আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভু টু ক চা নে র ডা য় রি ✍ এই পরবাসে আবারো ঈদ আসছে



⌚ তখন আমার ছোটবেলা চলছে। আমাদের মা পরিবারের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী! বাবা কেবল গুণমুগ্ধ প্রজার মতো নিয়মিত খাজনা দিয়ে যান। তা থেকেই মা পরিবার নামক এই ছোট সাম্রাজ্যের অর্থনৈতিক এবং পরিকল্পনা মন্ত্রনালয় সামলিয়ে চলেন। সেই স্বাভাবিক চলমানতায় গতি কিংবা ব্যাঘাত হয়ে আসতো ঈদ। কারণ সেই ঈদে আমাদের পরিবারের সাথে আরো যুক্ত হতো সাহায্যপ্রত্যাশি কিছু নতুন মুখ।

তখনকার ঈদে নতুন কাপড় অবধারিত ছিলো। আমাদের নিয়ে যাওয়া হতো শহরের রকমারী বিপনি বিতানগুলোতে। একে তো হঠাৎ শহরে তার উপর এতো এতো নতুন কাপড়! আমি যেনো ভেবাচ্যাকা খেয়ে যেতাম। যা কিছু দিনের পর দিন রাতের পর রাত ভেবে আসতাম কিনবো বলে, তার প্রায় সবই ভুলে যেতাম। দোকানী যা দেখাতো তাই ভালো লাগতো।

আমি শুধু কাপড় দেখতাম আর মায়ের মুখের দিকে তাকাতাম। আমি দেখতাম তবে মুল পছন্দের গ্রীন সিগন্যাল আসতো মায়ের কাছ থেকেই। তিনি পছন্দ করে আমাকে জিজ্ঞেস করতেন, আমি হেসে মাথা নাড়াতাম। এভাবেই কিনা হতো আমার ঈদের পোষাক। তবে মায়ের একটা বিশেষ পছন্দের কারণে আমাদের বেশ ভুগতে হতো।

তিনি আমাদের যা কিনে দিতেন তা বেশ বড় এবং লম্বা হতো। পেন্ট কিনলে যতদিন পর্যন্ত সেই পেন্টের সমান লম্বা না হয়েছি ততদিন পর্যন্ত ভাঁজ দিয়েই পড়তে হতো। শার্টের ক্ষেত্রেও সেই একই অবস্থা। সাইজে আসতে আসতে পুরনো হয়ে যেতো শার্টটা। তাও সেই নতুন কাপড়গুলো পড়া হতো বিশেষ বিশেষ দিনে।

আমরা মায়ের সেই সিস্টেমের সাথে পরিচিত হয়ে গিয়েছিলাম এবং মানিয়েও নিয়েছিলাম ছোটবেলা থেকেই। তারপর কত ঈদ এলাগেলো। বড়বেলাতেও ঈদ এসেছে, এখনও আসে। এই প্রবাসে কতগুলো ঈদ এসে চলেও গেলো, আবারো আসছে। আমি কেবল সেই অবুঝ বেলার না পাওয়ার দুঃখে কান্না আর পাওয়ার সুখে হাসিমাখা শৈশব হারানো বালকটাকে খুঁজি।

যার কাছে মায়ের দেয়া ভাঁজ করা লম্বা পেন্ট, ইন করা বড় শার্ট আর কখনো কখনো নতুন জোতা পরে ঘুরে ভেড়ানোর দিনটাকেই ঈদ মনে হতো। মনে হতো এই বুঝি ঈদ; এই বুঝি ঈদের আনন্দ! আজ প্যারিসের অলিগলিতে আমি আর কোনো লম্বা পেন্ট ভাঁজ দিয়ে পরা অবুঝ বালক দেখি না; কেবল দেখি এক যুবক ভীষণ ব্যস্ততা নিয়ে পথ হাঁটে। এখানে কেউ আর তার শার্টটা ছোট হওয়ার জন্য নিজেকে বড় বানাতে গাছের ডালে ঝুলে না; নতুন কাপড়ের দিন গুণে না। কেবল গুণে মাস শেষ হতে আর কতদিন বাকী! পকেটের হিসেবে প্রত্যাশার মিল হবে তো? নাকি আবারো আগামীতে হবে বলে কম্প্রোমাইজ করে নিতে হবে! এই যে প্রাপ্তি আর প্রত্যাশার মধ্যে অদৃশ্য সেতু, সে কেবল যেখানে ঝুলে থাকে। আর ভাবে, এবারের প্রেরিত অর্থে সবার প্রত্যাশা মিটবে তো! © ফরাসি বাঙালি অনলাইন কমিউনিটি আগের লেখাঃ ✍ রাতের ট্রেনে পিকাসো ও বাঙালি যুবক এবং আমার হ্যালুসিনেশন।

লিংকঃ Click This Link ✍ ঠিক সন্ধ্যায়; যখন প্যারিসে ঘণ্টা মিনিট ও সেকেন্ডের কাটা এক হয়! লিংকঃ Click This Link

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।