আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

০০৭ সম্প্রতি উইকিলিকসের বাংলাদেশ সম্পর্কে ফাঁস করা সকল তথ্য ০০৭



বাংলাদেশের গ্যাসকে 'গুটি' বানাতে চেয়েছিলো যুক্তরাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্র চেয়েছিলো, ভারত জ্বালানির জন্য ইরানের ওপর থেকে নির্ভরতা কমিয়ে আনুক। আর এর বিকল্প হিসেবে বাংলাদেশের গ্যাস সম্পদের কথা ভেবেছিলো তারা। স¤প্রতি উইকিলিকসের ফাঁস করা ২০০৫ সালের এক তারবার্তায় যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থানের কথা প্রকাশিত হলো। নয়া দিল্লিতে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত ডেভিড সি মুলফোর্ড তার দেশের তখনকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী কন্ডোলিজা রাইসকে এ তারবার্তা পাঠিয়েছিলেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী নটবর সিংয়ের ওয়াশিংটন সফরের আগে সম্ভাব্য আলোচনার বিষয়বস্তু নিয়ে ওই বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর রাইসকে একটি ধারণা দিয়েছিলেন মুলফোর্ড।

তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়, জ্বালানির জন্য ওপর নির্ভরতার সুযোগে ভারতের ওপর ইরান প্রভাব বাড়াতে পারে, যা দক্ষিণ এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের বিপক্ষে যায়। ওই সময়ে ভারতে গ্যাস রপ্তানি নিয়ে বাংলাদেশে আলোচনাও উঠেছিলো, যার প্রতিবাদ করে বিভিন্ন দল ও সংগঠন, বিশেষ করে বামপন্থীদের গড়া নাগরিক সংগঠন তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি। এর আগে ২০০২ সালে ভারতে গ্যাস রপ্তানির জন্য বিভিন্ন পর্যায়ে জোর সুপারিশ চলে। খনিজ অনুসন্ধানকারী যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি ইউনকল তখন আশা প্রকাশ করেছিলো, বাংলাদেশ সরকার ভারতে গ্যাস রপ্তানির সিদ্ধান্তই নেবে। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থার অর্থায়নে পরিচালিত এক সমীক্ষায়ও পাইপলাইনে ভারতে গ্যাস রপ্তানির পক্ষে মত দেওয়া হয়।

২০০১ সালে সাধারণ নির্বাচনে পরাজয়ের পর তখনকার বিরোধীদলীয় নেতা (বর্তমান প্রধানমন্ত্রী) শেখ হাসিনাও বলেছিলেন, দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ অন্যের হাতে তুলে দিতে রাজি না হওয়ায় আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে হারতে হয়েছে। মুলফোর্ড তারবার্তায় কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় ভারতের সঙ্গে ইরানের জ্বালানি গাটছাড়া ভাঙতে তার দেশের উদ্যোগ প্রত্যাশা করেছিলেন। মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে দেখা করিনি: গওহর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে যাওয়ার আগে গতবছরের ১০ জানুয়ারি মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে দেখা করেননি বলে দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র উপদেষ্টা গওহর রিজভী। উইকিলিকসের ফাঁস করে দেওয়া মার্কিন দূতাবাসের তার বার্তা থেকে জানা যায়, ওই দিন রিজভী মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে দেখা করে প্রধানমন্ত্রীর সফর নিয়ে কথা বলেন। শুক্রবার রাতে গওহর রিজভী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "আমি নিশ্চয়তা দিতে পারি ওই দিন আমি মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে দেখা করিনি।

" "প্রধানমন্ত্রীর সফর শেষে আমি নয়া দিল্লি থেকে ঢাকা ফিরিনি বরং সেখান থেকে সরাসরি ওয়াশিংটনে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে মার্কিন প্রশাসনকে প্রধানমন্ত্রীর সফরের ফলাফল অবহিত করেছি", বলেন তিনি। "আমি সেখানে হোয়াইট হাউস, পেন্টাগন, স্টেট ডিপার্টমেন্ট, ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল, কংগ্রেস, ইউএসএইড ও ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করি। " প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হিসাবে যোগ দেওয়ার আগে প্রায় ৩০ বছর গওহর রিজভী অক্সফোর্ড ও হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সফরের ব্যবস্থা করেছিলো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং এক্ষেত্রে পররাষ্ট্রমন্ত্রীই নেতৃত্ব দিয়েছেন।

উইকিলিকসে প্রকাশিত বার্তায় বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর সফরের প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে ভারতীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে চার দফা বৈঠক শেষে ৮ জানুয়রি নয়া দিল্লি থেকে ঢাকা ফেরেন রিজভী। এরপর ১০ জানুয়ারি সকালে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে দেখা করেন। এ সময় তিনি উপদেষ্টা মরিয়ার্টিকে জানান, ভারত-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের 'রূপান্তর' ঘটানোর লক্ষে সমঝোতার 'মঞ্চ' প্রস্তুত করা হয়েছে। বিষয়টি বাংলাদেশ সরকারের অল্প কয়েকজন ছাড়া সবার কাছেই গোপন রাখা হয়েছে। এমনকি পররাষ্ট্রমন্ত্রীকেও (দিপু মনি) এতে অন্তর্ভুক্ত করা হয় মাত্র এক সপ্তাহ আগে।

বার্তা থেকে জানা যায়, রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে ওই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আমলাতন্ত্রের বিষয়ে যথেষ্ট ক্ষোভ প্রকাশ করেন রিজভী। আমলাদের সৃজনশীলতা ও দূরদৃষ্টির অভাব রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এ ব্যাপারে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে রিজভী বলেন, "এ তথ্য ফালতু। এই তথ্য দিয়ে আমাদের নিজেদের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। " দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর যৌথ ঘোষণা থেকেই বিষয়টি পরিষ্কার, যোগ করেন তিনি।

উইকিলিকসে রিজভীকে উদ্ধৃত করে মরিয়ার্টির বার্তায় বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী আজমির জিয়ারত শেষে ১৩ জানুয়ারি ঢাকায় না ফিরে কলকাতায় যাত্রাবিরতি করার সিদ্ধান্ত নিয়ে একটি 'ভুল' করতে যাচ্ছিলেন। তবে যাত্রাবিরতির সেই পরিকল্পনা 'স্যাবোটাজ' করে দিয়েছেন রিজভী। এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সফরের আয়োজন করেছিলো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আমি নই। র্র্যাবের মানবাধিকার লঙ্ঘন তথ্য প্রকাশে অনাগ্রহ সরকারের র্র্যপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) অতীত মানবাধিকার লঙ্ঘনের তথ্য প্রকাশে সরকারের একটি অংশ অনিচ্ছুক বলে এক তারবার্তায় জানিয়েছেন ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি। উইকিলিকসের ফাঁস করা মার্কিন তারবার্তার উদ্ধৃতি দিয়ে যুক্তরাজ্যের দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, গত বছরের ১৪ জানুয়ারি এক তারবার্তায় এ কথা বলেন মরিয়ার্টি।

এর আগে ২০০৮ সালের ১১ অগাস্ট এক তারবার্তায় মরিয়ার্টি জানান, "র্যাব সম্পর্কে ধারণা নিতে এবং বাহিনীটির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র সরকার কিভাবে কাজ করতে পারে তার উপায় বের করতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা ও বিচার মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধি দল ১২-১৬ জুলাই ঢাকা সফর করে। "সফরের শেষ দিন প্রতিনিধি দলটি পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করে। প্রতিনিধি দলের এসব বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের ঢাকা দূতাবাসের ইন্টার-এজেন্সি কাউন্টার টেরোরিজম ওয়ার্কিং গ্র"পের প্রতিনিধিরাও অংশ নেন। " তারবার্তায় বলা হয়, "র্যাবের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের সুত্র ধরেই আমাদের বর্তমানের প্রশিক্ষণ বা সহায়তার পরিকল্পনা। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের ফলে র্যাবকে মানবাধিকার প্রশিক্ষণ ছাড়া অন্য কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ সহায়তা যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়।

" র্যাব কর্মকর্তাদের সঙ্গে দুই দিনের বৈঠকে মার্কিন কর্মকর্তারা র্যাবের আগের মানবাধিকার লঙ্ঘনের রেকর্ড এবং আইনের অপব্যবহার ঠেকাতে ও তদন্ত করতে করণীয় নিয়ে আলোচনা করেন। প্রশিক্ষণ অ্যাকাডেমি ও ইউনিট পর্যায়ের পাঠ্যসূচিতে মানবাধিকার বিষয়টি রাখতে র্যাবের আগ্রহের বিষয়টি প্রতিনিধি দলকে জানানো হয়। মরিয়ার্টির ২০০৮ সালের ওই বার্তায় বলা হয়, "প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সর্বশেষ বৈঠকে এ বিষয়টি উঠে আসে যে, অতীতের মানবাধিকার লঙ্ঘনের তথ্য দিতে সরকারের আমলারা অনিচ্ছুক। র্যাবসহ নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্তে উন্নতি বিষয়ে ২০০৭ সালে দূতাবাসের ইন্টার-এজেন্সি কর্মকর্তারা বাংলাদেশ সরকারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। " বৈঠকে এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক উপসচিবকে দায়িত্ব দেওয়া হয়- উল্লেখ করে মরিয়ার্টি লেখেন, "কিন্তু প্রাথমিকভাবে বেশ কিছু ভালো উদ্যোগ নেওয়া হলেও অগ্রগতি খুব সামান্যই।

সফরকারী ওই প্রতিনিধি দলের সঙ্গে স্বরাষ্ট্র সচিবের সাক্ষাতে মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতিতে যৌথ কর্মসূচির বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে তিনি (উপসচিব) সামান্যই আগ্রহ দেখান। " "লেহি লেজিসলেশন অনুসারে র্যাবের মানবাধিকার লঙ্ঘন বিষয়ে যথাযথ তথ্য বের করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা প্রয়োজন বলে মনে করে প্রতিনিধি দল। সৌভাগ্যবশত স্বরাষ্ট্র সচিব আব্দুল করিমের ওয়াশিংটন সফরে উর্ধ্বতন মার্কিন কর্মকর্তারা অতীত মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের তথ্য প্রকাশের বিষয়ে চাপ দেন। " র্যাবের ভূমিকা মূল্যায়নে প্রতিনিধি দল পাঠানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা ও বিচার মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ জানানো হয় ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টির তারবার্তায়। র্যাব ভেঙে দেওয়ার পক্ষে নয় যুক্তরাষ্ট্র ভারত র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ভেঙে দেওয়ার পক্ষে নয় যুক্তরাষ্ট্র এক তারবার্তায় গতবছর দেশটির এই মনোভাব প্রকাশ করেন ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি।

গত বছরের ১৪ জানুয়ারি মরিয়ার্টির পাঠানোর তারবার্তায় বলা হয়েছে- বাংলাদেশে ভারতের তখনকার হাই কমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তীর সঙ্গে এক আলোচনায় তিনি (মরিয়ার্টি) র্যাব বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এই অবস্থানের কথা জানান। এ বিষয়ে পিনাক দ্বিমত পোষণ করেননি। যুক্তরাজ্যের দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান উইকিলিকসের ফাঁস করা মার্কিন এই তারবার্তা প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশের সন্ত্রাসবাদবিরোধী উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে মরিয়ার্টি ওই বার্তায় লেখেন, "র্যাব ভেঙে দেওয়া হাসিনা সরকারে উচিত হবে না রাষ্ট্রদূতের (মরিয়ার্টি) এ প্রস্তাবের সঙ্গেও একমত হয়েছেন পিনাক। " মরিয়ার্টি আরো লেখেন, "র্যাব বাংলাদেশে সন্ত্রাসবিরোধী প্রধান বাহিনী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।

তবে কোনো কোনো আওয়ামী লীগ নেতা একে সন্দেহের চোখে দেখে থাকেন; কারণ এ বাহিনীটি গঠন করেছিলো দলটির (আওয়ামী লীগ) প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি। " ওই আলোচনায় পিনাককে মরিয়ার্টি জানান, র্যাবের জন্য মানবাধিকার বিষয়ক প্রশিক্ষণ শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। র্যাব যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) বাংলাদেশি সংস্করণ হওয়ার মতো অবস্থায় আছে বলে উল্লেখ করেন রাষ্ট্রদূত। এর আগে ২০০৮ সালের ১১ অগাস্ট এক তারবার্তায় মরিয়ার্টি জানান, "র্যাব সম্পর্কে ধারণা নিতে এবং বাহিনীটির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র সরকার কিভাবে কাজ করতে পারে তার উপায় বের করতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা ও বিচার মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধি দল ১২-১৬ জুলাই ঢাকা সফর করে। "সফরে প্রতিনিধি দল র্যাবের ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এবং ঢাকার বাইরে নারায়ণগঞ্জ ও সিরাগঞ্জের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে র্যাবের ব্যাটালিয়নের কার্যক্রম পরিদর্শন করে।

সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী ও ব্যবসায়ী নেতাসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ওই প্রতিনিধি দল। " সফরের শেষ দিন প্রতিনিধি দলটি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করে। প্রতিনিধি দলের এসব বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের ঢাকা দূতাবাসের ইন্টার-এজেন্সি কাউন্টার টেরোরিজম ওয়ার্কিং গ্র"পের প্রতিনিধিরাও অংশ নেন। বেশ কয়েক মাস ধরে র্যাব ও দূতাবাস কর্মকর্তা এবং সফরকারী উপসচিব বার্কস-রাগলস, সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা বিষয়ক সমন্বয়ক রাষ্ট্রদূত ডেল ডেইলিসহ ঊর্ধ্বতন মার্কিন কর্মকর্তাদের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকের বিষয়গুলো সামনে রেখে ওই প্রতিনিধি দল ঢাকা সফর করে। আগের এসব বৈঠকে কর্মকর্তারা র্যাবের মানবাধিকার রেকর্ড উন্নয়নে এবং সন্ত্রাস দমন ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় বাহিনীটির দক্ষতা বাড়াতে সহায়তার জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকারের আগ্রহের কথা র্যাব কর্মকর্তাদের জানান।

তবে সব ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন তারা। তারবার্তায় বলা হয়, "র্যাবের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের সুত্র ধরেই আমাদের বর্তমানের প্রশিক্ষণ বা সহায়তার পরিকল্পনা। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের ফলে র্যাবকে মানবাধিকার প্রশিক্ষণ ছাড়া অন্য কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ সহায়তা যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। " র্যাব কর্মকর্তাদের সঙ্গে দুই দিনের বৈঠকে মার্কিন কর্মকর্তারা র্যাবের আগের মানবাধিকার লঙ্ঘনের রেকর্ড এবং আইনের অপব্যবহার ঠেকাতে ও তদন্ত করতে করণীয় নিয়ে আলোচনা করেন। প্রশিক্ষণ অ্যাকাডেমি ও ইউনিট পর্যায়ের পাঠ্যসূচিতে মানবাধিকার বিষয়টি রাখতে র্যাবের আগ্রহের বিষয়টি প্রতিনিধি দলকে জানানো হয়।

তারবার্তা অনুযায়ী, মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগগুলো র্যাবের নিজস্ব শৃঙ্খলা বিধি অনুসারে এবং ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে প্রশাসনিক তদন্ত ও স্থানীয় বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমে খতিয়ে দেখা এবং ব্যবস্থা নেওয়া হয় বলে মরিয়ার্টিকে জানান র্যাব কর্মকতারা। ম্যাজিস্ট্রেটদের তদন্ত প্রতিবেদন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানাতে প্রতিনিধি দলের একাধিক অনুরোধের মুখে র্যাব কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে তথ্য দেওয়ার প্রতিশ্র"তি দেন। ফুলবাড়িতে উন্মুক্ত খনি: একমত মরিয়ার্টি-ইলাহী ফুলবাড়িতে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনে ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে একমত প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী- বলছে উইকিলিকসের ফাঁস করা গোপন নথি। এ ক্ষেত্রে কয়লা খনি প্রকল্পের জন্য সংসদীয় সমর্থন সৃষ্টিতে মরিয়ার্টিকে তার সম্মতির কথা জানান তৌফিক-ই-ইলাহী। উইকিলিকসের ফাঁস করা নথির ভিত্তিতে যুক্তরাজ্যের দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, "২০০৬ সালে কার্যক্রম গোটাতে বাধ্য হলেও গ্লোবাল কোল ম্যানেজমেন্ট (জিসিএম) বাংলাদেশে তার উপস্থিতি প্রবলভাবে ধরে রেখেছে।

একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটি কয়লা খনির কাজ চালিয়ে যাওয়া অধিকার পেতে তদবির চালিয়ে যাচ্ছে। "চলতি মাসের শুরুতে জিসিএম'র চেয়ারম্যান স্টিভ বাইওয়াটার বলেন, বাংলাদেশের একটি সংসদীয় স্থায়ী কমিটি খনি থেকে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনের জন্য সুপারিশ করেছে। " ফুলবাড়িতে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনের পক্ষে গত ২৯ নভেম্বর সুপারিশ করেছে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, "২০০৬ সালের ২৬ অগাস্ট ফুলবাড়িতে এশিয়া এনার্জির কয়লা প্রকল্পের বিরুদ্ধে ব্যাপক গণবিক্ষোভের মুখে সেনাদের গুলিতে তিনজন নিহত ও অসংখ্য আহত হয়। " এশিয়া এনার্জির পরিবর্তিত নাম গ্লোবাল কোল ম্যানেজম্যান্ট।

কয়লা খনি প্রকল্পটি চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেবে কি না সে বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার এখনো স্পষ্ট কোনো আশ্বাস দেয়নি বলে উল্লেখ করেছে গার্ডিয়ান। "কয়লা খনির বিষয়টি নিয়ে জোাালো বিতর্ক রয়েছে, আন্দোলনকারীরা আশঙ্কা করছেন দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হবে। " গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, "বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মরিয়ার্টি গত বছরের জুলাই মাসে পাঠানো এক তারবার্তায় জানান, তিনি কয়লা খনির অনুমতি দিতে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহীর কাছে আবেদন জানিয়েছেন। "মরিয়ার্টি বলেন, 'উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনই সবচেয়ে ভালো বলে মনে হচ্ছে। '" ফুলবাড়ি কয়লা খনিতে সম্পৃক্ত এশিয়া এনার্জির ৬০ ভাগ বিনিয়োগ মার্কিন বলে ওই বার্তায় জানান মরিয়ার্টি।

"এশিয়া এনার্জির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে এ প্রকল্প সরকারের অনুমোদন পাবে বলে তারা আশাবাদী। " তারবার্তায় মরিয়ার্টি আরো উল্লেখ করেন, "ঐতিহাসিকভাবে নিপীড়িত ও অবহেলিত আদিবাসী স¤প্রদায়ের পটভূমিতে কয়লা খনিটি যে রাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর সে বিষয়ে একমত তৌফিক-ই-ইলাহী। সংসদীয় সমর্থন তৈরির ব্যাপারে তৌফিক-ই-ইলাহী একমত হন বলে তারবার্তায় জানান মরিয়ার্টি। জিসিএম এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। 'হাসিনার ভারত-ঘনিষ্ঠতা' প্রচার নিয়ে সতর্ক ভারত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে 'ভারত-ঘনিষ্ঠতা' প্রচার বিষয়ে সতর্ক ভারত উইকিলিকসের ফাঁস করা বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের এক তারবার্তায় একথা বলা হয়েছে।

২০০৯ সালের ১৪ জানুয়ারি মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি এক তারবার্তায় বলেন, "পিনাক বলেছেন, সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় যৌথ টাস্ক ফোর্স গঠনে হাসিনার প্রস্তাবকে স্বাগত জানাবেন [ভারতের] পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়। "এ বিষয়ে ভারত দ্বিপাক্ষিক সহযোতিামূলক কর্মকাণ্ড চায়। তবে ভারত বোঝে যে বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে আঞ্চলিক টাস্কফোর্স গঠনে আগ্রহী হতে পারে। " "এর ফলে হাসিনার বিরুদ্ধে 'ভারত-ঘনিষ্ঠতা'র যে প্রচার সে ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সুবিধাজনক অবস্থানে থাকতে পারবেন হাসিনা। " উইকিলিকসের ফাঁস করা এবং যুক্তরাজ্যের দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানের সৌজন্যে পাওয়া জেমস এফ মরিয়ার্টির এক তারবার্তায় এসব কথা বলা হয়েছে।

বার্তায় মরিয়ার্টি লেখেন, "ভারত প্রায়ই দাবি করে, আন্তর্জাতিক ইসলামি জঙ্গিরা বাংলাদেশকে একটি নিরাপদ আস্তানা হিসেবে ব্যবহার করে; প্রায়ই বাংলাদেশের দুর্বল সীমান্ত পার হয়ে ভারতে ঢুকে বোমা ও অন্যান্য হামলা চালায়। "বাংলাদেশকে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে ব্যবহারকারী আসামের ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্টসহ ভারতের চরমপন্থী গ্র"পগুলো দমনে ঢাকাকে আরো কার্যকর ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়ে আসছে নয়া দিল্লি। " জেমস এফ মরিয়ার্টিকে পিনাক চক্রবর্তী জানান, "৮ ফেব্র"য়ারি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রণব মুখার্জির ঢাকা সফরের পরিকল্পনা রয়েছে। সন্ত্রাবাদ মোকাবেলা বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনাই হবে ওই সফরের মূল আলোচ্য বিষয়। " তিনি জানান, নিরাপত্তা সহযোগিতার উন্নয়নই হবে বাংলাদেশের নতুন সরকারের সঙ্গে ভারতের কাজের ক্ষেত্রে প্রধান গুরুত্বের বিষয়।

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিপুল বিজয়ে আনন্দ প্রকাশ করেন ভারতীয় হাই কমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী। ঐতিহাসিকভাবে নয়া দিল্লীর সঙ্গে আওয়ামী লীগের সুসম্পর্ক রয়েছে বলে তারবার্তায় উল্লেখ করেন মরিয়ার্টি। নতুন আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে নিরাপত্তা ও অন্যান্য ইস্যুতে ভারত পারস্পরিক সহযোতিামূলক সম্পর্কের উন্নয়ন চায় বলে জানান পিনাক। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর আঞ্চলিক টাস্ক ফোর্স গঠনের প্রস্তাবে ভারতের সমর্থন রয়েছে বলে জানান হাই কমিশনার। কিন্তু বহুপাক্ষিক সহযোগিতার পাশাপাশি দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার ব্যাপারে জোর দেন তিনি।

ফুলবাড়ি নিয়ে চাপ যুক্তরাষ্ট্রের ফুলবাড়ি কয়লাখনিতে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনের অনুমতি দিতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ সরকারকে চাপ দিয়েছিলো বলে উইকিলিকসের ফাঁস করা গোপন নথিতে বলা হয়েছে। উইকিলিকসের ফাঁস করা গোপন নথির ভিত্তিতে বৃটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতবছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহীর সঙ্গে বৈঠক করেন বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাস্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি। "বৈঠকে বৃটিশ প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল কোল মাইনিং ম্যানেজমেন্টকে ফুলবাড়িতে কয়লা উত্তোলনের অনুমতি দিতে বলেন মরিয়ার্টি। " ২০০৬ সালের ২৬ অগাস্ট ফুলবাড়িতে এশিয়া এনার্জির কয়লা প্রকল্পের বিরুদ্ধে ব্যাপক গণবিক্ষোভের মুখে সেনাদের গুলিতে তিনজন নিহত ও অসংখ্য আহত হয়। এশিয়া এনার্জিরই পরিবর্তিত নাম গ্লোবাল কোল ম্যানেজম্যান্ট।

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, "গত বছরের জুলাই মাসে পাঠানো এক তারবার্তায় মরিয়ার্টি জানান, 'ফুলবাড়ি কয়লা খনিতে সম্পৃক্ত এশিয়া এনার্জির ৬০ ভাগ বিনিয়োগ মার্কিন'। " মরিয়ার্টি বলেন, "এশিয়া এনার্জির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে এ প্রকল্প সরকারের অনুমোদন পাবে বলে তারা আশাবাদী। " 'মাদ্রাসায় পরিবর্তনে সক্রিয় যুক্তরাজ্য-যুক্তরাষ্ট্র' সন্ত্রাসবিরোধী কৌশলের অংশ হিসেবে বাংলাদেশের মাদ্রাসা শিক্ষার পাঠক্রম পরিবর্তনে একত্রে কাজ করছে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র- বলছে উইকিলিকসের ফাঁস করা গোপন নথি। 'সামষ্টিক সন্ত্রাসবিরোধী কৌশলের' অংশ হিসেবে মাদ্রাসা পাঠক্রমকে প্রভাবিত করতে চায় দেশ দুটি। উইকিলিকসের ফাঁস করা যুক্তরাষ্ট্রের গোপন তারবার্তার ভিত্তিতে মঙ্গলবার গভীর রাতে যুক্তরাজ্যের দ্য গার্ডিয়ান প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাদ্রাসার পাঠক্রম পরিবর্তনে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একত্রে কাজ করছে য্ক্তুরাজ্যের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিভাগ (ডিএফআইডি)।

এক তারবার্তায় যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসবিরোধী কৌশলের বিষয়টি উল্লেখ করেন বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি। বাংলাদেশের অনিয়ন্ত্রিত মাদ্রাসাগুলোর জন্য একটি মান পাঠক্রম তৈরি ও প্রয়োগের প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কিভাবে দেওয়া হবে তা দুই দেশের সমন্বিত পরিকল্পনায় আছে বলে বার্তায় জানান মরিয়ার্টি। মাদ্রাসা 'পাঠক্রম উন্নয়ন পরিকল্পনা'র অংশ হিসেবে বাংলাদেশ সরকারকে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএইডের দেওয়া এক প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়। ডিএফআইডি'র উদ্যোগ দক্ষিণ এশিয়া ইসলামের চরমপন্থা রোধের জন্য বলে একমত লন্ডনের মুসলিম ইন্সটিটিউটের ড. গিয়াসউদ্দিন সিদ্দিক। তিনি বলেন, "এটা অনেক পুরনো সমস্যা।

" "অনেক আগেই অনিয়ন্ত্রিত মাদ্রাসাগুলোর পাঠক্রমের দিকে নজর দেওয়া উচিত ছিলো। " ডিএফআইডি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। বাংলাদেশে প্রায় ৬৪ হাজার মাদ্রাসা রয়েছে। যেসব অভিভাবক তাদের সন্তানদের শিক্ষার জন্য প্রথাগত বিদ্যালয়ে পাঠাতে পারেন না তাদের সন্তানরা প্রায়ই বিনামূল্যে মাদ্রাসায় শিক্ষার সুযোগ পায়। গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তবে প্রায় ১৫ হাজার অনিয়ন্ত্রিত মাদ্রাসা নিয়ে সচেতন বর্তমান সরকার।

এসব মাদ্রাসায় অন্যগুলোর তুলনায় শিক্ষার গড় মান ভালো নয়। " "মাদ্রাসার বিরুদ্ধে সন্তানদের চরমপন্থী করে তোলার অভিযোগও তুলেছেন কেউ কেউ। " "গত সপ্তাহে মাদ্রাসার অর্থের উৎস তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে সরকার," উল্লেখ করে গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, "নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরির মাদ্রাসায় ঘাঁটি গাড়ছে- এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। " র্যাবের প্রশিক্ষণে যুক্তরাজ্য বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে ইউরোপসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তোপের মুখে থাকা র্যাবকে যুক্তরাজ্য সরকারের উদ্যোগেই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে বলে তথ্য প্রকাশ করেছে উইকিলিকস। উইকিলিকসের ফাঁস করা যুক্তরাষ্ট্রের গোপন তার বার্তা থেকে মঙ্গলবার এ সংবাদ প্রকাশ করেছে 'গার্ডিয়ান'।

যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী এ দৈনিক তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সংবাদের শিরোনাম করেছে- "বাংলাদেশি 'ডেথ স্কোয়াড' ট্রেইনড বাই ইউ কে গভর্নমেন্ট"। সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রম নিয়ে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের কথা চালাচালিতে লন্ডন সরকারের র্যাবকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিষয়টি প্রকাশ্য হয়। একটি তারবার্তায় দেখা যায়, মানবাধিকার ছাড়া অন্য কোনো বিষয়ে র্যাবকে প্রশিক্ষণ দিতে রাজি হয়নি ওয়াশিংটন। তারা মনে করে, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে র্যাব মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। ফলে তাদের এ বাহিনীকে অন্য কেনো প্রশিক্ষণ দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের আইন লঙ্ঘন করবে।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ২৬ মার্চ যাত্রা শুরু করে সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ বাহিনী র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। প্রতিষ্ঠার পর থেকে 'ক্রসফায়ার/বন্দুকযুদ্ধ/এনকাউন্টার'র মাধ্যমে বিচার বহির্ভূতভাবে প্রায় ১ হাজার মানুষ 'হত্যা'র অভিযোগ রয়েছে এই বাহিনীর বিরুদ্ধে। এর মধ্যে বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত যেমন রয়েছে, তেমনি নিরাপরাধ লোকও রয়েছে বলে অভিযোগ। র্যাবের পক্ষ থেকে গত মার্চ মাসে জানানো হয়, বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে 'বন্দুকযুদ্ধে' নিহতের মোট সংখ্যা ৬২২। দেশ-বিদেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলো র্যাবের কার্যক্রমের বিরোধিতা করে আসছে।

দেশের উচ্চ আদালতও 'ক্রসফায়ারের নামে মানুষ হত্যা বন্ধে' র্যাবের প্রতি নির্দেশ দেয়। ফাঁস হওয়া তারবার্তা থেকে স্পষ্ট, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য উভয় দেশই বাংলাদেশে সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রম শক্তিশালী করতে চায়। এমনকি র্যাবের কার্যক্রমের প্রশংসাও করেছেন দেশ দুটির কর্মকর্তারা। গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন অনুযায়ী, একটি তারবার্তায় ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টিকে র্যাবের ভূয়সী প্রশংসা করতে দেখা যায়। মরিয়ার্টি বলেন, র্যাব এক সময়ে বাংলাদেশি এফবিআই-এ (যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা) পরিণত হবে।

অন্য একটি তারবার্তায় মরিয়ার্টি বলেন, যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তারা তাকে জানিয়েছেন, ব্রিটিশ পুলিশের বিশেষ বিভাগ ন্যাশনাল পুলিশিং ইমপ্র"ভমেন্ট এজেন্সির (এনপিআইএ) কর্মকর্তারা ১৮ মাস ধরে র্যাবকে প্রশিক্ষণ দেয়। এ বিষয়ে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তরের এক কর্মকর্তা গার্ডিয়ানকে বলেন, মানবাধিকার রক্ষা বিষয়টি ছিলো তাদের প্রশিক্ষণের বিষয়। তবে এ বিষয়ে র্যাবের প্রশিক্ষণ বিষয়ক প্রধান মেসবাহউদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি গার্ডিয়ানকে বলেন, গত গ্রীষ্মে দায়িত্ব নেওয়ার পর মানবাধিকার বিষয়ে কোনো ধরনের প্রশিক্ষণের তথ্য তার জানা নেই। ফাঁস হওয়া তারবার্তা অনুযায়ী, তিন বছর আগে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি গত অক্টোবরেও এ প্রশিক্ষণ হয়। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর অভিযোগ, র্যাবের মাধ্যমে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউমেন রাইটস ওয়াচ র্যাবকে 'ডেথ স্কোয়াড' নামে অভিহিত করে আসছে। র্যাবের সমালোচনায় মুখর অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও। তবে প্রশিক্ষণে সহায়তার বিষয়ে যুক্তরাজ্যে পররাষ্ট্র দপ্তরের বক্তব্য, তাদের দেশের আইন মেনেই সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রমে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। 'দুই নেত্রীকেই নির্বাচনে চেয়েছিলো যুক্তরাষ্ট্র' তত্ত্বাবধায়ক সরকারের 'শেষ সময়ে এসে' শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে বাংলাদেশের মানুষ নির্বাচনে দেখতে চায় বলে ফাঁস হয়ে যাওয়া মার্কিন নথির এক জায়গায় জানানো হয়েছে। ২০০৮ সালের অক্টোবর-নভেম্বর মাসের ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের নথিতে বলা হয়েছে, "বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষই আওয়ামী লীগের প্রধান শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) নেতা খালেদা জিয়ার ডিসেম্বরের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পক্ষে।

" সে সময়কার সেনা সমর্থিত তত্ত্বাধায়ক সরকার বিদেশি দূতাবাস ও বাংলাদেশের সুশীল সমাজের ইন্ধনে দুই নেত্রীকে রাজনীতি থেকে বাদ দেওয়ার তথাকথিত 'মাইনাস টু থিওরি' নিয়ে এগুচ্ছিলো বলে ব্যাপকভাবে বিশ্বাস করা হয়। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই জরুরি অবস্থা জারি করে। বিশ্বাস করা হতো এই সরকারের পেছনে দাতা দেশ ও সুশীল সমাজের মদত রয়েছে। ওই সময় দুই নেত্রীকে কারাগারে আটক রাখা হয় এবং তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা দেওয়া হয়। দুটি দলের প্রভাবশালী কয়েকজন নেতা দলের নেতৃত্ব থেকে হাসিনা ও খালেদাকে বাদ দেওয়ার ব্যাপারেও মাঠে নামে।

নথিতে দূতাবাসের গবেষণার বরাত দিয়ে বলা হয়, বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষই আশু নির্বাচনের পক্ষে। নির্বাচন বানচাল মানুষ মানবে না বলেও মন্তব্য করা হয়। সে সময় নির্বাচন নিয়েও সন্দেহ ছিলো জনমনে। শেষ পর্যন্ত ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। যুক্তরাজ্যে মুসলমানদের বৃদ্ধিঃ ভ্রু কুঞ্চিত যুক্তরাষ্ট্রের উইকিলিকসের ফাঁস করে দেওয়া মার্কিন নথিগুলোতে দেখা গেছে, যুক্তরাজ্যে মুসলিম স¤প্রদায়ের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়ে 'সচেতন' দেশটি।

নথিগুলোতে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যে সাত বছরে মুসলিমদের সংখ্যা ১৬ লাখ থেকে বেড়ে ২০ লাখে দাঁড়িয়েছে। তাতে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। মুসলিমদের সংখ্যা বৃদ্ধির হার এভাবে চলতে থাকলে ২০১১ সালে দেশটিতে মুসলমানদের সংখ্যা ২২ লাখ ছাড়িয়ে যাবে। যুক্তরাজ্যে সার্বিকভাবে মুসলিম জনসংখ্যা বাড়ছে তবে বৃদ্ধির হার কম। দেশটিতে জন্মগ্রহণকারীদের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠীর তালিকায় নিচের দিক থেকে মুসলিমরা দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে।

এরমধ্যে বেশিরভাগেরই জন্ম যুক্তরাজ্যের বাইরে। ৪৬ শতাংশের জন্ম যুক্তরাজ্যে। ৩৯ শতাংশের জন্ম এশিয়ায়। ৯ শতাংশের জন্ম বাংলাদেশে। ৭৪ শতাংশ মুসলিম এশীয় বংশোদ্ভূত।

এর মধ্যে বাংলাদেশি ১৬ শতাংশ। জঙ্গি অর্থায়ন: 'বাংলাদেশের তদন্তে ভরসা রাখেনি যুক্তরাষ্ট্র' ফাঁস হয়ে যাওয়া মার্কিন নথিতে দেখা গেছে, কুয়েতভিত্তিক একটি দাতব্য সংস্থা থেকে জঙ্গিদের অর্থায়নের ব্যাপারে বাংলাদেশের তদন্তের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ভরসা রাখেনি। 'দ্য রিভাইভাল অফ ইসলামিক হেরিটেজ সোসাইটি (আরআইএইচএস) নামের এই দাতব্য সংস্থাটির বিশেষ করে বাংলাদেশে এর শাখাগুলোর কর্মকাণ্ড সম্পর্কে মার্কিন সরকারের উদ্বেগের কথা প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের প্যাট্রিক ও'ব্রিয়েন অর্থ জালিয়াতি রোধ এবং সন্ত্রাসবাদ বিরোধী তহবিলের (এমএমএল/সিটিএফ) বিষয়ে আলোচনার জন্য কুয়েত সরকারের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তিনি কুয়েত ভিত্তিক দাতব্য সংস্থা 'দ্য রিভাইভাল অফ ইসলামিক হেরিটেজ সোসাইটি (আরআইএইচএস) বিশেষ করে বাংলাদেশে এর শাখাগুলোর কর্মকাণ্ড সম্পর্কে মার্কিন সরকারের উদ্বেগের কথা জানান।

ও'ব্রিয়েন আরআইএইচএস-এর শাখাগুলোর বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকার ও সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারগুলোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেন। তিনি আরো জানান, আরআইএইচএস-এর শাখাগুলো যে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে সে সম্পর্কে আরো তথ্য সংগ্রহ ও তা কুয়েত সরকারের কাছে হস্তান্তর করার জন্য মার্কিন সরকার বিভিন্ন দেশের সরকারের সঙ্গে কাজ করছে। তবে বাংলাদেশ বলছে, মার্কিন সরকার যে সব অভিযোগ উত্থাপন করেছে তার সঙ্গে তাদের মতে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।