আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইট পাথরের দেশে

আমার আকাশ ছোয়াঁর ভীষণ ইচ্ছে...কিন্তু পারিনা!!! তাই মনের আকাশে রং বেরংয়ের ঘুড়ি উড়াই...প্রতিনিয়ত!

ষ্টেশনে এসে মনটা খারাপ হয়ে গেলো। আজও দেরী হবে। সেই পুরানো ঘটনা। কেউ একজন ঝাপ দিয়েছে চলন্ত টিউব-ট্রেনের সামনে। ট্রেন যখন ষ্টেশনে ঢুকতে যাবে তখনই ঘটে এ দুর্ঘটনা।

কি আর করা! সামনে পাতা চেয়ারে বসলাম। লাউঞ্জ স্পিকারে জানালো ২৫-৩০ মিনিটের মত লাগবে পুনরায় স্বাভাবিক ট্রেন চলাচল শুরু হতে। লেইটনষ্টোন থেকে ষ্টার্টফোর্ড মাত্র দুই ষ্টেশনের দূরত্ব। কিন্তু এরই মধ্যে গত তিন হপ্তায় এ নিয়ে পাচঁটি ঘটনা ঘটল এরকম। আত্নহত্যার ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে পুরো ইংল্যান্ড জুড়ে।

যেমন বেড়ে চলেছে ডিপ্রেসিভ রোগীর সংখ্যা। মহামারীর মত। সে কথাই আজ মনে করিয়ে দিল অ্যামান্ডা। আমার সহকারী নার্স। বলল, পল, হুইপস ক্রস হাসপাতালে তোমার বিভাগের রোগী সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি।

তা ঠিক। সাইকিয়াট্রিক স্পেশালিষ্টের রোগী এ দেশে বেশি থাকবে সেটাই স্বাভাবিক। এই রোগীগুলার কতধরনের সমস্যার গল্প থাকে। শুনতে শুনতে কখনো আনমনা হয়ে যাই। মনে হয় আমাদের এতো আছে তারপরও কিছুই নাই।

মাথাটা হঠাৎ করে কেমন জানি করে উঠল। জেনের কথা হঠাৎ করে মনে পড়ছে খুব। বোনটাকে দেখি না অনেকদিন। আইরিশ স্বামীর সাথে সে এখন আয়ারল্যান্ডের বাসিন্দা। গত গ্রীষ্মে শেষ দেখা হয়েছিল তার সাথে।

তার ফোটফোটে মেয়েটাকে দেখতে গিয়েছিলাম। পৃথিবীর এই একটা সম্পর্ক যেখানে কোনো দেনা-পাওনার হিসেব নাই। মা-বাবার যখন ডিভোর্স হয় তখন আমি ছিলাম ১২ বছরের আর ও ৮ বছরের। কেন জানি না ভীষণ মনে পড়ছে সেদিনটা। মা ছিলো ভীষণ সপাহোলিক।

সপিংয়ের নেশা। আর এ নিয়েই ছিল মা-বাবার সব ঝগড়া। দুজনই এখন দুই পৃথিবীর বাসিন্দা। তাদের আলাদা জগৎ। যে জগতে গেলে নিজেকে বড় অপ্রস্তুত মনে হয়।

তাই আস্তে আস্তে যোগাযোগটাও কমে এসেছে। তারুণ্যের চাঞ্চল্যে সে আঘাত ভুলে যাই যখন এমিলি আসে আমার এ জীবনে। আজ দুবছর হতে চলল সে ও চলে গেছে। জীবন হয়ত এমনই। অনেকে আসে, অনেকে চলে যায়।

কিন্তু আমি মেনে নিতে পারিনা কেন? অস্থিরতা লাগে। বিষাদময় এক অনুভূতি, যা চেপে বসছে আমার ঘাড়ে। অসাড় করে দিতে চাচ্ছে আমাকে। এ জীবন অর্থহীন লাগে। টিউবের অন্ধকার সুড়ঙ্গে চোখ চলে যায়।

আসছে, ট্রেন আসছে। আমি অনুভূতিহীনের মত উঠে দাড়াই। চোখ দুটো স্থির হয়ে আছে সেই উজ্জ্বল আলোর দিকে....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।