আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঘর বাঁধার স্বপ্ন



ঘর বাঁধার স্বপ্ন শাহেদের বাবা এলাকার সম্ভ্রান্তশালী লোক। বিস্তর জমি-জমার মালিক। গভর্মেন্টের লোকের কাছে তার ভাল কদর আছে। কারণ এলাকার ঘুষখোর অফিসারদের চাঁদা এবং উত্তম-মাধ্যমের হাত থেকে প্রায় সময়ই সে রক্ষা করে। শাহেদের বাসা এমন জায়গায় যেখানে ঘর তুলতে দেরি, ভাড়াটিয়া পেতে দেরি না।

পাঁচ ঘর ভাড়াটিয়াদের মধ্যে লোপারাও শাহেদের ভাড়াটিয়া। লোপার বাবা ভূমি অফিসের কানুনগো। তার বাম হাতের ব্যাপার নিয়ে লোক সমাজে বেশ কানাঘুষা আছে। তার নাকি শহরে বিশাল অট্রালিকা, ব্যাংক ব্যালেন্সও বড় অংকের। সবই ঘুষের টাকায়।

শাহেদ ঘরকুনে ছেলে। সারাদিন লেখা-পড়া নিয়ে ব্যস্ত থাকতেই বেশ পছন্দ করে। তবে স্কুলে কম যায়। কোথায় বেড়াতে যেতেও চায় না। এই গুণের কারণে অনেকেই তাকে বাড়িতে দেখতে আসে।

লোপারা যখন শাহেদদের বাসায় আসে তখন লোপা পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী। শাহেদ সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র। শাহেদ কখন যে লোপার সাথে কথা বলা শুরু করেছে তার ইতিহাস স্মরণ নাই। তবে এখন তারা প্রায় দিনই অবসর সময়টা ষোলগুটি খেলে কাটায়। বন্ধুদের মাঝে শাহেদকে নিয়ে লোপা সম্পর্কে একটি চাপা গুঞ্জন ছড়িয়ে গেছে।

শাহেদ, লোপা সম্পর্কে বন্ধুদের মাঝে গল্প শুনতে বেশ মজা পায়। বন্ধুরা লোপার চেহারার খুব প্রসংশা করে। শাহেদের পছন্দ আছে বলে তারিফ করে। লোপা তার সমবয়সী মেয়েদের চেয়ে একটু বেশী বাড়ন্ত। তার এই বেশী বাড়ন্তের কারণে স্কুলে সমবয়সীদের মাঝে প্রাধাণ্য বেশী।

যে কোন অনুষ্ঠানে তাকে নেতৃত্ব দিতে দেখা যায়। এসব কাজে তাকে মানায় ভাল। শাহেদকে ভাল ছাত্র হিসেবে বিদ্যালয়ের কিছু কিছু কাজে নেতৃত্বে রাখা হয়। বিশেষ করে ২৬শে মার্চ এবং ১৬ই ডিসেম্বর মাঠে কুচকাওয়াজে ব্যন্ড দলের নেতৃত্বে রাখা হয় তাকে। সে নেতৃত্বের দন্ডটা ভাল করে ঘুরাতে পারে।

লোপাও তার বিদ্যালয়ের একই দ্বায়িত্ব পালন করে। পুরস্কার বিতরণের সময় তারা নিজ নিজ বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে পুরস্কার গ্রহন করে। প্রায় সময়ই শাহেদ আর লোপার সাথে তর্ক হয়। শাহেদ বলে- “তোমাদের দ্বিতীয় পিটিটা ভাল হয় নাই। ” লোপা বলে- “আপনাদের পিটিতে পুরস্কার পেয়েছেন ভাগ্যে।

” শাহেদ বলে- “তোমাদের ডিসপ্লেটা এ রকম না হয়ে ও রকম হলে ভাল হতো। ” লোপা বলে- “আপনাদের ডিসপ্লেটার ওই জায়গাটা দিয়ে ভুল হয়েছে। ” এভাবে তর্ক করতে করতে এক সময় তাদের তর্কের আসর অমীমাংশিতভাবে শেষ হয়ে যায়। শাহেদের সাথে লোপার বড় ভাইর সম্পর্ক বন্ধুর মত । তারা প্রায় দিনই এক সাথে বসে টিভির অনুষ্ঠাণ দেখে।

লোপাও তাদের সাথে থাকে। লোপা আর শাহেদের মাঝে যে তর্কের আসর বসে তা তার বড় ভাইর জানা। হঠাৎ একদিন লোপার বড় ভাই শাহেদকে টিভির রুমে হাসতে হাসতে বলল- “লোপা তোমার এখানে টিভি দেখাটাকে একদম পছন্দ করে না। ” এই কথা শুনে শাহেদ বেশ রেগে সাথে সাথেই সেখান থেকে চলে গেল। লোপার মা ব্যাপারখানা বুঝতে পারলো।

শাহেদ যখন টিভি দেখা রেখে পড়ার টেবিলে এসে জোড় করে পড়ার চেষ্টা করছে তখন লোপার মা হাতে ধরে আদর করে আবার টিভি রুমে নিয়ে বসিয়ে দিল। যখন অভিমান ভাঙ্গে, লোপার দিকে আড়চোখে তাকায় কিন্তু তার দৃষ্টি তখন নাটকের দিকে। এভাবে লোপা আর শাহেদের দিনগুলো অতিবাহিত হচ্ছে। দিনে দিনে তাদের বয়সও বাড়ছে, বোঝার মাত্রাও বাড়েছে । তাদের ছোট বেলার ঘনিষ্ঠতারও দিন দিন দূরত্ব বাড়ছে।

আগে যেখানে তাদের স্কুল নিয়ে তর্ক-বিতর্ক হতো, টিভির অনুষ্ঠান নিয়ে হাসি-তামাশা হতো, দু’জনে ষোলগুটি খেলতো, তুচ্ছ বিষয় নিয়ে তর্ক-বিতর্কের ঝড় বইতো এখন সেখানে গুরুত্বপূর্ন বিষয় নিয়েও আলোচনা হয় না। শাহেদ মাধ্যমিক পাড় হয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে আর লোপা মাধ্যমিকের শেষ পর্যায়ে। যখন ঘুম না আসা জোস্না রাতে জানালা দিয়ে শাহেদ বাহিরে চেয়ে থাকে তখন কেবলই লোপার প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠে। চিন্তা করে লোপার কি এই রাতে তার কথা একবারও ভাবনায় আসে না। শাহেদের জীবনে যৌবনের একটি ছোয়া লেগেছে।

দু'টো বিপরীত লিঙ্গ মানুষের মধ্যে ভালোবাসার যে আকর্ষণ তাতে শাহেদের মন একটু বেশী উতলা। সে লোপাকে ভালোবেসে ফেলেছে। এই সহজ বক্তব্যটি লোপার নিকট প্রকাশ করা কোন ব্যাপারই না কিন্তু কি জানি এক সংশয় শত চেষ্টা করেও তা প্রকাশ করতে দেয় না। তার ঘনিষ্ঠ কয়েকজন বন্ধুর নিকট যুক্তি চাইলে তারা লোপার কাছে ভালোবাসার কথা প্রকাশ করার সাহস জোগায়। একদিন বন্ধুদের কথার উপর বিশ্বাস রেখে তার মনের কথা লোপার নিকট প্রকাশ করলো।

লোপা মৌন ছিল। একটি কথাও বলতে পারে নাই। শাহেদও লোপার নিকট বেশীক্ষণ অবস্থান করতে পারে নাই। লোপার মৌনতাই শাহেদের আশায় আলো। শাহেদের কাছে আজ রিকশার ঝাকানী, মাটির রাস্তার কাঁদায় হাটা, ময়লা পুকুরের পানিতে গোসল করা, খাবার টেবিলে দেরিতে খাবার আসা কোনটাই বিরক্তির কারণ হলো না।

বরঞ্চ টিনের চালা দিয়ে ফোটা ফোটা বৃষ্টির পানি পড়া, প্রজাপতির গাছের পাতায় অবস্থান করা সবই তার দৃষ্টিতে সুন্দর হয়ে ধরা দিল। সংসারের কাজ করা, কারো আদেশ পালন করায় তার যেন কোন ক্লান্তি নেই। শাহেদের বাবার বংশ মর্যাদার কাছে কোন মানবতা নেই। শাহেদ আর লোপার সম্পর্কের কথা এক সময় এক কান, দু’কান হতে হতে শাহেদের মায়ের কানে গেল। শাহেদের মা, তার বাবার বংশ মর্যাদা রক্ষার প্রকৃত সমজদার।

শাহেদকে প্রথমে এই ব্যাপারে সতর্ক করে দিলো এবং তার বাবার কানে এই ব্যাপারে কিছুই দিবে না বলে আশ্বস্ত করলো, যদি ব্যাপারটা এখানেই ইতি হয়ে যায়। প্রেমের বাঁধনে একবার যে বাঁধা পড়ে আর সে প্রেম যদি হয় খাটি তাতে মরনেও ভয় নাই। শাহেদ আর লোপার প্রেম পারিবারিক বাঁধার কারণে আরো গভীর, আরো দৃঢ় হতে থাকলো। গোপনীয়তা প্রকাশের অপেক্ষায় থাকে। এখন তাদের ছোট-খাট ব্যাপারও সকলের চোখে প্রেমের সন্দেহের বিষয় হয়ে দাড়ালো।

বিশেষ করে শাহেদের মা যাদের চর হিসেবে নিয়োগ করেছে তাদের কাছে। এক সময় ব্যাপারটি ঠিকই শাহেদের বাবার কানে পৌঁছলো। তার কানে গেলেও সে বিষয়টি জানে না এ রকম ভান করে থাকত। একদিন খাবার টেবিলে বসে শাহেদকে বিশ্বভারতীতে পড়াতে পাঠাবে এই সিদ্বান্ত দিল। শাহেদের মতামত জানতে চাইলে সে ভয়ে না-হয় কিছুই বলতে পারে নাই।

শেষে তাকে কলিকাতা যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিয়ে গেল। শাহেদের মন খারাপ। সে এখন কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। তার মার কাছে ভারত যাওয়ার ব্যাপারে অনাগ্রহের কথা প্রকাশ করলো। তার মা বিশ্বভারতীতে পড়ার সুফল সম্পর্কে তাকে অনেক বুঝাল।

সেখানে থেকে পড়া-লেখা করা যে বেশ ভাল একথা সেও বুঝে কিন্তু মন যে একেবারে সেদিকে টানছে না। এখন কি করা যায় ? সেদিন অনেক কষ্টে সে লোপার সাথে দেখা করে। ব্যাপারটি লোপাকে খুলে বলে। সে শুনে তাকে বিশ্বভারতীতে পড়তে যাওয়ার যুক্তি দেয় কিন্তু শাহেদ এতে কিছুতেই রাজি না। শাহেদ লোপাকে তার সাথে দূরে কোথায়ও চলে যাওয়ার প্রস্তাব দেয়।

লোপা প্রথমাবস্থায় রাজি হয় নাই। পরে অনেক বুঝানোর পর রাজি হয়েছে। একদিন লোপা তার চাচা বাড়িতে বেড়াতে এলে সেখান থেকেই দু’জনে পালিয়ে যায়। চারদিকে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়লো লোপা আর শাহেদকে নিয়ে। শাহেদের বাবা ছেলের কোন খোঁজই নিলেন না।

লোপার বাবা-মা মেয়ের খোঁজ নেমে গেল। অনেক খোঁজা-খুঁজির পরও তাদের কোন সন্ধান পাওয়া গেল না। লোপার বড় ভাই তাকে অবাঞ্চিত ঘোষনা করলো কিন্তু বাবা-মার চোখের পানি থামলো না। পালিয়ে আর কোথায় যাবে, গিয়ে উঠলো তাদের দূরসম্পর্কের এক মামা বাড়িতে। সেখানে মামাকে তাদের অবস্থার কথা জানালো।

মামা বেশ আমোদপ্রবণ। সে পরের উপকার করতে নিজের কিছু ত্যাগ করতেও দ্বিধা করে না। তাদেরকে আশ্রয় দিল। বাড়িতে মেহমান আসা উপলক্ষ্যে ঘটা করে খাবার-দাবারের আয়োজন করলো। বাড়িতে নতুন বউ এসেছে এই উপলক্ষ্যে বাড়ি সাজানো, গারেন আসর ইত্যাদি আনন্দের মহা আয়োজন।

বাড়িতে বাহিরের লোকের আনা-গোনায় মুখরিত আনন্দঘন পরিবেশে কেটে গেল কয়েকদিন। আস্তে আস্তে আনন্দের ভাটা পড়ে আগের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসলো। এক বাড়িতে বেশী দিন বেড়ালে, বসে বসে খেলে দু’চার কথা মাঝে মধ্যে গৃহ সদস্যদের কাছ থেকে শুনতে হয়। সে রকম কিছু ব্যাপার ঘটলো। তবে মামাটা ভাগ্নের জন্য ত্যাগী মানুষ।

ভাগ্নেকে নিয়ে সে একটি নতুন ব্যবসায় নামবে। বর্তমানে মুরগী ফার্মের ব্যবসাটা বেশ লাভজনক। এ ব্যাপারে শাহেদও তাকে বেশ সাহস জোগাচ্ছে। ফার্মের জন্য বিভিন্নভাবে টাকা জোগাড়ের ধান্দায় ব্যস্ত এখন মামা। কয়েকদিনের মধ্যে ফার্মের কাজ শুরু করেও দিল।

মুরগীর ঘরের ডিজাইনের জন্য উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তাকে দাওয়াত করে একবেলা ঘটা করে খাওয়ানো হলো। একদিনের বাচ্চা উঠানোর আগে ঘরের আশে-পাশের গাছের ডাল-পালা কেটে দেওয়া হলো যাতে ঘরে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস যাতায়াত করতে পারে। রোগ-জীবানুর হাত থেকে মুরগীকে রক্ষা করার জন্য পটাশ মিশ্রিত পানি ছালার চটের সাথে ভিজিয়ে দরজার কাছে রাখা হলো। ফার্মের ভিতরটা ফিউমিগেশন করা হলো। এভাবে ফার্মের কাজ চলতে লাগলো।

এদিকে লোপার বাবা-মা শাহেদের বাসা ছেড়ে নতুন বাসায় উঠে। নতুন বাসায় উঠে একদিনও সেখনে থাকে নাই। এদিক-ওদিক খোঁজাখুঁজির পর শেষে লোপাদের সন্ধান পায়। লোপা ও শাহেদকে পেয়ে তার মা বেশ কান্নাকাটি করে। তাদের দু’জনকেই বাড়িতে ফিরে আসতে বলল।

প্রথমাবস্থায় শাহেদ কিছুতেই রাজি হলো না। যখন সিদ্বান্ত হলো লোপার বাবা-মা শহরে থাকবে তখন যেতে রাজি হলো। লোপার বাবা-মা বাসা ভাড়ার কাজে শহরে গেল। এদিকে মামা মুরগীর ফার্মে একদিনের বাচ্চা উঠালো। মুরগীর খাবারের এবং অন্যান্য সবকিছুর যোগানই ঠিকমত ছিল কেবল সঠিক তাপমাত্রার অভাবে একরাত্রে ফার্মের অর্ধেক মুরগী বাচ্চা মারা গেল।

সকলের মাথায় হাত পড়লেও মামা একটুও বিচলিত হলো না। সে নতুন উদ্যমে আবার কাজ শুরু করলো। লোপা এবং শাহেদকে নেওয়ার জন্য লোপার বাবা এসে হাজির। তাকে দেখে মামার মন কিছুটা দমে গেল। সে শাহেদকে না যাওয়ার জন্য পরামর্শ দিল।

এতে শাহেদ কি করবে ভেবে সিদ্বান্ত নিতে পারছে না। শাহেদ লোপাকে ব্যাপারটা জানালো। লোপা শাহেদকে তার বাবার সাথে যাওয়ার পরামর্শ দিল। সে বুঝালো এই পরিবেশে তুমি নিজেকে বেশীদিন খাপ খাওয়াতে পারবে না। বাবার সাথে চলে যাওয়াই আমাদের ভাল হবে, সে আমাদের একটি গতি করে দিবেনই।

শাহেদও এই যুক্তি ভাল মনে করলো। সে এই ব্যাপারটি মামাকে বুঝিয়ে বললে, মামা আর দ্বিমত করলো না। শাহেদ আর লোপা তার বাবার সাথে চলে গেল। এদিকে শাহেদের বাবা তাদের খোঁজ-খবরতো দূরের কথা এতদিনে তার নামটি পর্যন্ত উচ্চারণ করে নাই। তার ভয়ে শাহেদের মাও ছেলের সম্পর্কে কোন টু শব্দও করে না।

তবে গোপনে লোক পাঠিয়ে ছেলের খোঁজের চেষ্টায় আছে। শাহেদকে তার শ্বশুর কয়েক লাক্ষ টাকা খরচ করে শহরে একটি মনিহারির দোকান করে দিল। সেও স্থির হয়ে দোকানে বসে গেল। এখন শাহেদ ও লোপার দিনগুলো ভাল ভাবেই কাটছে তবে মাঝ মধ্যে শাহেদের বাবা-মা কথা মনে পড়ে। তাদের দেখার জন্য মন ছটফট করে।

দেশীয় কোন লোক দেখলেই তাদের কথা জিজ্ঞসা করে। তার খোঁজ-খবর নেয় কিনা জানতে চায়। তার মা যে তার খোঁজ-খবর নেয় একথা সে জানে। তার জন্য মাকে দোয়া করতে খবর পাঠায়। মাঝে মাঝে মার জন্য কিছু কিনেও পাঠায়।

এইতো সেদিন গুড়া দুধের বড় এক ডিব্বা মায়ের জন্য পাঠিয়ে দিলো এবং যা কাছে পাঠিয়েছে তাকে বলে দিল এটা যে তার বাবা জানতে না পারে। এভাবে দিনের পর দিন অতিবাহিত হচ্ছে কিন্ত শাহেদের বাবার পক্ষ থেকে কোন প্রকার সহানুভূতির খবরও শাহেদের কাছে আসছে না। শাহেদ বাড়িতে গিয়ে তাদের দেখে আসার সাহসও পাচ্ছে না। একদিন তাদের বাসার চাকর আবুল মার হাতের রান্না করা খাবার নিয়ে দোকানে হাজির। সেদিন শাহেদ যে কি খুশি হয়েছে তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।

সে আবুলের কাছে বাড়ির সব খুঁটিনাটি বিষয় জানলো এবং এও জানতে পারলো তার বাবা তার সম্পর্কে ঘরে কোন প্রকার কথাই বলে না। অর্থাৎ তার উপর রাগ এখনও কমে নাই। শাহেদ আবুলের কাছে মার জন্য অনেক কিছু কিনে পাঠিয়ে দিল এবং যাওয়ার আগে আবুলকে বেশ করে খাইয়ে দিল। মার পাঠানো খাবার নিয়ে শাহেদ বাসায় গেল। ব্যাপারটা লোপাকে জানালো, শ্বশুর-শ্বাশড়ী সবাই জানলো এবং সবাইকে একসাথে নিয়ে খেতে বসলো।

সকলে বেশ মজা করে খেল। একদিন দোকানে বসে একটি দৈনিক পত্রিকা নিয়ে শাহেদ প্রত্যেক পাতার প্রধান প্রধান খবরগুলো পড়ছে এর মধ্যে এক জায়গায় এসে তার চোখ আটকে গেল। তার ছবি সম্বলিত ‘ত্যাজপুত্র’ নামে একটি নোটিশ তাকে চিরতরে বাপের ভিটা থেকে বঞ্চিত করলো। এই ঘটনার পর দুংখে , ঘৃনায় , লজ্জায় সে তার বাবার মরার খবর পেয়েও যায় নাই। এর কিছুদিন পর যখন মায়ের মৃত্যুর খবর পায় তখন আর না যেয়ে পারে নাই।

তার ছোট ভাই রিমন এবং বোন রুবি তাকে জড়িয়ে বেশ কাঁদলো। শাহেদ আজীবন বাবার সম্পত্তি থেকে নিজেকে সম্পূর্ণ বিমুখই রাখল।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।