আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কেমন আছি সৌদি আরবে –পচিশ পর্ব ভিক্ষাবৃত্তি

স্বাগতম

ভিক্ষাবৃত্তি রাতে কি একটা স্বপ্ন দেখেই গিন্নী বললো সকালে ফকিরকে পাচটি রিয়াল ভিক্ষা দিতে। আমি জানি দিনের বেলায় রৌদ্রে কোন ভিক্ষুকই পাবোনা তবুও বাধ্যগত স্বামীর মতো ঘাড় হেলিয়ে দিয়ে দেব বলে অফিসে গেলাম। লাঞ্চ আওয়ারে বাসায় ফিরতেই জিজ্ঞেস করলো দিয়েছি কিনা। বললাম তোমার মতো তারাও সকালে ঘুমায়! বিকেলে দিয়ে আসবো। কিন্তু কি যে হয়েছে ওদের বিকেলেও কয়েকটা সিগনাল পয়েন্ট ঘুড়ে একটা ভিখারীরও দেখা পেলামনা।

এমনকি সুপারস্টোরের এন্ট্রেনসেও তাদেরকে খুজে পেলামনা। এভাবে চারদিনের দিন দেখা পেলাম এক বুড়ী ভিখারিনীর। পাচটি রিয়াল তার হাতে ধরিয়ে দিয়ে যেন বিশ্ব জয় করে বাসায় ফিরলাম। আমাদের মতো এদেশেও ভিক্ষুক আছে তবে নিয়ন্ত্রিত এবং সংখ্যায় আমাদের দেশের তুলনায় খুবই কম। সাধারণত ট্রাফিক সিগলাল,মসজিদ আর সুপার স্টোরের প্রবেশপথে এরা হাত পাতে।

এছাড়া অফিসে এবং মসজিদের ভেতর গিয়েও ভিক্ষা করেন। কিন্তু বাড়ীতে বাড়ীতে গিয়ে ভিক্ষা করেননা। আর ভিক্ষুকের সংখ্যাও খুব একটা বেশী নয়। ভিক্ষুকদের ৯০ভাগই হচ্ছে মহিলা,শিশু আর পঙ্গু। তাদের প্রায় প্রত্যেকের হাতেই ভিক্ষা করার কারন সম্বলিত পেপার থাকে যা কর্তৃপক্ষ থেকে সত্বায়িত।

পেপার না থাকলে পুলিশ ধরে নিয়ে জেলে ঢুকিয়ে দেয়। ১। সিগনালে গাড়ী থামানো মাত্র এরা জানালার নিকট এসে হাত পাতে। মহিলা ভিক্ষুকরা আব্রু ঢাকার জন্য নেকাবসহ কেঊ কেঊ হাতে মোজাও পড়ে। তানাহলে হয়তো সৌদিদের কৃপা পায়না!অনেক যুবক ভিক্ষুক মিথ্যা করে পঙ্গু সেজে পার্টটাইম ভিক্ষা করে।

২। সুপার স্টোরের প্রবেশপথে বসে থেকে অনেকেই বেশ কামাই করেন। সাধারনত মার্কেট শেষে খুচরা টাকা পয়সাগুলি না চাইতেই এরা পেয়ে যায়। ৩। মসজিদের বারান্দায় বসেও অনেক মহিলা ভিক্ষা করেন তবে এখানে আমাদের মতো সাউথ এশিয়ানরাই বেশী দান-খয়রাত করেন।

৪। তবে মসজিদের ভেতর অনেক পুরুষ(সৌদি)নামাজ আদায়ের পর ঈমামের অনুমতি নিয়ে কেধে কেটে নিজের অভাবের বর্ননা দিয়ে ভিক্ষা চেয়ে বাহির হবার পথে বসে থাকেন। সেখানেও আমাদের মতো বিদেশীরাই বেশী সাড়া দেন। ৫। অনেকে পেট্রোল পাম্পে দামী গাড়ী নিয়ে বসে থাকে।

কেউ পাম্পে তেল ভড়তে এলেই তাকে গিয়ে বলা শুরু করেন তিনি(ভিক্ষুক)অন্য শহর থেকে এসেছেন তার মানিব্যাগ হারিয়ে গিয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি। ফলাফল দয়া পরবশত হয়ে কিছু দিয়ে দেয়া। তবে এটা ভিক্ষা হচ্ছে কিনা সেটাই প্রশ্ন। ৬। এবার আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা বলছিঃএক রাতে দরজায় বেল বাজলো।

খুলে দেখি একসৌদি পুলিশ কান্না চোখে দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখে আরো জোরে হাউমাউ করে কেধে বলছে তার মা অসুস্থ হয়ে নিকটস্থ ক্লিনিকে আছেন। জরুরী ভিত্তিতে তার দুইহাজার রিয়াল দরকার। আমি অবাক,একজন পুলিশ আমার দরজায় দাঁড়িয়ে কাধছে!আরো অবাক ক্রেডিট কার্ডের যুগে টাকার অভাবে চিকিৎসা হচ্ছে না!!!যাইহোক বিশ্বাস না হলেও,ভেবে চিনতে মায়ের নামে আমি দুশ রিয়াল দান করে দিলাম। সে অনেক দোয়া করে চলে গেলেন।

পরে খোজ নিয়ে জানলাম সে অনেকের ফ্লাট থেকেই এভাবে টাকা নিয়েছে। আর পোষাকটা হয়তো বানিয়ে নিয়েছিল,আসলে সে পুলিশ নয়।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.