আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দাম বাড়ছে পল্লী বিদ্যুতের

আমি বেশ চুপচাপ!!

পল্লী গ্রাহকদের বিদ্যুতের দাম আবারো বাড়ছে। এ বৃদ্ধির হার গড়ে ৮ শতাংশ হতে পারে। মে মাসে এ বিষয়ে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) তার আদেশ জারি করবে। তবে ফেব্রুয়ারিতে বাড়ানো ৫ শতাংশ মূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে সম্বন্বয় করে এ দাম বাড়ানো হবে। বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) প্রস্তাব নিয়ে বুধবার বিইআরসির কার্যালয়ে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়।

শুনানির পর কমিশরের চেয়ারম্যান সৈয়দ ইউসুফ হোসেন সাংবাদিকদের জানান, আজ শুনানিতে আমরা সবপক্ষের মতামত নিয়েছি। সবকিছু বিবেচেনা করে মে মাসে আমরা চুড়ান্ত ঘোষণা দেব। এছাড়া লোকসানি সমিতিগুলোকে আর্থিক সহায়তা ও পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড এর সার্বিক উন্নয়নের জন্য একটি পৃথক তহবিল সৃষ্টির উদ্যোগ নেয়া হবের্। গত ৭ এপ্রিল এক উন্মুক্ত সভায় কমিশন দাম বাড়ানোর প্রস্তাবটি আমলে নেয়। কমিশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ ইউসুফ হোসেন, কমিশনের সদস্য ইমদাদুল হক, অপর সদস্য ড. সেলিম মাহমুদ, আরইবির চেয়ারম্যান ভুইয়া সফিকুল ইসলাম, ভোক্তাদের প্রতিনিধি হিসেবে ক্যাবের উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

দেশের ৭০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা আরইবি বিদ্যুতের খুচরা মূল্য গড়ে ১২ দশমিক ৯৭ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে। তবে এ প্রস্তাবনা পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণের জন্য কমিশন কর্তৃক গঠিত স্টাফ ফাইন্ডিংস কমিটি গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্য ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব রাখে। এ ফলে কোনো ভুতর্কি লাগবে না। সৈয়দ ইউসুফ হোসেন বলেন, দাম বাড়া উচিত। তবে শুধু বিদ্যুতের দাম বাড়ালেই হবে না।

গ্রাহকদের সেবার মান বাড়াতে হবে। এজন্য আরইবিকে তদারকি বাড়াতে হবে। সিস্টেম লস কমাতে হবে। তিনি বলেন ব্যবস্থাপনা উন্নত করলে ২০ শতাংশ পর্যন্ত দক্ষতা বাড়বে। ফলে বারবার বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হবে না।

তিনি বলেন, কমিশন ভভুর্কি ও তহবিল ব্যবহার জন্য একটি নীতিমালা তৈরি করবে। আরইবরি চেয়ারম্যান বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে বিদ্যুতের বিভিন্ন যন্ত্রাংশের মূল্য বৃদ্ধিতে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডকে প্রচুর ক্ষতির সম্মুখিন হতে হচ্ছে। এছাড়া কৃষিতে সেচের জন্য বিদ্যুত সরবরাহের জন্য আরইবিকে ইউনিট প্রতি ১ দশমিক ৪৪ টাকা লোকসান দিতে হয়। তাই বিদ্যুতের দাম বাড়ানো প্রয়োজন। অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, সিস্টেম লস কমিয়ে আর গ্রাহকদের পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ দিতে পারলে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো যেতে পারে।

তবে সেটা প্রতিটি সমিতির জন্য পৃথক পৃথকভাবে ৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে। এছাড়াও তিনি অস্বচ্ছল সমিতিগুলোর জন্য সরাসরি ভর্তুকি না দিয়ে পল্লী বিদ্যুতের জন্য পল্লী বিদ্যুৎ উন্নয়ন তহবিল নামে একটি পৃথক ফান্ড সৃষ্টির পরামর্শ দেন। সরকারের ভর্তুকি, স্বচ্ছল সমিতির উদ্ধৃত অর্থ দিয়ে এ তহবিল গঠন করা হবে। এ তহবিল থেকে লোকসানি সমিতিকে আর্থিক সহায়তা করা হবে। এছাড়া তিনি আবাসিক গ্রাহকদের নূন্যমত বিল বৃদ্ধির বিরোধাতা করে বলেন, নূন্যতম বিল ৬৫ টাকা থেকে ১০৫ টাকা করা হয়েছে, যা যৌক্তিক নয়।

গত সর্বশেষ ৮ ফেব্রুয়ারি ১১ শতাংশ হারে পাইকারি (বাল্ক) বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি পায়। তখনই স্বতপ্রণোদিত হয়ে অন্তর্বর্তীকালীন আদেশবলে বিইআরসি বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা ও কোম্পানিগুলোর ভোক্তা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ায়। যা ১ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর করা হয়। তবে তখন ১০০ ইউনিট পর্যন্ত আবাসিক গ্রাহক ছাড়াও সেচ এবং দাতব্য প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়নি। এর ফলে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ভেদে বিদ্যুতের খুচরা মূল্য বৃদ্ধি পায় ২ দশমিক ৬৯ শতাংশ।

সর্বশেষ পল্লী গ্রাহকদের জন্য বিদ্যুতের খুচরা মূল্য বাড়ানো হয় ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে। এ সময় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলোর বিদ্যুতের মূল্য গড়ে বাড়ে ৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ। আবেদন প্রস্তাবে আরাইবি উল্লেখ করেছে চলতি অর্থবছরেই পবিসগুলোকে ৪৮৫ কোটি টাকার বেশি লোকসান গুনতে হবে। প্রস্তাব অনুযায়ী বিদ্যুতের মূল্য বাড়ানো হলে প্রায় ১০২ কোটি টাকা উদ্বৃত্ত থাকবে। এরফলে ৫৫টি দুর্বল পবিস সংকট থেকে রেহাই পাবে।

তবে পূর্বে থেকে চলে আসা ঘাটতি মেটাতে সরকারের ভর্তুকি প্রয়োজন হবে। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পবিস) আর্থিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করে খুচরা পর্যায়ে মূল্য ঠিক করা হয়। এ কারণে সব সমিতিতে বিদ্যুতের মূল্য এক নয়। বর্তমানে ১০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুতের জন্য পবিসগুলো তাদের আবাসিক গ্রাহকদের কাছ থেকে ইউনিট প্রতি ২ টাকা ৬৪ পয়সা থেকে ৩ টাকা ৩ পয়সা নেয়। আরইবি ১১ দশমিক ৭৪ শতাংশ বাড়িয়ে ২ টাকা ৯৫ পয়সা থেকে ৩ টাকা ৩৯ পয়সা পর্যন্ত প্রস্তাব করেছে।

একইভাবে এখন ১০১ ইউনিট থেকে ৩০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুতের মূল্য ২ টাকা ৮১ পয়সা থেকে ৩ টাকা ২৩ পয়সা। এটা ১৯ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়িয়ে ৩ টাকা ৩৫ পয়সা থেকে ৩ টাকা ৮৫ পয়সা করার প্রস্তাব দিয়েছে আরইব। ৩০১ ইউনিট থেকে ৫০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুতে মূল্য ৪ টাকা ২৮ পয়সা থেকে ৪ টাকা ৫৬ পয়সা। এটা ২০ শতাংশ বাড়িয়ে ৫ টাকা ১৪ পয়সা থেকে ৫ টাকা ৪৭ পয়সা করার আবেদন করছে পল্লী বিদ্যুৎ। ৫০০ ইউনিটের ঊর্ধ্বে বিদ্যুতের মূল্য ৫ টাকা ৬৪ পয়সা থেকে ৬ টাকা ৭২ পয়সা।

এটা ২০ শতাংশ বাড়িয়ে ৬ টাকা ৭৭ পয়সা থেকে ৮ টাকা ৬ পয়সা করতে বলেছে আরইবি। একইভাবে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের মূল্য বাণিজ্যিক গ্রাহকের ক্ষেত্রে ১০, দাতব্য প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ১০, সেচে ৯ দশমিক ৯৩, সাধারণ শিল্পে ১২, বৃহৎ শিল্পে ১২ এবং রাস্তার বাতির জন্য ২০ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে আরইবি। এছাড়া সব শ্রেণীর গ্রাহকের ন্যূনতম বিল, সার্ভিস ও ডিমান্ড চার্জ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে আবাসিক গ্রাহকদের ক্ষেত্রে নূন্যতম বিল ৬৫ টাকার পরিবর্তে ১০৫, সাধারণ শিল্প গ্রাহকদের ক্ষেত্রে ৪৫ টাকার পরিবর্তে ৫০, বৃহৎ শিল্পের ৫৫ টাকার পরিবর্তে ৬০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।



এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।