আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফকির মা



ফকির মা আমাদের এলাকায় এক মহিলা ফকিরের আবির্ভাবে যেন হৈহৈ-রৈরৈ কান্ড। তার জহুরায় নাকি অনেকেই অনেক কঠিন রোগ থেকে আরগ্য লাভ করছে। তার দর্শন পেতে আগেই লিস্টে নাম লিখাতে হয়। লিখানোর এক দু’দিন পর ডাক পাওয়া যায় সাক্ষাতের জন্য। তাকে সম্মান করে সকলে ‘ফকির মা’ বলে ডাকে।

আমাদের স্কুলের ইসলাম শিক্ষার শিক্ষক, যাকে এলাকার সকলে ‘টনটনি’ হুজুর নামে জানে। ‘টনটনি’ উপাধীটা এসেছে নাকি সে বেশ লস্বা, চিকন এবং বেশী কথা বলে তাই। কিন্তু এসবের সাথে ‘টনটনি’ শব্দটার যোগ কোথায় এবং এর সঠিক অর্থইবা কি তা আমি শত চেষ্টা করেও উদ্বার করতে পারি নাই। সে একদিন আমাকে জিজ্ঞাসা করলো- “কিরে তোদের বাড়ির নিকটে নাকি এক মস্তবড় ফকির মা এসেছে ? তার ছোয়ায় নাকি অনেকেই কঠিন বালা-মছিবত, রোগ-শোক থেকেও মুক্তি পাচ্ছে?” “তাইতো শুনি হুজুর। ” “কেবল শুনিসই , দেখিস না কিছু?” “দেখব কিভাবে হুজুর! আমি যে তার ধারে-কাছে যাই নাই।

” “বলিস কিরে! মক্কার মানুষ তাহলে কি হজ্জ্ব পাবে নারে?” “হুজুর, আমার শরীরে কোন রোগ নাই ; যাই কি করে?” “আরে, রোগ আসতে কি আর দেরিরে। রোগ যে না আসে তারই ব্যবস্থা কর না। শোন, আজ স্কুল ছুটির পর আমি যাচ্ছি ফকির মার কাছে। তুই যাবি আমার সাথে। ” বিকালে সেই মহিলা ফকির মার বাড়িতে গেলাম।

গিয়ে দেখি, হাট বসেছে বাড়ির ভেতর। কে এক উচ্চ স্বরে লিস্টের সিরিয়াল দেখে নাম ডাকছে আর একটি ছোট্র ঘরে ঢুকিয়ে দিচ্ছে। ঘরটার চারপাশে সাদা কাপড় দিয়ে মোড়ানো। বাহির থেকে ঘরের ভিতরের কিছুই দেখা যায় না। হুজুরে আগেই একজনকে দিয়ে নাম লিখিয়ে রেখেছিল।

নাম ডাকতেই আমাকে সাথে করে ঘরের ভেতরে ঢুকে গেল। ঢুকেই সামনে দেখলাম এক কৃষ্ণ বর্ণের রোগামত মহিলা। মাথায় সাদা কাপড় দেওয়া। একটি ইজি চেয়ারে চোখ বুজে বসে আছে। আমরা তার সামনে সাদা রংয়ের একটি বৃত্তের মধ্যে এসে দাড়াতেই সে চোখ খুললো ।

জিজ্ঞসা করল , “রোগী কে?” হুজুর জবাব দিল - “আমি”। “বিশবার কানে ধরে উঠাবসা কর”। হুজুর কিছু বুঝে উঠতে না পেরে ডানে-বায়ে তাকালো। কিছু জিজ্ঞাসা করবে ওমনেই ফকির মার জোড়ে ধমক- “কি বলছি শুনতে পাচ্ছ না ? বিশবার কানে ধরে উঠ আর বস। ” এবার হুজুর বুঝতে পারলো, তাকেই কানে ধরতে বলা হচ্ছে।

আমার সামনে বিশবার কানে ধরে উঠলো আর বসলো। শীতেও তার নাকে ঘাম জমে গেল। আমি বেশ মজা পেলাম। মনে মনে ভাবলাম, “কানে ধরার মজা কি এখন বুঝেন হুজুর, ক্লাসে আমাদেরও এভাবে কানে ধরান। ” এবার হুজুরকে এককাপ দুধ খেতে দিল।

তারপর একটি খেজুর তাকে এবং আরেকটি খেজুর আমাকে খেতে দিল। পরে আদেশ হলো পেছনের ডোবায় দশটা ডুব দেওয়ার। হুজুর আমতা আমতা করে বলল- “আ-মা-র অসুখটা হলো তলপেটে মাঝে মাঝে প্রচন্ড ব্যাথা করে এবং শরীরে শক্তি পাই না। ” “যা বলছি তা করে এখান থেকে বিদায় হও। ” হুজুর কিছুক্ষণ হতাশভাবে একদিকে চেয়ে থাকল।

দ্বিতীয় কোন উপায় খুঁজে না পেয়ে একটি লুঙ্গি পড়ে শীতের মধ্যে দশটা ডুব দিল। উঠে শীতে ঠকঠক করে কাঁপতে লাগলো। আসার সময় ফকির মার পারসানল সেক্রেট্যারির কাছে পাঁচশত টাকার একখানি নোট দিয়ে বলল, “আমার আর কি করা লাগবে?” “আপনাকে আর কিছুই করতে হবে না। যা করেছেন তাতেই আপনার মুশকিল আছান হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ্। তবে পাঁচ/ছয় দিন পরে একজোড়া নারিকেল এবং কবুতর নিয়ে আবার ফকির মার সাথে দেখা করে যাবেন।

তাতে আপনার ভাল হবে। ” হুজুরকে হাতে ধরে রাস্তা পর্যন্ত এনে একটি রিকশায় চড়িয়ে দিলাম। পরের দিন অসুস্থ্যতার কারণে হুজুর স্কুলে আসতে পারে নাই। ফকির মার কাছ থেকে গিয়েই তার প্রচন্ড জ্বর এসেছে। আমার মা, ফকির মার একজন অন্ধভক্ত।

আমি মাঝে মধ্যে পড়া ফাঁকি দেওয়ার জন্য, “আমার শরীর খারাপ লাগছে, প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করছে” এ রকম মিথ্যা অজুহাত দেখাতাম। এতে সেদিনের মত পড়া থেকে রেহাই পেতাম। আমার মা বলতো, “এ নিশ্চয়ই তাবিজ-তুমারের কাজ। আমার ছেলের অনেকে ভাল চায় না। আমার ছেলে ভাল ছাত্র, আস্তে আস্তে জীবনে উন্নতি করছে এটা অনেকের চক্ষুশূল।

কয়েকদিনে দেখছি ছেলে অনেক শুকিয়ে গেছে। এ নিশ্চয়ই তাবিজের প্রভাব। ” তাই স্থির হলো, আমাকে ফকির মার কাছে নিয়ে যাবে বাজে আছর সারাতে। আমি ফকিরদের একদম বিশ্বাস করি না। তাই প্রথমাবস্থায় ফকির মার কাছে যেতে চাই নাই।

এই যেতে অনিচ্ছাকেও এক ধরনের তাবিজি প্রভাব বলে সন্দেহ করলো মা। একদিন আমাকে জোড় করেই নিয়ে গেল ফকির মার কাছে। তার নিকট আমার অসুখের বিবরণসহ আমার এখানে আসতে অনিচ্ছার কথাও বললো। সব শুনে ফকির মা একটু কি জানি চিন্তা করে বলল- “মাথা নিচের দিকে পাছা উপরের দিকে, পায়ের ভিতরে হাত দিয়ে কানে ধরে পাঁচ মিনিট। ” সে সময় ফকির মার আদেশ পালন করা ছাড়া আর কোন দ্বিতীয় উপায় ছিল না আমার।

তার কথা মত কাজ হলো। পাঁচ মিনিট এভাবে কান ধরে থাকা স্বাস্থ্যের পক্ষে যে কতটা ভাল তা এখন বেশ বুঝি। তারপরের ঔষধ হলো একটি সিদ্ধ ডিম একবারে মুখে দিয়ে খেতে হবে। একবারে খেতে কষ্ট হলেও তাই করতে হলো। তৃতীয় ঔষধ হলো একটি পুকুরের এপাড় থেকে ওপাড় , ওপাড় থেকে এপাড় সাঁতার দিয়ে পার হতে হবে।

শীতের মধ্যে তাই করতে হলো। এরপর ফকির মা যতদিন আমাদের এলাকায় ছিল ততদিন আমি আর মিথ্যা করে কোন অসুখের কথা বলি নাই। এতে আমার মায়ের মনে দৃঢ় বিশ্বাস জন্মালো, এ ফকির মার ঔষধের ফল। এতে ফকির মার প্রতি ভক্তির মাত্রা মার আরো বেড়ে গেল । আমাদের গৃহশিক্ষক, সে ছাত্র হিসেবে ভাল ছিল না।

তার একটি বড় সমস্যা ছিল পড়া সহজে মুখস্ত হতো না। একদিন আমাদের বাসায় ফকির মাকে নিমন্ত্রণ করে আনলো মা। তাকে আনার পিছনে যুক্তি ছিল এ বড় পূর্ণ্যরে কাজ এবং আমাদের ঘরটাও একটু পবিত্র হবে। আমাদের গৃহশিক্ষক এই সুযোগের সৎব্যবহার করলো। তার সমস্যার কথা ফকির মার কাছে ব্যক্ত করলো।

ইতিমধ্যেই ফকির মাকে দেখতে এবং বালা-মুছিবত ও রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ফকির মার দোয়া ও চিকিৎসা নিতে অনেক মানুষ এসেছে আমাদের বাড়িতে। গৃহশিক্ষকের বক্তব্য শুনে, ফকির মা চোখ তুলে তার দিকে একটু তাকাল। তারপর মাথা নিচু করে আদেশ করলো- “কানে ধরে পনেরবার উঠ আর বস”। ফকির মার আদেশ পালন করতেই হবে। স্যারের ছাত্র এবং অনেকগুলো পরিচিত মানুষের সামনে পনেরবার কানে ধরে উঠে আর বসে তার মুখ লজ্জায় লাল হয়ে গেল।

তারপরের আদেশ হলো- এক গ্লাস দুধ পান করা এবং ঘর থেকে বসে ফকির মার দৃষ্টিতে যে ডোবাটি পড়ল তার থেকে এক গ্লাস পানি এনে এক ঢোকে পান করা। সেদিন ঘরে দুধ আনা ছিল না তাই অন্য ঘর থেকে এনে দুধ খাওয়ান হলো। কিন্তু গ্লাস হাতে ডোবার কাছে গিয়ে তার বমি শুরু হয়ে গেল। তবু সেই ডোবার পানি পান করা থেকে তার নিস্তার নাই। ফকির মার আদেশ যে পালন করতেই হবে তা না হলে মহা অপূর্ণ্যরে কাজ হবে আর রোগমুক্তির প্রশ্নই উঠে না।

এ ভাষ্য আমার মার এবং আরো অনেকের। ডোবা থেকে পানি তুলে যখন তার চোখের সামনে ধরা হলো তখন রাজ্যের পোকা গ্লাসের ভিতরে কিলবিল করছে। দেখা স্বত্যেও তা সুদ্বই তাকে গলদ:করণ করতে হলো। এ ঘটনার পর মাসখানেক তার ঘনঘন বমি হত। সে প্রতিজ্ঞা করল, “আমি আর কখনও কোন ফকির নামধারী ব্যক্তির নিকট চিকিৎসার জন্য যাব না তাতে যদি আমার জীবন চলেও যায়।

” এলাকায় আমার এক বড় ভাই । সে পর পর তিন বার এস.এস.সি পরীক্ষায় ফেল করছে। চতুর্থবার পরীক্ষা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সে মাঝে মধ্যে বলে, “কি কারণে যে আমি পরীক্ষায় পাস করতে পারি না তা নিজেই বুঝি না। ” ফেল করার পেছনে তার যুক্তি- “নিশ্চয়ই পরীক্ষায় পাস করা বড় ভাগ্যের ব্যাপার।

” তার চেয়ে অনেক খারাপ ছাত্রও পরীক্ষায় পাস করে যাচ্ছে। কিন্তু সে পাস করতে পারছে না। তাই পরীক্ষায় পাস করার জন্য ফকির মার মুরিদ হয়েছে। ফকির মাকে ‘ফকির’ শব্দটি লুপ্ত করে কেবল মা বলে সম্মোধণ করে। সব সময় ফকির মার সাথে থাকতে চেষ্টা করে।

কেউ কেউ মাকে ভন্ড বলে মন্তব্য করে। মন্তব্যকারীর বিরুদ্ধে এ্যাকশন নেওয়ার চেষ্টা করে। তাই এলাকার কেউ ভয়েও ফকির মাকে ভন্ড বলে মন্তব্য করার সাহস করে না। মার সাথে থেকে সব কাজে সহায়তা করায় মা তাকে পরীক্ষায় পাসের জন্য আশীর্বাদ করে। তার মত আরো দু’একজন আশীর্বাদ পাওয়ার আশায় ফকির মার খেদমতে লেগে আছে।

মা তাদের কলমে পরীক্ষার আগে ফুঁ দিয়ে দিবে। ফুঁ দেওয়া কলম দিয়ে লিখলে নাকি আসল লেখা বেরিয়ে আসবে। পরীক্ষার বেশী দিন দেরী নাই তাই মায়ের কাজে যত ব্যস্ত থাকা যায় ততই মঙ্গল। অধিকাংশ সময়ই মায়ের কাজে এখানে-ওখানে ব্যস্ত থাকতে হয়। পরীক্ষা শুরুর আগের দিন, একান্ত আশীর্বাদ পাওয়ার জন্য ঘটা করে ফকির মাকে নিয়ে বিধাতার কাছে প্রার্থনা এবং খাওয়া-দাওয়ার দুমদাম হয়ে গেল।

পরীক্ষা শুরুর কয়েকদিন আগ থেকেই এলাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে পরীক্ষার্থীরা কলম পড়িয়ে নিতে ফকির মার কাছে ভিড় করছে এবং ফকির মাকে খুশি করতে যে যা পারছে দিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা দেখে এলাকার সকলেই বলাবলি করতে লাগলো এবার এই এলাকার পাসের হার বেশ ভাল হবে। পরীক্ষা শেষ। এবার ফলাফলের প্রতীক্ষা। কেউ কেউ পরীক্ষা খারাপ দিলেও ভরসায় আছে ফকির মার উছিলায় যদি একটা কিছু হয়।

এরকম ভাবতে ভাবতে একদিন ফলাফল প্রকাশিত হলো কিন্তু কাক্সিক্ষত ফলাফল আসলো না। এলাকার একটি পড়ুয়া ছেলে ছাড়া সকলেই ফেল। টেবুলেশন মর্কসিটে দেখা গেল ফকির মার সন্তানের মধ্যে তিনবার ফেল করারা এবারও ফেল এবং তা যেনতেন ভাবে নয়, দশ বিষয়ের মধ্যে আট বিষয়েই ফেল। এক রেজিস্ট্রেশনে পর পর চারবার পরীক্ষা দেওয়া যায়। এবার ফেল করায় আবার পরীক্ষা দিতে নতুন করে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।

স্কুলের শিক্ষকদের ভাষ্য- “গত বছর করেছিল চার বিষয়ে ফেল এবার যে তার মার উছিলায় আট বিষয়ে ফেল মারলো। সব সময় মার খেতমতেই ব্যস্তছিল লেখাপড়া করার সময় পেল কখন, যে পাস করবে। ” এখন এলাকার অনেকেই ফকির মার সম্পর্কে নানা প্রকার কথা-বার্তা বলছে। ফকির মা যে ঘরে টেলিভিশন আছে সে ঘরে প্রবেশ করে না। টেলিভিশন দেখা এবং রেডিও শোনা কঠিন গুনাহের কাজ তাই এগুলো থেকে সকলকে বিরত থাকতে বলে।

তার কলপ পরিস্কার বিধায় চোর, ডাকাতের সন্ধানও দিতে পারে। এক রাত্রে এলাকায় এক বাড়িতে চুরি হলো। বাড়ির কর্তা দ্বিতীয় কোন চিন্তা না করে সরাসরি ফকির মার কাছে গেল। ফকির মা মরা কাবায় বসে বলল- “আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি তোমার বাড়ির আশে-পাশের লোকদের মধ্য কেউ এই কাজ করেছে। সে খুব দুষ্ট প্রকৃতির লোক।

সে অন্য কোন কাজ করে না কেবল রাত্রি হলে এর-ওরটা চুরি করে। আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি, তার নামের প্রথম অক্ষর ‘ম’। ” এই বলে তার ধ্যান ভাঙ্গল। গৃহকর্তা খুশি হয়ে পাঁচশত টাকার একখানা নোট তার সামনে রাখলো। গৃহকর্তা ‘ম’ প্রথম অক্ষর নামে মনি চোরাকেই বুঝলো।

তাই বাড়িতে এসে লোকজন জুটিয়ে মনি চোরাকে তার বাড়ি থেকে ডাকাতি করে আনলো। এলাকার সকলেই এতে সায় দিল কারণ এ ধরনের কাজ মনি চোরাই করতে পারে। এর অনেক প্রমাণও আছে। মনি চোরাকে বাড়ির দরজায় এনে গাছের সাথে বেঁধে বেদম প্রহার করা হলো। মার খেয়ে মনি চোরা বলতে বাধ্য হলো সে চুরি করেছে।

তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হলো। আদালতে তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের সঠিক প্রমাণ না থাকায় সে বেকুসুর খালাস পেল। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, সে যে কয় দিন হাজতে ছিল এর মধ্যে একদিন তার ঘরেই চুরি হলো। চোর, মরি চোরার ঘরে কেউ না থাকার ফাঁকা ঘরে চুরি করার সুযোগ হেলায় নষ্ট করল না। কিন্তু সে চোরের সন্ধান পাওয়া গেল না এবং কেউ এরজন্য ফকির মার কাছেও গেল না।

ফকির মার অনেক কিছুতেই অসামঞ্জস্য হওয়ায় এলাকায় ফকির মার জনপ্রিয়তা দিন দিন হ্রাস পেতে লাগলো। আগে যেখানে ফকির মার সাথে দেখা করার জন্য মানুষ নাম লিখিয়ে লাইন ধরতো এখন সেখানে যে কেউ ইচ্ছা করলেই এসে সরাসরি দেখা করে যেতে পারে। তবে ফকির মার ঔষধের ধরণটি ঠিক ঠিক রয়েই গেল। আগের দিনে আমাদের দেশে ডিগ্রি পাস করা লোক খুব কম ছিল। দু’ একজন যা ছিল, সমাজে তাদের বেশ মূল্যায়ন ছিল।

আশে-পাশের বিভিন্ন গ্রাম থেকে তাকে দেখতে আসতো। বড় ঘরের মেয়ে তার কাছে বিয়ে দেওয়ার জন্য প্রতিযোগিতায় নামতো। তাকে নিয়ে সবাই গর্ব করতো। কিন্তু আজ দেশে ডিগ্রি পাস করা ছেলের অভাব নেই। কত ডিগ্রি পাস যে ঘোড়ার ঘাস কাটছে তারও কোন হিসাব নাই।

এই সময় ফকিরের খবর রাখাতো দূরের কথা, কাবিরাজের দেখা পাওয়াই আশ্চর্যের ব্যাপার। তার উপড় এম.বি.বি.এস ডাক্তার বের হচ্ছে হাজার হাজার। যে দেশের অধিকাংশ লোকই দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করে। জীবনযাত্রার মান যাদের অনুন্নত। সে সব দেশে রোগ বালাই নিত্যদিনের সঙ্গী।

এ কথা বুঝতে পারে কেবল বুঝমান লোকই। কিন্তু সমস্যা হলো তাদের নিয়ে, যারা এই বিষয়টি বুঝে না। তারা মুক্তি পেতে চায় ফকিরের তাবিজ, হুজুরের ফুঁ ইত্যাদির জহুরায়। কিন্তু ফকিরের ভারি তাবিজটা শরীরে বহন করলে এনার্জি নামক কিছু যে ব্যয় হয়, তাছাড়া বুকের উপর তাগা দিয়ে তাবিজটা বাঁধা থাকার ফলে পানিতে ও ঘামে ভিজে, রৌদ্রে শুকিয়ে একই স্থানে থাকার ফলে কাঁশিসহ অনেক রোগের সৃষ্টি হতে পারে এবং হুজুরের ফুঁ যে বাতাসের সাথেই শূন্যে মিশে যায় এই জ্ঞান তাদের নাই। এই জ্ঞান তাদের যেদিন আসবে সেদিন জীবন যাত্রার মানের উন্নতি হবে এবং ফকিরের তাবিজ আর হুজুরের ফুর বালাই থাকবে না।

অনেকদিন পরে সেই ফকির মাকে দেখতে পেলাম আমাদের এলাকার একটি হোটেলের রাঁধুনী হিসেবে। গায়ে ময়লা কাপড়, চুলগুলো সাদা-কালো হয়ে ফ্যাকাশে রং ধারণ করেছে। মাঝে মাঝে তাকে দেখা যায় খালি পায়ে কাপড় উচিয়ে হাড়ি-পাতিল মাজছে খালের পাড়ে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।