আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অযত্ন-অবহেলায় হতশ্রী হয়ে পড়েছে ফেনীর ঐতিহ্যবাহী রাজাঝির দীঘি



অযত্ন-অবহেলায় হতশ্রী হয়ে পড়েছে ফেনীর ঐতিহ্যবাহী রাজাঝির দীঘি। দীঘির চারপাশের প্রতিরোধক দেয়ালের (রিটেইনিং ওয়াল) বেশ কিছু অংশ ভেঙে গেছে। প্রতিনিয়ত ফেলা হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা। ফলে শত বছরের পুরোনো দীঘিটি ধীরে ধীরে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। সূত্র জানায়, প্রায় সোয়া এক শ বছর আগে এ দীঘির পাড়ে গড়ে ওঠে ফেনী মহকুমা সদর দপ্তর।

তার আগে মহকুমা সদর দপ্তর ছিল বর্তমান শহর থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে দেওয়ানগঞ্জে। দীঘির উত্তর-পশ্চিম কোণে ছিল মহকুমা প্রশাসকের বাংলো, পশ্চিম পাড়ে ফেনী থানা, কোর্ট মসজিদ ও সরকারি দপ্তরসমূহ, দক্ষিণ পাড়ের দুই কোণে দুটি ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, পূর্ব পাড়ে সাবজজ আদালত ভবন গড়ে ওঠে। উত্তর পাড়ে ছিল সড়ক ও জনপথ বিভাগের পরিদর্শন বাংলো। যেটি সার্কিট হাউস হিসেবেই পরিচিত ছিল। দীঘির উত্তর-পূর্ব কোণে গড়ে তোলা হয়েছে একটি ছোট্ট শিশুপার্ক।

জানা যায়, গত দুই দশক থেকে ফেনী জেলা পরিষদ আয় বাড়াতে দীঘিটিকে মাছচাষের জন্য ইজারা দিয়ে আসছে। ইজারাদাররা তাদের প্রতিনিয়ত নানা ধরনের মাছের খাদ্য দীঘিতে ফেলছে। এতে দীঘির পানি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। জেলা পরিষদ সূত্র জানায়, দীঘিটি কখন খনন করা হয়েছে তার কোনো নথি (রেকর্ড) জেলা পরিষদে নেই। তবে সিএস রেকর্ডমূলে দেখা যায়, এটি ছিল নোয়াখালী জেলা বোর্ডের মালিকানাধীন সম্পত্তি।

দীঘির আয়তন ১০ একর ৩২ শতক। ১৯৮৪ সালে ফেনী জেলা হলে দীঘির মালিকানা ফেনী জেলা পরিষদের কাছে ন্যস্ত হয়। দীঘি খননের পর থেকে চারপাশে তিন ফুট উঁচু প্রতিরোধক দেয়াল নির্মাণ করা হয়। ১৯৯১ সাল থেকে দীঘি ইজারা দেওয়া শুরু করে জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ। প্রথমে চার মাস অন্তর ইজারা দেওয়া হতো।

তখন দীঘিতে শুধু মাছশিকারিদের বড়শি প্রতিযোগিতা হতো। ১৯৯৯ সাল থেকে জেলা পরিষদ মাছচাষিদের কাছে দীঘিটি তিন বছর মেয়াদে ইজারা প্রথা চালু করে। তখন থেকে দীঘিতে মাছের খাদ্য ফেলা শুরু হয়। সর্বশেষ তিন বছরের জন্য দীঘি ইজারা দেওয়া হয়েছে ভ্যাট ও আয়কর ছাড়া ১৩ লাখ ১৩ হাজার ১৩ টাকায়। স্থানীয় লোকজন জানান, কয়েক বছর ধরে দীঘির দক্ষিণ ও পূর্ব পাড় হকাররা দখল করে ব্যবসা করছে।

অপর দিকে পশ্চিম পাড়ের বিরাট অংশ ও উত্তর পাড়ের পশ্চিম অংশের প্রতিরোধক দেয়াল ভেঙে দীঘিতে পড়ে গেছে। এতে বর্ষায় বৃষ্টির পানির সঙ্গে ময়লা-আবর্জনা পড়ে দীঘিটি ধীরে ধীরে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। পশ্চিম পাড়ে মসজিদের সামনে মুসল্লিদের অজু করার ঘাটের পাশেই দীঘির ভেতর ময়লা-আবর্জনা পড়ে থাকে। সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুর রহমান বলেন, ঐতিহ্যবাহী রাজাঝির দীঘি যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে দিন দিন সৌন্দর্য হারাচ্ছে। এ দীঘি রক্ষায় দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।

নবনির্বাচিত পৌর মেয়র নিজাম উদ্দিন হাজারী বলেন, অযত্ন-অবহেলায় ঐতিহ্যবাহী রাজাঝির দীঘি এখন ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। দীঘির সৌন্দর্য রক্ষায় সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। ফেনী জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ এস এম মৈনুর বলেন, চলতি বছর দীঘির উত্তর পাড়ের ভাঙা অংশের মেরামতের জন্য সাড়ে আট লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। জেলা পরিষদের আর্থিক সংকট রয়েছে তাই এ বছর পশ্চিম পাড়ের ভাঙা অংশ মেরামত করা সম্ভব হবে না।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।