আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নীল উৎসবে’ রঙিন হয়ে উঠেছে দক্ষিনের জেলা



নীল উৎসবে’ রঙিন হয়ে উঠেছে দক্ষিণের জেলা বরগুনার গ্রামগঞ্জ। চৈত্রসংক্রান্তি উৎসবে যেন মাতোয়ারা গ্রামগুলো। নানা রঙে সেজে পুরোনো বছরকে বিদায় জানাতে ও নতুন বছরকে বরণ করে নিতে গ্রামগুলো যেন উৎসবের আনন্দে মেতেছে। সেই সঙ্গে গ্রামগঞ্জের ও শহরের মহাজনি দোকানগুলো সেজেছে বাহারি রঙিন কাগজের ঝালর আর ঝলমলে জরিতে। চলছে পুরোনো দেনা পরিশোধের পালা—হালখাতা উৎসব।

দেনাদারদের মিষ্টিমুখ, পান ও বাহারি জর্দা দিয়ে আপ্যায়নের পালা। সব মিলিয়ে বাংলা নববর্ষকে সামনে রেখে শহর থেকে গ্রাম—সর্বত্র এক উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। বরগুনার গ্রামগুলোতে দলে দলে নীল পূজারিরা এখন অষ্টক উৎসবে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। এ উৎসবে যোগ দিতে গত ১৫ চৈত্র থেকে কমপক্ষে ১০০ অষ্টক পূজারি দল গ্রামেগঞ্জে, হাটে-বন্দরে ছড়িয়ে পড়েছেন। তাঁরা বাদ্যযন্ত্র নিয়ে নৃত্য করছেন আর মানুষকে আনন্দে ভাসাচ্ছেন।

জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাই শামিল হয়ে উপভোগ করছেন নীল নৃত্যের এই উৎসব। পুরোনো বছরের গ্লানি মুছে বাংলা নতুন বছরকে বরণ করে শুদ্ধভাবে পথ চলার আহ্বান জানাতেই চিরায়ত বাংলার একটি ঐতিহ্যমণ্ডিত উৎসবের নাম—‘নীল নৃত্য’। সনাতন ধর্মের ভাষায় নীল পূজারি দলকে বলা হয় অষ্টক উৎসবের পূজারি। বরগুনা সদরের খাজুরতলা, লাকুরতলা, বদরখালী, গৌরিচন্নাসহ বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বাহারি রঙে রঙিন হয়ে এবং রাধা-কৃষ্ণ ও হনুমানের আকৃতি ধারণ করে গ্রামগুলোতে ঢোল-বাদ্যি নিয়ে নৃত্যে মেতে উঠেছেন অষ্টক পূজারিরা। তাঁদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছেন এলাকার নারী, শিশু, বৃদ্ধসহ সব ধর্মের লোক।

এ যেন এক মহামিলন মেলা। যেখানে ধর্মের জাতপাত ভুলে সবাই একাকার হয়ে যান রঙিন আনন্দে। নৃত্য শেষে যে যার মতো আর্থিক সাহায্য দেন অষ্টক দলকে। নীল নৃত্য আবহমান বাংলার ঐতিহ্য হলেও তা ক্রমে বিলুপ্ত হতে বসেছে। সদর উপজেলার বদরখালী গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা নারায়ণ চন্দ্র বলেন, ‘আগে চৈত্র মাস শুরু হলেই ঘরে ঘরে নীল নৃত্য ও রামযাত্রার আয়োজন করা হতো।

আয়োজন করা হতো নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা। কত ফুর্তি ছিল তখন গ্রামে! এখন এর কিছুই অবশিষ্ট নেই, মানুষ যান্ত্রিক হয়ে গেছে। ’ অষ্টক দলের দলনেতা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার চরদুয়ানী ইউনিয়ানের বাসিন্দা সুরেন চন্দ্র গাইন বলেন, ‘আমরা দলের ১২ জন সদস্য ঢোল, চাকি, হারমোনিয়াম, বাঁশিসহ বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র নিয়ে পাথরঘাটার গ্রামগঞ্জে অষ্টক উৎসব করছি। ’ তিনি বলেন, ‘রাধাকৃষ্ণের ভালোবাসাকে মানুষের মাঝে বিলিয়ে দিতে আমরা মানুষের ঘরে ঘরে যাই এবং আনন্দময় পরিবেশে নতুন বছরকে স্বাগত জানাই। ’ বাংলা নববর্ষকে বর্ণিলরূপে বরণ ও চৈত্রসংক্রান্তিকে বিদায় জানানোর চিরায়ত রেওয়াজ অনুসারে বাঙালি সংস্কৃতিকে যুগ যুগ ধরে এভাবেই সজীব ও আনন্দমুখর রেখেছেন এ অঞ্চলের অষ্টক উৎসবের নীল পূজারিরা।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।