আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাই ফাই থ্রিলারঃ সিমুলেশন, Season 1, Episode 1

কিচ কিচ কুচ কুচ কাচ কাচ কোচ কোচ!!!

(দশ পর্বের এই লেখাটি দুই টানে লিখেছিলাম ফোর্থ ইয়ারের সেকেন্ড টার্ম রিটেনের আগে। ফেসবুকে পুরোটাই দেয়া হয়েছিল, এখনও আছে। এটা প্রথম পর্ব, এক সপ্তাহের মধ্যেই বাকি নয়টা পর্ব দেয়া হবে ইনশাল্লাহ। কারো সিরিজটা ভালো লেগে গেলে বাকিটুকু পড়ার জন্য নিজ দায়িত্বে আমাকে অনুসরণ করুন, হে হে। ) Prologue 1 ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২২ স্নায়বিক স্থায়ী দুর্বলতা, স্মৃতিভ্রম ও অধিক মৃত্যুহারের কারণে, আজ থেকে সারা বিশ্বে পরাবাস্তব সংক্রান্ত সকল গবেষণা নিষিদ্ধ করা হল।

এ ঘোষণার সাথে সাথে পরাবাস্তবের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থা, গবেষণাগার ও প্রতিষ্ঠান অবৈধ ঘোষণা করা হল এবং সংশ্লিষ্ট সকল যন্ত্রপাতি এই ঘোষণার আগামি বাহাত্তর ঘণ্টার মধ্যে পুড়িয়ে ধ্বংস করার নির্দেশ দেয়া হল। রজার জে. ক্লাউডি প্রেসিডেন্ট ওয়ার্ল্ড সায়েন্স কাউন্সিল Prologue 2 ডেস্ক নিউজ, সি এন এন ২৩ আগস্ট ২০২৮ “ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে বাষ্পীভূত হল নিউরাল স্টেম সেল গবেষণাগার”। স্টাফ রিপোর্টারঃ গতকাল রাতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ভস্মীভূত হয়েছে নর্থ ক্যালিফোর্নিয়ায় অবস্থিত আন্তর্জাতিক নিউরাল স্টেম সেল গবেষণাগার। এ অগ্নিকাণ্ডে মারা গেছেন বারোজন বিজ্ঞানী, যাদের মধ্যে একজনের দেহ এখনও খুঁজে পাওয়া যায় নি। দুর্ঘটনার রাতে বাড়িতে থাকা গবেষণাগারের প্রধান বিজ্ঞানী জেরোম মার্ক বলেছেন, “নিউরাল স্টেম সেল রিসার্চে আমরা অনেকদূর এগিয়ে গিয়েছিলাম।

আর কিছুদিন সময় পেলেই হয়তো চূড়ান্ত সফলতার মুখ দেখত আমাদের গবেষণা। কিন্তু এখন এই আকস্মিক দুর্ঘটনায় ভস্মীভূত হল অনেক গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র, দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যু বরণ করল দারুণ কিছু মেধাবী প্রাণ। নিউরাল স্টেম সেল রিসার্চে আমরা পিছিয়ে পড়লাম কমপক্ষে ত্রিশ বছর”। দুর্ঘটনার পর এগারোজন বিজ্ঞানীর অগ্নিদগ্ধ মৃতদেহ শনাক্ত করে তাদের আত্মীয়স্বজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। শুধু একজন বিজ্ঞানীর মৃতদেহ এখনও পাওয়া যায় নি।

জানা গেছে তার নাম কাবোদাচো, সুকুমা কাবোদাচো, সুদূর জাপান থেকে গবেষণার উদ্দেশ্যে ক্যালিফোর্নিয়া এসেছিলেন তিনি। ১ জ্ঞান ফেরার সাথে সাথে বব টের পেল, তার মুখচোখ শক্ত কিছু দিয়ে বাঁধা। প্রথমে সে কিছু বুঝতেই পারল না, একটু পরে বিপদটা টের পেয়ে হাত-পা নড়াচড়া করতে গিয়ে সে টের পেল যে ওগুলোও বাঁধা। বব চিৎকার করতে চাইল, কিন্তু মুখের মধ্যে শক্ত কিছু থাকার কারণে নিজের চিৎকার নিজেই শুনতে পেল না সে। প্রবল ঝাঁকুনিতে হাতদুটো মুক্ত করার চেষ্টা করতেই বব ব্যালেন্স হারিয়ে পিছনে উল্টে পড়ল।

পিছনে কোন অবলম্বন ছিল না। বব সাঁ সাঁ করে বাতাস কেটে নিচে পড়তে লাগল। তার শরীর এরকম শূণ্যপতনের সাথে পরিচিত নয় বলে গা-টা কেমন গুলিয়ে উঠল তার। মনে হল যেন এখনই বমি করে দেবে সে। বাতাসে পড়তে পড়তেই হঠাৎ ববের কানের কাছে কোন একটা যন্ত্র হঠাৎ করে জীবন্ত হয়ে উঠল।

সেই যন্ত্র থেকে কে যেন যান্ত্রিক গলায় বলে উঠল “হ্যালো বব। ” বব কোন কথা বলতে পারল না। যান্ত্রিক কণ্ঠ বলতে লাগল “তুমি বোধ হয় বুঝতে পারছ না তোমার সাথে কি করা হয়েছে। যাক গে, বোঝার দরকার নেই। শুধু আমার কথা মন দিয়ে শোন।

তোমাকে দেড় হাজার তলা ভবনের ছাদ থেকে একটু আগে ফেলে দেয়া হয়েছে। কোন নড়াচড়া না করে এভাবে পড়তে লাগল নিচের কনক্রিটের রাস্তার পড়তে তোমার সময় লাগবে মাত্র চার মিনিট। তোমার হাতের বাঁধনের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তোমার হার্টবিট মিনিটে ১৫০ এর যত উপরে যাবে এটা তত শক্ত হবে। আর হার্টবিট ১৫০ এর মত নিচে যাবে তত এটা আলগা হতে থাকবে। তোমার পিঠে একটা ব্যাগ আছে।

এই ব্যাগটার ভিতরে একটা ফ্লায়ার মেশিন আছে যেটা তোমাকে উড়িয়ে নিয়ে যাবে। তবে মনে রাখবে এটা খোলার সময় অবশ্যই তুমি উপুড় হয়ে মাথা সামনের দিকে দিয়ে থাকবে। এটা ব্যবহার করে তুমি সাগরের দিকে উড়ে যাবে। তোমার প্রতি গুলিবর্ষণ হতে পারে, মনে রাখবে তোমার হার্টবিট যত কম হবে তোমার পরিবেশের সবকিছুর গতিও সেভাবে কমে যাবে। অবশ্যই তুমি ফ্লায়ারের পাখায় কোন গুলি লাগতে দেবে না।

সাগরের পাড়ে বাঁশের এক ঘন জঙ্গল আছে, যেগুলোর মাথা প্রচণ্ডরকম চোখা চোখা। ঠিক ওখানে গিয়ে তোমার পাখাদুটো খসে পড়ে যাবে। বাঁশ গুলোর মাথা সুইয়ের মত চোখা, একটা মোক্ষম আঘাতেই তুমি এফোঁড় ওফোঁড় হয়ে যেতে পার নিমিষেই। তবে মনে রাখবে শুধুমাত্র উপুড় বা চিৎ হয়ে শুয়ে থাকলেই তোমার ওজন বাঁশগুলোর মধ্যে সমানভাবে বণ্টন হয়ে যাবে। সুতরাং চিৎ এবং উপুড়- এদু’টো ছাড়া আর কোন পজিশনে তুমি আগাবে না।

বাঁশগুলো পার হলেই সাগর পড়বে। সাগরের পাড়ে তুমি একটি নৌকা দেখবে, তুমি ওটায় ওঠার সাথে সাথে ওটা চলতে শুরু করবে। প্রথম বড় ঢেউটা আসার সাথেই তুমি নৌকাটাকে উল্টো করে নিজে নৌকার নিচে চলে যাবে। এটা না করলে অন্য যে কোন কিছু করলেই সাথে সাথে মারা যাবে তুমি। বেঁচে থাকলে নৌকা তোমাকে একটা বড় জলদস্যুদের জাহাজের কাছে নিয়ে যাবে।

তুমি ঐ জাহাজে উঠে দেখবে একগাদা বাচ্চাকাচ্চাকে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। তুমি কৌশলে জাহাজের ইঞ্জিন রুমে গিয়ে একটা লাল বোতাম চাপ দেবে। তাহলেই বাচ্চাগুলো জলদস্যুদের হাত থেকে মুক্ত হয়ে যাবে। ব্যস, তোমার কাজ শেষ। নাউ হউ হ্যাভ থ্রি মিনিটস”।

বব প্রথমে বুঝতেই পারল না এসব কি হচ্ছে। তার কিছুতেই মনে পড়ল না যে কিভাবে এখানে এসেছে। যে টের পেল তার গতিবেগ বাড়ছে। সাঁই সাঁই করে তার শরীরকে পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে বাতাস। বব মাথা ঠান্ডা করল।

যান্ত্রিক কণ্ঠকে বিশ্বাস না করে কোন উপায় নেই তার। বব নিঃশ্বাস বন্ধ করে থাকল কিছুক্ষণ। সে ভাল সাঁতারু, দম রাখতে সে ওস্তাদ। আস্তে আস্তে হার্টবিট কমে আসতে লাগল তার। মন থেকে সব দুশ্চিন্তা আস্তে আস্তে ঝেড়ে ফেলতে লাগল সে।

একটু পরেই হাতের বাঁধন আলগা হয়ে গেল ববের। সে প্রথমেই টান মেরে নিজের চোখের বাঁধন খুলে ফেলল। খুলেই দেখল সত্যিই সে একটা অনেক উচু বিল্ডিংয়ের পাশ দিয়ে নিচে পড়ছে। অনেক নিচে কনক্রিটের চত্ত্বরটা দেখা যাচ্ছে। বব তার পায়ের বাঁধন খুলে ফেলল।

পিছনে ব্যাগে হাত দিয়ে একটা সবুজ বোতামের অস্তিত্ব টের পেল সে। যান্ত্রিক কণ্ঠের কথামত উপুড় হয়ে বোতামটা টিপে দিতে গিয়ে হঠাৎ করে থেমে গেল বব। যে দেখল, বিল্ডিংয়ের প্রতিটা জানালা দিয়েই একজন রক্তাক্ত মানুষ তার দিকে তাকিয়ে আছে। রক্তাক্ত পুরুষটিকে একটু পরেই একজন রক্তাক্ত রমণী এসে জড়িয়ে ধরল। অতঃপর তারা চুম্বনে আবদ্ধ হল।

ববের খুব চেনা চেনা লাগছে ওদের, বিশেষ করে ঐ পুরুষটাকে, কিন্তু কিছুতেই তাদের চিনতে পারল না সে। আরও কয়েক তলা নিচে গিয়ে সেই তলার জানালা দিয়ে তাকিয়ে সে দেখল তারা বিছানায় কামলীলায় রত এবং আরও কিছু তলা নিচে এসে সে দেখল কামলীলার চরম মুহূর্তে কে যেন এসে ধারালো বটি দিয়ে কুপিয়ে তাদের রক্তাক্ত করে দিচ্ছে। বব এত অবাক হল যে বলার মত নয়। ঘরটা এত পরিচিত, বিছানাটাও, এমনকি অনুভূতিটাও এমন যে যেন এ তৃতীয় ব্যক্তি নয়, পৈশাচিক আনন্দে দুই কপোত কপোতীকে খুন করছে সে নিজে। বব কিছুতেই বুঝতে পারল না তার এমন হচ্ছে কেন।

হঠাৎ করেই বব টের পেল সে আসলে বেশি নিচে নেমে গেছে। বিল্ডিঙের গায়ে স্পষ্ট লেখা “আজিমপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়”, বিল্ডিঙের গেটে একটা তরুণী মেয়ে। কারো সাথে মোবাইলে কথা বলছে সে, থেকে পড়িয়ে পড়ছে অপর পক্ষের কথা শুনে। না, না, বিল্ডিঙের গায়ের লেখাটা পরিবর্তিত হয়েছে, ওখানে এখন লেখা “ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল” এবং তার গেটে একজন সদ্য মা হওয়া যুবতী তার নবজাতক মেয়েকে কোলে নিয়ে সামনে হেঁটে যাচ্ছে গর্বোদ্ধত শিরে। কনক্রিটের চত্ত্বরটা এখন পরিষ্কার, ওখানে মুখে রুমাল বেঁধে খুব পরিচিত কেউ দাঁড়িয়ে আছে এবং তার কালো থাবা এগিয়ে আসছে এক হতভাগ্য দুঃখিনী মেয়ের দিকে।

লোকটির পাশেই হঠাৎ একটা ট্রাক এসে একজন মাতালকে চাপা দিয়ে পালিয়ে গেল এবং একটু পরে দেখা গেল একজন যুবতী তার পাঁচ বছরের মেয়েকে বুকে করে কাঁদছে। আবার দেখা গেল...... বব অনেক কষ্টে তার মনোযোগ নিজের উপর ফিরিয়ে আনল। কনক্রিটের মেঝে যখন তাকে গ্রাস করতে প্রবল আক্রোশে প্রায় আলোর বেগে এগিয়ে আসছে, সংঘর্ষের আর মাত্র কয়েক সেকেন্ড বাকি ঠিক তখনই বব তার ব্যাগের সবুজ বোতামটি টিপে দিল। সাথে সাথে ববের ব্যাগের দু’পাশ থেকে দুটো পাখা বের হল। বব বাতাস কেটে প্রবল বেগে সামনের দিকে ধেয়ে গেল এবং একটা পাথরের মূর্তির সাথে ধাক্কা খাবার আগমুহূর্তে সে আবিষ্কার করল যে সে সফলভাবে ফ্লায়ার এর নিয়ন্ত্রণ পেয়ে গেছে।

মূর্তিটার উপর দিয়ে উড়ে উড়ে সামনের দিকে চলতে লাগল সে। কন্ট্রোলের জন্য পিঠের ব্যাগ হাতড়াতে গিয়ে সে দেখল ব্যাগ সেখানে নেই। বব মনে মনে ভাবল “ডান”; সাথে সাথে ফ্লায়ার ডানে ঘুরে গেল। বব আবার “সোজা” ভাবার সাথে সাথে ফ্লায়ারের নাক আবার সোজা হয়ে গেল। প্রথমে বব ভয়াবহ সমস্যায় পড়ল।

কারণ ডান ভাবলেই ফ্লায়ার ডানে যাচ্ছে, মুখে বলাও লাগছে না, ববের মাথায় বারবার ডান, বাম, উপর, নিচ ইত্যাদি শব্দ আসতে লাগল এবং ফ্লায়ারটাও ওভাবে ডানে বা বামে হঠাৎ করে ঘুরে যেতে লাগল। বব বুঝল, তার মনোযোগ অন্যদিকে না সরালে কিছুতেই সে ফ্লায়ারটা চালাতে পারবে না। তাই ফ্লায়ার সোজা হবার সাথে সাথে সে নিজের বাম হাতের বুড়ো আঙ্গুল প্রচণ্ড জোরে কামড়ে ধরল। ব্যথায় সাদা হয়ে গেল ববের সারা মুখ, দাঁতে দাঁত চেপে ব্যথা সহ্য করল বব। এতে অবশ্য লাভই হল।

তার মাথার আর ডান, বাম ইত্যাদি শব্দ এল না। একটু পরেই বব টের পেল সাঁই করে একটা বুলেট তার কান ঘেঁষে চলে গেছে। সাথে সাথে সেদিকে তাকাল সে। দেখল, দূরে আরো কমপক্ষে দশজন তার মতই ফ্লায়ার নিয়ে আকাশে উড়ছে। এদের মধ্যে একজনের হাতে পিস্তল।

বব তার সারা শরীর হাতড়ে দেখল। নাহ, কোন পিস্তল নেই। তার মনে পড়ল যান্ত্রিক কণ্ঠের কথা, “মনে রাখবে তোমার হার্টবিট যত কম হবে তোমার পরিবেশের সবকিছুর গতিও সেভাবে কমে যাবে”; সাথে সাথে নিশ্বাস বন্ধ করে ফেলল বব। এটা করলে হার্টবিট কমে, গ্যারান্টেড সত্য। একটু পরে দু’পাশ থেকে সাঁই সাঁই করে তার প্রতি গুলিবর্ষণ হতে লাগল।

বব অনেক কষ্টে নিজেকে শান্ত করতে করতে গুলিগুলোকে পাশ কাটাতে লাগল। আশেপাশে তাকিয়ে সে দেখল আশে পাশে তার মত আরও পঁচিশজন বব তীর বেগে সামনের দিকে ছুটছে। বব অনেক কষ্টে নিজের হার্টবিট কমাতে সক্ষম হল। আর ঠিক তখনই এটা মজার জিনিস লক্ষ্য করল সে। আশে পাশের পৃথিবী কেমন যেন স্থবির হয়ে গেছে, আশেপাশ থেকে গুলি গুলো কেমন যেন আস্তে আস্তে বাতাস কেটে কেটে আসছে।

একটা গুলি কাছে আসতেই বব সেটাকে হাত দিয়ে খপ করে ধরে ফেলল। এটা করতে পেরে খুব অবাক হল সে। সাথে সাথে সে আবিস্কার করল অন্যরা কেমন যেন পিছিয়ে পড়ছে, সে এগিয়ে আছে সবার থেকে। ঠিক সেই মুহূর্তে ডান পায়ে একটা গুলি খেল বব, প্রবল ব্যথায় ব্যালান্স হারিয়ে নিচে পড়তে লাগল সে। আর তখনই সে দেখল, তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাতে মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে আছে ভয়ঙ্কর বাঁশ-অরণ্যের চোখা চোখা মারাত্মক বাঁশ।

যান্ত্রিক কণ্ঠের কথা মেনে হাত পা ছড়িয়ে চিৎ হয়ে ওটার উপর পড়ল বব। তার মনে হল দু’তিনটা হাড্ডি হয়তো ভেঙ্গে গেছে তার। পাশে তাকিয়ে সে দেখল ব্যালান্স হারিয়ে আরেকটা বব একেবারে সোজা হয়ে একটা চোখা বাঁশের উপর পড়েছে এবং সেটা খ্যাঁচ করে তার পা দিয়ে ঢুকে মাথা দিয়ে বেরিয়ে গেছে। বব গড়িয়ে গড়িয়ে সামনে এগুতে লাগল, বাঁশের খোঁচায় জীবন অতিষ্ঠ হবার উপক্রম হল তার। তার মনে হল এখনই তার পেট বুক ফুটো হয়ে যাবে, কিন্তু হল না।

চেষ্টা করে অনেকক্ষণ চলার পর একটু বিশ্রাম নেবার সাথে সাথে সে দেখল বাঁশবনের পিছন দিকে আগুন লেগেছে, সে লকলকে আগুনের শিখা ক্রমশই ধেয়ে আসছে তার দিকে। বব প্রবল বেগে গড়িয়ে গড়িয়ে আগাতে লাগল। তার মাথা ঘুরতে লাগল প্রচণ্ডভাবে, হাত পা ছড়ে গেল নানা জায়গায়। আগুন এসে তার শরীর স্পর্শ করা মাত্রই বব টের পেল, শেষ হয়ে গেছে বাঁশবনটা। প্রবল বাতাসের বিপরীতে দৌড়ে বব সাগরের পাড়ে বাঁধা ডিঙ্গি নৌকায় উঠে পড়ল।

তার পা আর হাত দিয়ে প্রচণ্ড রক্তক্ষরণ হচ্ছে, মনে হচ্ছে একটু পরেই সে জ্ঞান হারাবে। নৌকায় ওঠার সাথে সাথেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলতে শুরু করল নৌকা। বব দেখল, তার দু’পাশে আরও পনেরজনের মত বব নৌকায় বসে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। হয়তো সবাই বনটা পার হতে পারে নি, বুঝল সে। একটু পরেই সূর্য ডুবল, গভীর অন্ধকার নেমে এল চারপাশে।

একটু পরে ভুতুড়ে চাঁদটা দেখা গেল, আর চাঁদের আলোতেই বব লক্ষ্য করল তার নৌকার সামনে সেই রক্তাক্ত পুরুষটা বসে আছে। পুরুষটা বলল, “আমাকে কে হত্যা করেছে জানো? ” বব বলল, “কে? ” মানুষটা বলল, “তুমি! ” বলে হা হা করে হাসতে লাগল সে। আর তখনই বব দেখল একটা পাহাড় সমান উঁচু ঢেউ ধেয়ে আসছে তার নৌকার দিকে। যান্ত্রিক কণ্ঠের কথা মনে পড়ল ববের। যান্ত্রিক কণ্ঠ বলেছিল “প্রথম বড় ঢেউটা আসার ঠিক আগমুহূর্তে তুমি নৌকাটাকে উল্টো করে নিজে নৌকার নিচে চলে যাবে”।

বব এমন কাজের কোন অর্থ খুঁজে পেল না, তার মনে হতে লাগল নৌকার নিচে গেলে সে অবশ্যই ডুবে যাবে। কিন্তু নৌকাকে সোজা রাখলে ভেসে থাকার একটা ক্ষীণ সম্ভাবনা আছে। ঢেউটা চলে এল। কোন মুহূর্তে যান্ত্রিক কণ্ঠকেই বিশ্বাস করার সিদ্ধান্ত নিল বব। নৌকাটা ধরে উল্টে ফেলে নৌকার নিচে বলে গেল বব।

ঢেউয়ের ধাক্কায় পানির অনেক অনেক গভীরে চলে গের বব ও তার নৌকা। কিন্তু একটু পরেই বব দেখল নৌকাটা ভেসে উঠছে উপরের দিকে। কারণ নৌকার নিচে কিছু বাতাস জমে ছিল, সেটাই চাপ দিয়ে নৌকাকে উপরে উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সেই বাতাসে শ্বাসও নিতে পারছে বব। আবার একটা বড় ঢেউ এল।

তারপর আবার একটা। এভাবে অনেকগুলো ঢেউ চলে যাবার পর ক্লান্ত শ্রান্ত বব মাথা তুলে একটু দূরেই দেখা যাচ্ছে কালো পতাকাঅলা একটা জাহাজ। বব নৌকাটাকে উল্টো ঘুরিয়ে নিল। ওটার ওপর উঠে বসল সে। একটু পরেই সে দেখল, তার আগেই জাহাজের কাছে পৌঁছে গেছে তিনজন বব।

নৌকা যখন কাছে চলে এসেছে তখন নৌকা থেকে নেমে সাঁতার কেটে এগুতে লাগল বব। সে ভালো সাঁতারু- সাঁতার সে সব সময়েই ভালো কাটে। জাহাজের কাছে পৌছে দড়ি ধরে জাহাজে উঠে পড়ল সে। জাহাজে উঠেই বব দেখল একদল বাচ্চাকাচ্চাকে বেঁধে ফেলে চার পাশে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু সেই আগুন ছড়াচ্ছে না, বাচ্চাদের ঘিরে একটা নির্দিষ্ট বৃত্ত বরাবর জ্বলছে।

বব দৌড়ে ইঞ্জিনরুমটা খুঁজতে লাগল। ইঞ্জিনরুমটা পাবার সাথে সাথে যে যেন তার পিঠে গুলি করল। সে পিছন ফিরে দেখল, আরেকজন বব তাকে গুলি করেছে। বব হেঁচড়ে পাঁচড়ে ভিতরে ভিতরে ঢুকে গেল। কন্ট্রোলরুমের ভিতরে অনেক খুঁজে সে একটা লাল বোতাম বের করল।

লাল বোতামে চাপ দিতে যাবার ঠিক আগে সে দেখল, আরেকজন বব তার কপালে পিস্তল তাক করেছে। “সরে যাও”, সেই বব বলল। বব হিসাব করে দেখল, লাল বোতাম থেকে তার হাত এখনো এক ফুট দূরে। এখন হাত বাড়ানো মানেই মাথায় গুলি খাওয়া। “সরে যাও”, আবার বলল সেই বব।

ঠিক সেই মুহূর্তে কন্ট্রোলরুমে ঢুকে দুজনকেই গুলি করল তৃতীয় বব। ববের ঠিক হৃদপিন্ডে লাগল গুলিটা। বব টের পেল, তার দুনিয়াটা কেমন যেন অন্ধকার হয়ে আসছে। আর.......আর........ দুনিয়াটা কেমন স্থবিরও হয়ে আসছে! গুলিবিদ্ধ আরেক বব কেমন স্লো মোশনে পড়ে যাচ্ছে, রাইফেলধারী তৃতীয় বব কেমন আস্তে আস্তে মুখ নাড়িয়ে কি সব যেন বলছে। বব লাল বোতামটা টিপেই মেঝেতে পড়ে গেল।

সে দেখল আতঙ্কে হতাশায় তৃতীয় ববের চোহারা কেমন বিকৃত হয়ে যাচ্ছে। আর তাকে ছুরি দিয়ে হত্যা করতে যাচ্ছে কেবল দরজা দিয়ে ঢোকা চতুর্থ বব। কন্ট্রোলরুমের কোথায় যেন যান্ত্রিক কণ্ঠটা সজীব হয়ে উঠল। সে বলল, “কনগ্র্যাচুলেশনস। ইত্তর মিশন ইজ ওভার।

আমাদের টার্গেট ছিল শত্রুপক্ষের জেনেটিক ল্যাবোরেটরিতে তৈরি মহাবুদ্ধিমান কিছু শিশুকে হত্যা করা। লাল বোতামটা চাপার সাথে সাথেই বোমাটা আ্যাকটিভেটেড হল। থ্যাঙ্ক ইউ। ও, বাই দ্যা ওয়ে, বোমাটা আসলে তোমার শরীরের ভিতরেই আছে। তুমি ওদের বাঁচাতে নয়, মারতে এসেছ।

গুড লাক”। ববের জগৎ অন্ধকার হয়ে যাবার এক সেকেন্ড পরে তার শরীরে লুকানো নিউক্লিয়ার বোমাটি প্রবল শক্তিতে বিস্ফোরিত হল।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।