আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সোজা কথা : জন্মেই ভাগ্য লেখা ছিল না



আমি একজন হতভাগ্য। আসলে আমি হতভাগ্য নয়, আমার জন্মই আমাকে হতভাগ্য করেছে। তারপরও আমি চেষ্টা চালিয়ে যাব বলেই ঠিক করেছি। সরকারি চাকুরি আমাকে পেতেই হবে। আমার বাবা নিজে সরকারি চাকুরি করতেন।

তাই তার অনেক ইচ্ছা তার ছেলেও সরকারি চাকুরি করবে। আমার নিজেরও স্বপ্ন একটি সরকারি চাকুরি করা। কিন্তু মাঝে মধ্যে মন খুব খারাপ হয়ে যায়, হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়ি। যখন দেখি, বিশ্ববিদ্যালয়ের আমার চাইতে ফালাফলে পিছিয়ে থাকা সহপাঠীটি মোটামুটি নিশ্চিত যে সে প্রথম শ্রেনীর সরকারি চাকুরিজীবি হতে পারবে। সোজা কথায় আমি সরকারি চাকুরিতে ৫৫ শতাংশ কোটা প্রথাকে অবিচার বলে মনে করছি।

শুনেছি বাবা মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিতে গিয়েছিলেন। কিন্তু দাদার একমাত্র ছেলে হওয়াতে এবং বয়স কম হওয়াতে স্থানীয় মুক্তিবাহিনীর প্রধান বাবাকে মুক্তিবাহিনীতে নেননি। বাবা মুক্তিযুদ্ধ করতে পারেন নি, এটার জন্যে কি আমি ফল ভোগ করব! আমিও কোটা প্রথার পক্ষে। দেশের জন্যে যারা জীবন বাজি রেখে লড়েছেন, যারা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী বা ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী তাদেরকে উন্নয়নের পথে নিয়ে আসার জন্যে এটা দরকার। এখানে বিষয় হচ্ছে, কি পরিমান কোটার দরকার? এবং তাদের কারনে মেধাবীরা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।

বর্তমানে সরকারি চাকুরির ক্ষেত্রে ৫৫ শতাংশ কোটার মধ্যে ৩০ শতাংশ কোটা রয়েছে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্যে। আপনারা কি বিশ্বাস করেন দেশের মোট জনগোষ্ঠীর ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধার পরিবার? অবশ্য এখন অনেকেই মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট কিনছেন। চারজোট সরকারের সময়ও একশ্রেনীর অসাধুচক্র এ কাজ করেছে, এই সরকার আসার পরে এটা আরো বেড়েছে। মাস দুয়েক আগে একটি জাতীয় দৈনিকে লাল অক্ষরে খবর হয়েছে, হিসেবের চাইতে বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা অনেক বেশী। দূর্নীতির মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট বের হচ্ছে।

খবরটি প্রকাশ হওয়ার পর মন্ত্রনালয় থেকে সার্টিফিকেট দেয়া বন্ধ ছিল। এরই মধ্যে কিছুদিন আগে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষনা দিয়েছেন, মন্ত্রনালয়ে আটকে থাকা সব মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট রিলিজ করে দিতে। আমার মতো কোটাবিহীন সকল নাগরিকই প্রধানমন্ত্রীর এ কথায় অবাক হয়েছেন। ৩০ শতাংশ কোটা পূরন হয় না বলে, তিনি এরই মধ্যে ঘোষনা দিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনীরাও কোটা পাবেন। এখন আবার গনহারে মুক্তিযোদ্ধা বানানো শুরু করেছেন।

দেশ পরিচালকরা দেশের নাগরিকদের মধ্যে আপনারা ভাগ করে দিচ্ছেন। এ ধরনের স্বিদ্ধান্তের মাধ্যমে ভোট প্রাপ্তির যে স্বপ্ন আপনারা দেখেন এর ফলে সুযোগবঞ্চিত জনগন সত্যি ক্ষেপে যাবেন। ১৯৭২ সালের ৩রা মার্চ মাওলানা ভাসানীর প্রকাশিত ‘সাপ্তাহিক হক কথা‘ থেকে মাওলানার একটি উদ্ধৃতি দিলাম, “‌‌‌‌’জনগনকে ক্ষ্যাপা করে লাভ নেই। পাগলা কুকুর ক্ষিপ্ত হলে একাই কতজনের সর্বনাশ সাধন করে। ঠিক তেমনি মানুষও পাগল হলে শিকলকে ভয় করে না-ক্রোধে ফেটে পড়ে।

’” নারী কোটা, উপজাতি কোটা, প্রতিবন্ধী কোটার পরিমান অনুযায়ী ঠিক আছে। কেননা শত বছর ধরেই আমাদের বাঙ্গালী মুসলমান সমাজে নারীরা পিছিয়ে ছিল। তাদেরকে পুরুষদের সমান অধিকার প্রাপ্তির পূর্ব পর্যন্ত বাড়তি সুযোগ দিতেই হবে। বর্তমানে নারী কোটা রয়েছে ১০ শতাংশ। দেশের অভ্যন্তরে জাতিগত বৈষম্য দূর করার জন্যে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীকে অবশ্যই বাড়তি সুযোগ দিতে হবে।

বর্তমানে উপজাতি কোটার পরিমান ৫ শতাংশ। আবার জেলা কোটা রয়েছে ৫ শতাংশ। দুঃখের বিষয় এক এক সরকারের সময় এক এক এলাকার জেলার মানুষ এ সুবিধা ভোগ করেন। আর প্রতিবন্ধী কোটা রয়েছে ৫ শতাংশ। যা যথাযত।

আমি নিজে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সময় দেখেছি, ফলাফলের ভিত্তিতে আমার অবস্থান ছিল ৪শত তম। পেয়েছি রাস্ট্রবিজ্ঞান বিষয়। আবার ৪০৩ তম হয়েও শুধু মুক্তিযোদ্ধার ছেলে হওয়াতে আমার সহপাঠী বন্ধু পেয়েছে অর্থনীতি। তার পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা অনেক ভাল। আমি কেন পেলাম না? আমার জন্ম একজন অমুক্তিযোদ্ধার ঘরে হওয়াতে? আমার জন্মেই কি তাহলে সরকারি চাকুরির ভাগ্য ছিল কঠিনভাবে! আমার এই পুরনো বন্ধুটি স্কুলে থাকতে কয়েকজন গৃহশিক্ষকের কাছে পড়তো।

কিন্তু কখনো আমার চেয়ে ক্লাসে ভাল ফল করতে পারেনি। আমি লড়াই করেছি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে লড়াইয়ে পিছিয়ে গেলাম। কষ্টসাধ্যভাবে দ্বিতীয় শ্রেনীতে সম্মান পাশ করে এখন বন্ধুটি নিশ্চিত হাসি দিচ্ছে। তার সরকারি চাকুরিও যে মোটামুটি নিশ্চিত।

সেদিন আমার সঙ্গে দেখা হলে বলল, মুক্তিযোদ্ধা কোটার ১০ শতাংশই নাকি পুরোপুরি পূরন হয়না! কোন রকমে পাশ নাম্বার উঠাতে পারলেই হবে। সংশ্লিস্টরা বিশ্বাস করেন, এই বন্ধুর চেয়ে আমি অনেক যোগ্যতাসম্পন্ন। এ ধরনের লোক নিয়ে আপনারা দেশের প্রশাসনিক যন্ত্রটিকে বিকল করে দিচ্ছেন। আর মুক্তিযোদ্ধার ছেলে নই বলে আমার মধ্যে দেশপ্রেমেও কোন কমতি নেই। সংশি­ষ্টদের প্রতি একটি সোজা প্রশ্ন, যে শিক্ষার্থীটি কোটার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে, আবার কোটার মাধ্যমে চাকুরি করবে তার জ্ঞানার্জনের সম্ভাবনাকে কি আপনারা নষ্ট করে দিচ্ছেন না?


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।