আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইসলামী আন্দোলনের সমাবেশে পুলিশি হামলা : পল্টন রণক্ষেত্র : এক মাসের মধ্যে দাবি না মানলে হরতাল : চরমোনাই পীর

নাজমুল ইসলাম মকবুল

ইসলামী আন্দোলনের সমাবেশে পুলিশি হামলা : পল্টন রণক্ষেত্র : এক মাসের মধ্যে দাবি না মানলে হরতাল : চরমোনাই পীর মে দিবস উপলক্ষে মুক্তাঙ্গনে আয়োজিত ইসলামী আন্দোলনের গণঅবস্থান ও দোয়া অনুষ্ঠানে পুলিশ এবং সরকারি দলের ক্যাডারদের অতর্কিত হামলায় রোববার সন্ধ্যায় পল্টন এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পুলিশের বেপরোয়া লাঠিচার্জ, মুহুর্মুহু টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট এবং পানিকামান থেকে গরম পানি নিক্ষেপে দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও চরমোনাই পীরের বড় ভাইসহ শতাধিক নেতাকর্মী আহত হন। পুলিশের পাশাপাশি সরকারি দলের লোকেরাও লাঠিসোটা নিয়ে হামলায় অংশ নেয়। ঘটনাস্থল ও বিভিন্ন স্থান থেকে পুলিশ আটক করে দুই শতাধিক নেতাকর্মীকে। ঘটনার পর থেকে পুরানাপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঘেরাও করে রেখেছে পুলিশ।

এছাড়া মুক্তাঙ্গনসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় ১৪৪ ধারা বহালসহ বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গতকাল সকাল থেকে ঘোষিত ৪৮ ঘণ্টার গণঅবস্থান কর্মসূচি স্থগিত করে ইসলামী আন্দোলন। এদিকে পূর্বঘোষিত গণঅবস্থান কর্মসূচি বানচালে মুক্তাঙ্গনে সরকারের ১৪৪ ধারা জারি এবং মে দিবসের আলোচনা ও দোয়া অনুষ্ঠানে পুলিশের বর্বর হামলার তীব্র নিন্দা জানান দলের আমির মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করিম। গতকাল এক প্রেসব্রিফিংয়ে তিনি চলতি মাসের মধ্যে নারীনীতি বাতিল করার জন্য সরকারের প্রতি আল্টিমেটাম দেন। অন্যথায় হরতালসহ কঠোর কর্মসূচি দেয়ার হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

এছাড়া ৪ মে সারাদেশে সব থানায় ও ৫ মে মুক্তাঙ্গনে প্রতিবাদ সমাবেশ ও মিছিল কর্মসূচির ঘোষণা দেন তিনি। সংঘর্ষের সূত্রপাত যেভাবে : রোববার বিকাল ৪টায় পুরানাপল্টনের হাউস বিল্ডিং মোড়ে শ্রমিক সমাবেশ করে ইসলামী আন্দোলন। একই সময়ে মুক্তাঙ্গনে জাতীয় পার্টির সমাবেশ চলছিল। এই সমাবেশ শেষ হওয়ার পর ৬টায় চরমোনাই পীরের নেতৃত্বে ইসলামী আন্দোলনের সমাবেশরত নেতাকর্মীরা একটি মিছিল বের করে মুক্তাঙ্গনে জমায়েত হন। সেখানে মাগরিবের নামাজের পর মে দিবসের শহীদদের জন্য দোয়া ও মোনাজাত করার ঘোষণা দেয় সংগঠনটি।

তবে তারা পরদিন ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে গণঅবস্থানের জন্য মু্ক্তাঙ্গন দখলে নিয়েছে, এমন সংবাদের ভিত্তিতে তাদের সেখানে জমায়েতে বাধা দেয় পুলিশ। তাদের দ্রুত স্থান ত্যাগ করার নির্দেশ দেয় পুলিশ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ইসলামী আন্দোলনের নেতারা মাগরিবের পর দোয়া শেষেই স্থান ত্যাগ করার কথা জানান। এরই মধ্যে কয়েক হাজার নেতাকর্মী সেখানে মাগরিবের নামাজ আদায় করে দোয়া অনুষ্ঠানের অপেক্ষায় ‘আল্লাহু আল্লাহু, লা ইলাহা ইল্লাহ’ জিকির শুরু করেন। সন্ধ্যা ৭টায় পুলিশ হঠাত্ তাদের ওপর আক্রমণ চালায়।

তারা পানিকামান দিয়ে গরম পানি নিক্ষেপ, বেশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপের পাশাপাশি বেপরোয়া লাঠিচার্জ শুরু করলে মুক্তাঙ্গন-পল্টনসহ গোটা এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। বন্ধ হয়ে যায় যানচলাচল। চরমোনাই পীরসহ দলের কেন্দ্রীয় নেতারাও এসময় হামলার শিকার হন। তীব্র আক্রমণের মধ্যেও ইসলামী আন্দোলন কর্মীরা উচ্চস্বরে জিকির করতে থাকেন এবং গাছের ডাল ও ইটপাটকেল নিয়ে পুলিশের আক্রমণের পাল্টা প্রতিরোধ করে বেশ কিছুক্ষণ রাস্তায় অবস্থান নেন। একপর্যায়ে পুলিশের হামলায় তারা পিছু হটতে বাধ্য হন।

এসময় দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও চরমোনাই পীরের বড় ভাই সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী এবং পুলিশ ও সাংবাদিকসহ ২ শতাধিক নেতাকর্মী আহত হন। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ দুই শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে শাহবাগ, পল্টনসহ বিভিন্ন থানায় নিয়ে যায়। এদের মধ্য থেকে অনেককে গভীর রাতে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। এদিকে পল্টন ও বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেট এলাকা বিপুলসংখ্যক পুলিশ কর্ডন দিয়ে রাখায় বিক্ষোভকারীরা সেদিকে যেতে পারেননি। পুলিশের ধাওয়ায় তারা জিরো পয়েন্ট হয়ে গুলিস্তানের দিকে গেলে সেখানে আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা লাঠিসোটা নিয়ে আরেক দফা হামলা চালায়।

এতে গুরুতর আহত কয়েকজনসহ বেশকিছু নেতাকর্মী আহত হন। হামলার পর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ কর্মীরা মুক্তাঙ্গন এলাকায় খণ্ড খণ্ড মিছিলও করে। হাতে ও পায়ে আঘাতপ্রাপ্ত মোসাদ্দেক বিল্লাহ মাদানীকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেলে ও পরে একটি ক্লিনিকে নেয়া হয়। আহত অন্যান্য নেতাকর্মীদেরও ঢাকা মেডিকেলসহ বিভিন্ন ক্লিনিক ও কেন্দ্রীয় অফিসে প্রাথমিক চিকিত্সা দেয়া হয়। মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত ১০-১২ জনের অবস্থা গুরুতর বলে জানা গেছে।

এদিকে সংঘর্ষের পর ব্যাপক পুলিশ ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় অফিস ঘেরাও করে রাখে। রাতে সেখানে কাউকে ঢুকতে দেয়া তো দূরের কথা, অবস্থানরত আহত নেতাকর্মীদের বের করে দেয়া হয় বলে কেন্দ্রীয় নেতা আহমদ আবদুল কাইয়ুম জানান। উল্লেখ্য নারীনীতি, শিক্ষানীতি ও ফতোয়াবিরোধী হাইকোর্টের রায় বাতিলসহ বিভিন্ন দাবিতে বেশ কিছু দিন আগে ২ ও ৩ মে মুক্তাঙ্গনে গণঅবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দেয় চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলন। এ উপলক্ষে কয়েক লাখ লোক সমাগমের প্রস্তুতি নিয়ে সারাদেশে ব্যাপক প্রচারণা চালায় দলটি। কিন্তু দু’দিন আগে শনিবার সন্ধ্যায় একই স্থানে আরও দুটি সংগঠনের কর্মসূচি দেয়ার অজুহাতে গতকাল সকাল ৬টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র মুক্তাঙ্গন ও আশপাশের এলাকায় সব ধরনের সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ।

এ ঘোষণা সত্ত্বেও শনিবার সন্ধ্যায় এক জরুরি বৈঠক করে ২ ও ৩ মে মুক্তাঙ্গনের কর্মসূচি বাস্তবায়নের ঘোষণা দেয় ইসলামী আন্দোলন। এ নিয়ে চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। গতকাল শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি বহাল ছিল। প্রেস ব্রিফিংয়ে চরমোনাই পীর : মুক্তাঙ্গনে ১৪৪ ধারা জারি ও মে দিবসের আলোচনা ও দোয়া অনুষ্ঠানে পুলিশের বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদে গতকাল দুপুরে পুরানাপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিং করেন ইসলামী আন্দোলনের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করিম। এসময় তিনি সরকার ও পুলিশের বর্বর আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, বর্তমান সরকার তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে বলেছিল, ক্ষমতায় গেলে কোরআন-সুন্নাহবিরোধী কিছু করবে না।

কিন্তু ক্ষমতায় আসার পরপরই ইসলামবিরোধী যেসব কার্যক্রম হাতে নিয়েছে তাতে প্রমাণিত হয়, নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল ভোট নেয়ার মোনাফেকি কৌশল। ইসলামকে তারা ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করেছে। ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে ধর্মীয় বিভিন্ন বিষয়ে বিধিনিষেধ দুঃসাহসের ব্যাপার। তিনি বলেন, আমরা বর্তমান সরকারের কোরআনবিরোধী নারীনীতি, ইসলামী শিক্ষাবিরোধী জাতীয় শিক্ষানীতি, ফতোয়াবিরোধী রায় বাতিল এবং সংবিধানকে ধর্মনিরপেক্ষ করা, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও সন্ত্রাস-দুর্নীতির প্রতিবাদে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছি। এসব দাবিতে আমরা জেলা প্রশাসক, স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছি।

সর্বশেষ ২ ও ৩ মে মুক্তাঙ্গনে গণঅবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। কিন্তু এতে ১৪৪ ধারা জারি করে সরকার সংবিধানবিরোধী অবস্থান এবং গণতন্ত্র কেড়ে নিয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের মহাসচিব মাওলানা ইউনূস আহমাদ, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ বেলায়েত হোসেন ও মহানগর আমির অধ্যাপক এটিএম হেমায়েত উদ্দিন প্রমুখ। নারায়ণগঞ্জে মহাসড়ক অবরোধ : এদিকে মুক্তাঙ্গনে পুলিশি হামলার প্রতিবাদে নারায়ণগঞ্জে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরা গতকাল বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে এবং সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত তারা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। এ সময় সড়কে যানচলাচল বন্ধ থাকে।

এতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে র্যাব ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে ইসলামী আন্দোলন কর্মীরা প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বলে বলে জানা গেছে। সুত্র: আমার দেশ Click This Link


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.