আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ব্যবসায়ী আমিনুল হত্যাকাণ্ড : ২ আসামীতেই সন্তুষ্ট তদন্ত কর্মকর্তা কাদের রক্ষা করতে পুলিশের তড়িঘড়ি



রাজশাহী মহানগরীর ধনাঢ্য ব্যবসায়ী আলহাজ্ব আমিনুল হকের লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডে আত্মস্বীকৃত দুই খুনির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীর সাথে ডাক্তারের দেয়া ময়নাতদন্তের রিপোর্টের কোন মিল না থাকায় এই মিশনের একাধিক কিলার থাকার বিষয়টি জোরালো হচ্ছে। নিহতর পরিবারও প্রথম থেকে একই দাবী করে আসছে দুজনের পক্ষে ব্যবসায়ী আমিনুলের মতো একজন বলবান মানুষকে জবাই করা সম্ভব নয়। অথচ নগরবাসীর ও নিহত’র পরিবারের এই দাবীটির ব্যাপারে পুলিশের কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। আসামীদের দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীর বাইরে পুলিশ না গিয়ে তড়িঘড়ি করে চার্জশিট দেয়ার পায়তারা করছে। একটি পক্ষের রাজনৈতিক চাপে পুলিশ এই মামলাটি দ্রুত চার্জসিট দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

ফলে আত্মস্বীকৃত দুই খুনি সারোয়ার ও হাকিম বাদে এই ঘটনার সাথে যদি কেউ জড়িত থাকে তাহলে তারা পার পেয়ে যাবে। আমিনুল হক হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের গডফাদারদের বাঁচাতেই পুলিশ কাজ করছে বলে অনেকেই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন। কেননা পুলিশ যত তাড়াতাড়ি চার্জশিট দেয়ার কথা বলেছে এতো দ্রুত কোন হত্যা মামলার চার্জশিট দেয়ার নজির নেই। রাজশাহী মহানগরীর অনেক হত্যা মামলা মাসের পর মাস ঝুলে আছে কিন্তু সে সব মামলার চার্জসিট দেযার কোন খবর নেই। অথচ মামলার কর্মকর্তাু দুই আসামী নিয়েই সন্তোষ থেকে চার্জশিট দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

রাজশাহী মহানগরীর কুমারপাড়া এলাকায় প্লাষ্টিক ব্যবসায়ী সারোয়ারের বাড়ী থেকে ধনাঢ্য ব্যবসায়ী আলহাজ্ব আমিনুল হকের ৯ টুকরো লাশ উদ্ধারের পর থেকে পুলিশ সব কাজ খুবই দ্রুত করার চেষ্টা করছে। একারণে অনেক বিষয় পুলিশের সামনে আসছেনা। যেমনটি আসেনি সারোয়ারের বাড়ী থেকে আমিনুল হকের ৯ টুকরো লাশ উদ্ধারের সময় সেখানে পড়ে থাকে রক্তমাখা লুঙ্গি ও এক জোরা গ্লোভস। এ দুটি জিনিস পুলিশের চোখ থেকে এড়িয়ে গেছে। নিহত আমিনুলের ছোট ভাই ইকবাল-এর দাবি, আমিনুলের দাফন শেষে সন্ধ্যায় সারোয়ারের বাড়িতে গিয়ে রক্তমাখা কাপড় ও এক জোড়া গ্লোভস পড়ে থাকতে দেখেন তিনিসহ অনেকেই।

কিন্তু পুলিশ কেন এ দুটি জিনিস জব্দ করলো না এই নিয়ে প্রশ্ন তুলেন নিহত আমিনুলের ভাই ইকবাল। শুধু তাই নয় নিহত আমিনুলের লাশের সাথে গ্রেফতার সারোয়ার ও হাকিম বাদে বিভিন্ন স্থান থেকে আরো তিনজনকে আটক করে। আটকের পর ৫ জনকে থানায় নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে সারোয়ার ও হাকিমকে আদালতে পাঠিয়ে ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। কিন্তু রিমান্ডের শুনানির আগেই আসামীদের দিয়ে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী নেয়া হয়।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই রাজ্জাক জানান, আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়ার পর আসামীদের সাথে নতুন করে কথা বলার আর কোন সুযোগ নেই। তাহলে পুলিশ আসামীদের রিমান্ডে এনে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ না করে তড়িঘড়ি করে আসামীদের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী রেকর্ড করার উদ্দেশ্য কী? এই প্রশ্ন এখন রাজশাহী মহানগরীর আপামর জনসাধারণের। শুধু তাই নয়, ব্যবসায়ী আমিনুল হক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় রাজশাহী নগরীর আরডিএ মার্কেটের মুদি ব্যবসায়ী আলি আহম্মেদ (৪৮), সারোয়ারের চাচা সোহরবার হোসেন (৫৫) এবং ভাই আনোয়ার হোসেনকে (৪৫) আটক করে। আদালতে সারোয়ার ও হাকিম ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়ার পর তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। এদিকে আমিনুল হকের আত্মস্বীকৃত খুনি সারোয়ারের স্ত্রী নার্গিস ও তার এক শিশু পুত্র ঘটনা ঘটার পর থেকে নিখোঁজ রয়েছে।

তাদের ধরতে পুলিশ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে তারা দাবী করছে। তবে এখানে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সত্যি কী নার্গিস ও তার শিশু পুত্র ৫০ হাজার টাকা নিয়ে ঢাকায় পাড়ি জমিয়েছে নাকি কোন অশুভ শক্তি তাদের জিম্মি করে সারোয়ার ও হাকিমকে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিতে বাধ্য করিয়েছে। বিষয়টি পুলিশের সময় নিয়ে তদন্ত করে দেখা উচিত বলে মনে করেন সাবেক এক পুলিশ কর্মকর্তা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, সারোয়ার ও হাকিমের ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীর উপর নির্ভর করে দ্রুত চার্জশিট দেয়ার কোন মানে হয়না। কেননা এই মামলার অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিতে পারে সারোয়ারের স্ত্রী নার্গিস।

তাদের খুঁজে বের করতে পারলে এই হত্যাকাণ্ডের সাথে কেউ যদি জড়িত থাকে তাহলে তাদের মুখোশ উন্মোচিত হওয়ার একটা সম্ভাবনা থাকবে। আর তড়িঘড়ি করে চার্জশিট দিলে নেপথ্যের খলনায়েকেরা পর্দার আড়ালেই থেকে যাবে। কেননা ডাক্তারের ময়না তদন্তের রিপোর্টে একটা জিনিস পরিষ্কার যে, ব্যবসায়ী আমিনুলকে হত্যা করার আগে কোন ঘুমের ওষুধ খাওয়ানো হয়নি। তাকে সরাসরি জবাই করে হত্যা করা হয়েছে। পরে লাশ নদীতে ফেলে দেয়ার জন্য ৯ টুকরো করা হয়।

আর এ কাজ সারোয়ার ও হাকিমের দুজনের পক্ষে করা কী সম্ভব এই নিয়ে নগরজুড়ে চলছে আলোচনা সমালোচনা। সূত্র:নতুন প্রভাত

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.