আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিক্ষিপ্ত সত্তাদের এলোমেলো কিছু খন্ড খন্ড ভাবনা..

আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই..পাই যদিবা.ক্ষণেক্ষণে হারাই
কেমন যেন ডুবে যাচ্ছে যেন সবকিছু!! পানি না পারদ এটা? যতই ডুবে যাচ্ছে যেন গোল গর্ত থেকে গর্তটা বেড়েই যাচ্ছে। কেমন যেন ভেতর থেকে ভেতরে। গভীরে আরও গভীরে!! গভীরতার গহ্বরে ধাবিত হচ্ছে যেন কোন অজানা গন্তব্যে। হঠাৎ করেই ঘোর কাটল কারও চিৎকারে.... -কি রে মেয়ে! কি করছিস টা কি? খুব তো ভুলে ছিলি আমায়! লিখিস ই না আমাকে! মনে পড়ে না বুঝি আর? খুব ভাল কাটছে বোধহয় দিন?? যে আর লিখতেই বসিস না!! অভিমানে তুই-টাই বের হয় বোধহয়। রাগে সম্বোধন একস্তর উপরে উঠে,আর অভিমানে তা আরও আপন হয়ে যায়।

এই তো কদিন আগেও তো সত্তাটা তুমি করেই বলত!! ভালই লাগে কাছের জনের অভিমান। নিজেকে প্রয়োজনীয় লাগে। আপন লাগে কারও। --হুম! ভাল ছিলাম?? কি জানি! সময় করে উঠতে পারছিলামনা রে। হয়তো এত বেশি সময় ধরে চেষ্টা করছিলাম, সময় করে বলা হয়ে উঠছিল না তোমায়।

কিন্তু জানো তো তুমি সবসময় আমার সাথেই আছো? তোমাকেই যে আমি সবটা বলে যাই, আমার এসব ভুলভাল বিক্ষিপ্ত ব্যাপারগুলো যে তোমার সাথেই বলাটা অনেক বেশি হয় আমার। তোমাকে ভুলে যাওয়া যে আমার নিজেকেই ভুলতে দেয়া, জানোনা তুমি? জানো তো সব!! -হুম। তার জন্যেই রাগটা করতে পারিনা অত! জানো, আজ ভেবেছিলাম খুব রাগ করব, কথাই বলব না তোমার সাথে। কিন্তু যখন তোমায় ঐ বিচ্ছিরি ভাবে ডুবতে দেখছিলাম, মনে হল-আমি না ডাকলে তোমার ঘোরটা কাটবেনা। তুমি বোধহয় আমার থেকেও হারিয়ে যাবে-খুব ভয় হচ্ছিল আমার! দূরে আছো, কথা বলছো না, কিন্তু আছো তো! যদি হারিয়েই যাও তবে তো আর ফিরে পাবোনা তোমায়।

কোথাও না!! কখনও না! --জানো, আজকাল না খুব আজেবাজে দৃশ্য দেখি। মনে হয়, আমি শুয়ে আছি,মাথার কাছে প্রিয় কটা মানুষ। আমি কার হাতটা ধরব ভাবছি, শেষ স্পর্শ তো! কাকে রেখে কাকে ধরি! খুব ইচ্ছে করছে সবাইকে একটা বার জড়িয়ে ধরতে, যাদের ভালবাসায় এতটা দিন সিক্ত হলাম,যাদের কে কষ্টও দিয়েছি বোধহয় অনেক। হয়তো কখনও বুঝিনি,বুঝাতে পারিনি আমার অনুভবগুলো। সবগুলো মুখ, সবগুলো হাত- আমি আলতো করে করে সময় নিয়ে স্পর্শ করব।

স্পর্শের যে কত অনুভব, কতভাবে যে ছোঁয়া যায় আমি যেন শেষবারের মত বুঝে নিতে চাইবো। আমি দেখব, কিন্তু আমার সাধ মিটবেনা। আমি শেষপ্রান্তে এসে যেন বারবার অনুভব করব- আর দেখা হবে না আমার! আর ছোঁয়া হবে না ! আর ভালবাসতে পারব না এতগুলো মানুষকে। হয়তো লুকিয়ে থেকে যে ভালবাসবো ওরা কি বুঝতে পারবে? মনে হবে এটা আমি??? -মানুষ চলে গেলে কি ভালবাসা চলে যায়? শারীরিক প্রস্হানটাই কি সব মুছে নিয়ে যায় অনুভব কে? মানুষ কি বেঁচে থাকেনা? মানুষের মন বলে তো একটা ব্যাপার আছে তাইনা?? --তা আছে! তবে ঐ যে বিখ্যাত উক্তি- শুন্যস্হান পূরণ হয়েই যায়- সেটা উপেক্ষা করতে পারো? -শুন্যস্হান আসলেই পূরণ হয়, এটাই প্রকৃতির নিয়ম। তবে মনে না পড়া মানে কিন্তু ভুলে যাওয়া নয়-সেটাও তো মানো? --হুম, হয়তো ভুলে যাওয়া না।

কিন্তু একটা অভ্যস্হতা এসে যায়। সেটা যে কোন ক্ষেত্রেই। মানুষ একসময় অনেক কিছু সয়ে যায়, যা হয়ত এ জীবনে পারবে বলে কল্পনাও করতে পারেনাই। থেতলে যাওয়া বলে একটা ব্যাপার আছে বন্ধু! মাঝেমধ্যে আমাদের অনুভুতিগুলো ভোঁতা হয়ে যায়, আমরা কোন কিছুতে গা করবোনা বলে নিজেদেরকে শিখিয়ে ফেলি। প্রোগ্রাম ইনস্টল করে দিই নিজেদের মধ্যে।

"আমি কিন্তু কষ্টটাকে বাড়তে দিবনা,আমি আমাকে কষ্ট পেতে দিবনা" এভাবে করে হয়ত গায়ে লাগানোর ব্যাপারটা পাশ কাটাই, কষ্টটাকে কি পারি? -পারি হয়তো! পারতে যে হয়। নাহলে বেঁচে থাকে কি করে মানুষ? আচ্ছা তোমার কি মনে হয়, মৃত্যুটা কি খুব ভয়ংকর? কেন আমরা ভয় পাই? --নাহ, মৃত্যু মোটেও ভয়ংকর কিছুনা। এটা স্বাভাবিক একটা নিয়ম। একে কল্পনায় কল্পনায় আমরা এক দৈত্য দানো বানিয়ে রাখি। এটা তো এক বিশাল ঘুম।

এতদিন যে কষ্ট করে জেগে ছিলে, এত সব কাজ করলে, এত মানুষকে চিনলে, কথা বললে-একটা বিরতি এটা। কিংবা বলতে পারো বিশ্রাম!! - আচ্ছা মানুষের কোন জিনিসটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় তোমার? --নাম!! -কেবল নাম??? --উহু কেবল নাম না। সাথে তার কাজ টাও। তবে সাধারণত সব মানুষের বেলায় ই নামটা মনে রাখা উচিত। কারণ এটাই তার নিজের একমাত্র সম্বল।

এটা তার জীবনের শুরু থেকে শেষ অব্দি থাকে। আর এই নামটাই তার চলে যাবার পর তার পরিচয়ের সাথে সাথে চলে যায়, বলা হয়-মরহুম/গত !! আর জানো, এই নামটা চলে যাওয়ার পর যেটা পড়ে থাকে সেটা বদনাম। কারণে অকারণে মানুষ তার নামটাকে ঘিরে বদনাম শুরু করে। তাই এই নামটাই যদি ভুলে যাই আমরা, আর তো কিছুই অবশিষ্ট থাকেনা, তাইনা?? -ভালো বলেছো তো! নাম-বদনাম! অস্হিত্ব ব্যাপারটা তবে মানুষের যাওয়ার পর থাকে না? --যে চলে যায়, সেও হয়ত আমাদের মনের মধ্যে প্রকাশিত বা অপ্রকাশিত হয়ে থাকে। আমরা মাঝেমধ্যে তাকে খুলে স্মৃতিতে মাতি, কিন্তু সবসময় তো আর সেটা হয়না।

বাস্তবতাই সেটা হতে দেয়না। তবে যে বাস্তবের মানুষগুলোকে অস্বীকার করা হয় মাঝেমধ্যে। জীবন তো শুধু দু:খ বিলাস করে চলে না। এমন করলে যে মানুষ মরতে বসবে। কত মানুষের প্রস্হান হবে, জীবন তো একটাই,কয়বার মরবে সে? তাই সে বেঁচে থাকে, বেঁচে থাকার উপলক্ষ্য খুঁজে! যতই মৃত্যুকে আপন ভাবুক সে, কেন জানি বাঁচতেই বড় সাধ মানুষের।

তাই মরবে বলেও, বেঁচে থাকার পর কেন ভাল ভাবে বাঁচছেনা বলে অভিযোগ করে। আর এখানেই প্রকাশ পায় মৃ্ত্যুকে মানুষ চায় তো ঠিকই,কিন্তু মানতে পারেনা। কিন্তু মৃত্যুটা কিন্তু অত খারাপ হওয়ারও কথা না। যতদুর মনে হয়। -তবে বাঁচতে চায় কেন মানুষ? মানুষের বাঁচতে চাওয়ার কারণ কি? --বাঁচতে চাওয়ার কারণ মৃত্যুর জন্যই হয়তো।

-ঠিক বুঝলামনা। কীরকম? -- প্রত্যেকটা মানুষই মনের ভেতর যেই ইচ্ছাটা পুষে-তাকে ভালবাসবে কেউ, তাকে মনে করে চোখের জল ফেলবে, তার কথা ভাববে, তাকে ভুলে যাবেনা, তাকে বুঝতে চাইবে, তার অনুপস্হিতিটা অনুভব করবে, তার জন্য চিন্তা করবে, তার নামটা যেন একেবারেই মুছে না যায়-সেটার বোধ গুলো, এই অনুভব গুলো অন্তত কিছু কাছের মানুষের মধ্যে দিয়ে দেয়ার কারণেই বাঁচতে চায়। আর শেষমূহুর্তটায় এসে পরীক্ষার খাতা নিয়ে যাবার সময় মনের মধ্যে খচখচ করা ব্যাপারটার মত করে- হয়তো আরেকটু ভাল করতে পারতাম-এর মত করে জীবনটাকে তুচ্ছ মনে হয়। মনে হয়, ইস! যদি আরেকটু সময় পেতাম, এবার একটা কিছু করেই ফেলতাম। হয়তো কেউ ঠিক বুঝে নিত আমাকে।

আর একটা বার যদি পেতাম সুযোগটা!! আর কয়টা দিন সময়!! কিন্তু পরীক্ষা শেষ হয়ে গেলে কি সময় পাওয়া অত সহজ বন্ধু? সেই আফসোস টা নিয়েই হয়ত শেষ হয় আমাদের। আমরা শেষ একবার দেখা, শেষ একবার ছুঁয়ে নেবার জন্য ছটফট করে মরি!- এই কারণেই মৃত্যুকে আমরা ভয় পাই। আসলে ভয়টা মৃত্যুকে পাইনা,পাই এই আফসোসটাকে। -কিন্তু কেউ তো পরীক্ষা শেষ করে দিয়েও বসে থাকে, হয়না এমন? --হয়। কিন্তু এরকম সংখ্যা আসলেই বড় কম।

জীবনের পরীক্ষা শেষ করে, প্রস্তুত হয়ে মৃত্যুকে দেখতে আসাটা আসলেই অনেক ভাগ্যের ব্যাপার। খুব কমই ঘটে এটা। আমরা হয়তো ভাবি-ওর তো সব কাজ সারা! আসলে হয়তো ওর কাছে এখনও অনেক কাজই বাকি পড়ে ছিল। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কি হয় জানো? হয় আমরা পরীক্ষায় বসতেই ভয় পাই, অথবা অসম্পূর্ণ করে শেষ করি- ঐ স্যারের খাতা টেনে নেয়ার মত নয়তো আমরা পরীক্ষাটাকেই অস্বীকার করতে চাই। তখন ব্যাপারটা হয় পরীক্ষা দিতে এসে প্রশ্নপত্র দেখে "ধুর!!আর কি হবে পরীক্ষা দিয়ে"- এমন ভাবে বাদ দিয়ে দেয়া।

পালিয়ে বাঁচার মত একটা ব্যাপার। এটাও কিন্তু বেশি দিন টিকে না। শেষমেষ নিজের কাছে নিজেকে ধরা খেতেই হয়। আর কেউ না জানলেও তুমি নিজেতো জানো- তোমার বাকি ছিল অনেক কিছু। এভাবে নিজের কাছেই কুড়ে কুড়ে মরে যাওয়াটা হতে থাকে প্রতিনিয়ত।

সেই শেষ মৃত্যুর চেয়ে এই রোজ মৃত্যুটা আরও বেশি ভয়াবহ! ঠিক যেন কোন অতলে হারিয়ে যাবার মত। সবার থেকে, নিজের থেকে। -তবে কি করা উচিত আমাদের? মৃত্যুকে আকড়ে ধরা না পাশ কাটানো? --সত্যি বলতে আমি এখনও ঠিক জানিনা। তবে যেটুকু বুঝি ,যা ঘটবে তাকে নিয়ে যা আছে তা নষ্ট করাটা সমীচিন নয়। যা পাবোনা তা পাই কিনা সেটা পরে দেখা যাবে।

প্রকৃতভাবে তো আমরা জানি না কবে সেই শেষদিনটা। মৃত্যুকে আর যাই হোক ভয়টা যেন না পাই। সহজ স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবেই দেখি। আর চলে যাব বলে থেকেও না থাকাটা বোধহয় আফসোস ছাড়া আর কিছুই জন্ম দেয়না। তার চেয়ে বরং যতদিন আছি, চেষ্টা করে যাই।

আসলে তো এই চেষ্টা করাটাই বেঁচে থাকা। যেদিন এই চেষ্টা করা, রাগ, দু:খ, ভুল বোঝাবুঝি, মান- অভিমান, আনন্দ, হারানো, কষ্ট পাওয়া, হতাশা সবই শেষ হয়ে যাবে তখন তো এই বেঁচে থাকাটাও সাঙ্গ হয়ে যাবে। এই ইতিবাচক নেতিবাচক অনুভুতিগুলো যতদিন আছে- আমরা আসলে বেঁচে আছি ততদিন। একদিন সেটাও শেষ হয়ে যাবে, আর তখনই বোধহয় আফসোস নামক ভয়াবহ ব্যাপারটা এসে আমাদের কাছে মৃত্যুকে ভয়ংকর করে দিবে। আর ভাবতে থাকব- ইস! আরেকটা বার যদি পারতাম!!! শুধু আর একটা বার! একটি বিক্ষিপ্ত সত্তার কিছু স্বীকারোক্তি কিছু আজব খেয়াল আর দুই বিক্ষিপ্ত সত্তার বাকবিতন্ডা!! বিক্ষিপ্ত সত্তাদের কথোপকথন আর কিছু আজেবাজে ভাবনা!! বিক্ষিপ্ত সত্তাদের একান্ত কিছু ছন্নছাড়া চিন্তার মেঘ
 


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।