আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আজ ভারত-পাকিস্তান ‘সেমি’ফাইনাল



কাশ্মির,কারগিল, হোটেল তাজ। এগুলো এক একটি নামই শুধু নয়। এই নাম গুলোর পেছনে রয়েছে অনেক রক্তের ইতিহাস। এসব নামের কারণেই এই উপমহাদেশের দুই পরাশক্তি ভারত এবং পাকিস্তানের এক ধরনের বৈরী সম্পর্ক বিদ্যমান। এই বৈরী সম্পর্কটা এতটাই জটিল যে, দু দেশের রাজনীতির কাছে হার মেনেছে বিশ্বের ভদ্রলোকের খেলা হিসেবে খ্যাত ক্রিকেটও।

জীবনের যেখানে নিরাপত্তা নেই সেখানে ক্রিকেট আবার কি? অথচ এক সময় দু দেশের বৈরী সম্পর্কের বরফ গলাতে ক্রিকেটকেই বেছে নেওয়া হয়েছিল সবচাইতে বড় মাধ্যম হিসেবে। কিন্তু ২০০৮ সালে মুম্বাই এর হোটেল তাজে বোমা হামলার পর সেই ক্রিকেটও দু দেশের বৈরী সম্পর্কের যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে গেল। দীর্ঘ দিন পর আবারো ভারতের মাটিতে ভারত এবং পাকিস্তান ক্রিকেট মাঠে নামচে আজ। আর দু দলের এই ক্রিকেট ম্যাচটা এমনই এক ম্যাচ যা ক্রিকেট বিশ্বের কাছে স্বপ্নের এক ম্যাচ। যেন বিশ্ব ক্রিকেটের জন্য আরাধনার ধন।

বিশ্বকাপের ভারত- পাকিস্তান ফাইনাল ক্রিকেট বিশ্বে এখনো স্বপ্নের চেয়েও বেশী। কিন্তু সে স্বপ্নের ফাইনাল হচ্ছেনা এবারও। তবে সেমিফাইনালতো হচ্ছে। হোকনা সেমিফাইনাল। ফাইনালের চেয়ে কম কি এই ম্যাচটি।

আর ভারত-পাকিস্তান আজকের সেমিফাইনাল কে ঘিরে পুরো ক্রিকেট বিশ্ব যেন উত্তেজনায় কাঁপছে। কাঁপবেইতো, কাঁপাটাই স্বাভাবিক। ভারত- পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচ যে শুধুই একটি ক্রিকেট ম্যাচ নয়। ক্রিকেটের বাইরেও অনেক কিছু। সেই অনেক কিছুর এক ম্যাচে আজ মোহালীতে মুখোমুখি হচ্ছে বিশ্ব ক্রিকেটের দুই পরাশক্তি ভারত এবং পাকিস্তান।

বিশ্বকাপের স্বপ্নের ট্রফিজয়ের স্বাদ দু দলই নিয়েছে একবার করে। তবে তা অনেক পুরানো দিনের কথা। সেই ৮৩ তে কপিল দেবের হাতে এবং ৯২ তে ইমরান খানের হাতে বিশ্বকাপের ট্রফি শোভা পেয়েছিল। এরই মাঝে অনেক সময় গড়িয়েছে। অনেক জল গড়িয়েছে গঙ্গায়।

বিশ্বকাপ ট্রফির কাছে দু দলই গিয়েছিল একবার করে। কিন্তু ট্রফিটা ধরা হয়নি। তবে এবার আরো একবার সুযোগ এসেছে দু দলের সামনে। তবে তার আগে আজ এক দলকে বিদায় নিতে হবে বিশ্বকাপ ফাইনালের আগে। সন্দেহ নেই আজকের ম্যাচের পর বিশ্বকাপ ক্রিকেট অর্ধেকটা বিবর্ণ হয়ে পড়বে তার রং হারিয়ে।

ভারত -পাকিস্তান নেই মানেতো বিশ্বকাপের আশি ভাগই নেই। তাও এই উপমহাদেশের বিশ্বকাপে এই দুই দলকে ছাড়া বিশ্বকাপ বেশীর ভাগই মলিন। তারপরও আজকের ম্যাচকে ঘিরে পাক-ভারত তো বটেই পুরো ক্রিকেট বিশ্ব কাপছে রোমাঞ্চ এবং উত্তেজনায়। ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট মানে ক্রিকেটের সব রং রস যেন পসরা সাজিয়ে বসে থাকে। উত্তেজনায় কাঁপতে থাকে এই উপমহাদেশের দেড়শ কোটি মানুষ ছাড়াও বিশ্বের কোটি কোটি ক্রিকেট ভক্ত।

কারণ আগেই বলেছি ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচ নিছক কোন একটি ক্রিকেট ম্যাচ নয়। ক্রিকেটের বাইরেও অনেক কিছু থাকে এই ম্যাচে। বিশ্ব ক্রিকেটে অনেক বড় বড় তারকার লড়াই প্রতিনিয়ত দেখছে ক্রিকেট বিশ্ব। কিন্তু শোয়েব আখতার এবং শচীনের লড়াই এর কথাটা একবার ভাবুনতো। কতটা রোমাঞ্চ জাগায় মনের মধ্যে।

কিংবা আফ্রিদী- সেওয়াগের দ্বৈরথের কথা চিন্তা করুনতো কেমন শিহরণ জাগে। আজ বিশ্বকাপেতো বটেই বিশ্ব ক্রিকেটের শিহরণ জাগানো সেই ম্যাচে যেখানে শোয়েবের বাউন্সারে হুক মারছেন শচীন টেন্ডুলকার কিংবা শোয়েবের ইয়র্কারে ছত্রখান হয়ে গেছে শচীনের স্টাম্প। এমন দৃশ্য কার না দেখতে ইচ্ছে করে ? আজ মোহালীর পাঞ্জাব ক্রিকেট এসোসিয়েশন স্টেডিয়াম যেন শুধু ক্রিকেট মাঠে সীমাবদ্ধ থাকছেনা। এই স্টেডিয়ামটি আজ যেন পরিণত হচ্ছে এক মহা মিলন মেলায়। যেখানে বিশ্বের ক্রিকেট কর্তা, ক্রিকেট গ্রেট ছাড়াও ভারত - পাকিস্তানের হাজারো ভি ভি আই পি এবং ভি আই পি র সমাবেশ ঘটবে।

থাকছেন দু দেশের সরকার প্রধান থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ সব অতিথি। ভারত-পাকিস্তানের সীমান্তগুলোর মধ্যে পাঞ্জাবের ওয়াগা সীমান্তকে সবচাইতে শান্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। সেই ওয়াগা সীমান্তের দু পাশে এখন হাজার হাজার ভারত-পাকিস্তানীর ভীড়। তবে সৌভাগ্যের সিকি ছিঁড়েনি বেশীর ভাগ মানুষের। কারণ মাত্র ৪৫ হাজার সৌভাগ্যবান দর্শক এই ম্যাচের স্বাক্ষী হতে পারবে আজ।

নিরাপত্তার কারনে হয়তো তাও কমে যেতে পারে। তারপরও ভারত-পাকিস্তান ম্যাচকে ঘিরে উৎসাহ আনন্দ, উচ্ছ্বাস এবং উত্তেজনার কমতি নেই বিশ্বজুড়ে। মোহালী এখন ক্রিকেটের স্বর্ণভূমি। এমন শিহরন জাগানো ম্যাচ আয়োজন করতে পারা মোহালী যেন ক্রিকেট ইতিহাসের একটা গৌরবময় অংশ হয়েই থাকল। বিশ্বকাপে ভারত -পাকিস্তান লড়াইয়ে শতভাগ সাফল্য ভারতের।

তবে মোহালীর কথা যদি বলতে হয় তাহলে এই স্টেডিয়ামের সাথে পাকিস্তানের বোধহয় একটা বন্ধুত্ব রয়েছে। কারণ ভারতের বিপক্ষে দুই মোকাবেলায় দুটিতেই জয় পাকিস্তানের। যার শেষটি ২০০৭ সালে ৮ নভেম্বর। ম্যাচটি জিতেছিল পাকিস্তান ৪ উইকেটে। কিন্তু ক্রিকেটে পরিসংখ্যানের নাকি তেমন কোন দাম নেই।

ক্রিকেট এমন এক গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা যেখানে ভবিষ্যদ্বাণী ভুল প্রমাণ হতে বেশী সময় নেয়না। আজ মোহালীতে ক্রিকেট তার গৌরবময় অনিশ্চয়তা নিয়ে ফিরে আসবে নাকি ইতিহাসের পক্ষে কথা বলবে? বলা হচ্ছে আজকের ম্যাচটা ভারতের ব্যাটিং এবং পাকিস্তানের বোলিং এর লড়াই। শচীন,সেওয়াগ দিয়ে শুরু হওয়া ভারতের ব্যাটিং লাইনতো শেষই হতে চায়না। তসবির দানার মত একের পর এক আসতেই থাকে। আর পাকিস্তানী বোলিং এ নেতৃত্ব দিচ্ছেন অধিনায়ক শহীদ আফ্রিদী।

আর সাথে সওয়ারী হিসেবে রয়েছে শোয়েব, ওমর গুল, রাজ্জাক, আজমল, হাফিজরা। বোলিং এ ভারতের জহির, মুনাফ, হরভজন, অশ্বিনদের পিছিয়ে রাখারও তো কোন সুযোগ নেই। ব্যাট হাতে পাকিস্তানী ব্যাটসম্যানরা তেমন ধারাবাহিক না হলেও মিডল অর্ডারে মিসবাহ, ইউনুচ, ওমর আকমলরা বদলে দিতে পারে ম্যাচের রং। শুরুতে হাফিজ, কামরান আকমলের ভাল সূচনার পর ঘুমিয়ে থাকা আফ্রিদী আর ভয়ংকর রাজ্জাকের ব্যাট যদি হাসে তাহলে জহিরদের কপালে ভাজ পড়ে যেতে বাধ্য। সব মিলিয়ে শক্তি সামর্থে দু দল যে খুব বেশী পিছিয়ে কিংবা ব্যবধানটা একেবারে বিশাল তা কিন্তু নয়।

তারপরও নিজেদের মাঠ হিসেবে ভারত যেমন এক দিক থেকে সুবিধা পাবে তেমনি চাপটাও নিতে হবে তাদের। আর পাকিস্তানতো খেলবে হারানোর সব ভয়কে ছুটি দিয়ে। আর নিজেদের গায়ে যে আনপ্রেডিক্টেবল তকমা লাগিয়ে রেখেছে তা যদি কাজে লাগাতে পারে তাহলেতো জয়ের লক্ষী পাকিস্তানের কোলে বসার সম্ভাবনাই বেশী। ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচ মানে ক্রিকেট ছাপিয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব। যত চেষ্টাই করা হোকনা কেন ম্যাচটাকে শুধু ক্রিকেটের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে তা কখনই সফল হয়না।

ক্রিকেট ছাপিয়ে এখানে যুদ্ধটাই সামনে চলে আসে। তাইতো ম্যাচটাকে ঘিরে নানা শংকা আর অঘটন দানা বেধে থাকে। অতীতে তার অনেক প্রমাণ রয়েছে। তাইতো দু দলের ক্রিকেটার এবং কর্মকর্তারা এই ম্যাচটাকে শুধুই একটি ক্রিকেট ম্যাচ হিসেবে দেখে তার মধ্যে যুদ্ধের উপাদান না খোঁজার আহবান জানাচ্ছে। কিন্তু কে শুনে কার কথা।

দু দেশের সরকার প্রধান থেকে শুরু করে সবাই এই ম্যাচকে ঘিরে স্বপ্ন দেখছে দু দেশের সম্পর্কের মাঝখানে যে অবিশ্বাসের দেয়াল তৈরি হয়েছে তা ভেঙে ফেলার। এই ম্যাচটাকে শান্তি আর সম্প্রীতির দুত হিসেবে দেখা হচ্ছে। কিন্তু এই ম্যাচটাকে পারবে শান্তির দূত হতে ? পারবে কি দু দেশের মাঝখানের অবিশ্বাসের দেয়াল ভাঙ্গতে ? তবে সবার আগে আজকের ম্যাচটা বিশ্বকাপের একটি সেমিফাইনাল ম্যাচ। হয়তোবা ম্যাচটি ভারত-পাকিস্তান বলে রংটা একটু ভিন্ন। আর সে ভিন্ন রঙের কারণ অনেক।

সে সবকে ছাপিয়ে আজ মোহালীতে শুধুই একটি ক্রিকেট ম্যাচ হতে পারে কিনা সেটাই দেখার বিষয়। যেহেতু ম্যাচটি নক আউট। এখানে এক দলকে বিদায় নিতেই হবে সে কারণেই ম্যাচটা দ্যুতি ছড়াচ্ছে বেশী। উত্তেজনার পারদটা বেশী হওয়ার আরো একটি কারণ সেটি। সব উত্তেজনার যবনিকা ঘটবে আজই।

যেখানে একজনের নামের পাশে লেখা হবে বিজয়ী বীর আর অন্য জন পরিণত হবে খল নায়কে। ক্রিকেটের অনিবার্য চরিত্রই এটি। সে চরিত্রের রংটা আরো বর্ণিল ম্যাচটা ভারত-পাকিস্তান বলে। আজ এক দলের বিশ্বকাপ শেষ হয়ে যাবে। ২ এপ্রিল মুম্বাই এর ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপ ট্রফি জয়ের ম্যাচে টস করতে কোন অধিনায়ক নামবে তারই ফায়সালা আজকের ম্যাচে।

যে মহারণের উত্তাপে পুড়ছে পুরো ক্রিকেট বিশ্ব। কারণ মহারণটা যে ভারত আর পাকিস্তানের।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।