিস ফিস করে জয় বাংলা বলে আন্দোলন কখনো সফল করা যায়না! বরং নিজের দুর্বলতাই শত্রুপক্ষের কাছে প্রকাশ পায়! তাই এইভাবে লুকিয়ে বাচার চেয়ে চুটিয়ে একদিন বেচে থাকা অনেক ভালো! ঠিক তখন আমি ভুলে যাই, আমি জানি কাদের বিরদ্ধে আন্দোলন করছি? কাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে যেয়ে আমার নাস্তিক ভাইটা যেন নির্মম ভাবে খুন হল? মৃত্যুর পর আমার ভাইয়ের পরিচয় পাওয়া গেল আমার ভাই একজন নাস্তিক ছিল! কিন্তু জীবিত অবস্থায় যখন আমার এই নাস্তিক ভাই নিষ্ঠার সাথে আন্দোলনের সাথে জরিত ছিল, অফলাইন, অনলাইনে মুখে, কীবোর্ডে শ্লোগানের ঝর তুলত, তখন কেও আমার ভাইয়ের পরিচয় খুজতে যায়নি! কেও জানতে চায়নি এই বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর টা কি কোন নাস্তিকের, না কি আস্তিকের? আমরা শুধু লাশ নিয়ে খেলতে জানি আন্দোলন করতে জানি। তাই একটা লাশ পড়লে আমাদের অনেক ভালো হয়। যে মায়ের বুক খালি হচ্ছে, যে ভাই তার ভাই কে হারাচ্ছে! তাদের কে আমরা কিভাবে সান্তনা দেই? তোমরা দেশের তরে তোমাদের মহামূল্যবান জীবন দান করেছ, উৎসর্গ করেছো। তাই তোমাদের এই আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত ফল আজ আমরা ভোগ করবো ঠিকই কিন্তু এর মিষ্টি স্বাদ আমরা উপলব্ধি করতে পারবো কি? কিভাবে পারবো বল? মিষ্টি তৈরি করতে যে পরিশ্রম, যে তিক্ততা সেটা তো তোমরা তোমাদের রক্ত দিয়ে ধুয়ে মুছে পরিস্কার করে গেছ!আমরা সত্যিই পারবোনা উপলব্ধি করতে ! ৭১ এর পরেও পারিনি, আজও পারবোনা! যদি পারতাম, তাহলে তোমাদের লাশ কে আজ কেও নাস্তিক ট্যাগ লাগিয়ে অবহেলা অবজ্ঞা করতে পারতোনা! তোমাদের সৃতির চিহ্ন শহীদ মিনারে গিয়ে কেও ভাঙচুর করতে পারতোনা! তোমার রক্তে অর্জিত ঐ লাল সবুজের পতাকা কেও অবমাননা করার সাহস পেতনা! আমরা সত্যিই মিরজয়াফরিও জাতি! আমরা শুধু অর্জিত ফল ভুগ করতেই জানি, অর্জন করতে জানিনা, অর্জিত ফল সংরক্ষণ করতেও জানিনা! কেও ফল ছিনিয়ে নিয়ে গেলে শুধু ঘরের কোনায় বসে বসে চিল্লাইতে পারি!

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।