আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

টিল দ্যা সেকেন্ড

সরকারি হিসাবে গত পাচ দিনে সারা দেশে পুলিশসহ মারা গেছে ৬৭ জন। এ সময়ের মধ্যে ঘটে গেলো বিদুৎ স্টেশনে আগুন, রাস্তা কেটে ফেলা, ব্রিজের পাটাতন তুলে ফেলা, শহীদ মিনার ও মন্দির ভাঙচুড়, পুলিশ ফাড়ি ও হিন্দু ধর্মাম্বলীদের বাড়ি-ঘরে হামলা, অগ্নি সংযোগ, হত্যাকান্ড, বাসে-ট্রেনে আগুনসহ নজির বিহীন সহিংসতা। এ সবই অহেতুক এবং দু:সাহসীক একটি দাবিকে ঘিরে। এ দাবি অমানবিক। এ দাবি হতভম্ব করে দেয় আমার জাতিয়তাবোধকে।

ভাবতে অবাক লাগে আমাদের দেশের এক শ্রেনীর মানুষ মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচারে দন্ডাদেশপ্রাপ্ত রাজাকারদের "মুক্তির" দাবি করে। আমরা অনেকে সেটির প্রতি সহনুভুতি দেখায়। কত বেশি সাহস তাদের যে স্বাধীন বাংলাদেশের রাজপথে পরাজিত শক্তির এক বা একাধিক ব্যক্তিকে বাঁচাতে তারা জিহাদি মনোভাব দেখাতে হুঙ্কার দিয়ে উঠেছে। তাদের এই সাহস দেখানোর নেপথ্য কারণ অনুসন্ধানে নামলে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল দায় এড়াতে পারবেনা কোন ভাবে। পাল্লায় মাপলে তা কম-বেশি হবে বৈকি।

সেটি নিয়ে এখানে আলোচনা করা প্রাসঙ্গিক হলেও লেখা দীর্ঘায়িত করা অনুচিৎ। কিন্তু বাস্তবতা হলো, রাজাকারদের মুক্তির দাবিতে তারা রাজপথে নেমে চিৎকার করে বলার সাহস দেখালো, গ্রামের সহজ-সরল মানুষদের রাস্তায় টেনে আনলো, গুলির মুখে ঠেলে দিলো, ধ্বংসত্নক পরিবেশ তৈরি করলো, নিজেরা মরলো এবং ভীতগ্রস্হ করে তুললো গোটা দেশ । বাস্তবতা হলো, এদেশের প্রতিটি মানুষের মধ্যে রয়েছে ৭১ এর বিরোধী ব্যক্তি ও শক্তির প্রতি চরম ক্ষোভ ও ঘৃণা। অপরদিকে এই তারুণ্যের জোয়ার আরও বেশি সংগঠিত করে তুলেছে এ চেতনাকে। এ পরিস্থিতিতে বাঁচার কোন পথ খোলা নেই দন্ডাদেশ প্রাপ্ত এবং বিচারাধীন রাজাকারদের।

ট্র্যাবুনালের স্বচ্ছতা নিয়ে যতই প্রশ্ন থাকুক না কেনো, বর্তমানে গ্রেফতার ও পলাতক রাজাকাররা ৭১ সালে পাকিস্থানের পক্ষে থেকে যে মানবতা বিরোধী অপরাধে জড়িত ছিল, সেটি দিবালোকের মত পরিস্কার। তাদের নিয়ে কথা বলা এক ধরণের অসুস্থতার লক্ষণ। যদিও এখানে অস্বীকার করা যাচ্ছেনা, আওয়ামী লীগ রাজাকারমুক্ত একটি দল। তাদের দলেও নানা স্তরের রাজাকার আছে। সম্প্রতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী "একজন মন্ত্রী"র নাম উচ্চারণ করে প্রকাশ্যে সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন ৭১ এ ওই মন্ত্রীর ভুমিকার কথা।

কিন্তু এ মুহূর্তে তাদেরেকে আইনের আওতায় আনা যাচ্ছেনা, বা কেউ আদালতে মামলা করছেনা। এ মুহূর্তে সেটি নিয়ে আলোচনায় না গিয়ে দেশের সুস্থতা এবং সুরক্ষার প্রতি দৃষ্টি দেয়া বেশি জরুরি। গত কয়েকদিনে সবরকম মত ধারার দৈনিক পত্রিকা ও টিভি রিমোটের ঘুর্ণিপাকে যা দেখলাম এবং বুঝলাম, তা এক কথায় খারাপ। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির গতিপথ অনুধাবন করে মনে হচ্ছে জামাত শিবির ধীরে ধীরে আন্ডারগ্রাউন্ড পথ ধরতে শুরু করেছে। পরিবেশগত কারণেই তারা লোকালয়ে বা পরিচয় দিয়ে প্রকাশ্যে থাকাটা ঝুকিপূর্ণ বলে মনে করছে।

অপরদিকে "নাগরিক নিরাপত্তা" র নামে তাদেরকে খুজে বের করার প্রচেষ্টা শুরুর দিকে। পাড়া মহল্লায় এনিয়ে সচেতনতা ও সতর্কতা বৃদ্ধির পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানা গেছে। সব মিলিয়ে জামাত ও তাদের অঙ্গ সংগঠনগুলোর জন্য আসছে কঠিন সময়। এ অবস্থার মধ্যে যদি সরকার জামাত ও শিবিরকে আইন করে তাদের রাজনৈতিক রেজিস্ট্রেশন বাতিল করতে পারে, তবে তা হবে শাহাবাগ প্রজম্মর বিশাল একটি বিজয়। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে শিবিররা পুরোপুরি আত্নগোপনে চলে যেতে পারে বা আত্নসমর্পণ করার পথ বেছে নেয়ার সুযোগ খুজতে পারে।

তবে আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচন পর্যন্ত এটি অমিমাংসিত রেখে দেবে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। তবে জামাতকে "ট্র্যামকার্ড" হিসাবে রেখে দেয়ার মত রাজনৈতিক পরিবেশ এখন আওয়ামী লীগের নেই। কাদের মোল্লার যাবজ্জিবন রায় দেখে সাধারণ মানুষ এটিকে "বোঝাপড়া" রায় হিসেবে মনে করেছিল। সেই সন্দেহ বা ধারণা অয়ৌক্তিক নয়। যদি সেটিকে সঠিক বলে ধরেও নেই, তবে বর্তমান পরিস্থিতি এবং আওয়ামী লীগের বক্তব্য থেকে পরিস্কার তাদের সাথে কোন ভাবেই জামাতের সহ অবস্থান সম্ভাব নয় কোন কালেও।

অদূর ভবিষ্যতে যাই ঘটুক না কেনো, বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে স্বস্তিতে নেই জনগণ। কেননা ইতিমধ্যে গত দুইদিনের হরতালে চোরাগোপ্তা হামলার নানা নমুনা দেখিয়েছে জামাত। এমন অবস্থায় সরকার আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও কঠোর করে তুলতে সর্বাত্নক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে। এদিকে দেশের প্রধান বিরোধী দলের আপোষহীন "দর্শন" প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে নিদারুণ ভাবে । সব মিলিয়ে দেশের গতিপথ জন্ম দিচ্ছে নানা আশংকা।

এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পথ বের করা নিয়ে শুরু হয়েছে নানা পর্যায়ের আলোচনা। দুই নেত্রির একত্রে বসার কথা নিয়ে ভাবছেন বিজ্ঞজন। তবে এর পাশাপাশি এদেশের সাধারণ মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। সরকার এখন রাজনীতির মাঠ নিজেদের দখলে রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বারোপ করছে বেশি। সেটি ক্ষেত্রে তাদের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা বিএনপির চেয়ে অনেক উপরে।

তাদের রাজনীতির ধারা এবং সরকার পরিচালনার কৌশল নিয়ে কথা বলা চলেনা। এসময়ে বিএনপির জন্য উচিৎ হবে চলমান পরিস্থিতিতে ৭১ এর চেতনা নিয়ে তাদের আবেগ প্রকাশ করা, জিয়ার ভুমিকার কথা তুলে ধরার পাশাপাশি তরুণ প্রজম্মর আন্দলোনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে রাজাকারের বিচারের দাবিতে এক কাতারে শামিল হওয়া। এর পাশাপাশি তত্বাবধায়ক, নিরপেক্ষ বা বহুদলীও সরকার গঠনের বিষয়ে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রাখা। এই দাবির প্রতি অনঢ় থেকে রাজনৈতিক ভাবে মোকাবেলা করাটা তাদের ক্ষেত্রে জরুরী। উচিৎ হবে সাধারণ মানুষের অনুভূতি কাছ থেকে অনুধাবন করা।

বিএনপি খুব বেশি হরতাল দিতে থাকলে জনসমর্থন হারানোর আশংকা দেখা দেবে । কেননা চলমান পরিস্থিতিতে দেশের মানুষ নানা অশান্তি ও ভোগান্তি নিয়ে চরম বিরক্ত এবং শংকিত। বাস্তবতা হলো বিরোধী দলসহ দেশের মানুষ কান্দেকেটে মরে গেলেও হাসিনা আপা এক সেকেন্ড আগেও "গদি" ছাড়বেন না। ভুলে গেলে চলবে না বেগম জিয়াও ক্ষমতা আকড়ে রেখেছিলেন টিল দ্যা সেকেন্ড। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ক্ষমতা আকড়ে রাখা বা ভোগ দখল করার চেষ্টা নতুন কিছু নয়।

যত কেলেঙ্কারী বা ব্যর্থতা ফুটে উঠুক না কেনো, আমাদের রাজনীতিকদের ক্ষমতা না ছাড়ার প্রবণতা বিগত সরকার বা তারও পূর্ববর্তী সময় থেকে দেখে আসছে এদেশের মানুষ। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।