আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এমন দুঃসহ মুহুর্ত যেন আর কোন সন্তানের জীবনে না আসে...

চাচা চৌধুরীর মগজ কম্পুটারের চেয়েও প্রখর
এমন আনন্দ আর গর্বের দিনেও চারিদিকে শূন্যতা আর হাহাকার। আজ এই গর্বভরা ফলাফলে যে মানুষটি সবচেয়ে বেশী গর্বিত আর আনন্দে আত্নহারা হত তিনি যে তাদের মাঝে নেই। সেই শূন্যতায় কুঁড়ে কুঁড়ে শেষ করে দিচ্ছিল কিশোরী সাদিয়া নুর পরমা এবং তার পরিবারকে। বাবার বড় আশা ছিল মেয়েকে ডাঃ বানাবেন। যেনতেন ডাঃ নয় একেবারে গ্রাম বাংলার মাতি ও মানুষের ডাঃ।

বাবার অনেক কষ্ট আর শ্রমে বড় মেয়ে সানজিদা নুর পুনম সিএ (চার্টার্ড একাউনটেন্সি) পড়ছিল। বড় মেয়ে বাণিজ্য শাখাতে যাওয়ায় মেঝ মেয়েকেই তিনি ডাঃ বানাবেন সেই স্বপ্নের জাল বুনতে থাকেন। কিন্তু আচমকা এক জড়ে তার সেই স্বপ্ন নিভিয়ে দেয়। এলেমেলো করে দেয় পুনম-পরমা-উপমাদের সুখ। বলছিলাম গত ৮ অক্টোবর ২০১০ এ একদল সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলা জনপ্রিয় তরুণ চেয়ারম্যান ও বনপাড়া পৌর বিএনপির সভাপতি সানাউল্লাহ নুর বাবু এবং তার পরিবারের কথা।

বাবু একজন প্রফেশনাল রাজনীতিবিদ হলেও পরিবারের প্রতি তার ছিল তীক্ষ্ণ নজর, বিশেষ করে সন্তানদের লেখাপড়ার প্রতি তার আগ্রহ ছিল পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপুর্ন বিষয়। আর সে কারনে কিনা তার সবগুলো মেয়েই পড়ালেখায় কৃতিত্বের ছাপ রাখছিল। বড় মেয়ে পুনম এসএসসি, এইচএসসি দুটোই পেয়েছিল জিপিএ ৫। আর যখন পরমার এসএসসি পরীক্ষার টেস্ট চলছিল তখন মারা যায় বাবু। তাই মেয়ের এই সোনালি আর গৌরবময় কৃতিত্ব বাবু দেখে যেতে পারেনি।

এবারের এসএসসি পরীক্ষায় বাবুর মেজ মেয়ে স্থানীয় বনপাড়া সেন্ট যোসেফ উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী সাদিয়া নুর পরমা বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে। এমন রেজাল্টে যখন সারাদেশের সকল বাড়িতে উৎসব আর আনন্দ ছড়িয়ে পড়েছে তখন বাবুর বাড়িতে চলছিল শোকের আর বেদনার আহাজারি। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ফল শোনার পর পরমাদের বাড়িতে কান্নার রোল পড়ে যায়। আনন্দ তাদের স্পর্শ করতে পারেনি। নিহত বাবার কথা মনে হওয়ায় পরমার মন বিষাদময় হয়ে ওঠে।

বাড়ির একেবারে ছোট্ট সদস্য বাবুর ছোট মেয়ে সুরাইয়া নুর উপমা যে কিনা সবে প্রথম শ্রেণীতে পড়ছে সেও বোনদের সাথে কান্না করছে বাবাকে হারানোর শোকে। অন্যদিকে বাড়ির একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটিকে হারিয়ে রাস্তার ভিখারি হয়ে পড়েছেন বাবুর স্ত্রী মহুয়া নুর কচি। তিন তিনটি মেয়ের লেখাপড়ার খরচ আর পরিবারের ব্যয় নির্বাহ করতে গিয়ে বাবুর স্বপ্ন মেজ মেয়ের ডাঃ পড়ানো দিনে দিনে দুঃস্বপ্নে পরিনিত হচ্ছে। বনপাড়ার লোকদের কাছে গিয়ে বাবুর কথা জিজ্ঞাসা করলেই জানা যায় ব্যক্তিজীবনে বাবু কি পরিমান সৎ আর নীতিবান ছিলেন। যার কারনে বাবু তেমন কোন সম্পদ রেখে যেতে পারেনি পরিবারের জন্য।

বাবু নিজেও হয়তো ঘুণাক্ষরেও ভাবেননি যে এভাবে চরম অসহায় অবস্থায় পরিবারকে ফেলে তাকে দুনিয়া ত্যাগ করতে হবে। আশা করছি বাবুর এই চরম ত্যাগ যে দলটির জন্য সেই জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি তার পরিবারের পাশে গিয়ে দাঁড়াবে একেবারে আপনজনের মত করে। কারন জাতীয়তাবাদী চেতনাধারী এই তরুণ নেতার রেখে যাওয়া তিন মেধাবী সন্তান একদিন দেশ ও জনগণ তথা জাতীয়তাবাদী শক্তির জন্য এক অমূল্য সম্পদে পরিনিত হবে সেটা এখনি বলে দেয়া যায়। সবিশেষে পুনম-পরমা-উপমাদের জন্য শুভকামনা আর ভালবাসা রেখে বলতে চাই রাষ্ট্র ইতিমধ্য তোমাদের প্রতি তার চরম উদাসীনতা দেখিয়েছে এখন যদি তোমার বাবার ভালবাসার দলটিও সেরকম করে তবে আমরা হাজারো ভাই তোমাদের পাশে দাড়াতে প্রস্তুত আছি। আমরা তোমাদের আর বাবুর স্বপ্নকে বৃথা যেতে দিবনা।


 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।