আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রথম আলো: ০ বনাম কালের কন্ঠ: ১

অভিলাসী মন চন্দ্রে না পাক, জোছনায় পাক সামান্য ঠাই

অনেকদিন ধরেই ফুটবলে ব্রাজিলের মত বাংলাদেশের সংবাদপত্রের দুনিয়ায় একক সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিল প্রথম আলো। স্পর্ষকাতর বিষয়গুলো নিয়ে সব সময় অগ্রণী ভুমিকা রেখে এবং মানসম্পন্ন আপাত নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশন করে প্রথম আলো আক্ষরিক অর্থেই অনেক সেক্টরে প্রথম আলো ফেলেছিল। কিন্তু ১/১১র পরবর্তি পরিবর্তিত যুগে প্রথম আলো'র সাবেক নিয়মিত কলামিস্ট আবেদ খান যখন তার কলামের নামে নাম রেখে কালের কন্ঠ নামের পত্রিকা প্রকাশ শুরু করলো তখন থেকেই নতুন কিছুর আভাস পাওয়া যাচ্ছিল। ইদানিং যা স্পষ্ট হয়েই উঠেছে। অসুস্থ সংস্কৃতির ধারাবাহিক এই সময়ে আমাদের দেশের গুরুত্বপুর্ণ মিডিয়া সেক্টরে এমন পরিবর্তন নিশ্চিত গুরুত্ব রাখে কিন্তু এই পরিবর্তন কতটুকু কাম্য বা দুষনীয় সেটাই একটু ভেবে দেখার সময় এসেছে।

প্রথম আলো বাংলাদেশের পত্রিকা পাঠকদের এবং স্পেশালি তরুন পাঠকদের রুচি গঠন করে দিয়েছে বলা যায়। সপ্তাহের প্রতিদিন ভিন্ন ভিন্ন সাপ্লিমেন্ট এবং পত্রিকার অঙ্গসজ্জার ক্ষেত্রে বর্তমানের পত্রিকাগুলোতে যেই ডিজাইন দেখা যায় সেটার প্রথম প্রয়োগ করেছে প্রথম আলোই। সরকারের বিভিন্ন গুন্ডা টাইপ নেতাদের অবৈধ কর্মকান্ডের পরিপ্রেক্ষিতে জনসাধারনের মৌলিক যেসব দাবী এবং আকাঙ্খা ছিল সেটা সাংবাদিকদের পেশাদার লেখনীতে প্রকাশের সাথে সাথে সমাজে আমরা অনেক পরিবর্তন দেখেছি যার মুল চালক হিসেবে কৃতিত্ব প্রথম আলোর (জয়নাল হাজারী ইস্যু)। প্রতিটা দেশেই সুশীল সমাজ বলে একটা দল থাকে। বাংলাদেশেও ছিল কিন্তু তাদের পরিচিতি ছিল শুধু মাত্র উচ্চমহলে আর সাধারন মানুষ ওদের মাঝে ২-১ জনকে চিনলেও মুলত তাদের প্রফেশনাল ব্যাকগ্রাউন্ডের পরিচয়েই চিনতো।

কিন্তু প্রথম আলোই প্রথম দেশের বুদ্ধিজীবি ও সুশীল সমাজকে জনসাধারনের কাছে সরাসরি পৌছে দিয়েছে। পরবর্তিতে যেটা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়ে আজ প্রতিষ্ঠিত। এরকম আরো অনেক কিছুই আছে কিন্তু এগুলোই সবচেয়ে বড় অবদান বা কৃতিত্ব প্রথম আলো পত্রিকার। সবাই সুখে শান্তিতেই বসবাস করছিল। একনায়কদের রাজ্যে একমুখী সুখই থাকে।

তেমন আমাদের মিডিয়াতেও তাই ছিল। কিন্তু গোল বাধলো অতিরিক্ত দায়িত্ব কাঁধে নিতে যেয়ে। ১/১১ পরবর্তি সময়ে তৎকালিন দেশ চালকদের সাথে জনগনের যেই সৌহার্দপুর্ণ সম্পর্ক গড়ার প্রয়োজন ছিল সেটা তৈরী করার দায়িত্ব প্রথম আলোই কাঁধে তুলে নেয়। যেহেতু সাধারন মানুষের মনোভাবের সাথে মিল ছিল তাই এটুকু পর্যন্ত প্রথম আলোর কৃতিত্বই বলতে হবে। কিন্তু এই প্রথম বারের মত প্রথম আলো ঝুঁকি নিয়ে দান খেললো! ঝুঁকিটা নিল জনগনের পক্ষেই কিন্তু এর সফলতার সম্ভাবনায় হয়তো মালিক পক্ষ অতিউৎসাহি হয়ে এতদিন বাইরে থাকা ট্রান্সকমের নাকটা কাওরান বাজারের ভেতর গলানো শুরু করে দিল।

প্রমান? আগে যেখানে ট্রান্সকম গ্রুপের মালিকের মেয়ের শাজনীন হত্যা মামলার খবর ছাড়া প্রথম আলোর মালিক পক্ষের কোন গন্ধ পত্রিকাটিতে ছিল না সেখানে তত্তাবধায়ক সরকারের আমলে বসুন্ধরা গ্রুপের পায়ের নিচের মাটি ধরে টান দেয়া হলো! এরকম কর্পোরেট শত্রুতা প্রথম আলোর নীতিতে আগে ছিল না। একজন ব্যাবসায়ীই আরেক ব্যাবসায়ীর পেটে লাথি মারে,সম্পাদক মারে না। সেই সাথে নতুন দিনের স্বপ্নে বিভোর প্রথম আলো তত্তাবধায়ক উপদেষ্টাদের উছিলায় ক্ষমতার কাছাকাছি থাকার সুবাদে এবং গোলের মাধ্যমে বিজয় নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে একটু বেশীই আশাবাদি হয়ে অথবা বিভিন্নপ্রকারের চাটুকারদের নিয়মিত চাটনের তোড়ে নিজেদের ডিফেন্স খালি করেই পুরো অফেন্সে চলে গেল। প্রথম আলো ভুলে গেল যে,মিড ফিল্ডে বল যোগানদাতা যতটা নিরাপদ স্ট্রাইকার ততটা নিরাপদ না। আর স্ট্রাইকার হলে প্রতিপক্ষের পুরো ডিফেন্সের নজরে পড়তে হয় এবং বল নিয়ে প্রতিপক্ষের ডি বক্সে ঢুকে গেলে রেফারী সহ পুরো মাঠের নজরই চলে যায় স্ট্রাইকারের উপর।

বেশী নিশ্চিত গোল চাইলে অফসাইড হয়,ক্যারিশমা দেখাতে গেলে ডিফেন্ডারদের ট্যাকলের ভয় আবার বল পেছনে ফিরিয়ে দিলে দর্শকদের দুয়োধ্বনি শুনতে হয়। মানে স্ট্রাইক করার অনেক হ্যাপা। আর দুর্ভাগ্য হলো যে প্রথম বারের মত প্রথম আলোর উপর দুর্ভাগ্য দেবীর নজর পড়লো! মানে, বল নিয়ে ডি তে ঢুকে সাইড রেফারি অফসাইড দেখলো ( মাইনাস ফর্মুলার কারনে খালেদা হাসিনার টার্গেট হলো ), ডিফেন্ডার স্ট্রাইকারকে চিনে রাখলো (রাজনৈতিক ও ব্যাবসায়িক ভিন্নমতালম্বীদের দল ) এবং গোল দিতে না পারায় দর্শকও হতাশ হলো ( শেষের দিকে জনসাধারনও বিএনপি আওয়ামি লীগকে সমর্থন দিয়ে আবার চোরদের ফিরিয়ে আনলো)। এবার খেলার দ্বিতীয়ার্ধেই নতুন কোচের অধীনে প্রতিপক্ষ দল প্রথমার্ধের ভুল ত্রুটি চিন্হিত করে প্রস্তুত হয়ে নামলো। বদলি খেলোয়াড় হলো কালো কন্ঠি আবেদ খান যার স্পনসর সেই বসুন্ধরা যার পেটে লাথি মারছিল প্রথম আলোর স্পনসাররা।

কালের কন্ঠ বুঝলো যে শিক্ষিত তরুন ও এ্যাডভান্স পাঠকদের নজর কাড়তে হবে। তাই ওয়েবসাইটে বিশেষ নজর দিল। প্রাক্তন প্রথম আলো কর্মী নিয়ে গেল অনেক গুলো। এবং দল মত নির্বিশেষে প্রথম আলোর প্রতিপক্ষ খুজে বের করলো এবং প্রথম আলো যা করে তার বিপরীত করা আরম্ভ করলো। সাথে সাথে প্রথম আলোর সফল হবার বিভিন্ন স্ট্র্যাটেজি গভীর অনুশীলন করে বেশ রপ্ত করে ফেললো।

শুরু করলো প্রথম আলোর মত সময়ের চেয়ে এগিয়ে থাকা প্রতিবেদন প্রকাশ। প্রথম আলো যেমন ব্যাক্তি বা সেক্টর টার্গেট করে প্রতিবেদন করতো কালের কন্ঠও তা শুরু করলো। এবং খেলার প্রথমার্ধের প্রথম আলোর পারফর্ম্যান্সে যত বিপক্ষে সমর্থক তৈরী হয়েছিল তাদের মনস্তত্ত বিশ্লেষন করে একটি ইউনিক পারফর্ম্যান্স উপহার দিল পুরো স্টেডিয়ামকেই। অল্প সময়েই সফলতা আসার পেছনে ছিল বসুন্ধরার মত বড় স্পনসার, এবং প্রথম আলোর তৈরী করে যাওয়া পথ পাড়ি দিতে তাদের খুব একটা সৃজনশীল হবার দরকারও ছিল না বরং শুধু নিয়মিত অনুশীলনই যথেষ্ট ছিল। এরই মাঝে ডঃ ইউনুস ইস্যুতে কালের কন্ঠ তার পারফর্মেন্সে সরকারের সুনজর কেড়ে নিল এবং পেটে লাথি মারার প্রতিশোধ নিতে ট্রান্সকম ও সম্পাদকের পেছনে গভীরভাবে লেগে থেকে অনেক দুর্বলতা ও দোষ একের পর এক প্রকাশ করে নৈপুন্যপ্রেমীক দর্শকদেরও ( পাঠকদের) মন কেড়ে নিল।

যেটাকে একটি গোল বলা চলে। এরপর থেকেই শেয়ার ও বিভিন্ন স্পর্ষকাতর ইস্যুতে প্রথম আলো'র প্রতিষ্ঠিত দৃষ্টিভঙ্গির বিপরীতে খবর প্রকাশ করে করে চেলসির মত কম সময়েই মুল দল হয়ে উঠলো। প্রথম আলো এখনো রিয়েল মাদ্রিদ! লা লিগা টাইপের শিরোপাও জিতে যেমন নতুন বিমান বন্দর ইস্যু। ফতোয়া ও মৌলবাদ বিরোধী ইস্যু। অথবা বাউলদের চুল-দাড়ি কর্তন।

কিন্তু প্রথম আলো এখন দিন দিন সংকীর্নমানসিকতার দল হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে যারা নিদৃষ্ট ফর্মেটের বাইরে খেলে না। আর তাদের দোষ-ভুল ধরিয়ে দেবার জন্য আছে অক্লান্ত কালের কন্ঠ তাই এই কড়া প্রতিযোগীতায় প্রথম আলো যতই কোনঠাসা হয়ে যাচ্ছে ততই খেলার চেয়ে বেশী তাদের ক্লাবের পরিচয় ড্রেসিং রুমের খবর বের হচ্ছে এবং স্বাভাবিক ভাবেই সবই বিতর্কিত। দর্শকের মনেও সন্দেহ দানা বাঁধছে এবং প্রচুর ফাউলের শিকার দলটির খেলোয়াড়দেরও মনোবলে সমস্যা সৃষ্ঠির সাথে সাথে দলীয় কোন্দল বেধে যাচ্ছে এবং অনেক নামী দামী খেলোয়াড় দল ছেড়ে চলে গিয়ে দলটিকে গোয়াড় খেলোয়াড় নির্ভর করে ফেলছে। এ সবের ফলাফল দেখা গেল যে ইউনুস কাপে! প্রথম আলো প্রাণপণ চেষ্টা করেও কালের কন্ঠের কাছে শিরোপা খুইয়ে বসলো। ফল হলো ০-১! আর শুরু হলো মাঠের বাইরের খেলা।

আর এদিকে কালের কন্ঠও নিয়মিত কলামে ফাউল খেলে যাচ্ছে যার কারনে রিসেন্টলি হলুদ কার্ডও দেখেছে। কালের কন্ঠ হল্যান্ডের মত খেলে স্পেনের মত জয়ী হয়ে গেল। ফিফায় এখন নিয়মিত বৈঠক করে বিচার-আচার শুরু হয়েছে। প্রথম আলো যতই তার পুরনো দর্শকপ্রিয় ন্যাচেরাল পারফর্ম্যান্স ভুলে যাচ্ছে কালের কন্ঠ ততই দর্শক টানছে। মাঠে বর্তমানে প্রচুর নোটিশ-বেয়াদবী মানে ফাউল এবং হলুদ কার্ড নিয়মিত দেখা যাচ্ছে যা শুদ্ধ খেলা প্রেমিক দর্শকদের জন্য দুঃখজনক বিষয় কারন আমরা খেলা দেখতে চাই মাঠে মানে সংবাদ পরিবেশনের মাঝে দিয়ে।

তাই খেলোয়াড়দের ও কোচদের বলি। নিজেদের বা কর্তৃপক্ষের নীতি ভুলে যেয়ে সত্যিকারের দর্শকদের জন্য খেলুন! আপনারা ক্লাব কর্তৃপক্ষকে বলুন যেন ওনারা নিজেদের স্বার্থ খেলার বাইরে ব্যাবসার মাঝেই রাখে নইলে এই অসুস্থ খেলার কারনে দর্শকদের সমস্যা হচ্ছে । আমি নিশ্চিত খেলোয়াড় ও কোচদের জন্যও এমন ঘটনা সুখকর নয়।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।